মানুষ মেরে ঝুলায় রাখে আমরা ঘর থেকে বের হয়ে প্রতিবাদ করতে পারি না।ন্যায্য দাবি চাইতে পারি না।সাধের সুন্দরবন চোখের সামনে ধ্বংস করে ফেলার নীল নকশা পাকা করে ফেলছে আমাদের গলা দিয়ে আওয়াজ বের হয় না। অথচ আজ থেকে ৬৫ বছর আগে ভিন দেশীরা শুধু বলছিল বাংলা রাষ্ট ভাষা হতে পারবে না, যে ভাষায় জন্ম থেকে কথা বলে আসছ তা রাষ্টের প্রধান ভাষা হতে পারবে না, তা হবে উর্দু। ব্যাস, প্রতিবাদের ঝড় উঠে গেল, রক্তে রাজপথ ভিজে গেলো, মানুষ জীবন দিয়ে দিল!! প্রত্যেকের জানা ছিল সেদিন যে মিছিলে গেলে পুলিশ গুলি চালাতে পারে,জীবন চলে যেতে পারে তারপরেও তারা মিছিলে গেছে, সামনে থেকে গুলি বুকে নিয়ে মারা গেছে। প্রথম প্রতিরোধ করে দিয়ে গেছে।পাকিস্তানিদের প্রথম বার বুঝিয়ে দিয়ে গেছে তারা যে কোন অন্যায্য দাবি সহ্য করবে না এই জাতি। পাকিস্তানিদের জন্য প্রথম ঝাটকা, প্রথম সবক যে তোমরা আমাদের প্রভু না যে যা বলবা আমরা তাই মেনে নিব।প্রথম পদক্ষেপ একটা স্বাধীন জাতির, প্রথম পা ফেলা স্বাধীন মানচিত্রের দিকে। আর এ সব শুরু শুধু মাত্র ভাষার জন্য।ভাষা দিয়ে শুরু শেষ লাল সবুজের পতাকা দিয়ে।
যখন আমরা সব পেয়ে গেলাম তখন থেকে আমাদের পচনের শুরু হলো।পচন তবু যেই সেই পচন না, রীতিমত মিছিল করে আমরা নষ্ট হয়ে যাচ্ছি। যত সময় যাচ্ছে ততই আমরা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।আমাদের এখন বিন্দুমাত্র জানার ইচ্ছা নাই ২১ ফেব্রুয়ারি কি,শহীদ দিবস কাকে বলে,ভাষা আন্দোলন কেন হয়ে ছিল।আমাদের জানার ইচ্ছা না থাকলেও ক্ষতি ছিল না।যেহেতু আমরা নষ্টের চূড়ান্ত পর্যায় আছি তাই আমরা শহীদ দিবস কি না জানলেও শহীদ দিবস কে অপমান করতে ছাড়ছি না, শহীদদের অপমান করতে আমাদের বাধছে না। অপমান করছি ব্যাক্তি স্বার্থে, ব্যবসার স্বার্থে, লাভের আশায়, কয়টা টাকার জন্যে।
এই দিন ভাষার জন্য রক্ত দিয়েছে মানুষ?শহীদ রফিক যে কিনা মিছিলের মধ্যে থেকে সরাসরি মাথায় গুলি খেয়ে মারা গিয়েছিলেন, যাকে ধরা হয় ২১ ফেব্রুয়ারির প্রথম শহীদ, তাদের উদেশ্যেই তো এই দিবস,তাই না? চমৎকার, আসুন আমাদের ৫ তারা হোটেলে, বিশেষ বুফে লাঞ্চের ব্যবস্থা করে রেখেছি আমরা!! শহীদ হয়েছে সালাম বরকতরা,জব্বার? দারুন, তাদের জন্য বানানো শহীদ মিনার, যার উদ্বোধন করেছিলেন শহীদ শফিউরের পিতা সেখানে যাবেন তার জন্য সাজ সজ্জা লাগবে না? আমাদের পত্রিকায় দেখুন, শহীদ দিবসের সাজ নিয়ে আমাদের বিশেষ আয়োজন!! বুকে বুলেট নিয়ে হাসপাতালের বেডে যন্ত্রণায় কাতরিয়ে মারা গেছে শহীদ জব্বার, ওয়াও!! আমাদের পত্রিকায় থাকছে এই বিশেষ দিনের খানাপিনা নিয়ে বিশেষ আয়োজন। ২১ ফেব্রুয়ারি এসেছে? একটা ব্যানার তো দিতেই হবে আমার প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে,ব্যানারে লাগায় দিলাম সাত বীর শ্রেষ্ঠের ছবি, একটা দিলেই হলো, এরাও তো শহিদই হইছে, তাই না?
আমরা কতটুকু নষ্ট হইছি তার কিঞ্চিৎ প্রমান দিলাম।গত বছর বা তার আগের বছর সমকাল যখন একুশের সাজ নামে ভন্ডামিটা করে তখন তাদের কে কোন প্রকার জবাবদিহিতার মুখোমুখি হতে হয় নাই।অনলাইনে পাবলিকের চিৎকার চ্যাঁচামেচিতে অনলাইন সংস্করন থেকে সরিয়ে দিয়েই কাজ শেষ করে দিয়েছিল তারা। কেউ তাদের কে জিজ্ঞাস করেনি তারা এই ধৃষ্টতা দেখানোর সাহস পেলো কথা থেকে? যার ফল সরূপ এবার আমরা একুশের রান্না দেখতে পাচ্ছি,একুশের বুফে ডিনারের আমন্ত্রণ পাচ্ছি ৫ তারা হোটেল থেকে।
আমাদের টনক এবারেও নড়বে না জানি।বিপুল বিক্রমে হিন্দি সিরিয়াল,সিনামা দেখব আর একুশে ফেব্রুয়ারি আসলে একুশের সাজ সেজে শহীদ মিনার হয়ে বুফে লাঞ্চে চলে যাব।আমাদের জন্য যাহা উর্দু তাহাই যে হিন্দি এই বোধ আমাদের হবে না।পাকিস্তানিরা চাপিয়ে দিতে চেয়েছে আর এখন আমরা হিন্দিকে নিজেরাই ড্রয়িং রুমে বসিয়ে আন্ডা বাচ্চা বউ পুলাপান নিয়ে চেটেপুটে খাচ্ছি। হিন্দি চেটেপুটে খেতে খেতে আমাদের জানা আর হয়ে উঠে না রফিক সালাম বরকতদের সাথে সাথে শিশু অহিউল্লাহও শহীদ হয়েছিল পুলিশের গুলিতে,রিকশাচালক আওয়ালের নাম জানি না আমরা।
এই নষ্ট হওয়া একদিনে হয় নাই।ধীরে ধীরে এই পর্যন্ত আসছি আমরা। আরও ৬৫ বছর পরে ইনশাল্লাহ ডিজে পার্টি হবে শহীদ মিনারে। বাংলা অ্যাকাডেমির বর্ধমান হাউসের সামনে র্যাপ গানের কনসার্ট তো আমি নিজে শুনছি, সে হিসেবে ৬৫ বছর সম্ভবত লাগবে না আমাদের!!
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সকাল ১১:০৫