নরকের দরজার সামনে বেশ কিছু মানুষের ভিড়।এরা অপেক্ষা করছে নরকে যাওয়ার জন্য। নিয়ম হচ্ছে পাপ অনুযায়ী বিভিন্ন ক্যাটাগরির শাস্তি দেওয়া হবে। বিভিন্ন শাস্তির জন্য আলাদা আলাদা নরকের দরজা। পাপ এবং শাস্তি ঘোষণা করে পাপিদের কে নির্ধারিত দরজা দিয়ে ঢুকিয়ে দেয়া হয়। শাস্তির বর্ণনা শুনেই একেকজন বুক ফাটা আহাজারি শুরু করে দেয়।সহজে যেতে চায় না কেউ। ধরে বেঁধে নিয়ে যাওয়া হয় পাপিদের। এ এখানকার প্রতিদিনকার চিত্র।নরকের কারা রক্ষি থেকে শুরু করে আর যারা যারা স্টাফ আছে তাদের গা শোয়া হয়ে গেছে ব্যাপারটা।
সব স্বাভাবিক চলছিল।কিন্তু সমস্যা হয়ে গেল একদিন হঠাৎ করেই।যিনি পাপ এবং শাস্তি উচ্চস্বরে সবাইকে পড়ে শুনায় স্বর্গীয় নথি দেখে তাকে হঠাৎ যমালয়ের হেড অফিসে ডেকে পাঠালেন যমরাজ। তাকে কেন ডেকে পাঠানো হল তার সাথে এই গল্পের কোন সম্পর্ক নেই।সম্পর্ক হচ্ছে তার অবর্তমানে যে ছোকরা কে দায়িত্ব দেওয়া হল এই কাজের তার সাথে।বেচারার প্রথম প্রথম মন খারাপ থাকলেও কিছুক্ষনের মাঝেই সে এই কাজের মাঝে মজা খুঁজে পেয়ে গেল।যেহেতু সব পাপি এখানে তাই কোন দয়া দেখানোর বালাই নাই। আর সে এখানেই মজা খুঁজে পেয়ে গেল। একেক জন যখন শাস্তি শুনে অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছিল তখন সে তাদের দেখে বিমল মজা নিতে থাকলো।উৎসাহের সাথে বলে যেতে লাগলো, ঘুষখোর সব তিন নাম্বার দরজায় যাবে, সেখানে তাদের কে দেওয়া হবে প্রথমে হালকা করে তেলে ভাজা পরে গনগনে আগুনে বারো ঘণ্টা পুড়ে কাবাব করা হবে।এই প্রসেস চলবে টানা দুই মাস। তারপরে আবার অন্য শাস্তি। ঘোষণা শেষ হতেই ভয়ে চিৎকার শুরু করে দিল কিছু তেলতেলে চেহারার স্বাস্থবান মানুষ।অবশ্য ঘোষকের এত দেখার সময় নাই।তাদের অবস্থা এক নজর দেখেই সে আবার অন্যদের পাপ ও শাস্তি বর্ননা দেওয়া শুরু করে দিয়েছে।
এই নয়া ঘোষক হঠাৎ খেয়াল করল যে কিছু মানুষ কোন শাস্তিতেই বিচলিত হচ্ছে না। শাস্তির বর্ননা এমন ভাব নিয়ে শুনছে যেন তাদের কে শাস্তির কথা বলা হল না, বলা হল তিন টাকায় নয় এমবি তিন দিন মেয়াদের খবর।
তাদের এই ধরনের নির্লিপ্ত ভাব তাকে ভীষণ ভাবে বিরক্ত করতে লাগলো। প্রথম দিন যাওয়ার পর দ্বিতীয় দিনেও একই কাণ্ড। কিছু লোকের যেন কিছুই যায় আসে না নরকের আগুনে পুড়তে। যেন শিঙ্গাড়ার জায়গায় পুরি দিয়েছে কেউ তাদের কে। তারা যত নির্লিপ্ত থাকে এই বেচারা তত রেগে যেতে থাকে এদের উপরে।
যাই হোক, এর মাঝে যমালয়ের হেড অফিস থেকে ফিরে আসলেন পার্মানেন্ট ঘোষক। অলটারনেটিভ ঘোষক তাকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার সময় আর থাকতে পারলেন না, সিনিয়র কে জিজ্ঞাস করেই ফেললেন ওই সব মানুষদের ব্যাপারে। কারা এরা? পাপ তো একেকজনের কম না কিন্তু কোন জাদুবলে এরা একবিন্দু ঘাবড়ায় না? এক কথায় সিনিয়র বুঝে ফেললেন ছোকরা কাদের কথা বলছে। সে হেঁসে বলল, আরে এদের কথা বাদ দাও, এরা বেঁচে থাকতে এত এত বার শুনেছে এই ধরনের কথা যে এখন তাদের আর কোন প্রকার বিকার হয় না।মানুষ সকাল বিকাল এদের কানের কাছে প্রতিনিয়ত এই সব বলত, বেঁচে থাকতেই তারা এই ট্রেনিং পেয়ে গেছে। তাজ্জব হয়ে আবার জিজ্ঞাস করল জুনিয়র, কারা এরা? কি করত এরা? সিনিয়র জবাব দিলেন, এরা সব হচ্ছে ঢাকা শহরের সিটি বাসের ড্রাইভার!!!
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে মার্চ, ২০১৭ রাত ১:৫০