বিছানায় শুয়ে ছিলাম। ভাল মন্দ, বিশ্ব জগত, আলো অন্ধকার নিয়ে উচ্চ মর্গের চিন্তা করছিলাম। হঠাৎ বুকে তীব্র ব্যাথা অনুভব করলাম। দেখি একটা কালো তীর এসে বুকে লেগেছে। তীব্র ব্যাথার মাঝে খেয়াল করলাম লম্বা একটা লাঠির মাথায় কুঠারের মত কি জেনো লাগানো এবং তা নিয়ে একজন কালো আলখাল্লা পড়া ব্যাক্তি খোলা দরজা দিয়ে এসে ঘরে ঢুকছে। আমি কিছু জিজ্ঞাসে আগেই তিনি বললেন, সময় শেষ, চলে যেতে হবে!
আমাকে দ্বিতীয় বার বলতে হলো না কিছু, আমি বুঝে গেলাম উনি কি বলছেন, কিসের সময় শেষ আর কোথায় যেতে হবে।আমি ব্যাথায় কাতরাতে কাতরাতে জিজ্ঞাস করলাম, একটুও সময় নাই? তিনি বললেন, হুম, আছে তো! আমি আমার যন্ত্রপাতি গোছাতে গোছাতে যতক্ষণ লাগে, ঠিক ততক্ষন। আমি হাচরে পাছরে উঠলাম শুয়া থেকে। দিশেহারার মত কিছু একটা খুঁজছি, কি খুঁজছি প্রথমে নিজেই বুঝতে পারছিলাম না। হাতে ল্যাপটপটা ঠেকতেই বুঝলাম, এটাকেই খুজছিলাম মনে মনে। ল্যাপটপ খুলে দ্রুত ক্রোম ওপেন করলাম। তারপরেই মনে হলো আমার মোবাইল লাগবে। ব্রডব্রেন্ড কানেকশন নাই বাসায়, এ কথা মনে হতেই আরও শত কথা মনে পরে গেলো, কেন নাই, কবে থেকে নাই…. এখন বুঝতেছিনা নেট ছাড়া কি হিস্ট্রি ক্লিয়ার করা যাবে ব্রাউজারের? মাথা ঘুরছে প্রবল ভাবে এর মধ্যে মোবাইলটাকেও পেয়ে গেলাম। হট স্পট অন করে দ্রুত হিস্ট্রি ক্লিয়ার করে দিলাম একদম বিগেইনিং থেকে। একটা শান্তির নিঃশ্বাস ফেলব ফেলব অবস্থায় আবার মাথা চক্কর দিতে শুরু করে দিল। মাই কম্পিউটার ওপেন করতে করতে আড় চোখে ভদ্রলোক কে খেয়াল করলাম। দেখি তিনি কি জানি কতগুল কাগজ পত্র নিয়ে ব্যস্ত। আমি তাকাতেই তিনি তিনি বললেন আপনি সুমন তো? আমি বললাম জি, বলল হাটখোলার সুমন? আমি আবার বললাম জী। তিনি বললেন কই কাজ শেষ? আমি আর্তস্বরে কাঁতরে উঠলাম, বললাম না, আরেকটু। তিনি হাত দিয়ে তাড়াতাড়ির ইশারা দিলেন, আমি আবার ঝাপিয়ে পড়লাম। মাই কম্পিউটার থেকে প্রোগ্রাম ফাইলে চলে গেলাম তারপর মনে হলো ফোল্ডার লক করা, খুলে তারপরে কাজ শেষ করতে হবে। নিজের উপরে মেজাজ হারাচ্ছি কয়েকবার করে, হাত পা কাঁপছে, হ্যাঁ, ফোল্ডার ওপেন হয়েছে এবার কন্ট্রোল এ তারপরেই শিফট ডিলেট।আহ! শান্তি। চোখের সামনে দিয়ে ফাইল গুলো ডিলিট হয়ে যাচ্ছে। কত জায়গা থেকে কত ভাবে সংগ্রহ করেছিলাম এগুলো, কত স্মৃতি!! বিশাল কালেকশন এক সময় ফিনিশ হয়ে গেলো। আর তখনই তিনি বলে উঠলেন, আচ্ছা, আমার যেন কেন জানি মনে হচ্ছে আমি একটা ভুল করে ফেলছি। মানে এই দিকে স্বপন নামে কেউ আছে? আমি চিৎকার দিয়ে উঠলাম, মানে? কি ভুল করেছেন আপনি? স্বপন তো আছেই, পাসের বাসায়ই তো থাকে। উনি বললেন, আসলে আমি একটু কনফিউজড হয়ে গেছিলাম, আমি আসলে স্বপন কে নিতে আসছি। আমি উনার উপরে ঝাপায়া পরব কিনা ভাবছি আবার নিশ্চিত চলে যাওয়া থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য একটু স্বস্তিও অনুভব করছি।পরক্ষনেই মনে হলো স্বপনের কাছে আমার সব ফাইলের ব্যাকআপ তো আছে কিন্তু…. উনি দেখি বিমর্ষ বদনে উনার অদ্ভুত লাঠি সহ চলে যাচ্ছে। আমি জিজ্ঞাস করলাম, স্বপন কে নিতে যাচ্ছেন? আমাকে যে তীর মেরে দিলেন? উনি বললেন, ও কিছু না, ঘুম দিয়ে উঠলেই ঠিক হয়ে যাবে।
এরপর আমি বিছানায় শুয়ে পড়লাম আবার। ব্যাথাটা কমে যেতে থাকলো আস্তে আস্তে। ঘুমিয়েও গেলাম কখন জানি। ঘুম থেকে উঠলাম চিৎকার চ্যাঁচামেচিতে। স্বপন মারা গেছে।বুঝলাম যা দেখেছি তা আমার স্বপ্ন ছিল না, ঘটনা ঘটে গেছে। আর তারপরেই আমার প্রথম যেটা মাথায় আসল, স্বপনের ফোল্ডার লকের পাসওয়ার্ড জানি কি?
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে নভেম্বর, ২০১৭ রাত ১:৪৩