-আপনি এত ব্যস্ত কেন…?
-ব্যস্ততার কি দেখছেন…..।আপনি এর মজা পেলে আপনি কি ছুটবেননা……?
-আপনি কিসের পিছনে ছুটছেন…?
-টাকার পিছনে।
-কিন্তু এভাবে কেন…?
-স্ত্রী-পুত্র, সংসার ভালভাবে চালানোর জন্য।
-তাতে কি লাভ…?
-সুখের ভবিষ্যত…….!
-কার সুখ…., আপনার….?
-ধরতে পারেন।
-বয়স কত…..?
-৪৫
-গড় আয়ু জানেন……?
-৫০
-আর থাকে কত….?
-বড় জোর ৫
-তাহলে আর কতদিন…….?
-আরে ভাই আমাদের তো সময় শেষ, বাচ্চা-কাচ্চার ভবিষ্যত বলে কথা।
-বাচ্চা-কাচ্চা ক’জন……?
-২ ছেলে, ১ মেয়ে।
-তাদের জন্য কি রেখে যাবেন…….?
-১টি গাড়ী, একটি ৫তলা বাড়ী, কিছু জমাজমি, আর কিছু ব্যাংক ব্যালেন্স এই আর কি।
-মেয়ে কি করে…..?
-অনেক কষ্ট করে এস.এস.সি পাস করালাম এখন ইন্টার ফার্ষ্ট ইয়ার, ডিজে ড্যান্সের এসিষ্টেন্ট চেয়ারপার্সন।
-ড্যান্স জানে……..?
-কি যে বলেন ড্যান্স না জানলে এসিষ্টেন্ট চেয়ারপার্সন হয় কিভাবে…?
-ভাল তো…..!
-শুধু তাই নয় বিভিন্ন সময় ড্যান্সের প্রোগ্রামে তার ডাক পড়ে, ড্যান্সের জগতে তার খুবই নাম ডাক।
-এক্সিলেন্ট……!
-মেয়েরে একসময় দেখবেন সে যে আমার মেয়ে আপনি বুঝতেই পারবেননা।
-কারণ….?
-যুগ যাহা চায় তা তার মধ্যে আছে।
-তাহলে তো ভালই।
-আর হ্যা অনেক্ষণ তো বাহিরে দাড়িয়ে কথা বলছি বাসার ভিতরে চলুন।
-না ভিতরে যাবনা।
-কেন….?
-ভাবী সাব আছেনা..
-আরে নাহ, সে নাই।
-কোথায় গেছে…?
-আজ নারী দিবস না। সে ত আবার নারী মুক্তি আন্দোলনের সভানেত্রী।
-তাই নাকি…?
-বসেন।আর বলবেননা সে এত ব্যস্ত যে আমাকে সে সময়ই দিতে পারেনা।
-কেন…?
-সারাদিন এই প্রোগ্রাম সেই প্রোগ্রাম বন্ধু-বান্ধব নিয়েই ব্যস্ত থাকে।
-দারূন তো।
-সবই দেখি ইন্ডিয়ান নায়ক নায়িকাদের বিশাল বিশাল ছবি।
-আর বলবেননা ছেলে মেয়েদের শখ।
-ভাল।
-ঐ বড় শর্টপ্যান্ট পরা নায়িকাটাকে তো চিনলাম না।
-আরে ঐটা আমার মেয়ে।
-কি নাম…..?
-রাখছিলাম রত্না আক্তার তুলি কিন্তু এখন শুনছি তার নাম নাকি রোমানা আক্তার চুমকি।
-বুঝলামনা।
-আমার রাখা নাম তার পছন্দ হয়নি হটাত একদিন হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক আমাকে বলল যে আপনার মেয়ের অনুরোধে নামটা পরিবর্তন করা হল।
-আপনি কিছু বলললেননা।
-কি আর বলব মেয়ে যা ভাল বোঝে।
-তা তো ঠিকই। ছেলেরা কি করে….?
-বড় ছেলে রকি আগে কিছুই করতনা এখন পার্টি-টার্টি করে।
-কোন পদে টদে আছে নাকি………?
-পদ এখোনো পায়নি তবে নেতার নাকি খুব কাছাকাছি থাকে খুব তারাতারি ভাল একটা পদ পেয়ে যাবে।
-ভাল। ছোট ছেলে কি করে…..?
-সেত কিছুই করেনা শুনেছি একটা ব্যবসা করে কিযে ব্যবসা, রাত্রে যে কোথায় থাকে তা জানিনা সাত আটদিন পর কোথা থেকে আবার আসে দু’একদিন দেখি আবার বেশ কিছুদিন দেখা নেই।
-সেকি আপনাদের ভয় হয়না, কিছু বলেননা…….?
-কি আর বলব ছেলে বলে কথা আর ছেলেটার মোটামুটি ভালই সাহস।
-বাবা মা বেচে আছে…..?
-হ্যা।
-তারা কোথায়….?
-বৃদ্ধাশ্রমে।
-সেখানে কেন…..?
-বাবা তে বুড়ো হয়ে গেছে কাপড় চোপর ঠিক রাখতে পারতেননা আর মায়ের সাথে আমার স্ত্রীর সবসময় খটরমটর লেগেই থাকত তাই সেখানেই রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
-খোজ খবর রাখেন……?
-সবসময় খোজ খবর রাখার সময় হয়না প্রতি বছর বাবা-মা দিবস আসলে সেদিন দেখা করার চেষ্টা করি।
-দারুণ তো…!
-আপনি কি করেন…..?
-জমির ব্যবসা।
-সে কি রকম…..?
-যেমন আপণি জমি কিনবেন অথবা বেচবেন আমি সুন্দর একটা ব্যবস্থা করে দিব। আপনার কোনটার প্রয়োজণ আছে………?
-আপাতত নেই।
-প্রয়োজন হলে যোগাযোগ করবেন বুঝলেন আমার কোন লাভ নেই মনুষের উপকার করাই আমার উদ্দেশ্য।
-আপনি আসলেই মহান ।
-কি যে বলেন না………..
-তো ঠিক আছে আর একদিন কথা হবে কেমন…………?
-আছ্ছা
ইন্টারভিউটির বয়স বেশীদিন হয়নি।ভদ্রলোকের বাসার পথে যাতায়াত খুব একটা নেই। লোকমুখে একদিন শুনেছি থার্টি ফার্ষ্ট নাইটের নাচের অনুষ্ঠানে গণধর্ষণের শিকার হয় তার মেয়ে চুমকি, বড় ছেলে পার্টির একটি বড় পদে অধিষ্ঠিত হবার পড় ভাগাভাগির জের ধরে গুপ্ত হত্যার শিকার হয় লাশ বস্তাবন্দী অবস্থায় ডোবার জলে ভাসতে দেখা যায়, ছোট ছেলে মাদক পাচার এর অভিযোগে ধৃত হয় পুলিশের কাছে, স্ত্রী প্যরালাইসিস রোগে আক্রান্ত হয়ে ডান হাত পা অবশ হয়েছে স্পষ্ট করে কথা বলতে পারেনা আর তার সস্তায় কেনা ছিন্তাই করা গাড়ীর আসল মালিকের মামলা খেয়ে এবং জোর করে দখল করা জমিতে বানানো বাড়ী সরকার ক্রোক করে নেয়, ব্যাংকে জমানো টাকার কোন আয়ের সোর্স দেখাতে না পারলে সরকার তার ব্যাংক একাউন্ট জব্দ করে। সব হারিয়ে তার মষ্তিষ্কে বিকৃতি ঘটে এখন সে বিবস্ত্র অবস্থায় রাস্তায় ঘুরে বেড়ায়। বাড়ীটি সরকার সিলগালা করায় তাদের থাকার স্থানটি এখন আর নেই।কমিশনারের বস্তির ভাংগা একটি খুপরিতে ইজ্জত হারানো ড্যন্সার এবং অচল নারী নেত্রী খুজে পেয়েছে অস্থায়ী বাসস্থান।
ইন্টারভিউটিতে আমাদের শিক্ষণীয় কি…………?
১. আকাঙ্খা ভাল তবে উচ্চাকাঙ্খা অবশ্যই পরিত্যগ করা উচিত।
২. আয়ের সোর্স অবৈধ কিনা বৈধ তা যাচাই করা উচিত।
৩. আপনার অতি বিলাসিতা অন্যের অনাহারের কারণ কিনা তা মনে রাখা জরুরী।
৪. শুধু টাকার পিছনে সময় না দিয়ে সন্তানের পিছনে সময় দেয়া অতি জরুরী।
৫. সন্তানকে উচ্চ শিক্ষিত করতে হবে এমন কোন কথা নেই সন্তান সু-শিক্ষিত হচ্ছে কিনা তা খেয়াল রাখা জরুরী।
৬. সন্তানের গতিবিধি পর্যক্ষেণ এবং প্রয়োজনে বয়স অনুযায়ী শাসন জরুরী।
৭. স্ত্রীর ঘরের বাহিরে যাবার জন্য আপনার শিথিলতা একান্তভাবে দায়ী।
৮. পিতা-মাতার দোয়া এবং বদ-দোয়া সন্তানের জীবনে গভীর প্রভাব ফেলে।
৯. বৃদ্ধাবস্থায় পিতা-মাতার শেষ ভরসা সন্তান কিন্তু সেই সন্তানই যদি বৃদ্ধাবস্থায় পিতা-মাতাকে অকুল সাগরে ভাষিয়ে দেয় এর পরিণতি লক্ষণীয়।
১০. লোভ, হিংসা অহংকার অবশ্যই পরিত্যাগ করা উচিত কারণ এ তিন পতনের মুল।
১১. বিশেষ করে ইসলামী অনুশাসন মেনে চলা অতীব জরূরী।
আপনি ভাল হলে সব ভাল, আপনি ভাল হোন সমাজ ভাল হবে
এই হোক আমাদের প্রত্যাশ্যা।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১২:২৮