পোষাক শিল্পের দ্রুত উন্নতির সুবাদে দেশের আনাচে কানাচে গড়ে উঠে অসংখ্য পোষাক কারখানা। সেই সাথে কিছু কারখানার দুর্ঘটনায় অসংখ্য মানুষের প্রানহানি দেশের রেমিটেন্সের থেকেও ভারী হয়েছে পোষাক শ্রমিকদের আর্তনাদ যা বিশ্বের এ প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত প্রতিনিয়ত ভেদ করে চলছে। ২০০৫ সালে সাভারের স্পেকট্রাম গার্মেন্ট ধসে পড়ে মৃত্যু হয়েছিল ৭৬ জনের, ২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর তাজরীন ফ্যাশনসে আগুনে পুড়ে প্রান দেয় ১১২ শ্রমিক, ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সাভারে রানা প্লাজা ধসে প্রাণ যায় ১১৩৫ জনের। এটা সরকারী হিসাব, অনেক কাটছাট । এসব দুর্ঘটনায় নিখোজ, পঙ্গু, আহত যে কতজন তার হিসাব করেছে কয়জন….? যাহোক ক্রেতা মহল নড়েচরে বসে এমনকি ক্যাথলিক ধর্মগুরু পোপ পর্যন্ত বলে বসল যে “…রক্তের দাগ লাগা পোষাক আমরা ক্রয় করবনা….” শুরু হয় পশ্চিমা মহলের কঠোর নজরদারি বাংলাদেশের পোষাক কারখানার উপর দফায় দফায় চলছে কারখানা পরিদর্শন। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ থেকে ইউরোপীয় ক্রেতাদের জোট অ্যাকর্ড, ১২ মার্চ ২০১৪ থেকে অ্যালায়েন্স পোশাক কারখানাগুলো পরিদর্শন শুরু করে। অ্যাকর্ড ১৮০০টি এবং অ্যালায়েন্স ৭২০টি এই দুই জোট মিলে প্রায় ২৫০০ কারখানা পরিদর্শন করার কথা বাকি কারখানা গুলো ডিসেম্বরের মধ্যে পরিদর্শন শেষ করবে আইএলও । গত ২০ এপ্রিল পর্যন্ত পাওয়া তথ্যানুযায়ী, অ্যাকর্ড ২৫০টি (২৫০টি ভবন নিরাপত্তা ও ২০০ কারখানার অগ্নিনিরাপত্তা), অ্যালায়েন্স ২০০টি ও ন্যাশনাল অ্যাকশন প্ল্যানের আওতায় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ২৫২টি কারখানা পরিদর্শন শেষ করেছে। এর মধ্যে ১৫টি কারখানা বন্ধ করে দিতে হয়েছে। ওইসব কারখানায় কাজ করত ১৭ হাজার ৮০০ শ্রমিক যারা এখন বেকার। পরিদর্শনের ধারাবাহিকতায় এক হাজার ৪শ ৩৪টি একক কারখানা ভবন ও ৭৬৯টি শেয়ারড বিল্ডিং পরিদর্শন চলছে। এই পরিদর্শনে বেশিরভাগ শেয়ারড বিল্ডিং বন্ধ হবার আশঙ্কা আছে এবং এই আশঙ্কা বাস্তব হলে আগামী ৩ মাসে ১ লাখ শ্রমিক বেকার হয়ে পড়বে। আর ৫ মাসে তা ৫ লাখ ছাড়িয়ে যাবে। পরবর্তীতে চলতি বছরের ১ জুলাই থেকে ইউরোপীয় ক্রেতাদের জোট অ্যাকর্ড ডিটেইলস ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যাসেসমেন্ট (ডিইএ) শুরু করবে এতে অবস্থা হবে আরও ভয়াবহ। ফলে কত কারখানা যে বন্ধ হবে এবং কত লক্ষ শ্রমিক যে বেকার হয়ে পরবে তা সহজেই অনুমেয়।
পোশাকশিল্পে নিরাপদ কর্মপরিবেশ, কমপ্লায়েন্স ইস্যু, বিদ্যুৎ, অগ্নিনিরাপত্তা, নিরাপদ কারখানা ভবন ইত্তাদি ইস্যুতে সকল পরিদর্শন এবং এর ভাল ফলাফলকে আমরা স্বাগত জানাই কিন্তু লাখ লাখ খেটে খাওয়া মানষের কর্মস্থল বন্ধ করে দিয়ে অর্দ্ধাহারে অনাহারে দিনাতিপাত করা মানুষগুলোর কথা কি আমরা ভাবছি কখনও….? যে কারখানায় নিরাপদ কর্মপরিবেশ, কমপ্লায়েন্স ইস্যু, বিদ্যুৎ, অগ্নিনিরাপত্তা, নিরাপদ কারখানা ভবন ইত্তাদির অভাব মনে হচ্ছে তাদের প্রতি নোটিশ জারি করা হোক, বিশেষ ক্ষেত্রে কারখানা স্থানান্তরের প্রস্তাব দেয়া হোক, সময় বেধে দেয়া হোক অবস্থার উন্নতি করতে না পারলে তার পর তা চুড়ান্তভাবে বন্ধ করা হোক। এমন তো নয় যে কালকেই সেখানে দুর্ঘটনা ঘটবে…? কারও বিল্ডিং ভাল কমপ্লায়েন্স সমস্যা, কারো কমপ্লায়েন্স ভালো বিল্ডিং সমস্যা ইত্তাদি ইত্তাদি এজন্য তো দিন এনে দিন খাওয়া মানুষগুলোর কর্মস্থল বন্ধ করা নিতান্তই অনুচিত। অনেক কারখানা মালিক আর্থিকভাবে দুর্বল তাদেরকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করে মানসম্মত কারখানা তৈরির সুযোগও করে দেয়া যেতে পারে তাতে পোশাক শ্রমিকদের বেকার থাকতে হবেনা। দৃষ্টি আকর্ষন করছি সেসব ক্রেতা মহলের: আপনারা সল্পমূল্যে পোষাক তৈরি করবেন আর কারখানার মান উন্নত চাইবেন তা তো হয়না, সামান্য কিছু রূটি-রুজির বিনিময়ে আপনাদের পোষাক তৈরি করতে গিয়ে আমার ভাই-বোনেরা জীবন বিসর্জন দিলে আপনারা বিনিময়ে কপট অশ্রু বিসর্জন করবেন আর একগুচ্ছ ফুল সমাধিতে অর্পন করবেন, তাতে তো কোন সমাধান হয় না। আপনারা যা দেন তা ভাগাভাগি হতে হতে এমন এক পর্যায়ে আসে তা দিয়ে তাদের ভাগ্যে সারা বছর জোটেনা কোন ভাল খাদ্য, পড়তে পারেনা ভাল কোন পোষাক যাদের তৈরী পোশাক দিয়ে সজ্জিত করেন আপনার শরীর।
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) এবং বাংলাদেশের পোষাক শ্রমিক সংগঠন বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বিটিএমইএর সময় এসেছে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়ার। বিদেশী দাদাবাবুদের সব কথা না শুনে আপনাদের মাথাটাও একটু খাটান কিভাবে এ অবস্থার উন্নতি করা যায়, বুঝতে হবে দাদাবাবুরা এদেশে পোশাক কারখানা রাখতে চায় কিনা। তাদের এই দৌড়-ঝাপ পোশাক শিল্পকে হত্যার রসদ নয়তো……….? বুঝতে হবে আমাদের। এমনতো হতে পারে এদেশে লাখ লাখ শ্রমিককে কর্মহীন করে শ্রমিকঅসন্তোষ সৃষ্টি করে এক অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরির মাধ্যমে পোষাক খাতকে ক্রেতাবিমুখ করার একটা চক্রান্ত, যাতে রেমিটেন্স হারাবে বাংলাদেশ, বেকার হেব কোটি কোটি মানুষ, বাংলাদেশ পরিনত হবে ১৯৬৯ সালের দুর্ভিক্ষের দেশে। কারন পৃথিবীর অনেক দেশে এরকম দুর্ঘটনা ঘটে। আমেরিকার টেক্সাসেও সারকারখানায় দুর্ঘটনা ঘটেছে, ২০১০ সালে চীনে শিল্পদুর্ঘটনায় এক লাখ ৪৭ হাজার ৩৬ জনের মৃত্যু হয়েছে কই তাতে তো কোন কারখানা বন্ধ করার খবর পাওয়া যায়না আর সামান্য ইস্যুতে এদেশে কারখানা বন্ধ করছেন বুঝতে পারছেন এর ফলাফল কোথায় গিয়ে দাড়াবে…? যারা মৃত্যুবরন করেছেন তাদের আত্মার প্রতি শান্তি কামনা করা ঠিক আছে, তাদের জীবননাশের কারণ মনে রাখা উচিত সবই ঠিক আছে কিন্তু মৃতদের জন্য কোটি টাকার স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি না করে অসহায়, পঙ্গু, কর্মহীন পোষাক শ্রমিকদের ভাগ্যের উন্নয়নের চিন্তা করা সময়ের দাবী। নীতি নির্দ্ধারকগন আর যাই করেন হুটহাট করে কারখানাগুলো বন্ধ করবেননা, শ্রমিকদের ন্যয্য পাওনা বুঝিয়ে দিন, মানুষকে কর্মহীন করবেননা, সৃষ্টি করবেননা শ্রমিকঅসন্তোষ………!
আলোচিত ব্লগ
একাত্তরের এই দিনে
শহীদুল ইসলাম প্রামানিক
আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন
হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে
তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন
ইসলামের বিধান হতে হলে কোন কথা হাদিসে থাকতেই হবে এটা জরুরী না
সূরাঃ ৫ মায়িদাহ, ৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
৩। তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত, রক্ত, শূকরমাংস, আল্লাহ ব্যতীত অপরের নামে যবেহকৃত পশু, আর শ্বাসরোধে মৃত জন্তু, প্রহারে মৃত... ...বাকিটুকু পড়ুন
লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা
ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।
মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন
জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না
নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন