somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলাদেশের ওষুধশিল্পঃ রয়েছে এক অপার সম্ভাবনা!

১৩ ই ডিসেম্বর, ২০১২ রাত ১০:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


যে কাউকে আমাদের দেশের সবচেয়ে সম্ভাবনাময় শিল্পখাতগুলো নিয়ে বলতে বললে শুরুর দিকেই থাকবে ওষুধ শিল্প। আমরা সবাই জানি যে বাংলাদেশের ওষুধ শিল্প অত্যন্ত দ্রুত বর্ধনশীল, আমাদের ঔষধও আন্তর্জাতিক মানের। কিন্তু এটাকি জানি যে পৃথিবীর এলডিসি (লিস্ট ডেভেলপড কান্ট্রি) বা অনুন্নত ৪৮ টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ওষুধ শিল্পে সবচেয়ে এগিয়ে আছে? এটা কিন্তু আমাদের দেশের জন্য একটা বিশাল অর্জন! :)

বাংলাদেশের আছে ওষুধশিল্পে দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা, শুরুটা হয়েছিলো সেই ১৯৫০ এর দশকে। বর্তমানে আমাদের দেশীও চাহিদার প্রায় ৯৭ শতাংশ পূরণ হয় দেশে তৈরি ওষুধে, এছাড়া আমরা রপ্তানি করছি ৮০ টিরও বেশী দেশে! গত কয়েক দশকে বাংলাদেশের ওষুধশিল্প প্রভূত উন্নতিসাধন করেছে, আর গত পাঁচ বছরের বাজার প্রবৃদ্ধি তো এক কথায় অসাধারণ। এর পিছনে সবচেয়ে বড় কারন হচ্ছে আমাদের ড্রাগ পলিসি, আর অনুন্নত দেশ হিসেবে আমাদের পাওয়া TRIPS (Trade-Related Aspects of Intellectual Property Rights) রিলাক্সেশন।

১৯৮০ সালে আমাদের ওষুধশিল্প ছিল মাত্র ১০০ কোটি টাকার, সেটা ২০০৩ এ বেড়ে গিয়ে দাঁড়ায় ২৫০০ কোটিতে আর ২০১২ সালে প্রায় ৯০০০ কোটি টাকায়!
নিচে আমি গত পাঁচ বছরের বাজার কে দেখাচ্ছি-



বাংলাদেশের গত পাঁচ বছরের ওষুধ বাজার (কোটি টাকা)



বাজার প্রবৃদ্ধি (%)

যদিও আমাদের ওষুধশিল্প অত্যন্ত দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে, তবে এখনও আমরা ৭০% এরও বেশী কাঁচামাল বাইরে থেকে আমদানি করি। সুখের কথা হচ্ছে আমাদের দেশীও কয়েকটি কোম্পানি ইতোমধ্যেই API (Active Pharmaceutical Ingredient) উৎপাদন শুরু করেছে, এছাড়া খুব শিগগিরিই একটি API Park তৈরির তোড়জোড় চলছে।

আমাদের ওষুধশিল্প একই সাথে দেশীও বাজার এবং আন্তর্জাতিক বাজারে খুব ভালোভাবেই প্রসারিত হচ্ছে এবং আমরা বিভিন্ন উন্নত দেশেও ওষুধ রপ্তানি করছি। ওষুধের আন্তর্জাতিক বাজার মূলত দু ধরনের- রেগুলেটেড এবং আন-রেগুলেটেড। আফ্রিকা বা এশিয়ার অনুন্নত দেশগুলোই হচ্ছে আন-রেগুলেটেড বাজার। এসব দেশে রপ্তানি করা তুলনামুলকভাবে সহজ, কারন এসব দেশের ওষুধশিল্প এখনও তেমনভাবে বিকশিত হয়নি; সরকারও তেমনভাবে প্রতি পদে পদে খবরদারি করে না। কিন্তু রেগুলেটেড মার্কেটে ওষুধ রপ্তানি করা তুলনামুলকভাবে অনেক বেশী কঠিন। এগুলো হচ্ছে ইউরোপ এবং আমেরিকার মত উন্নত দেশ সমুহ। এসব দেশে খুব ভালো মেডিক্যাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার আছে, রেগুলেটরি অথরিটি যথেষ্ট কড়া। একেবারে ১০০% মান নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত কড়া না গেলে ওইসব দেশে ঢোকার কোন উপায়ই নেই!

আমরা সবাই জানি যে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ওষুধের বাজার হচ্ছে আমেরিকা, কিন্তু এরপর? জানি বেশিরভাগই বলবেন চীন, কিন্তু আসলে সেটা ভুল। ওষুধের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাজার হচ্ছে জাপান :)। আসলে বাজার জনসংখ্যার উপর যতটা নির্ভর করে তারচেয়ে বেশী করে সেদেশের মানুষের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উপর। তো এসব দেশে কোন ওষুধ রপ্তানি করতে গেলে কিছু জিনিশ অবশ্যই নিশ্চিত করতে হয়। যেমন-

১. কারখানার আন্তর্জাতিক মান
২. আন্তর্জাতিক মানের কাঁচামাল (API এবং Excipient দুটোর জন্যই)
৩. cGMP (Current Good Manufacturing Practice) মেনে চলা
৪. আন্তর্জাতিক মানের মেশিনারি
৫. দক্ষ কর্মচারী বৃন্দ ইত্যাদি।

কারখানার আন্তর্জাতিক মান বলতে আমরা আসলে কি বুঝি? সেটা কীভাবে প্রমাণ করা যাবে? আসলে কারখানার মান নিশ্চিত করার জন্য কিছু রেগুলাটরি বডি আছে, যারা কারখানা পরিদর্শন করে সেটার মান সন্তোষজনক হলে সার্টিফিকেট প্রদান করে। এমন কিছু রেগুলাটরি বডির মধ্যে আছে USFDA (United States Food and Drug Administration), UK MHRA (UK Medicine and Healthcare Regulatory Authority), Australian TG (Therapeutic Goods) ইত্যাদি। বাংলাদেশে ইতোমধ্যেই কয়েকটি কোম্পানি UK MHRA এর সার্টিফিকেট পেয়েছে, কয়েকটি কোম্পানি পেয়েছে Australian TG এর সার্টিফিকেট, তবে এখন পর্যন্ত কেউই USFDA এর সার্টিফিকেট অর্জন করতে পারে নি।

তো ভালো একটা কারখানা থাকলেই কি হল? না, ভালো ওষুধ তৈরি করতে হলে অবশ্যই ভালোমানের কাঁচামাল লাগবে। সেটাকে হতে হবে Pharmacopoeia Grade- যেমন COS (Certificate of Suitability) grade API. ইউরোপের মার্কেটে রপ্তানি করতে হলে এই COS গ্রেডের কাঁচামাল একদম Basic Need.

ভালো কারখানা আর ভালো কাঁচামাল তো নিশ্চিত হল, কিন্তু এতেই কি শেষ? না, আমাদের মেনে চলতে হবে WHO (World Health Organization) এর cGMP (Current Good Manufacturing Practice), এটি নিশ্চিত করবে ওষুধের গুনগত মান। কোনভাবেই এর ব্যত্যয় হওয়া চলবে না, কারন এছাড়া আন্তর্জাতিক মানের ওষুধ তৈরি করা আসলেই অসম্ভব।

আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, কোন মেশিনারি ব্যাবহার করে ওষুধ তৈরি করা হচ্ছে, ভালমানের ওষুধ তৈরি করতে গেলে অবশ্যই প্রয়োজন ভালমানের মেশিন। বর্তমানে ভারত এবং চীন প্রায় সবধরনের মেশিনই তৈরি করছে, তবে এখনও আমেরিকা বা ইউরোপে তৈরি মেশিনই সবচেয়ে ভালো মানের। রপ্তানির ক্ষেত্রে সবসময়ই ইউরোপিয়ান মেশিনারি ব্যাবহার করা উত্তম!

আর এত সবকিছুর পড়ে আসে একদল দক্ষ কর্মচারী, যারা cGMP এর সমস্ত নিয়ম মেনে সতর্কতার সাথে সম্ভাব্য সেরা মানের ওষুধ তৈরি করবে। বাংলাদেশের কর্মচারীরা কিন্তু এক্ষেত্রে অনেক এগিয়ে আছে, আন্তর্জাতিক মানের ওষুধ তৈরি করার জন্য তাঁরা প্রস্তুত!

বর্তমানে বাংলাদেশে ২৫০ টিরও বেশী ওষুধ কোম্পানি আছে, এগুলোর মধ্যে অবশ্য বেশীরভাগই অন্তর্জাতিক মানের ওষুধ তৈরি করে না। তবে বড় বেশ কয়েকটি কোম্পানি কিন্তু এখনই অত্যন্ত উন্নতমানের ওষুধ তৈরি করছে। আমাদের সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে আমরা তুলনামুলকভাবে অনেক কম খরচে ভালমানের ওষুধ তৈরি করতে পারি, এ সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে ভবিষ্যতে আমরা একদিন বিশ্ব বাজারে মাথা তুলে দাঁড়াবো...সে স্বপ্নই দেখি। বাংলাদেশের একটি কোম্পানির নাম উচ্চারিত হবে Pfizer এর সাথে...স্বপ্নটা কি খুব বেশী বড় হয়ে গেলো? আশাবাদি হতে দোষ কোথায়? :)
৩১টি মন্তব্য ৩০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×