somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রেলমন্ত্রীর জন্য ‘দৃশ্যমান কাজের’ একটি প্রস্তাবনা

২০ শে ডিসেম্বর, ২০১১ সকাল ১০:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শওগাত আলী সাগর
ঢাকা থেকে ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া অবধি ‘তিতাস এক্সপ্রেস’ নামের ট্রেনটি যখন চালু হয় তখন ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া,নরসিংদী,ভৈরবের অনেকেই ঢাকার বাসাবাড়ী ছেড়ে দেয়। এদের প্রায় সবাই চাকরীজীবী এবং ঢাকায় মেসে কিংবা বাসাভাড়া করে থাকতেন,সপ্তাহান্তে ফিরে যেতেন পরিবাররের কাছে নিজ নিজ গ্রামের বাড়ীতে। কিন্তু ‘তিতাস’ তাদের জীবনযাত্রার ধরনটাই পাল্টে দেয়। ঠিক সময়ে ছেড়ে ঠিক সময়ে পৌঁছাটাই যখন এই ট্রেনের বৈশিষ্ট্য হয়ে দাড়ায় তখন নিজ বাড়ী থেকে ভোরের ট্রেনে ঢাকায় গিয়ে চাকরী করে সন্ধ্যায় ফিরে আসাটাই হয়ে উঠে এই অঞ্চলের চাকরীজীবীদের অনেকেরই দৈনন্দিন রুটিন। ’তিতাস এক্সপ্রেস’ এখনো চলছে এবং প্রতিবছরই মুনাফা করে যাচ্ছে। বলে রাখা ভালো ,এই ট্রেনটি পরিচালিত হয় বেসরকারি ব্যবস্থাপনায়।
গত ১২ ডিসেম্বর দৈনিক ‘আমাদের সময়ে’ প্রকাশিত ‘দৃশ্যমান কাজের খোঁজে রেলমন্ত্রী’ শিরোনামে খবরটা পড়তে পড়তেই তিতাস এক্সপ্রেসের কথা মনে পড়লো। আমাদের সময়ের রিপোর্টটিতে যদিও আশাবাদী হ্ওয়ার মতো কোনা বার্তাই নেই। বরং ঘুরিয়ে ফিরিয়ে যে কথাটি বলা হয়েছে তার মর্ম কথা হচ্ছে দেশের প্রথম রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত রেল্ওয়েকে নিয়ে চোখে পড়ার মতো কিছু করতে চান, কিন্তু সেটি করার জন্য পর্যাপ্ত সময় তার হাতে নেই। আমি অবশ্য এর সঙ্গে একমত পোষন করি না। আমি মনে করি ’চোখে পড়ার মতো’ কিছু কাজ অন্তত দুই বছরেরও কম সময়েই করা সম্ভব।
রেলওয়ের ভাবমূর্তিকে ইতিবাচকধারায় ফিরিয়ে আনতে ‘নয়টার ট্রেন কয়টায় ছাড়ে’র ইমেজ থেকে বের করে আনতে হবে। এর সঙ্গে বাজেট বা টাকা পয়সার তেমন একটা সম্পর্ক আছে বলে মনে হয় না। ব্যবস্থাপনার দক্ষতা এবং প্রশাসনিক দৃঢ়তা দিয়েই রেল্ওয়ের সময়ানুবর্তিতাকে নিশ্চিত করা যায়। তিতাস এক্সপ্রেসকেই যদি উদাহরন হিসেবে ধরি, তাহলে দেখা যায় এর ব্যবস্থাপনা এবং লোকবলই কেবল বেসরকারিখাতের। রেল্ওয়ের লাইন ব্যবহার করে তাদের নির্দেশনায়ই এই ট্রেনটি প্রতিদিন চলাচল করে। অথচ বলতে গেলে ঘড়ির কাটার সঙ্গে তাল মিলিয়েই এই ট্রেনটি চলাচল করে। কখনো কখনো এটিও যে দেরি করে না তা নয়, কিন্তু সেটি সামগ্রিক বাংলাদেশ রেল্ওয়ের চরিত্র এখনো ধারন করে নি। মজার ব্যাপার হচ্ছে, প্রতিটি স্টেশনের জন্য নির্দিষ্ট পরিমান আসন থাকে ট্রেনটিতে,সেই আসনঅনুপাতেই টিকেট বিক্রি করা হয়। বাড়তি কিছু টিকেট বিক্রি করা হয় ‘স্ট্যাণ্ডিং’ টিকেট হিসেবে,যারা দাড়িয়ে দাড়িয়ে ট্রেন ভ্রমন করতে চান তারা কিনেন এই টিকেটগুলো। বিনা টিকেটে কোনো যাত্রীকে তিতাসে চড়তে আমি অন্তত দেখিনি।
রেলস্টেশনগুলোকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে বিশেষ করে ওয়াশরুম আর যাত্রীদের অপেক্ষা করার রুমটিকে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখার সঙ্গে নিশ্চয় হাজার কোটি টাকার বাজেটের কোনো সম্পর্ক নেই। রেল্ওয়ের বগিগুলোকে পরিচ্ছন্ন রাখার ব্যাপারটা যোগ করল্ওে কি খরচের হিসাবটা বেশি বেড়ে যাবে? ফ্যানের কথাটা আপাতত বাদই দিলাম,যথাসময়ে ট্রেন চলাচল করলে এইটুকু কষ্ট যাত্রীরা মেনেই নেবেন বলে আমার ধারনা।তবে নিরাপত্তার কারনেই লাইটের ব্যবস্থা রাখা জরুরী।এতে কিছু টাকা ব্যয় হল্ওে বাস্তবায়নে দীর্ঘ সময় লাগার কথা নয়। ট্রেনে চড়ে যারা চলাচল করেন তারা আপাতত এইটুকু পেলেই মন্ত্রীকে, সরকারকে যে বাহবা দিতে শুরু করবেন, তা নির্দি¦ধায় বলা যায়। ডবল লাইন কিংবা অন্যান্য বড় বড় প্রকল্পের জন্যে অর্থের প্রয়োজন,সময়ের প্রয়োজন- সেগুলো তিনি রয়ে সয়ে উদ্যোগ নিতে পারেন।
তিতাসের অভিজ্ঞতা থেকে আরো একটা উদ্যোগ নিতে পারেন আমাদের রেলমন্ত্রী। সেটা হচ্ছে তিতাসের মতো অল্পবগির কয়েকটা ট্রেন চালুর উদ্যোগ নিতে পারেন তিনি। শাটল এই ট্রেনগুলো চলবে কমলাপুর থেকে গাজিপুর,নিদেনপক্ষে টঙ্গী পর্যন্ত। অর্থের যোগান দেওয়া গেলে এই শাটল ট্রেনের ফ্রিকোয়েন্সিটা বাড়ানো যেতে পারে। দিনে রাতে মিলিয়ে বিশেষ করে সকালের অফিস আ্ওয়ারে এবং বিকেলে বাড়ীর ফেরার সময়টায় স্বল্পতম ফ্রিকোয়েন্সীতে এই শাটল ট্রেন চলাচল করলে বিপুল সংখ্যক যাত্রী যে এই শাটলট্রেনগুলোতে চেপে বসবে তা চোখ বন্ধ করেই বলে দ্ওেয়া যায়। রাজধানীর অসহনীয় যানযটে বাসে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকার চেয়ে খানিকটা ঘুরে হল্ওে লোকজন ট্রেনে চড়তেই উৎসাহি হবে। ফলশ্রুতিতে অনিবার্যভাবেই যানযটের চাপ খানিকটা হললেও কমবে।
যানযট নিয়ে আলোচনায় শাটল ট্রেনের প্রস্তাবনাটা ঢাকায় বিভিন্ন সময় উচ্চারিত হতে শুনেছি। কিন্তু এই প্রস্তাবনাটি নিয়ে জোড়েসোড়ে কোনো আলোচনা বা সমীক্ষা চালানোর কোনো খবর আমরা পাইনি। যোগাযোগমন্ত্রণালয় অবশ্য গত তিনবছর ধরেই আকাশ ছোঁয়া নানা ধরনের পরিকল্পনার কথা নগরবাসীকে শুনিয়েছে। কিন্তু রেল্ওয়ে নির্ভর এই প্রস্তাবনাটা সম্ভবত বড় বড় স্বপ্নের ধারে কাছ্ওে পৌঁছাতে পারেনি। নতুন রেলমন্ত্রী যেহেতু ‘একটা কিছু’ করতেই চান, তিনি অন্তত এই উদ্যোগের সম্ভাব্যতা নিয়ে আলোচনার সূত্রপাত করতে পারেন।
পত্রিকার খবর অনুয়ায়ী , বাংলাদেশ রেলওয়ের বর্তমানে ১৪ হাজার ৫৩২ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩২টি নতুন প্রকল্প এবং ৫ হাজার ২৯১ কোটি টাকা ব্যয়ে ১০টি সংশোধিত প্রকল্প রয়েছে। এই প্রকল্পগুলোর কয়টা প্রকল্প সত্যিকার অর্থেই রেল্ওয়ের উন্নয়নের জন্য ন্ওেয়া আর কয়টি রাজনৈতিক কারনে ন্ওেয়া তা জানার সুযোগ আমাদের নেই। তবে রেলমন্ত্রী এই প্রকল্পগুলোর প্রয়োজনীয়তা নিয়ে একটি পর্যালোচনা করে কম প্রয়োজনীয় প্রকল্প থেকে প্রযোজনে তহবিল স্থানান্তর করে ছোটোখাটো কিন্তু অতি প্রয়োজনীয় প্রকল্প বাস্তবায়নের চেষ্টা করতে পারেন। বর্তমান সরকারের ক্ষমতার মেয়াদ আছে আরো দুই বছর। এক বছরের মধ্যেই নতুন রেলমন্ত্রী ’দৃশ্যমান’ কিছু কাজ করে রেল্ওয়ের ঘুরে দাড়ানোর প্রচেষ্টার একটা বার্তা দেশবাসীর সামনে তুলে ধরতে পারেন। নতুন রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত সেটি করবেন কী না সেটিই অবশ্য বড় প্রশ্ন।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আইনের ফাঁকফোকর-০৩

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪২

যেকোনো চাকরির নিয়োগের পরীক্ষা চলছে। সেটা পাবলিক সার্ভিস কমিশন, বিভিন্ন সংস্থা, বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক বা উপজেলা পর্যায়ের কোনো কার্যালয়ে হতে পারে। এই নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস হতে পারে। একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সিকান্দার রাজার চেয়ে একজন পতিতাও ভালো।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৭

সিকান্দার রাজা কোকের বোতল সামনে থেকে সরিয়ে রাতারাতি হিরো বনে গেছেন! কিন্তু তাকে যারা হিরো বানিয়েছেন, তারা কেউ দেখছেন না তিনি কত বড় নেমকহারামি করেছেন। তারা নিজেদেরকে ধার্মিক বলে দাবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×