আজকে চ্যানেল ৭১ এ স্ক্রল দেখলাম ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা গেছেন সেলিম।
কালকেও ঠিক এসময়টাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সাভার রানা প্লাজা থেকে উদ্ধার করা মানুষগুলোর নাম, যোগাযোগের ঠিকানা নিচ্ছিলাম, আগের রেকর্ডের সাথে মিলিয়ে দেখছিলাম। ওয়ার্ড নাম্বার ১০২ ছিলো সম্ভবত। বেড নাম্বার ১০। আমি যখন গেলাম বেড এ রোগী ছিলেন না।ডায়লাইসিসে গিয়েছিলেন। কথা হলো সেখানে রোগীর মামার সাথে।
রোগীর নাম সেলিম রানা। তাঁর মামার কাছ থেকে জানতে পারলাম সেলিম রানার বাড়ি পঞ্চগড়। সাভারে থাকেন। অপারেটর ছিলেন নিট ওয়েভ নামক গার্মেন্টসে। যখন জিজ্ঞেস করলাম আপনার ভাগ্নের কি কি সমস্যা ডাক্তার বললেন? ঊনি বললেন হাত পায়ের ব্যথার সাথে কিডনি তে সমস্যা আছে।
এরপর অন্য রোগীর কাছে চলে গেলাম। তবে নিজের নোটবুকে টুকে রেখেছিলাম ১০ নাম্বার বেড এর রোগীর সাথে দেখা হয়নি।
সাভারের ভবন ধ্বসের পর থেকেই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা (সোস্যাল ওয়েলফেয়ার ক্লাব, ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউট ) আহত, নিখোঁজ মানুষের তালিকা করে আসছিলো। তালিকার হালনাগাদের কাজও চলছিলো সেই সাথে। হাল নাগাদ করতেই কালকে গিয়েছিলাম ওখানে।
এতক্ষনে মামা মনে হয় ভাগ্নেকে নিয়ে রওনা হয়ে গিয়েছেন পঞ্চগড়ের দিকে। সাভার ট্র্যাজেডির শিকারের সংখ্যা বাড়লো আরো একজন। ইমারজেন্সী ওয়েটিং থেকে বলা হয়েছিলো, কাল পর্যন্ত ঢামেক এ আনার পর মৃতের সংখ্যা ৪। এখন ৫।
সাভারে যাদেরকে স্পটে মৃত পাওয়া যাচ্ছে তাদের সংখ্যাটাই বারবার টিভি তে স্ক্রল হচ্ছে। আমি জানিনা যারা আসে পাশের হসপিটালে বা ঢাকায় স্থানান্তরিত হয়েছেন এবং সেখানে মারা গিয়েছেন তাদের সংখ্যাটা যোগ হয় কিনা। তারা সরকারী ২০,০০০ টাকা সাহায্য পাবেন কিনা তাও আমি জানিনা।
(চিকিৎসাধীন যতজনের কাছে গিয়েছি, অধিকাংশই আমি পেয়েছি কিডনির সমস্যা তে ভুগছেন। অনেকের অভিভাবকরা আমাকে ডাক্তার ভেবে কখনো মেডিকেল রিপোর্টের ফাইল এগিয়ে দিয়েছিলেন। আমি শুধুই কি লিখা ছিলো তাই পড়তে পেরেছি। কার অবস্থা কতটা গুরুতর তা বলতে পারিনি, নিজেও বুঝতে পারিনি। ডিএমসি এর ডাক্তার, নার্সরাও আন্তরিক ছিলেন। পথ দেখিয়ে ওয়ার্ড থেকে ওয়ার্ডে নিয়ে গিয়েছিলেন। চিকিৎসাধীন মানুষগুলোও বলেছেন যে ডাক্তাররা একটু পরপরই আসেন। অনেকেই আছেন হয়তো যাদের অবস্থা ডাক্তারদের সাধ্যের বাইরে। কয়েকজন সম্পর্কে ডাক্তার নিচু গলায় কমেন্ট করলেন “ক্রিটিকাল কন্ডিশন”। শুধু এতটুকু আশা লোকগুলো যাতে ক্রিটিকাল কন্ডিশনের বাইরে চলে আসতে পারেন।)