somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি ধার করা গল্প...

১৭ ই মে, ২০০৯ রাত ২:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমি এই সাইটের একজন নতুন সদস্য। সবার এতো লিখা দেখে আমারও খুব লিখতে ইচ্ছা করছিলো, কিন্তু লিখার মতো বস্তুনিষ্ঠ কিছু খুজে পাচ্ছিলাম না। তাই একটা ধার করা গল্প লিখে দিলাম। এই গল্পটি "মুক্তমনা " -র ব্লগে প্রকাশ করেন জনাব হাসান মাহমুদ (ফতেমোল্লা)। মানবতার এই গল্পটি সবার সাথে শেয়ার করাই আমার মূল উদ্দেশ্য। এবার তাহলে শুরু করা যাক..

লাব্বায়েক‌‌‌‌‍‍!

দুই ছেলে হজ্বে যাবে তাই নিয়ে মাহবুব সওদাগরের বাড়ী খুব ব্যস্ত। নুতন বিয়ে ওদের। এখনি সময় হজ্ব করার, পরে বাচ্চাকাচ্চা হয়ে গেলে কঠিন হয়ে পড়বে। লোকে মনে করে হজ্বটা বুড়ো বয়সের ব্যাপার - বড্ড ভুল ধারণা কারণ হজ্বে খুবই শারীরিক পরিশ্রম হয়। বড়ো ছেলে ছোটাছুটি করে যোগাড়যন্ত্র করছে কিন্তু ছোটকে নিয়ে মহাসমস্যা। ছোটবেলা থেকেই তার রহস্যের শেষ নেই, তার রঙ্গরসের পাল্লায় পড়ে চিরকাল সবাই অস্থির। বাবা প্রস্তুতির কথা জিজ্ঞেস করলেই সে বলে - ‘‘হচ্ছে বাবা হচ্ছে, চিন্তা কোরনা। এ বছর যদি একজনের হজ্বও কবুল হয় তো আমারই হবে ইনশা আল্লাহ্‌’’।

বাবা আশ্বস্ত হন কিন্তু ছোটবৌ হয়না। তার বাবাও হজ্ব করেছে, সে জানে হজ্বে যেতে হলে কি হুলুস্থুল আয়োজন করতে হয়, কতো জায়গায় কতো ছোটাছুটি করতে হয়। সে দিব্যি দেখতে পাচ্ছে স্বামী তার মহা আরামে গা’ এলিয়ে আছে, যোগাড়যন্ত্রের কোন খবরই নেই। জিজ্ঞেস করলেই হেসে বলে - ‘‘আমারটা আমি করছি - তুমি তোমারটা গুছিয়ে নাও তো, শেষে তোমার জন্য দেরী না হয়’’। বৌ ত্রস্তে এটা ওটা গোছায় কিন্তু মনে গেঁথেই থাকে সন্দেহটা। তার ওপর সেদিন মাহবুব সওদাগরের কাছ থেকে স্বামী আরো এক লাখ টাকা চেয়ে নিল। কেন নিল?

তারপর একদিন বড় চলে গেল হজ্বের ক্যাম্পে বৌয়ের হাত ধরে। বাবা ছোটকে জিজ্ঞেস করলেন -
‘‘তোর হজ্ব-ক্যাম্প, ফ্লাইট, এসবের কিছুই তো বললি না’’।
ছোট হেসে বলে - ‘‘ক্যাম্পে কেন যাব। বাড়ি থেকে সোজা হজ্বে যাব - ব্যবস্থা সবই হচ্ছে - তুমি নিশ্চিন্ত থাকো তো বাবা’’।

যাবার দিন এল। রওনা হবার সময় বাবা বুকে জড়িয়ে দোয়া করলেন, মা অশ্রুসিক্ত চোখে ছেলে-বৌয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে কি বললেন বোঝা গেল না। গাড়ির ড্রাইভার ডি”কি’র মধ্যে স্যুটকেস পুরে দরজা খুলে দাঁড়িয়ে আছে। মা’কে জড়িয়ে ধরে কপালে ছোট্ট একটা চুমু খেয়ে ছোট বলল - ‘‘দশদিন পর ফিরে আসব। দোয়া করো আর শুটকি রান্না করে রেখো মা’’।
বাবা অবাক হলেন - ‘‘দশদিন পর ফিরবি?’’
‘‘ফিরব বাবা, কথা দিচ্ছি হজ্ব করেই ফিরব। ঠাট্টা নয় বাবা - সত্যি বলছি’’।

বৌয়ের কানে গেল কথাটা। সে জানে দশদিনে হজ্ব করে ফেরা যায় না। কিন্তু সে এ-ও জানে স্বামী যে দৃঢ় আত্মবিশ্বাসে কথাটা বলেছে নিশ্চিন্ত হয়েই বলেছে। যা সে বলেছে তা করবে। কিন্তু কি করে করবে? এমনিতে স্বামী তাকে ছাড়া চোখে অন্ধকার দেখে, তার সান্নিধ্যে শক্তি পায় এগুলো নিয়ে মনে মনে তার ভারী স্বামীগর্ব। পেছনের সিটে বসল দু’জন - গাড়ী চলা শুরু করলে সে স্বামীর কানে কানে জিজ্ঞেস করে -

‘‘আমরা কোথায় যাচ্ছি গো? হ্যাঁ?’’
‘‘কোথায় আবার, হজ্বে যাচ্ছি’’।
‘‘এভাবে কেউ হজ্বে যায়? আসলে কোথায় যাচ্ছি সত্যি করে বলোনা !’’
ছোট হেসে বলে - ‘‘হজ্বেই যাচ্ছি। সবুর করো, একটু পরেই দেখতে পাবে’’।
বৌ সবুর করল। তারপর আর পারল না, বলল -
‘‘বাবার কাছ থেকে এক লাখ টাকা বেশী নিলে কেন?’’
ছোট আবারও হেসে বলল - ‘‘সবুর করো, একটু পরে সেটাও দেখতে পাবে’’।
বৌ আবারও খুব সবুর করল। গাড়ী এসে দাঁড়াল বাস ষ্টেশনে। বৌ বলল
‘‘এ তো বাস ষ্টেশন’’ !
‘‘হ্যাঁ - বাস ষ্টেশনই তো’’।
‘‘বাসে করে হজ্বে যাচ্ছি?’’
‘‘হ্যাঁ। পথে কিছু কষ্ট করতে হবে - পারবে তো?’’
‘‘আমরা হজ্বে যাচ্ছি না। বাসে করে কেউ হজ্বে যায় না। বাবাকে এভাবে ঠকালে’’?
‘‘কাউকে ঠকাইনি। এ বছর যদি কারো হজ্ব কবুল হয় তো আমাদেরই হবে ইনশা আল্লাহ। ওখানে গিয়ে বলবে লাব্বায়েক্‌’’।
‘‘মানে কি?’’
‘‘লাব্বায়েক মানে হল আমি হাজির। অর্থাৎ হে আল্লাহ, তুমি ডেকেছ, এই যে আমি হাজির হয়েছি’’।

ড্রাইভার ডি”কি থেকে বাসে তুলে দিল স্যুটকেসগুলো, মৃদুহেসে বলল -
‘‘আপনেরে হাজার সালাম সার। আপনেরে হাজার হাজার সালাম সার। অ্যামতেই ধীরে ধীরে মুসলমানের চৌক্ষু খুইলা দিব আল্লায়’’।
‘‘সব রওনা হয়ে গেছে ঠিকমতো? পরের এক লাখ টাকারটাও?’’
‘‘হ সার। শ্যাষের চালান নিজের হাতে রওনা করাইয়া দিছি পরশু’’।

এসব শুনে রমণীয় কৌতুহলের চাপে বৌয়ের অজ্ঞান হবার অবস্থা কিন্তু স্বামীকে মনে হচ্ছে অচেনা। ওই বুকে কি এক অস্থির ঝড় চলছে তা তার চোখ দেখলে বোঝা যায়। তার সদা দুরন্ত কৌতুকময় চোখ দু’টো এখন যেন ফ্রেমে বাঁধা ঝড়ের ছবি। বাস চলা শুরু করলে বৌ বলল -
‘‘কোথায় যাচ্ছি আমরা?’’
‘‘রংপুর’’।
‘‘রং - পু - র’’? আঁৎকে উঠল বৌ, - ‘‘রংপুর কেন? ওখানে তো আমাদের কেউ নেই?’’

স্বামী শক্ত করে চেপে ধরল বৌয়ের হাত। গভীর নিঃশ্বাসে শুধু বলল - ‘‘আমার হাত ধরে থাকো’’।

এবার বৌয়ের হাতও আঁকড়ে ধরল স্বামীর হাত, বুঝল কিছু একটা ঘটতে যাছে যা আগে কখনো ঘটেনি। বাস চলছে সাভার পার হয়ে। স্বামী হাতের ব্যাগ খুলে বের করল মাস খানেক আগের কিছু পুরোন খবরের কাগজ। মোটামুটি একই তারিখের এতগুলো কাগজ - বৌ যেন কিছু একটা বুঝে বুঝেও বুঝতে পারছেনা। আড় চোখে দেখল স্বামী কাগজগুলো একটা একটা করে খুলছে - সেই সাথে শক্ত দৃ• হয়ে আসছে তার চিবুক, ঠোঁটে শক্ত হয়ে চেপে বসছে ঠোঁট আর ঘন হয়ে আসছে তার নিঃশ্বাস।

দুপুরে রংপুরে বাস থেকে নেমে ঘটঘটে বেবিট্যাক্সীতে গ্রামের পথ। বিকেলে দুর গ্রামের কাছাকাছি আসতেই কানে এল জনতার হৈ হৈ। কাছে এসে বৌ দেখল দাঁড়িয়ে আছে চাল-ডাল-আলু-পেঁয়াজ ভর্তি তিনটে ট্রাক। ট্রাকের ওপর থেকে তরুণ-কিশোরের দল মহা উৎসাহে ক্ষুধার্ত লোকজনের মধ্যে বিতরণ করছে চাল-ডাল আলু-লবণ তেল আর পেঁয়াজ-মরিচ। ওড়নাটা কোমরে আচ্ছা করে পেঁচিয়ে মুখে বিন্দু বিন্দু ঘাম নিয়ে ট্রাকের ওপরে দাঁড়িয়ে তাদের নেত্রীত্ব দিচ্ছে পাড়ার আপামণি। হাঁকডাকে ব্যতিব্যস্ত গ্রামের মাতব্বর আর মসজিদের ইমাম। ভয়ংকর মঙ্গা দুর্ভিক্ষ চলছে উত্তরবঙ্গে, ক্ষুধার দাউ দাউ আগুনে পুড়ে যাচ্ছে কোটি মানুষ। শুকিয়ে যাওয়া অশ্রু চোখে লুটিয়ে ঘুমিয়ে আছে হাড্ডিসার শিশুকন্যা, হাড্ডিসার বালক। অনাহার জর্জরিত বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, অনাহার জর্জরিত নিরুপায় যুবক। অন্য এক ভয়ংকর আতংকে আতংকিত ক্ষুধার্ত যুবতি - গত মঙ্গায় দু’টো নুন-ভাতের জন্য নোংরা ফড়িয়ার বিছানায় শরীর বিক্রী করার দুঃসহ স্মৃতি আবার তার সামনে কালনাগিনীর ছোবল তুলে এদিক ওদিক দুলছে। খবরের কাগজে সেসব পড়ছে আর ছবি দেখছে দেশের মানুষ কিন্তু চিনতে পারছে না। সরকারও চিনতে পারছে না।

ওরা এ দেশের নয়। ওরা পরিত্যক্ত, ওদের কেউ নেই।

পলকের জন্য টলে উঠল বৌয়ের মাথার ভেতর।

কিন্তু এখন জনতার ক্ষুধিত আর্তনাদ বদলে হয়েছে উৎসবের চীৎকার। বৌ মুগ্ধ চোখে দেখল মানুষের আনন্দ, তারপর দুষ্টুমি করে বলল -
‘‘ও !! হজ্বের টাকায় দান-ধ্যান হচ্ছে তাহলে?’’
‘‘দান?’’ চকচক করে উঠল স্বামীর দু’চোখ - ‘‘কিসের দান? কাকে দান? আশরাফুল মাখলুকাত ওরা, আপাততঃ একটু কষ্টে পড়েছে। আমি তো শুধু উপহার দিচ্ছি, মানুষের প্রতি মানুষের উপহার’’।
মুগ্ধ বৌয়ের মুখ ফসকে বেরিয়ে এল - ‘‘তুমি একটা ফেরেশতা !’’
‘‘না। আমি তার চেয়েও বড়, আমি বনি আদম। কোরাণ পড়ে দেখ, বনি ইসরাইল আয়াত বাষট্টি’’।

তারপর স্বামী তার সেই পুরোন পরিচিত দুষ্টুমিভরা চোখে বললঃ-
‘‘আসলে কি জানো? ব্যবসায়ীর ছেলে তো আমি - উপহারের নামে আমি আসলে ব্যবসা করছি। ধারের ব্যবসা -শ্‌শ্‌শ্‌শ্‌ ……..কাউকে বোলনা যেন!’’
‘‘ধারের ব্যবসা? এই দুর্ভিক্ষের দেশে?

বিষ্ময়ে বৌয়ের কথা আটকে গেল গলায়। বাক্‌চাতুরীতে আর দুষ্টুমিতে স্বামী তার অনন্য, কিন্তু একের পর এক এত বিস্ময়ের ধাক্কা সে আর সামলাতে পারছে না।

‘‘কিসের ধার? কাকে ধার ?’’
‘‘বুঝলে না? আল্লাকে ধার দিচ্ছি, প্রচুর লাভ হবে বৌ !’’
‘‘আল্লাকে ধার দিচ্ছ ? তওবা তওবা !’’
‘‘তওবা মানে? আল্লা তো নিজেই মানুষকে ডেকে ডেকে ধার চাচ্ছেন !
‘‘আল্লা মানুষকে ডেকে ডেকে ধার চাচ্ছেন ? তওবা তওবা !’’
‘‘কিসের তওবা ? খুলে দেখ কোরাণ শরীফ - ‘‘এমন কে আছে যে আল্লাহকে দেবে উত্তম কর্জ, আর আল্লাহ তাকে দ্বিগুন বহুগুন বেশী করে দেবেন?
‘‘কি ? কি বললে ??’’
‘‘এমন কে আছে যে আল্লাহকে দেবে উত্তম কর্জ, আর আল্লাহ তাকে দ্বিগুন বহুগুন বেশী করে দেবেন’’ - সুরা বাকারা ২৪৫।
‘‘কি আশ্চর্য্য !! এই দুর্ভিক্ষের সময়ে কেউ এ আয়াতের কথা দেশের সবাইকে বলে না কেন?’’
‘‘বলা দরকার, রেডিয়ো-টিভি খবরের কাগজ সব জায়গায় বলা দরকার। ঢাকায় ফিরে পড়ে দেখো সুরা হাদীদ আয়াত এগারো, মুয্‌যাম্মিল বিশ আর আত্‌ তাগাবুন সতেরো -‘‘কে সেই ব্যক্তি যে আল্লাহকে উত্তম ধার দেবে এরপর তার জন্য তিনি বহুগুণ বৃদ্ধি করবেন …. আল্লাহকে উত্তম ঋণ দাও…. যদি তোমরা আল্লাহকে উত্তম ঋণ দাও তিনি তোমাদের জন্য তা দ্বিগুন করে দেবেন ….’’। এই দশ ট্রাকের ধার দিচ্ছি, রোজ হাশরে বিশ ট্রাকেরও বেশী সওয়াব পাব। তার সবটাই তোমাকে দিয়ে দেব যাও!’’

হেসে ফেলল বৌ। ছোটকে দেখে ছুটে এল মাতবর আর ইমাম - অনেক কথা হল তাদের মধ্যে। বৌ মুগ্ধ চোখে দেখতে লাগল মানুষের আনন্দ। ক্ষুধার্তের মুখে অন্ন তুলে দেবার মতো আনন্দ আছে? ক্ষুধার্তের মুখে অন্ন তুলে দেবার মতো ইবাদত আছে? দিগন্তে তখন সুর্য্য ডুবুডুবু, মন্দ মন্থরে সন্ধ্যা নামছে। নামহীন এক গভীর তৃপ্তিতে ভরে আছে বৌয়ের মন। চমক ভাঙ্গল যখন স্বামী এসে বলল -

‘‘জানো, আমার দেখাদেখি অন্যেরাও কিছু পাঠাচ্ছে’’।
‘‘আমার কিছু গয়না আছে। তা থেকে কিছু নাহয়……..’’
‘‘আচ্ছা। অন্য ট্রাকগুলো অন্যান্য গ্রামে গেছে - কাল আমরা সেসব জায়গায় যাব। আমি চাই আমার বৌ নিজের হাতে খাবার বিলোবে আর বাচ্চাদের কোলে বসিয়ে মুখে তুলে খাওয়াবে। ক্যামেরা এনেছি - তোমার বাচ্চা খাওয়ানোর ছবি তুলব’’।
‘‘না - ছবি তুলবে না’’।
‘‘কেন? ছবি তুলবে না, আশ্চর্য্য মেয়েমানুষ তুমি !!’’
‘‘এসব ছবি তারাই তোলে যারা পত্রিকায় ছাপে প্রচারের জন্য। ছবি তুললে তোমারও সেই ইচ্ছে হবে’’।
‘‘তথাস্তু। প্রচারের জঞ্জাল আমাদের দরকার নেই, ছবি ক্যান্‌সেল। রাতে থাকবে ইমামের বাসায়, কষ্ট হবে না তো?’’
‘‘না - কষ্ট হবে কেন’’।
‘‘শোন। মন দিয়ে শোন’’।

বৌ মন দিয়ে শুনল, - এত মন দিয়ে সে কোনদিনই কারো কথা শোনেনি। অশরীরী এক দৃপ্তিতে স্বামী তার ফিসফিস করে উঠল - ‘‘আমার ঘরে একদানা খাবার থাকতে মানুষকে না খেয়ে মরতে দেব না আমি’’।

শিউরে উঠল বৌ, - বললঃ- ‘‘শান্ত হও। মঙ্গা চিরদিন থাকবে না। মানুষ আবার উঠে দাঁড়াবে, ফসল ফলাবে, বৌ-বাচ্চা নিয়ে ভালই থাকবে। তখন আমরা আবার হজ্ব করতে যাব।’’
‘‘নিশ্চয়ই - অবশ্যই - ইনশা আল্লাহ’’।

দৃঢ় পদক্ষেপে স্বামী চলে গেল ট্রাকের কাছে। সামনে ধু ধু বন্ধ্যা জমি - ওপরে অবারিত আকাশ। পাশে ঝোপের ডালে উড়োউড়ি করছে একটা ফড়িং, মাটিতে ঘোরাঘুরি করছে নামহীন দু’টো পোকা আর পাশ দিয়ে ছুটে যাচ্ছে একদল পিঁপড়ে। কি যেন কি নিয়ে ওরা সবাই খুব ব্যস্ত।

ওদের কেউ কি কোনদিন না খেয়ে মরেছে?

বৌ কল্পনায় দেখল এয়ারপোর্টে সাদা কাপড়ে মাথা কামানো হাজার হাজার আনন্দিত হজ্বযাত্রী হুড়োহুড়ি করে প্লেনে উঠছে আর বুকভরা তৃপ্তিতে বলছে শুকুর আল্‌ হামদুলিল্লাহ!! ওদিকে দুরে দাঁড়িয়ে ছোট্ট দু’টো ক্ষুধার্ত ভাই-বোন হাত ধরাধরি করে করুণ চোখে তা দেখছে। ভাইটা আস্তে করে বলল - ‘‘বড় হইয়া ত’রে হজে লইয়া যামু’’। দ্বিধাগ্রস্ত ছোট্ট বোনটা কি যেন ভাবল। তারপর ফিসফিস করে যেন নিজেকেই প্রশ্ন করল - ‘‘ওইহানে ভাত আছে’?

আবারও পলকের জন্য বৌয়ের মাথাটা টলে উঠল।

মায়াময় গ্রামবাংলার প্রান্তে নেমে আসছে মায়াময় গ্রামবাংলার সন্ধ্যা। চমক ভাঙ্গল যখন পেছন থেকে স্বামী এসে তার হাত ধরল। বৌ চোখ তুলে দেখল স্বামীর দু’চোখে জ্বলছে হাজার জোনাকি। সেই জোনাকি-চোখ বৌয়ের দু’চোখে গেঁথে স্বামী বলল -

‘‘জানো, নবীজি বলেছেন যার প্রতিবেশী না খেয়ে থাকে সে মুসলমান নয়। যে মুসলমানই নয় তার আবার হজ্ব কি?’’

তারপর বৌ-এর হাত ছেড়ে সে সোজা হয়ে থমকে দাঁড়াল। পুরো নিঃশ্বাসটা বুকের ভেতরে টেনে একটু আটকে নিল যেন। তারপর দু’হাত সোজা ওপরে তুলে আকাশের দিকে মুখ তুলে সর্বশক্তিতে চীৎকার করে উঠল - ‘‘লা-ব্বা-য়ে-ক……!!’’

সুদুর পশ্চিমে দিগন্তবিস্তৃত মরুকেন্দ্রে তখন কাবা শরীফের চারধারে জলদমন্দ্রে ধ্বনিত-প্রতিধ্বনিত হচ্ছে লক্ষ কণ্ঠের সেই একই আকুতি - ‘‘লাব্বায়েক……..!!’’
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই মে, ২০০৯ রাত ৩:১৭
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫….(৭)

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৭

ষষ্ঠ পর্বের লিঙ্কঃ মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫-….(৬)

০৬ জুন ২০২৫ তারিখে সূর্যোদয়ের পরে পরেই আমাদেরকে বাসে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হলো। এই দিনটি বছরের পবিত্রতম দিন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাঙ্গাইল শাড়িঃ অবশেষে মিললো ইউনস্কর স্বীকৃতি

লিখেছেন কিরকুট, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৭



চারিদিকে যে পরিমান দুঃসংবাদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এর মধ্যে নতুন এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হলো বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের তাতের শাড়ি এর জন্য, ইউনেস্কো এই প্রাচীন হ্যান্ডলুম বুননের শিল্পকে Intangible Cultural... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

×