আমার এক বন্ধু সিয়াম, নতুন সাইকেল কিনেছে। ভেলোস লিগ্যাসি। নতুন সাইকেল কেনার খুশিতে আমি সহ কয়েকজন বন্ধুকে রেস্টুরেন্টে খাওয়ালো। সাইকেলটা রেস্টুরেন্ট এর সামনেই ছিল। আমরা খাওয়া শেষ করে বের হতেই দেখি বাইরে ভিড়! কয়েকজন লোক মিলে ছোট একটা ছেলেকে বেধম পেটাচ্ছে। ছেলেটা মারের চোটে নিঃশ্বাস টুকু নিতে পারছেনা। কি যেন বলতে চাইছে, কেউ বুঝতে চাচ্ছে না। ওপাশ থেকে আওয়াজ শুনা যাচ্ছে, " আরও মার, আরও মার। ইগুর হাড্ডি-গুড্ডি ভাঙ্গি দেওয়া দরকার। তালা ভাঙ্গিয়া সাইকেল নিতগি চায়! "
আমরা তো অবাক! নতুন সাইকেলটা দেখলাম মাটিতে পড়ে আছে। তার মানে কি ওই ছেলে সিয়াম এর সাইকেলটা চুরি করতে চেয়েছিল ? যার সাইকেল তার খবর নাই, পথচারির ঘুম নাই! আমরা চারজন ভিড় ঠেলে গিয়ে বললাম ওকে আর মারার দরকার নেই, সাইকেল আমাদের। আমরা দেখছি। তারপর সিয়াম ছেলেটিকে পানি খাওয়ালো। সবার সামনে জিজ্ঞেস করল যে ছেলেটি আসলেই চুরি করতে চেয়েছিল কিনা। ছেলেটি কান্না থামাতে পারছিল না। চোখ মুছতে মুছতে বলল, " ভাইয়া আমি সাইকেলের গিয়ার বদলাচ্ছিলাম। আমার সাইকেল আছে একটা, ওটাতে গিয়ার নাই। আমার আব্বা রিক্সা চালায় তাই গিয়ার ওয়ালা সাইকেল কিনে দিতে পারেনা। ভাইয়া আমি চুরি করতে চাইনি। " নির্বোধ বঙ্গ সন্তানেরা তখনও বলে যাচ্ছে," ভাই ওই ছেলে মিছা কথা কইতাছে। বিশ্বাস কইরেন না।" কোনমতে পিশাচদের হাত থেকে রক্ষা করে ওই পিচ্চিকে আমরা ওর বাড়ি পর্যন্ত নিয়ে গেলাম। গিয়ে ওর বাবার কাছে জানতে পারলাম, ও সত্যিই আমাদের মত বড়লোকদের গিয়ার ওয়ালা সাইকেল দেখে বাপের কাছে বায়না ধরেছিল গিয়ার সাইকেল কিনবে। বাবা বকা দেওয়ায় রাগ করে ঘর থেকে বের হয়ে গিয়েছিল সেই ভোর বেলা। সিয়াম এর এতোই খারাপ লাগলো যে সে তার নতুন বাইক ওই ছেলেকে দিয়ে দিতে চাইল। অথচ সে নিজেই অনেক কষ্টে টিউশনি করে টাকা জমিয়ে সেটা কিনেছে। সিয়াম বলল, নিজে টিউশনি করে টাকা জমিয়ে যদি এই ছোট ছেলেটার আবদার মেটাতে পারি তাহলে আমি শান্তি পাবো, আমার কাছে সাইকেলটা থাকলে আমি শান্তি পাবনা। ভেতরটা কচকচ করবে। দোস্ত, বাঁধা দিস না, দিয়ে দেই ওকে। সাইকেল পেয়ে ছেলেটা কি যে খুশি! ওর বাবা আমাদেরকে জড়িয়ে ধরে কাঁদলেন, আমাদের জন্য দোয়া করলেন। ও হ্যাঁ, পরে আবার আমরা বন্ধুরা মিলে টাকা তুলে সিয়ামকে আরেকটি সাইকেল কিনে দিয়েছিলাম!
হ্যাঁ, গল্পটি কাল্পনিক। রাজনের গল্পটি হতে পারতো এরকম। ভাগ্যিস, কোন এক সিয়াম এগিয়ে আসতো! রাজনের মত ছেলেকে অকালে প্রাণ হারাতে হতোনা। রাজনের গল্পটি হতে পারতো এই গল্পের মতই সুন্দর। সিয়াম এর মত ছেলেদের বড়ই অভাব এই সমাজে। রাজন,তুই পুঁড়া কপাল নিয়ে জন্মেছিলি রে ভাই। আমাদেরকে ক্ষমা করে দিস তুই।
বিদ্রঃ দেশে আইন আছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আছে। তোমরা কারা? তোমাদের কি অধিকার আছে অবুঝ একটা ছেলের গায়ে হাত তুলার? Who the hell are you? মানলাম সে হয়তো চুরি করতে চেয়েছিল। কিন্তু বাচ্চা একটা ছেলে পেটের দায়ে সবজি বিক্রি করতে হচ্ছে, হয়তোবা চুরিও করতে হচ্ছে। এর জন্য কারা দায়ী? আমাদের কি কোনই দায় নেই? বড় তো একেকজন বাহাদুর হয়েছ! বচ্চাদের মেরে, মেয়েদের লাঞ্চিত করে একেকজন বাহাদুর বীরপুরুষ! ছিঃ এতো অধপতন! বাংলাদেশ আমার গর্ব। কিন্তু নিজেকে বাংলাদেশি বলতে আমার লজ্জা হয়, শুধু তোদের কারনে।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জুলাই, ২০১৫ ভোর ৪:৪৮