অবশেষে “অসমাপ্ত আত্মজীবনী” এবং “মুক্তিযুদ্ধ জনযুদ্ধ ও রাজনিতী” বই দুইটা পড়া শেষ করলাম। এর উপর আমার অব্জারবেশন এবং কিছু সম্পূরক মন্তব্য শেয়ার করি। এখান থেকে ভারতবর্ষের ইতিহাস ও বঙ্গবন্ধুর সম্পর্কে কিছুটা ধারনা পাওয়া যাবে।
১। বাঙ্গালী শব্দটাকে পৃথিবীতে এখন সম্মানজনকভাবে উচ্চারন করা হয়। বাংলাদেশ না হলে বাঙ্গালী শব্দটা হয়ে যেত কাশ্মীরি, রোহিঙ্গা, উইঘুর বা খালিস্তানদের মত সমার্থক। আমরা পড়ে থাকতাম ইতিহাস আস্তাকুড়ে! বাঙ্গালীর ইতিহাস অনেক দীর্ঘ হলেও পাকিস্তান আমল পর্যন্ত সবাই বাঙ্গালিদের নীচু প্রজাতির মানুষ বলেই ট্রিট করতো তা। কিন্তু সৌভাগ্যবশত আমরা একটা দেশ পেয়েছি। এই বাঙ্গালিদের সাথে এখন ভিবিন্ন দেশের মন্ত্রী এমপিরা সাক্ষাৎ করে, ইনভাইট করে। আমরা তৈরী করেছি অনেকের নির্ভরতার যায়গা। বাঙ্গালীরাই এখন আমলা হয়, বাঙ্গালীরাই এখন দেশ চালায়। বাংলাদেশ সৃষ্টি হওয়ার আগে এসব চিন্তাই করা যেতোনা। সবকিছুর জন্য ধন্যবাদ বঙ্গবন্ধু।
২। সাম্প্রদায়িকতা এ অঞ্চলের মানুষের রক্তে। ১৯৪৭ সালের পূর্ববর্তী সময়ে পুরো ভারতবর্ষ হিন্দু মুসলমান দুই ভাগে বিভক্ত ছিল। হিন্দু মুসলমানের মধ্যে প্রায়ই দাঙ্গা লেগে থাকতো। শুধু ধর্মের দোহাই দিয়ে হিন্দু মুসলমানের রক্তে ভেসে গেছে পুরো ভারতবর্ষ যার সুযোগ নিয়েছে ব্রিটিশরা ও কিছু সাম্রাজ্যবাদ চক্র। এই সূত্র ধরেই মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ দ্বিজাতিত্ত্ব নামক ভুজুং ভাজং প্রস্তাব রচনা করেন। সেটা সময়ের দাবি হলেও ব্যাক্তিগতভাবে আমি মনে করি এটা ইতিহাসের একটা বড় ভুল। সেই ভুল থেকে বাংলাদেশ বেরিয়ে আসতে পারলেও এখনো কাশ্মীর, পাঞ্জাব, খালিস্তান সহ অনেক নাম না জানা জাতি এখনো নির্যাতিত হচ্ছে এবং সংগ্রাম করে যাচ্ছে। এসবের জন্য তৎকালীন শাসনব্যাবস্থা তথা ব্রিটিশ রা দায়ী এই ব্যাপারে কোন সন্দেহ নাই।
৩। বঙ্গবন্ধু পাকিস্তান সৃষ্টির আন্দোলনের গুরুত্বপুর্ন একজন কর্মী ছিলেন। মুসলিম লিগের হয়ে তৎকালীন পাকিস্তানী নেতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ, খাজা নাজিম উদ্দিন, শের ই বাংলা এ কে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহারাওয়ার্দীর সহ বাঘা বাঘা নেতাদের সাথে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে ভূমিকা রাখেন। যার ফলে ১৯৪৭ সালে স্বাধীন পাকিস্তান সৃষ্টি হয় অন্যদিকে সৃষ্টি হয় ভারত । পাকিস্তান পাওয়ার জন্য এ অঞ্চলের মানুষ কতটা বিভোর ছিল এবং এর জন্য কতটা সংগ্রাম আর ত্যাগ তিতীক্ষা করতে হয়েছে তা ১৯৪৭ সালের পূর্ববর্তী সময়কার বঙ্গবন্ধুর লেখা ঘটনাগুলো পড়লে স্পষ্ট বোঝা যায়। সবাই ভেবেছিল পাকিস্তান সৃষ্টি হলে ভালোভাবে বেঁচে থাকার অধিকার পাওয়া যাবে।
৪। দ্বিজাতিত্বের ভিত্তিতে পাকিস্তান সৃষ্টি হওয়ার পর কোন সমস্যা থাকার কথা ছিলোনা। যেহেতু সাম্প্রদায়িকতা এই অঞ্চলের মানুষের রক্তে সেটা মুছে যায়নাই। শুরু হয় বাঙ্গালী অবাঙ্গালি দ্বন্দ্ব যেটার জন্য তৎকালীন প্রশাসন দায়ী এই ব্যাপারে কোন সন্দেহ নাই। পাকিস্তান সৃষ্টিতে বাঙ্গালীদের গুরুত্বপুর্ন ভূমিকা থাকলেও তাদেরকে রাখা হয়েছে ক্ষমতার বাইরে তবুও কারো মধ্যে ক্ষমতা নিয়ে হা হুতাশ দেখিনাই। বঙ্গবন্ধু তখনই কথা বলেছেন যখন বুঝতে পেরেছেন এ দেশের মানুষকে বঞ্চিত করা হচ্ছে নানান ভাবে। এই সময়ে বাংগালী অবাঙ্গালীর মধ্যে বেশ কয়েকটা দাঙ্গা হয়েছিল যার সুবিধাভোগী ছিল অবাঙ্গালী শাসকগোষ্টী।
৫। ১৯৪৭- বাংলাদেশের স্বাধীনতার মধ্যবর্তী সময়ের বেশীরভাই কাটিয়েছেন জেলে। বিনা বিচারে মাসের পর মাস জেলে আটকে ছিলেন। কারন একটাই, বাঙ্গালিদের অধিকার নিয়ে কথা বলা। তিনি জেলে থাকলেও তার উপর থেকে জনগনকে বিচ্ছন্ন করতে পারেনি কখনো। রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র মামলায় পালিয়ে থাকাটা তিনি কখনোই পছন্দ করতেন না। এমনকি মামলায় দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের বা জেলারদের মধ্যে এই আত্মবিশ্বাস ছিল যে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতারি ফরোওয়ানার কথা জানালে তিনি নিজেই এসে গ্রেফতার হবেন। বঙ্গবন্ধুর ব্যাক্তিত্ব ও আইনের প্রতি শ্রদ্ধা মাপকাঠিএখান থেকে বোঝা যায়।
৬। পাকিস্তানীদের রাজনীতির অপর নাম ষড়যন্ত্র। ক্ষমতার অপব্যবহার করে কিভাবে নিজেদের পকেট ভারী করা যাবে সে চেষ্টায় তারা ব্যাস্ত। ধর্মের ধুয়ো তুলে, অস্ত্র দিয়ে ভিন্নমত দমন করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করে গেছে এরা। পাকিস্তানীদের এই অপরাজনীতির ট্রেডিশন আজও যায়নি তা এদের রাজনৈতিক ইতিহাস দেখলেই বুঝা যায়। ভারত পাকিস্তান একসাথে স্বাধীন হয়েছে কিন্তু দুই দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার দিকে তাকালে ব্যাপারটা অনুমান করা যায়।
পরিশেষে বলতে চাই, আমার সেসব মানুষদের জন্য খারাপ লাগে যারা এক জাতি হয়েও একে অপরের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। ধর্ম কিম্বা অঞ্চল দিয়ে দেশকে ভিবক্ত করার চেষ্টা করে। সবাই বাঙ্গালী কিন্তু সামান্য গুজবে একে অপরকে মেরে ফেলে। টিকটক ব্যবহারকারীদের মত তৈরি হচ্ছে এক ঝাঁক ব্রেইনলেস প্রজন্ম যারা না জানে দেশের ইতিহাস না জানে নিজের ইতিহাস। এদের ব্রেইনটাকে প্রোপারলি ইউটিলাইজ করার জন্য এদের জানা দরকার ইতিহাস। সঠিকভাবে কেউ যদি তার প্রজন্মের ইতিহাস জানে কেউই কারো উপর হিংসাত্মক আচরন করতে পারেনা, অহংকারী হতে পারেনা। বাঙ্গালীর ইতিহাস সংগ্রামের ইতিহাস, নির্যাতিত হওয়ার ইতিহাস। এখানে যারা আছে সবাই বাঙ্গালী। সবার সংস্কৃতি এক! এখানে ভিবক্তির কিছু নাই। পৃথিবীর বুকে বাংলাদেশ নামটা গৌরবান্বিত হয়ে উঠুক। জয় বাংলা
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই নভেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৫:৪৯