somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মাওলানা আকরম খাঁর বর্ণাঢ্য জীবন (১ম কিস্তি)

০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১২ রাত ৯:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


শেখ আবুল কাসেম মিঠুন



প্রতিষ্ঠিত কায়েমী স্বার্থ যে পরিবেশ ও পরিস্থিতি সৃষ্টি করে সেই আবহাওয়ায় এক শ্রেণীর মানুষ তাদের সমস্ত আদর্শ ত্যাগ করে আত্মোন্নয়নে নিজস্ব ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে শুধুমাত্র সুযোগের সদ্ব্যবহার করে পার্থিব উন্নতি সাধনে ব্রতী হয়। আর শক্তিশালী কায়েমী স্বার্থের প্রতিকূলে যারা একটি নির্দিষ্ট আদর্শিক উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যায় তারা সামগ্রিক মানবকল্যাণ ও মানব উন্নয়নের জন্য তাদের সমস্ত শক্তি, অর্থ, মেধা, শ্রম ব্যয় করে নির্দিষ্ট কর্মসূচি অনুযায়ী কর্মপদ্ধতি প্রয়োগ করে থাকেন। প্রতি পদক্ষেপে সেখানে আসে বাধা-বিপত্তি, আসে দুঃখ-কষ্ট, অভাব, অসম্মান এবং কখনো আসে প্রাণনাশের হুমকি। খরচ হয় অর্থ-সম্পদ, শক্তি এবং সকল প্রকার আরাম আয়েশ ও সুখ নিদ্রা তাকে ত্যাগ করতে হয়।
সিঁড়ি বেয়ে ভবনের নিচে নামা অতি সহজ, প্রথমোক্ত ব্যক্তিরা এই সহজ পদ্ধতির নাম রেখেছেন উন্নতি। আর একটা একটা করে সিঁড়ি ভেঙে যারা মানবকল্যাণে কাজ করেন তাদের ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপ করতে চান।
যারা ব্যক্তিস্বার্থের জন্য, ভোগ-বিলাসের জন্য, মানুষের কাছে নাম ও মান-সম্মান পাওয়াতে ব্যস্ত, সমস্ত সততা ও আদর্শিক চিন্তাধারাকে যারা বর্জন করেছে, আর যারা সততার আদর্শকে বুকে নিয়ে ত্যাগ করেছে, কষ্ট-দুঃখ, লাঞ্ছনা সহ্য করেছে, সারাজীবন প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে মানবকল্যাণে কাজ করেছে- এই পৃথিবীতে এবং পরকালে তাদের পুরস্কার কখনো এক নয়।
মাওলানা মোহাম্মদ আকরম খাঁ তেমনি একজন ব্যক্তি যিনি উন্মত্ত স্বার্থের জোয়ারের বিপরীতে সাঁতার কেটে, তার মেধা, শ্রম, শক্তি ব্যয় করে, আরাম-আয়েশ, সুখ-শান্তি ত্যাগ করে তার সুনির্দিষ্ট আদর্শিক লক্ষ্যস্থলে পৌঁছেছিলেন। শুধু বাংলায় নয়, বরং ভারতীয় উপমহাদেশে মুসলমানদের অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য যে কয়েকজন নেতা সক্রিয় ছিলেন তিনি তাদের অন্যতম। ‘‘তাকে মুসলিম বাংলার সাংবাদিকতার পথিকৃৎ এবং জনক হিসেবে অভিহিত করা যায়।” মাওলানা মোহাম্মদ আকরম খাঁকে মুসলিম সাংবাদিকতার জনক বলা হয়। তার প্রতিষ্ঠিত “দৈনিক আজাদ” পাকিস্তান আন্দোলনের একমাত্র বাংলা মুখপত্র হিসেবে গণ্য ছিল। বাংলাভাষী মুসলমানদের একমাত্র সম্বল ছিল দৈনিক আজাদ।
কি কি পরিস্থিতি এবং পরিবেশের তাড়নায় মাওলানা মোহাম্মদ আকরম খাঁ রাজনীতি এবং সাংবাদিকতার পেশা বেছে নিয়েছিলেন, শুধু তাই নয় তাঁর লেখক জীবনও যে একটা আদর্শিক ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত ছিল সে প্রসঙ্গে পর্যায়ক্রমে এবার আলোচনা করা যাক।
তার ছিল প্রবল ঈমানী শক্তি, তার চিন্তাধারা ছিল সততা ও আদর্শের আলোকে দীপ্ত। পৃথিবীর সমস্ত মুসলমানের উপর তার ছিল অগাধ ভালবাসা, যেমন একজন মুমিনের থাকা উচিত। তার চিন্তা-চেতনা ও কর্মধারা প্রসঙ্গে দু’একটি বিষয়ে আলোকপাত করলে উপরোক্ত মন্তব্যের সত্যতার প্রমাণ পাওয়া যাবে।
তার রচিত “মোস্তফা চরিত” গ্রন্থে তিনি লেখেন, “জীবনে একবারও কোরআন শরীফের কোনো একটি অধ্যায় পাঠ করার সৌভাগ্য যিনি লাভ করিয়াছেন, তাহাকে স্বীকার করিতেই হইবে যে, এই শ্রেণীর গতানুগতিক ও অন্ধ বিশ্বাসের মূলোচ্ছেদ করাকেই কোরআন নিজের প্রথম ও প্রধান কর্তব্য বলিয়া নির্ধারিত করিয়াছে। কিন্তু হইলে কি হইবে আজ মুছলমান নিজের জন্মগত ও পারিপার্শ্বিক কুসংস্কারের চাপে কোরআনের সেই স্পষ্ট শিক্ষাকে একেবারে ভুলিয়া বসিয়াছে, ভুলিয়া বসাকেই, এমনকি সেই শিক্ষার বিরুদ্ধাচরণ করাকেই আজ তাহারা “এছলাম” বলিয়া মনে প্রাণে বিশ্বাস করিতে অভ্যস্ত হইয়া পড়িয়াছে।”
“মুছলমানকে আজ আবার নতুন করিয়া শিখাইতে হইবে যে, আল্লাহ্ ও তাহার রছুল ব্যতীত যিনি যত বড় পীর-দরবেশ অলি বা আলেম হউন না কেন যুক্তি প্রমাণ ও দলিলের বিপরীত হইলে তাহার কথা মানিব না, কারণ ইহাই সম্পূর্ণ অনৈছলামিক শিক্ষা। এই শিক্ষা ও বিশ্বাসের ফলেই মুছলমানের যত সর্বনাশ হইয়াছে। এ কথাগুলি মুছলমান জনসাধারণকে ভাল করিয়া বুঝাইয়া দিতে হইবে...অন্ধ বিশ্বাসের মূলোৎপাটন করাই এছলামের প্রধান শিক্ষা।”
মুসলমানদের স্বার্থের প্রশ্নে তিনি ছিলেন আপসহীন। এই প্রসঙ্গে দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ, “বাঙ্গালী মুসলমানদের রাজনৈতিক জনক” প্রবন্ধে লিখেন, “মুসলমানদের রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধি ও সংহতি প্রতিষ্ঠার জন্য মাওলানা আকরম খাঁ একদিকে নিজ সমাজ এবং অন্যদিকে প্রতিবেশী হিন্দু সমাজ ও ইংরেজ শক্তির বিরুদ্ধে আপসহীন সংগ্রামে রত ছিলেন।”
মুসলমানদের স্বার্থরক্ষার জন্য সংগ্রামের এই যে চিন্তা-চেতনা, নিষ্ঠা সততা, আদর্শ, মাওলানা মোহাম্মদ আকরম খাঁ কোথায় পেয়েছিলেন এই প্রশ্ন আসাটা স্বাভাবিক। তার অসাধারণ জীবনধারা পর্যালোচনা করলে তিনটি উৎসের সন্ধান পাওয়া যায়।
বংশগত শিক্ষা ও সংস্কৃতি।
পরিবেশ ও পরিস্থিতির ঘাত-প্রতিঘাত।
পবিত্র কোরআন ও হাদিসের সঠিক জ্ঞান।

মাওলানা মোহাম্মদ আকরম খাঁর বংশের ষষ্ঠ পূর্বপুরুষ পর্যন্ত নাম জানা যায়। তাদের সকলেই ছিলেন ধার্মিক, মহৎপ্রাণ ও স্বদেশানুরাগী। তার পিতা মাওলানা বারী খাঁ আরবী ও ফার্সি ভাষায় বেশ কয়েকটি উচ্চমানের গ্রন্থ রচনা করে পন্ডিত হিসেবে পরিচিত হন। “উনিশশতকের প্রথমার্ধে পাঞ্জাব ও উত্তর পশ্চিম সীমান্ত অঞ্চল শিখদের অধীনে ছিল। শিখরা মুসলমানদের ধর্মকর্মে বাধা প্রদান করতো, নির্যাতন করতো। একসময় শিখরা মুসলমানদের ‘আজান’ দেয়া নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।” “হোলকারদের অন্যতম প্রাক্তন সেনাপতি মাওলানা সাইয়েদ আহমদ বেরলভী [১৭৮৬-১৮৩১] প্রতিবাদস্বরূপ শিখদের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করেন। এবং মুসলমানদের সংগঠিত করে তিনি ওয়াহাবী আন্দোলন গড়ে তোলেন।” “মাওলানা বারী খাঁ সাইয়েদ আহমদ বেরলভীর সৈন্যদলে একজন অগ্রসেনানীরূপে পরিচিতি এবং খ্যাতি অর্জন করেন।” “মাওলানা মোহাম্মদ আকরম খাঁর দাদা তোরাব আলী খাঁও ছিলেন একজন সংগ্রামী পুরুষ। মুসলমানদের স্বার্থ রক্ষায় তিনি শহীদ তিতুমীরের সহযোদ্ধা হয়ে জিহাদে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন বৃটিশদের বিরুদ্ধে।”
মুসলমানদের স্বার্থ রক্ষায় ও অধিকার আদায়ের সংগ্রামে যার পিতা ও পিতৃপুরুষরা হাত গুটিয়ে বসে থাকেননি, সেই জেহাদী রক্ত যার শরীরে, ঈমানী তেজ যার অন্তরে তিনি কিভাবে নিরুপদ্রব জীবন কাটাতে পারেন! বিশেষ করে তারই চোখের সামনে ধীরে ধীরে এককালের রাজা-বাদশা ও শাসকশ্রেণী মুসলমান জাতি যখন ক্ষমতা হারিয়ে চরম অধঃপতনের শেষ সীমায় পৌঁছে গেছে!
১৮৭৯ খ্রিস্টাব্দে তার পিতামাতা একই দিনে কলেরায় আক্রান্ত হয়ে ইন্তেকাল করেন। তখন আকরম খাঁর বয়স মাত্র ১১ বছর। যে বয়সে সহজ-সরল কিশোররা পৃথিবীর দিকে নতুন করে তাকাতে শেখে। এ সময়ে অবিভক্ত ভারতবর্ষের এই বাংলা ভূখণ্ডে নির্যাতিত শোষিত নিগৃহীত মুসলমানরা অবৈধ ও বেআইনিভাবে বঞ্চিত, তাদের দীর্ঘশ্বাসে বাংলার বাতাস ভারী হয়ে গিয়েছিল।
কিন্তু মুসলমানদের বঞ্চনার ইতিহাস আরো আগে ১৭৫৭ সাল থেকে। নবাব সিরাজউদদৌলার পরাজয়ের পর বৃটিশ তথা খ্রীস্টান সাম্রাজ্যবাদীরা যখন অখণ্ড ভারতের শাসক হয়ে বসে। বর্ণহিন্দুরাই প্রকারান্তরে খ্রীস্টানদের শাসকের আসন পাকাপোক্ত করে দেয়। উদ্দেশ্য ভারতের মুসলমানদের ধীরে ধীরে ধ্বংস করে দেয়া। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, আদর্শিক ও সামাজিকভাবে মুসলমানদের ধ্বংস করতে করতে প্রায় দেড়শত বছর শেষে ১৯০০ সালের দিকে অখণ্ড ভারতের মুসলমানদের অবস্থা এমন দাঁড়ায় যে, প্রভাত মুখোপাধ্যায় লিখেছেন, “হিন্দু রাজনৈতিক আন্দোলনকারীরা হিন্দু জাতীয়তার দ্বারা উদ্বুদ্ধ হইয়া রাজনীতির ক্ষেত্রে অবতীর্ণ হইয়াছিলেন, বিশিষ্ট নেতারাও মুসলমানদের সহিত ছুৎমার্গের সীমানা পার হইয়া মিশিতে পারিতেন না। এমন কি মফস্বলে হিন্দু-মুসলমান নেতারা বক্তৃতা করিতে গিয়াছেন- হিন্দু নেতারা জলপান করিবেন বলিয়া মুসলমান ‘ভ্রাতা’কে ঘরের একটু বাহিরে যাইবার অনুরোধ করিলেন।” মুসলমান ছুঁয়ে দিলে হিন্দুদের জাত যায়, তারা অপবিত্র হয়ে যায়। তারা মুসলমানদের নিকৃষ্ট ও ঘৃণ্য জীবের চেয়েও জঘন্য পর্যায়ে নামিয়ে দেয়। এ শিক্ষা হিন্দুদের ধর্মীয় শিক্ষা থেকে উৎসারিত নয়, এ শিক্ষা তাদের পরিবার থেকে আজও দেয়া হয়, এ শিক্ষা তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সমাজ থেকে আজও প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় ভয়ার্ত সন্ত্রস্ত এক হিন্দু পরিবারকে এক মুসলিম পরিবার আশ্রয় দেয়। অনাহারক্লিষ্ট, অসহায় ও ভয়ার্ত হিন্দু পরিবারটির জন্য মুসলিম পরিবারকর্তা অনেক কষ্ট করে খাবার জোগাড় করেছেন কিন্তু তারা তা খায়নি বরং চাউল চেয়ে নিজেরা রান্না করে খেয়েছে। রান্নার পূর্বে তারা মাটির চুলো গোবরজল দিয়ে লেপে নিচ্ছিল। গৃহকর্ত্রী প্রশ্ন করলেন, “কি হচ্ছে দিদি?” উত্তর এলো, “একটু ‘নিকিয়ে’ নিচ্ছি।” অর্থাৎ চুলাটিও তাদের কাছে অপবিত্র, আগুনে তা পবিত্র হয়নি। ১৯০০ সাল থেকে ১৯৭১...প্রায় ৭১ বছর পরে এসেও মুসলমানদের প্রতি হিন্দুদের এই দৃষ্টিভঙ্গি ছিল এবং আজও তদ্রূপ দৃষ্টিভঙ্গি বিদ্যমান। এইসব ঘৃণা, অপমান এবং জঘন্য আচরণ ছাড়াও ধর্মকর্মে বাধা প্রদান, দাড়ি-টুপিকে তাচ্ছিল্য করা এবং দাঙ্গা, খুন, সন্ত্রাস, নির্যাতন ও হত্যা-গুপ্তহত্যার যে চিত্র ইতিহাসে পাওয়া যায় এবং উপরোক্ত চিত্র থেকে যে পরিবেশ পরিস্থিতির পরিচয় পাওয়া যায় তাতে বুঝা যায় “পাকিস্তান” নামে মুসলমানদের পৃথক আবাসভূমির অতীব প্রয়োজন ছিল। মাওলানা মোহাম্মদ আকরম খাঁ এই রকম পরিস্থিতিতে শুধুমাত্র মুসলমানদের পুনর্জীবিত করার লক্ষ্যে রাজনীতি ও সাংবাদিকতার সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে ফেলেন।
হিন্দুরা এতসবেও থেমে থাকেনি, ডা. শ্যামা প্রসাদ মুখার্জীর “হিন্দু মহাসভা” দয়ানন্দ সরস্বতী প্রতিষ্ঠিত “আর্যসমাজ” ইত্যাদি সংগঠনগুলো মুসলমানদের জোর করে হিন্দু ধর্মে ধর্মান্তরিত করতে থাকে।
অন্যদিকে বৃটিশ উগ্র খ্রিস্টান সাম্রাজ্যবাদের অত্যাচার, নিষ্পেষণ কারো অজানা নয়। তদুপরি তাদের মিশনারিগুলোও মুসলমানদের খ্রিস্টান ধর্মে ধর্মান্তরিত করতে থাকে। ১৯১১ সালের আদমশুমারীর রিপোর্ট অনুযায়ী বাংলায় ১৯০১ থেকে ১৯১১ সাল পর্যন্ত খ্রিস্টানদের সংখ্যা বৃদ্ধির হার ছিল ৭৯.৫%। “আঞ্জুমানে ওলামায়ে বাঙ্গালার” পঞ্চবার্ষিক রিপোর্টে আদমশুমারির বিভিন্ন সমপ্রদায়ের আনুপাতিক সংখ্যা বৃদ্ধির খতিয়ান তুলে ধরে দেখানো হয়- ১৯১১ সালের মধ্যে কমপক্ষে ৫০ হাজার মুসলমান খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণ করে।
মাওলানা মোহাম্মদ আকরম খাঁ ছাত্র অবস্থায় লেখাপড়ার বাইরে খ্রিস্টান মিশনারীদের বিরুদ্ধে তৎপর ছিলেন। তিনি খ্রিস্টানদের ইসলাম বিরোধী মিশনারী প্রচারণার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান এবং এ বিষয়ে বক্তৃতা, প্রবন্ধ ও প্রচারপত্রের মাধ্যমে জনমত গড়ে তুলতে সচেষ্ট হন। খ্রিস্টান মিশনারীদের বিরোধিতা করার সাথে সাথে তিনি বৃটিশ শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধেও প্রচার চালান। বৃটিশদের ভারতবর্ষ থেকে উৎখাত করতে পারলে ইসলাম বিরোধী প্রচারণার অবসান হবে বলে তিনি যুক্তি দেখাতেন।
আজো মুসলমানদের উপর হিন্দু, খ্রিস্টান ও ইহুদীদের দৃষ্টিভঙ্গির কোনো পরিবর্তন তো হয়ইনি বরং উত্তরোত্তর তা আরো নিকৃষ্ট পর্যায়ে চলে গেছে। যদি কেউ বলেন, হিন্দুদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হয়েছে আর তাইতো এদেশের একশ্রেণীর কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, রাজনৈতিক নেতা, শিল্পি ও বুদ্ধিজীবী তাদের সাথে হরিহর আত্মা হয়ে গেছেন, তাই তাদের বলা, লেখা ও সাংস্কৃতিক চর্চায় শুধু হিন্দু বন্দনা, তবে তিনি ভুল বলেছেন বলে নিঃসন্দেহে বিশ্বাস করতে হবে। অথবা তিনি যে ব্যক্তিই হোন না কেন তিনি মুসলিম নামের ছদ্মাবরণে একজন হিন্দু ছাড়া কিছুই নয়। তিনি অবশ্যই ভণ্ড ও প্রতারক মুসলমান। অথবা মুসলিম নামের আড়ালে হিন্দুদের সন্তান, তারা নেতা, বুদ্ধিজীবী, শিল্পী ও সাংবাদিক হলেও তারা হিন্দুদের সঙ্গে একাত্ম হয়ে আজো সেই একই রকম মুসলমান ধ্বংসের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। নইলে মাওলানা মোহাম্মদ আকরম খাঁর ৬২ বছরের মুসলিম রক্ষার সংগ্রাম ব্যর্থ হয়ে যায়।
মুসলমানদের প্রতি অবিচার, অত্যাচার, শোষণ, নির্যাতন ও ধ্বংসের ষড়যন্ত্রের বিপরীত সেদিন এই বাংলা ভূখণ্ডে ঈমানী তেজ, বীরত্ব, সততা, নিষ্ঠা এবং সাহসিকতা নিয়ে হাতে তুলে নিয়েছিলেন একে ৪৭ রাইফেল নামক ‘কলম’ মুখে ছিল মুসলমানদের স্বার্থরক্ষা ও অধিকার আদায়ের আত্মত্যাগের সুর মেশানো তেজোদীপ্ত বলিষ্ঠ মধুর ভাষা। তিনি মাওলানা মোহাম্মদ আকরম খাঁ। তখন তার বয়স মাত্র ৩২ বছর, কেবলমাত্র এফ.এম পরীক্ষা পাস করে [২য় বিভাগে] তিনি প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাজীবনের সমাপ্তি ঘটিয়েছেন। ১৯০০ সাল। মাওলানা মোহাম্মদ আকরম খাঁ জ্ঞানী, শিক্ষিত, বিচক্ষণ এবং বলিষ্ঠ এক যুবক। উপরোক্ত পরিবেশ ও পরিস্থিতিতে তিনি তার অন্তরাত্মা, মন-মস্তিষ্ক, শিরা-উপশিরা এমনকি তার প্রতিটি লোমকূপ পর্যন্ত প্রতিবাদের কঠিনতম শপথে শাণিত করেছেন। (চলবে)

০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×