somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

সেলিনা জাহান প্রিয়া
আমি সেলিনা জাহান প্রিয়া , জন্ম পুরান ঢাকা, নাজিরা বাজার , নানা বাড়িতে ।বাবার বাড়ি মুন্সী গঞ্জ , বড় হয়েছি ঢাকা ।স্বামীর বাড়ি কিশোরগঞ্জ ।ভাল লাগে ঘুরে বেড়াতে , কবিতা , গল্প , উপন্যাস পড়তে অজানাকে জানতে । ধর্ম বিশ্বাস করি কিন্তু ধর্ম অন্ধ না ।

চঞ্চল ও তিন কুকুরের ছানা (বাস্তব কাহিনী )

০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ৮:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ডিসেম্বর মাস চঞ্চলের স্কুল বন্ধ । তাই নানা বাড়ি বেড়াতে এসেছে মায়ের সাথে এ বছর চঞ্চল ক্লাস ফাইভ এ উঠল । চঞ্চলের খালার বাড়ি পাশের গ্রামে । ধুলা উড়াতে উড়াতে চলে আসে খালার কাছে । সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত চঞ্চল বেড়ায় খলার বাড়িতে । যাওয়ার পথে দেখে রাস্তার পাশে তিনটা কুকুরের ছানা । চঞ্চল এদের পেয়ে বেশ খুশি । একটা কুলে নিলে বাকি দুইটা পিছে পিছে চলে আসে । চঞ্চলের মা খুব রাগ হয় কুকুরের বাচ্চা দেখে । কিন্তু চঞ্চলের নানা ভাই বলে থাক নাতি সখ করে এনেছে ।
থাকুক আমি এই কুকুর গুলো রাখার ব্যবস্থা করছি । বিকালে বাজার থেকে কুকুরের বাচ্চার জন্য চঞ্চলের নানা একটা ভাতের মার যাতে খাওয়াতে পারে সেই রকম একটা বড় বোতল নিয়ে আসে । চঞ্চল সে কি মায়া কুকুরের জন্য ।সারা দিন চঞ্চলের পিছু পিছু থাকে কুকুরে ছানা গুলো । গত একমাসে তাদের সাথে একটা নিবিড় সম্পর্ক গড়ে উঠে । কুকুরের বাচ্চা গুলো চঞ্চল নিজের হাতে বোতলে ভাতের মার ভরে খাওয়াবে । গোসল করাবে আর । ধান খেতের মধ্য নিয়ে ছুটা ছুটি করবে । এক মাসে কুকুর ছানা গুলো বেশ একটু বড় হয় । সারা ক্ষণ কুকুর ছানা গুলো চঞ্চলের পায়ের পাশে পাশে থাকে । অবুঝ প্রানি কি একটা মায়ায় জরিয়ে যায় চঞ্চলের সাথে । চঞ্চল ও তাদের সাথে মিশে যায় পরম মমতায় । কিন্তু চঞ্চলের স্কুল খুলে যাবে তাই কুকুর গুলো রেখে আসতে তার খুব মন খারাপ হয় । কুকুরে বাচ্চা গুলো চঞ্চলের রিক্সা পর্যন্ত এসে লেজ নাড়াতে থাকে । চঞ্চল তার বাবা মায়ের সাথে চলে যায় কুকুর ছানা গুলো চেয়ে থাকে
চঞ্চল রিক্সা থেকে পিছন ফিরে দেখে কুকুর গুলো চেয়ে আছে । চঞ্চল বাবার মায়ের সাথে ঢাকা চলে আসে । চঞ্চল তার নানা কে চিঠি লিখে যে কুকুর গুলো যাতে বাড়িতে থাকে এবং খেয়াল রাখে । তাদের যেন ঠিক মত খাবার দেয়া হয় ।
কুকুর গুলো মাঝে চঞ্চল যেখান থেকে রিক্সায় উঠে চলে যায় । প্রায় সকালে কুকুর গুলো ঐ জায়গায় যে দাড়ায় তিনটা এক সাথে । চঞ্চলের নানা বলে আয় চলে আয় চঞ্চল চলে আসবে । কুকুর যেন চঞ্চল নামের সাথে সব বুঝতে পারে ।
এক বছর পর চঞ্চল তার মা বাবা সবাই আবার গ্রামের বাড়িতে আসে ।
রিক্সা থেকে বাড়ি নামতেই কুকুর তিনটা এক দৌরে চঞ্চলের কাছে চলে আসে । এখন কুকুর গুলো অনেক বড় । চঞ্চল কে পেয়ে কুকুর গুলো চঞ্চলের পাশে যায় । পায়ের কাছে তার নিজের শরীর আগলে দাড়ায় । কুকুর নাক দিয়ে চঞ্চলের গায়ের গন্ধ নিতে থাকে । চঞ্চল খুব অল্প সময়েই বুঝে যায় কুকুর তাকে চিনতে পেরেছে । চঞ্চল তকুকুর গুলো মাথায় হাত দেয় । এখন চঞ্চল যে খানে কুকুর সেখানে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত । চঞ্চল পুকুরে নামলে কুকুর । খেলতে গেলে কুকুর । বাজারে গেলে কুকুর ।
। বেশ মজা করে সারা দিন কুকুরে সাথে । এক দিন রাতে বেলা কুকুর খুব চিৎকার চেঁচামেচি করছে । চঞ্চলের বাবা একটু রাগ হয়ে বলল-
চঞ্চলের ঘরে কুকুর গুলো রেখে আসো । খাটের তলে ঘুমাবেনে । না হয় রাতে ঘুমানো যাবে না। তাই চঞ্চলের মা বলল চঞ্চল কে কুকুর গুলো যেন তার ঘরে নিয়ে রাখে ।
চঞ্চল কুকুরের মাথায় হাত রাখলে তিন টা কুকুর চুপ হয়ে যায় । সেই রাতেই ডাকাত আসে এই বাড়িতে । তারা বাড়ির সবাই কে এক সাথে করে হাত পা বাধে । তাদের কাছে বড় দা , কিরিজ , চাকু , চাপাটি , টেঁটা । সবাই চুপ চাপ দাড়িয়ে । পাচ ডাকত বাড়িতে আর দু ডাকত বাড়ির বাহিরে । সবার হাত বাঁধা । এক ডাকত চঞ্চলের রুম খুলে । চঞ্চল কিছু বুঝে উঠতে পারছে না। কুকুর গুলো ঘুমিয়ে আছে । এক ডাকাত চঞ্চলের ধরে আনতে গেলে কুকুর গুলো ডাকত কে তাকিয়ে দেখে । চঞ্চল বলে আপনি কে । এক ডাকত চঞ্চলের চুল ধরলে , চঞ্চল মা বলে কেঁদে দেয় । আর এই কি তিন কুকুর মিলে ডাকাতদের উপর লাফিয়ে পরে । তিন কুকুর মিলে ডাকাতদের কামরাতে থাকে । যে চঞ্চলের চুলে হাত দিয়েছিল ওকে কামড়ে মাংস তুলে নেয় । কুকুরে চিল্লাচিল্লি চেঁচামেচি তে গ্রামের সবাই জেগে উঠে। ডাকাতের
দায়ের কুবে আর টেঁটার আঘাতে দুই কুকুর মামা যায় । তিন ডাকাত আহত হয়ে ধরা পড়ে । সারা গ্রামের মানুষ কুকুর দেখার জন্য বাড়িতে ভীর জমায় । বাড়ির সাবাই কুকুরের জন্য কান্না করে । যে একটা কুকুর বেঁচে আছে সেটাও আঘাত প্রাপ্ত হয় । চঞ্চলের বাবা সেই কুকুর নিয়ে সকালে পশু ডাক্তারের কাছে যায় । বাড়ির সবাই কুকুরের জন্য খুব কষ্ট পায় । চঞ্চলের সে কি কান্না ।চঞ্চলের মা পর্যন্ত ছেলের সাথে কুকুরের জন্য কান্না করে । যে তার ছেলে কে কুকুর গুলো এত ভালবাসত । যে কুকুর
টা বেঁচে ছিল তা পরিবারের সবার কাছে খুব আপন হয়ে যায় ।চঞ্চল গলা জরিয়ে তাকে তার গ্রামে রেখে ঢাকা আসে । স্কুল ছুটি হলে শুধু চঞ্চল কুকুর টাকে দেখার জন্য
সে গ্রামে আসে । চঞ্চলের মা কিছু না কিছু রান্না করে দেয় কুকুরের জন্য ।
অনেক বছর পড় একটা সড়ক দুর্ঘটনায় শেষ কুকুর টা মারা যায় ।
তখন চঞ্চল এস এস সি পরীক্ষা চলছিল । চঞ্চল পরীক্ষা ফেলে চলে আসে । ১৯৮৫ সালের ঘটনা । সেই বছর চঞ্চল আর পরীক্ষা দিতে পারে নাই । কুকুর তিনটা একটা পুকুর পারে কবর দেয় শিমুল গাছের নিচে । এখনো চঞ্চল নানা বাড়ি গেলে পুকুরের উত্তর পাশে একটু যায় , শিমুল গাছের তলে । কুকুর গুলো তাদের পরিবার কেউ মনে করে । তখন অনেক বড় বিপদ থেকে রক্ষা করে ছিল এই কুকুর গুলো ।
আজ পর্যন্ত চঞ্চল কাউকে কুকুর বলে কোন দিন গালি দেয় না। এখন পর্যন্ত
চঞ্চলের পরিবারের সবার হৃদয়ে কুকুর গুলো বেঁচে আছে ।।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৩:৩৪
১৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশ একদিন মাথা উঁচু করে দাঁড়াবেই

লিখেছেন নতুন নকিব, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:৫৩

বাংলাদেশ একদিন মাথা উঁচু করে দাঁড়াবেই

ছবি এআই জেনারেটেড।

ভিনদেশী আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে সত্যের বজ্রনিনাদে সোচ্চার হওয়ার কারণেই খুন হতে হয়েছে দেশপ্রেমিক আবরার ফাহাদকে। সেদিন আবরারের রক্তে লাল হয়েছিল বুয়েটের পবিত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজাকারের বিয়াইন

লিখেছেন প্রামানিক, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:০৪


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

রাজাকারের বিয়াইন তিনি
মুক্তিযোদ্ধার সন্তান
ওদের সাথে দুস্তি করায়
যায় না রে সম্মান?

কিন্তু যদি মুক্তিযোদ্ধাও
বিপক্ষতে যায়
রাজাকারের ধুয়া তুলে
আচ্ছা পেটন খায়।

রাজাকাররা বিয়াই হলে
নয়তো তখন দুষি
মেয়ের শ্বশুর হওয়ার ফলে
মুক্তিযোদ্ধাও খুশি।

রচনা কালঃ ১৮-০৪-২০১৪ইং... ...বাকিটুকু পড়ুন

দাসত্বের শিকল ভাঙার স্বপ্ন দেখা এক ক্রান্তদর্শী ধূমকেতু ওসমান হাদী।

লিখেছেন মুঃ গোলাম মোর্শেদ (উজ্জ্বল), ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪২

বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে দেশে যে ধরণের রাজনৈতিক সংস্কৃতি চালু হয়েছে, তাহলো বিদেশী প্রভুরদের দাসত্ব বরণ করে রাজনৈতিক দলগুলোর রাষ্ট্র ক্ষমতায় গিয়ে দেশের মানুষের উপর প্রভুত্ব করা , আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

দিপুকে হত্যা ও পোড়ানো বনাম তৌহিদী জনতা!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড (Pioneer Knitwears (BD) Ltd.) হলো বাদশা গ্রুপের (Badsha Group) একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। বাদশা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান কর্ণধার হলেন জনাব বাদশা মিয়া, যিনি একইসাথে এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাজানো ভোটে বিএনপিকে সেনাবাহিনী আর আমলারা ক্ষমতায় আনতেছে। ভোট তো কেবল লোক দেখানো আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।

লিখেছেন তানভির জুমার, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:২২



১০০% নিশ্চিত বিএনপি ক্ষমতায় আসছে, এবং আওয়ামী স্টাইলে ক্ষমতা চালাবে। সন্ত্রাসী লীগকে এই বিএনপিই আবার ফিরিয়ে আনবে।সেনাবাহিনী আর আমলাদের সাথে ডিল কমপ্লিট। সহসাই এই দেশে ন্যায়-ইনসাফ ফিরবে না। লুটপাট... ...বাকিটুকু পড়ুন

×