somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

সেলিনা জাহান প্রিয়া
আমি সেলিনা জাহান প্রিয়া , জন্ম পুরান ঢাকা, নাজিরা বাজার , নানা বাড়িতে ।বাবার বাড়ি মুন্সী গঞ্জ , বড় হয়েছি ঢাকা ।স্বামীর বাড়ি কিশোরগঞ্জ ।ভাল লাগে ঘুরে বেড়াতে , কবিতা , গল্প , উপন্যাস পড়তে অজানাকে জানতে । ধর্ম বিশ্বাস করি কিন্তু ধর্ম অন্ধ না ।

গল্পঃ অ-মানবের রসনা বিলাস ।। ২ম খন্ড ।।

৩০ শে মে, ২০২১ দুপুর ১২:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




সাহবাগ ফুলের মার্কেটের শেষ মাথায় একটা হোটেল ।। পাগল লোকটা রাইসা কে নিয়ে সেই হোটেলে গেলে ।। রাস্তার পাশে ফুটপাতে তারা একবেলা ভাত বিক্রি করে ।। তাদের খাবার সব সময় ফ্রেস দিনের খাবার দিনেই বিক্রি শেষ । বিকাল হলে আর কিছুই পাওয়া যায় না।।
পাগল রাইসা কে বলল
--- প্রিয় রাগী আপু এই সব হোটেল ভেজাল মুক্ত । আমাদের দেশে আপনি দুই জায়গায় ভেজাল মুক্ত খাবার পাবেন । ঢাকার এই সব ইটালি হোটেলে আর আমাদের মায়ের হাতের রান্না ।।
রাইসা কিছুটা রাগ করে বলল
--- কথা কম বলেন খেতে আসছেন গরুর ভুঁড়ি যত সব পচা খাবার । আবার লেকচার দিচ্ছেন ফ্রেস খাবার ।। আপনি ভাল মন্দ কি বুঝেন ?
--- আমি তেমন কিছু বুঝলে কি মানুষ আমাকে পাগল বলে ।।
--- আগে খাবারের কথা বলেন । পড়ে কথা বলেন ।।
----প্রিয় আপু কাউকে খাবার দিয়ে - রাগ করে কথা বলতে হয় না। খাবার একটা শিল্প মমতা ভালবাসা আর ভালোলাগার বিষয় ।। রাগ করলে তারা কষ্ট পায় ।।
---- আচ্ছা লেকচার দিয়েন না । খবার আসছে খান ।।
যেই হোটেল খাবার খেতে আসছে এই পাগল । সেই হোটেল এক মহিলা চালায় । মহিলার বাড়ি চাদপুর ।। বয়স চল্লিশ হবে । কেউ ভাবী কেউ খালা আবার কেউ নানী ডাকে ।।
পাগল তাকে ডাকছে ফুফু বলে ।। পাগল বলছে
----- ফুফু আপনার নিজের হাতের রান্না বুঝি ।।
হোটেলের মহিলা বলল
---- হ্ বাবা আমার নিজের হাতের রান্না ।
---- দারুন মজা হয়েছে । ফুফুজান । আমার সাথে যে প্রিয় রাগী আপা আছে তার হাতের রান্না আপনার মতো মজা হবে ।।
----- আমার মতো মজা হবে কেন ?
----- রাগী মানুষের মন আকাশের মতো স্বচ্ছ আর বিশাল হয় । তারা মানুষকে ভালবাসে আর উচিৎ কথা সামনে বলে তাই তাদের রান্না মজা হয় ।।
---- হ বাবা তুমি ঠিক বলেছ । আমি খুবেই রাগী , আর উচিৎ কথা বলি ।
এই জন্য মানুষ আমাকে পছন্দ করে না।।
----- ফুফু ঠিক বলেছেন । আমার সাথে প্রিয় রাগী আপু আছে তাকে বুঝাতে হবে রান্না ভাল হলেই স্বামী থাকে না। উচিৎ কথা বলা মেয়ে মানুষের সংসার হয় না ।।
মহিলা দুঃখ করে বলল
---- বাবা তুমি ঠিক বলেছ ।। একে একে তিনটা বিয়া করলাম । দুটা বাচ্চা একটা মনের মতো মানুষ পেলাম না।
----- ফুফুজান একটা কাচামরিচ আর এক টুকরা পেয়াজ দেন ।।
রাইসা রাগ হয়ে বলল
--- এই আপনি কি করে জানেন এই মহিলার স্বামী নাই ।।
--- আমি মেয়েদের কথা বলার স্টাইল দেখে বুঝে যাই তার সংসার জীবন কেমন ।।
পেয়াজ দিতে দিতে হোটেলের মহিলা বলল
--- বাবা তুমি পাগল মানুষ কিন্তু এত সত্য কথা কেমনে বলো ?
---- ফুফু আপনার পাশে যে লোকটা বসে চা খাচ্ছে আর প্রতি কথায় হ হ হ করছে সে কিন্তু আপনাকে পছন্দ করে । সাহস করে বলতে পারে না।
----- বাহ তোমার চোখ তো দারুন । লোকটা কি ভাল হবে ।।
---- ফুফু জান পুরুষ মানুষের চরিত্র ঢাকা শহরের বিদ্যুৎ একেই কথা । এদের ভরসা করা যায় না।
রাইসা হেসে বলল
----একটা জব্বর কথা বলেছেন । আমার পছন্দ হয়েছে ।। আপনি তো পুরুষ মানুষ !! আপনি কি তাদের মতো ।।
পাগল হেসে বলল আজ রাতে বৃষ্টি হবে । একটা বড় ছাদ থাকলে ভিজতাম ।।
--- আমাদের বাসায় আছে ছাদ । ভাবছি আপনাকে কি বলে বাসায় নিয়ে যাব ।
পাগল খবার শেষ করে এক গ্লাস পানি খাচ্ছে । পানি শেষ করে বলল
--- বঙ্গ বাজার থেকে একটা প্যান্ট ৩০০ টাকা । একটি টি সার্ট ১৫০ , সেলুনে দাড়ি আর চুল কাটা বাবদ ৮০ টাকা ।
আপনার বাড়িতে কুকুর আছে ?
---- না কুকুর নাই
---- মুরগী আছে
---- না মুরগী নাই
---- ছাদে বাগান আছে
---- হ্যাঁ আছে । সেই বাগান মিনা আর পারু দেখে ।।
---- তাহলে আপনার বাড়িতে কাজের মানুষ হিসাবে নিতে পারবেন ।
আমি ভাল রান্না করতে পারি এই ফুফুজানের মতো ।
---- আমাদের বাড়িতে সব কাজের মানুষ আছে ?
---- তাহলে আপনি একটা বুদ্ধি করে নিয়ে যান ।
----- বাসায় কাজের মানুষ আছে বাতেন । আপনি তার গ্রাম থেকে আসা ভাই । ঢাকায় থাকার জায়গা নাই তাই বাতেনের কাছে আসছেন । এটা বলবেন ।।
---- ঠিক আছে তাই বলবো ।। তাহলে খাওয়া শেষ চলেন সেলুনে কাজ শেষ করে বঙ্গ বাজার যাই ।।
---- আবার আমার সাথে কোন দুই নাম্বারী করে পালাবেন না তো ।।
---- মৃত্যু ছাড়া পালাবার কোন ভয় নাই ।। আমি আবার এই ফুফুজানের অন্য সব স্বামীর মতো না। টাকা পয়সা নিয়ে আর ফেরব না।
হোটেলের মহিলার বলল
---- আহা রে এই পাগল দেখি আমার সব কথা জানে ? পাগল বাবা আর কিছু বলো ?
---- বলতে পারি তবে আজকের খাবারের বিল নিবেন না। আমাকে চা এনে খাওয়াবেন ।।
---- আরে চা কেন সিগারেট পর্যন্ত খাওয়াব কিছু বল বাবা ।।
---- আমি সিগারেট খাই না।। চা খাই ।।
---- বাবা তাহলে কিছু বলো
---- আপনার বাম হাত দেখী ।।
পাগল হাত টা ধরে বলল
--- আহা কত সংগ্রামী জীবন ।। কত ভালবাসে মানুষ কে ।। পারে না কলিজা কেটে দিতে ।। তবু মানুষ বিশ্বাস করে না। হাতে জমি আছে বাড়ি আছে ।। মেয়ের বিয়ে হবে অনেক ভাল ছেলের সাথে । মেয়ে মানুষ জামাই ছাড়া থাকলে মানুষ খারাপ বলে ।। বয়স আছে বিয়ে একটা করে ফেলেন ।। সুখী হবে ।।
পাগলের কথা শুনে হোটেলের মালিক মহিলা বলে কি চমৎকার করে আমার সব কথা বলে দিল ।। বাবা তোমার খাবারের বিল দিতে হবে না।
এই দিকে আসলে খেয়ে যাবে । কি সুন্দর করে ফুফু বলে ডাক দিস । মনে হচ্ছে নিজের আপন ভাইয়ের ছেলে ডাক দিছে ।।
আমি রাস্তায় ভাত বেচে বলে ভাইয়ের ছেলেরা পরিচয় দেয় না। আমার ভাইয়ের ছেলেদের দেখার জন্য মন কাঁদে ।।
এই কথা বলে আচল দিয়ে চোখের পানি মুছে বলে
---- আজ মনটা ভরে গেল ফুফু ডাক শুনে । কথায় আছে না। যদি থাকে সাত পুত তবু খুঁজে ভাই পুত ।।
না খাবারের কোন বিল নিল না। রাইসা অনেক বলল কিন্তু মহিলা বলল
-- মা জননী সবার কাছে টাকা নিতে হয় না।। আপনার সাথে পাগল যাচ্ছে যদি রাখতে মনে না চায় আমার ভাতের দোকানে এসে দিয়ে যাবেন ।।
পাগল চা খেয়ে রাইসা কে নিয়ে বিদায় হয় যাওয়ার সময় বলে
--- ফুফুজান দেখা হবে ।। ভালবাসা মুল্য অপরিসীম ।। বিদায় সালাম ।।
রাইসা পাগল কে নিয়ে রিক্সা উঠে ।। রাইসা বলে
---- আপনি দেখি একটা প্রতারক ভন্ড ।। একটা মহিলাকে ফুফু ডেকে ফ্রি ভাল মন্দ কথা বলে ফ্রি খেয়ে নিলেন ।। এমন করে কেউ মানুষের আবেগ নিয়ে খেলে ।। কি মিষ্টি করে ফুফু ডেকে ফ্রি খেয়ে নিলেন । আপনি তো পাগল না । যাতে মাতাল তালে ঠিক ।।
রিক্সা ওয়ালা পিছন ফিরে বলল
---- আপা পাগল মানুষ কে ভালবেসে খাবার দিয়েছে । আপনি যদি বঙ্গ বাজার গিয়ে ভাড়া না দেন চলবে । এই পাগল মানুষে সাথে খারাপ ব্যবহার করবেন না। দেখেন না তার চুল দাড়ি পোশাক চোখ কেমন জানি বেখেয়াল ।।
পাগল রিক্সা বসে দুই হাত আকাশের দিকে মেলে ধরে বলছে
---- হে মহান সৃষ্টি কর্তা , আমার সাথে খুবেই দুখী মেয়ে বসা তাকে তুমি গোলাপ ফুলের মতো সুন্দির করে দাও ।।
রাইসা রাগ হয়ে বলল
---- হাত নিচে নামান । আকামের টেঁকি । মানুষ গোলাপের মতো সুন্দর হলে ঝরে পরবে ।। গোলাপে কাটা আছে ।।
পাগল হেসে বলল
---- ভাল মানুষ গুলো মধ্যে এমন কাটা থাকে । যেমন আপনার বদমেজাজ ।।
রাইসা হেসে বলল আপনি দারুন মজার মানুষ বাবার সাথে কথা বলে মজা পাবেন ।
রাইসা বলল রিক্সা এই খানে থামো - এই সেলুনে যান । এই টাকা নেন । আমি রিক্সায় বসে আছে ।। চুল দাড়ি কেটে মাথা সেম্পু করে বের হবেন ।
রাইসা রিক্সায় বসে আছে পাগল সেলুন প্রবেশ করে ।।

--- চলমান
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে মে, ২০২১ দুপুর ১২:০৯
৫টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

টের পেলে

লিখেছেন সাইফুলসাইফসাই, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৫৭

টের পেলে
সাইফুল ইসলাম সাঈফ

টের পেলে গুটিয়ে যায় লজ্জাবতী/ পরিপূর্ণ যৌবনে যুবতীর নিখুঁত অনুভূতি। আমার চাওয়া, ইচ্ছে, স্বপ্ন! আমার পছন্দ বুঝদার, সুন্দর হৃদয়ের রূপ! সৌন্দর্য সুন্দর যা চিরন্তন সত্য। কিন্তু সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের চার খলিফার ধারাবাহিকতা কে নির্ধারণ করেছেন?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৭




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ২৬ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৬। বল হে সার্বভৈৗম শক্তির (রাজত্বের) মালিক আল্লাহ! তুমি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) প্রদান কর এবং যার থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব)... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×