somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

সেলিনা জাহান প্রিয়া
আমি সেলিনা জাহান প্রিয়া , জন্ম পুরান ঢাকা, নাজিরা বাজার , নানা বাড়িতে ।বাবার বাড়ি মুন্সী গঞ্জ , বড় হয়েছি ঢাকা ।স্বামীর বাড়ি কিশোরগঞ্জ ।ভাল লাগে ঘুরে বেড়াতে , কবিতা , গল্প , উপন্যাস পড়তে অজানাকে জানতে । ধর্ম বিশ্বাস করি কিন্তু ধর্ম অন্ধ না ।

গল্পঃ অ-মানবের রসনা বিলাস ।।৩য় খন্ড ।।

০১ লা জুন, ২০২১ বিকাল ৩:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




রাইসাদের বাড়িতে অনেক দিন যাবত কাজ করে বাতেন ।। বয়স তার এখন প্রায় চল্লিশ ।
কিন্তু সে সব সময় তার বয়স কম করে বলবে । মাথায় একটা ছোট চিরনী দিয়ে কিছু ক্ষণ পর পর চুল গুলো ঠিক করে নিবে ।।
তার পায়ে সারা বছর জুতা থাকে ।। বাড়ির বাহিরে যাওয়ার জুতার আর ঘরের ভিতরের পরার জুতা আলাদা ।। সখ করে জাফর স্যারের মতো গোঁফ রাখে ।। তার কাছে মনে হয় জাফরের সারের গোঁফ হল মারাঠা গোঁফ । বাতেন তামিল ছবি দেখতে খুব পছন্দ করে । রাতে সবাই ঘুমিয়ে গেলে । ড্রয়িং রুমে বসে একা একা সিনেমা দেখবে । মাঝ মাঝে উত্তেজিত হয়ে বলবে তাজ্জাব ব্যাপার ।
রাইসাকে বাতেন কিছুটা পাগল টাইপের মেয়ে মনে করে । শিক্ষিত মেয়েরা একটু পাগল হয় এটা বাতের ধারনা । কারন বাতেনের বড় মামার বউ ছিল ম্যাট্রিক পাশ শিক্ষিত বউ । সে আবার দেশ স্বাধীন হলে প্রাইমারী স্কুলের সরকারী চাকুরী পায় ।
বাতেন কিছু দিন মামীর কাছে ছিল সেই সময় থেকে মামীর সব কথায় ভুল ধরা দেখে আর কথায় কথায় প্যাচ ধরা দেখে বাতেন বুঝে যায় শিক্ষিত মানুষ মানেই কিছুটা পাগল । রাইসাদের বাসায় কাজে আসার পর থেকে শিক্ষিত মানুষ গুলো যে পাগল হয় সেটা তার মনে প্রানে প্রবেশ করেছে । বাতেনের বাড়ি ময়মনসিংহ জেলার নান্দাইল থানার পাশে চৌরাস্তা নামক স্থানে ।
বাতেন যাত্রা গান দেখার পর একবার ওয়াজ মাওফিলে যায় । অয়াজ শুনার পর হুজুরের খুব ভুক্ত হয়ে যায় ।।
হুজুরের বাড়ি ছিল তাদের পাশের গ্রামে । মাঝে মাঝে হুজুরের দোয়া নিতে যেত ।।
বাতেন তার মামাত ভাইএর সাথে ঢাকা আসে ।। তার ভাই ওয়ারী এক বাসায় কাজ করে ।। সেই বাসায় গিয়ে দেখে হুজুর টিভিতে হিন্দী ছবি দেখছে । তখন তার হুজুরের প্রতি বিশ্বাস উঠে যায় । তার কাছে যাত্রা আর হিন্দি ছবি একেই রকম মনে হয় । বাতেন বলে যে বেটা বলছে যাত্রা দেখলে মানুষ জাহান্নামে যাবে সেই মানুষ কি করে হিন্দী ছবি দেখে । যাত্রার মেয়েদের চেয়ে হিন্দি ছবির মেয়েরা বেশী খোলা মেলা।
এখন হুজুর দেখলেও বুঝে যায় আসলে ওয়াজের নামে তারা মাইকে যা গলা ফাটিয়ে বলে বাস্তবে তারা সেই কাজ গোপনে নিজেরাই করে । তবে সবাই করে কিনা না সেটা সে জানে না। তবে যে কয়জন মানুষ কে চিনে তারদের কাউকে তার হিসাবে ভাল মনে হয় না। তার ধারনা আরবী শিক্ষিত মানুষ গুলো আমাদের মনের বিশ্বাস নিয়ে খেলে ।।
রাইসার বাবা মাসুদুর রহমান ।। সরকারী চাকুরী থেকে অবসর নিয়েছে ।
ঢাকায় তার পাঁচ তলা দুটা বাড়ি । সেই গুলো ভাড়া দেয়া । সে উত্তরা সেক্টরে মধ্যে লেকের পারে একটা সরকারী প্লট পেয়েছিল সেটা তে
বাড়ি করে তিনি থাকেন ।।
তার স্ত্রী মারা গেছে গত তিন বছর হল । এখন মেয়ে মানুষ দেখলে একটু চেয়ে থাকে । এই চেয়ে থাকাটা অনেক মানুষ ভাল চোখে দেখে না। এখন বয়স মাত্র ৬৫ বছর । বড় মেয়েকে বিয়ে দিয়ে । বড় মেয়ের নাম লাইসা । লাইসার স্বামী আবার পুলিশ অফিসার ।
মাসুদুর রহমান সাহেব বিয়ে করার জন্য পত্রিকায় পাত্র পাত্রী দেখে ফোন করে ।। এই পর্যন্ত বেশ কিছু পাত্র পাত্রী সংবাদ দাতা ব্যাক্তিরা তার ভালোই টাকা পয়সা খেয়েছে ।। তাতে তার দুঃখ নাই । যখন পাত্রিদের সাথে মিটিং হয় চাইনিজ রেস্টুরেন্টে তখন পাত্রী গুলো দেখে মাসুদুর রহমান সাহেব তার বয়স ভুলে যায় ।। কিন্ত সব পাত্রীর একেই কথা বিয়ের কাবিনের দিনেই তাকে ফ্ল্যাট লেখে দিতে হবে ।।
মাসুদুর রহমান যাতে মাতাল তালে ঠিক মুখের উপর বলে দেয় এটা সম্ভব না। তবে মেয়েদের সাথে পাত্রী দেখার সময় রসে রসে অনেক কথা বলে মজা নেয় ।
মাসুদুর রহমান বিকেলে লেকের পারের রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন বিকালে হাটতে বের হয় ।।
মাঝে মাঝে ঘটক কামাল লেকের পারেই দেখা করে । দেখা করা মানেই পাঁচশত টাকা নগদ লাভ । কামাল ঘতকের কাজ এমন বয়স্ক মানুষ গুলোকে সুন্দরী মেয়ে দেখিয়ে তার কাছ থেকে কিছু কামিয়ে নেয়া ।
তাই কোন নতুন মক্কেল পেলে সে মোবাইলে তাদের নাম এম পি এক দুই তিন নামে সেভ করে । এই এম পি মানে তার কাছে এটা একটা গোপন কোড নাম্বার ।। এম মানে মুরগী পি মানে পাগল ।। এখন কারো
নাম যদি সেভ করে এম পি ১ ১২ তাহলে বুঝতে হবে সে এক নাম্বারে সিরিয়েলে ১২ নাম্বার মুরগী । আর ২১০ মানে দুই নাম্বার সিরিয়ালে ১০ নাম্বার মুরগী ।।
আজকেও ঘটক কামাল এসেছে লেকের পারে মাসুদুর রহমান সাহেবের সাথে দেখা করতে ।
মাসুদুর রহমান সাহেব হাঁটার জন্য বের হলে পিছন থেকে কামাল ঘটক স্যার সালাম নিবেন । মাসুদুর রহমান চেয়ে দেখে ঘটক কামাল , একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে বলে , চল ২০ মিনিট হাটি তার পর কথা বলি কামাল । কামাল ঘটক দাত বের করে হাসি দিয়ে বলে , স্যার আপনার স্বাস্থ্য সচেতনতা আমাকে মুগ্ধ করে ।। আপনি এই বয়সে যে ইয়াং আছেন । দেখলে বয়স লা বললে কিউ বিশ্বাস করবে না যে আপনার বয়স ৬৫ বছর ।মাসুদুর রহমান সাহেব বলে সব আল্লাহ্‌ ইচ্ছা , গত মাসে যে মেয়েটা দেখিয়েছিলে সেই মেয়েটা খুব ভাল ছিল । বয়স অল্প তবু রাজি হলে চলত । আমার ছোট মেয়ের বয়সী মেয়ে কিন্তু তাতে কি ? মেয়েটা একটু বেশী ডিমান্ড করেছে । শুন কামাল কম ডিমান্ডে মেয়ে দেখো ।
কামলা বলল স্যার আসেন ঐ বেঞ্চে বসে কথা বলি ।। একটা মেয়ে আছে বাড়ি খুলনা মিডিয়াতে কিছুদিন কাজ করেছে । তবে ভাল রোল পাই নাই । মেয়েটাকে বলেছি আমার স্যার কে দেখো । যদি ভাল লাগে তবে নাটকে যা টাকা লাগবে স্যার দিবে । মেয়েটা সুন্দরী আছে ! কামাল কে মাসুদুর রহমান সাহেব বলল না না মডেল মেয়েদের চরিত্র ভাল হয় না। তুমি অন্য মেয়ে দেখো ।
কামালের সাথে কথা শেষ হতেই বলল স্যার তাহলে সন্ধায় একটা মেয়ে দেখতে দরবার ক্যাফে আসেন । মেয়ের বড় ভাবী নিয়ে আসবে । মেয়েটা বয়স ত্রিশ হবে। একটা বিয়ে হয়েছিল । স্বামী বিদেশ গিয়ে আর ফেরত আসে নাই । স্যার আমি কথা দিয়েছি আপনাকে আসতেই হবে ।
মাসুদুর রহমান সাহেব বলল- ঠিক আছে কামলা তুমি এত করে বলছো তাহলে আসবো যেহেতু বলেছো মেয়েটা সুন্দর বয়স ত্রিশ সব দিক দিয়ে ঠিক আছে। এই নাও এক হাজার টাকা ।। আমি রাত আট টায় দরবার ক্যাফে থাকব ।
কামাল ঘটক মাসুদুর রহমান সাহেব কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ৫ নং সেক্টরের ব্রীজের উপরে এসে হাজার টাকার নোট ভাঙিয়ে দুটা বেনসন সিগারেট নিয়ে, একটা পকেটে রেখে অন্যটাতে আগুন ধরিয়ে মনের সুখে টান দিয়ে সেই সুন্দরী মেয়েটার ভাবী কে ফোন দেয় ।
-হ্যালো ভাবী কামাল ।
-হ্যাঁ কামাল ভাই বলেন
- মুরগী নাম্বার ১০৭ ক্যাফে দরবার । খাবার ম্যনু ঠিক করে রাখেন । আমার কিছু খাবার বাসায় নিতে হবে সেই ভাবে অডার দিয়েন । যাকে আনবেন তাকে বলবেন কথা কম বলতে । আপনি সব কিছু বলবেন । একমাস চলবে খেলা । টার্গেট লাখ টাকা ।
ঘটক কামাল ফোন রেখে রিক্সায় উঠে ।
রাইসা কামাল কে ভাল করে চিনে । রাইসা কে দুবার সে পাত্র দেখিয়েছে । রাইসা পাগল কে নিয়ে বাসার দিকে যাচ্ছে এমন সময় কামাল রিক্সা থেকে সালাম দিয়ে বলে আপামনি সাথে কে ?
রাইসা ভেঞ্চি দিয়ে বলে তার জন্য পাত্রী দেখেন আপনার নতুন কাস্টমার ।
বাতেন ছাড়া ছারাও এই বাড়িতে দুই জন মেয়ে কাজ করে । মাসুদুর রহমান সাহেব কে তারা আব্বাজান বলে ডাকে ।। মাসুদুর রহমান তাদের কে খুব আদর করে । একমাত্র মিনা আর পারু কে সে ভাল চোখে দেখে ।
পারু আর মিনা রান্না করছে বাতেন বাগানের গাছে পানি দিচ্ছে । রাইসা পাগল কে বাসায় প্রবেশ করে ।
বাতেন ভাল করে চেয়ে দেখলো । রাইসা আপার সাথে কে এলো । এমন লোক তো এই বংশে কেউ নাই । খালু জান তো পার্কে হাটতে গেছে । রাইসা আপু কে কাউকে বিয়ে করে ফেলল । সকালে বাসা থাকে বের হবার সময় বলেছিল জাহা্নামে যাচ্ছে । বাতেনের কাছে বিয়ে হল এক মাত্র জাহান্নাম । যেই খানে মেয়েদের শাসন চলে । পাগলের চোখের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলছে কি সুন্দর মানুষ এই পাগল মেয়েটা কে বিয়ে করে জাহান্নামে আগুনে প্রবেশ করেছে ।।
------------------- চলমান ।।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জুন, ২০২১ বিকাল ৩:৩২
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×