এরমাঝে ওরা আরো কবার বেল বেজেছে। ফিরে এসে আমরা আবার মিটিংয়ে বসলাম। ওদের ঢুকতে দেয়া কি ঠিক হবে? পুলিশের ছদ্মবেশে যদি ডাকাত আসে ? হয়তো ওদের আশেপাশেই আরো ক‘জন লুকিয়ে আছে?
সিদ্ধান্ত নিলাম দরজা না খোলার। যতটুকু জানি, রুশীয় পুলিশের অধিকার নাই এত রাতে রুম তল্লাশি করার বা বাসায় ঢুকে অপরাধী ধরার।
-যেহেতু আমরা বিদেশী সেহেতু এ আইনটা আমাদের বেলায় বেশী খাটে । ওদিকে বেল বেজেই চলছে। আর আমাদের বুকের ভিতর কাঁপছে! আমরা সবাই প্রতিজ্ঞা বদ্ধ দরজা না খোলার পক্ষে ।
মিনিট দশেক বাদে কর্লিং বেল বাজানো বন্ধ হল। ভাবলাম ওরা চলে গেছে আমাদের যেন ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়ল!
তবুও নিশ্চিন্ত হওয়ার জন্য আবার গিয়ে দেখে আসলাম।
নাঃ নেই ! ওফ্ কি টেনশনেই না ছিল সবাই!
আড্ডার আমেজ নষ্ট হয়ে গেছে। জমানোর চেষ্টা বৃথা! ঘণ্টা খানেক গল্পগুজব করে ঘুমিয়ে পড়লাম। শরীরে ক্লান্তি আসলেও কান দুটো উৎকর্ণ হয়েছিল -মাথার মধ্যে দুশ্চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে। ঘুম কি আর আসে!
বন্ধুদের ডাকাডাকিতে হুড়মুড় করে উঠে বসলাম। চোখ মেলতে কষ্ট হচ্ছিল মাথার মধ্যে চিনচিনে ব্যথা । কণ্ঠে উষ্মা এনে বললাম,
-কি ব্যাপার এত চেঁচাচ্ছিস কেন কি হয়েছে?
আমরা চলে যাচ্ছি দরজা আটকে দে। এক চোখ চেপে রেখে অন্যটা দিয়ে পিট পিট করে অতিকষ্টে চাইলাম দেয়াল ঘড়ির দিকে । বাপরে দশটা বাজে। এলোমেলো পায়ে হেটে গেলাম ওদের পিছু পিছু ।শেষ-জন বের হওয়ার পরে ভাল করে দরজা আটকে আবার ফিরে এলাম আমার বিছানায়।
এখন এ ডিভানে আমি একা। ই বাড়িতে শেষদিনটা আমি ইচ্ছেমত হাত পা ছড়িয়ে ঘুমাতে পারব। ভাবতেই ঘুমটা আরো শক্ত করে জেঁকে ধরল আমাকে।
আবার সশব্দে ডোর বেলের আওয়াজ। ‘ওরা কি আবার ফিরে এলো ? কিছু কি ফেলে গেছে?’
ভাবতে ভাবতে রাজ্যের বিরক্তি নিয়ে আবার উঠে প্রথমে দেয়াল ঘড়িতে নজর দিলাম। এগারোটা বাজে।
খটকা লাগল। ওরা-তো গেছে ঘণ্টা খানেক আগে । কিছু ফেলে গেলে তো ফোন করে জানাত। এতক্ষণ পরে-তো এভাবে আসার কথা না!
ভাবতে ভাবতে এগিয়ে গেলাম মুল ফটকের দিকে। পিপ্-হোলে চোখ রাখতেই শিউড়ে উঠলাম। দরজার ওপাশে দুজন পুলিশ দাড়িয়ে আছে। দেহের আকৃতি দেখে মনে হল কালকের দু’জনই।
কোন শব্দ না করে পা টিপে টিপে আমার রুমমেটের বিছানার কাছে গেলাম। ভেবেছিলাম সে সহজে জাগবে না। কিন্তু গায়ের উপর হাত রাখতেই সে চোখ মেলে তাকাল। আমি বাইরের দিকে ইশারা করে বললাম,- পুলিশ।
শোনার সঙ্গে সঙ্গে স্বভাবতই: তার মুখ ফ্যাকাসে হয়ে গেল!
আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, 'এখন আমাদের করনীয় সম্পর্কে।' প্রতি উত্তরে সে বলল; তার নাকি সব আউলা ঝাউলা হয়ে গেছে মাথা কাজ করছে না! আমি যা ভাল বুঝি তাই যেন করি।
উল্লেখ্য যে তার রুশ ভাষায় দক্ষতা বেশ খানিকটা কম। সেই সুবাদেই সে এই বিপদে সে আমাকেই এগিয়ে দিল।
আমি আবার ফিরে দরজার কাছে গিয়ে বললাম,-কে?’
-দরজা খোল। আমরা মিলিশিয়া।
- কোন থানা থেকে এসেছেন?
প্রতিউত্তরে তারা স্থানীয় থানার নাম বলল।
-কি ব্যাপার?
‘আমাদের কাছে তোমাদের নামে অভিযোগ আছে । নীচতলা থেকে তোমাদের প্রতিবেশী থানায় অভিযোগ করেছে যে,
'তোমাদের বাথরুম চুইয়ে নাকি নিচে পানি পড়ছে ।' তাই আমরা তদন্ত করতে এসেছি।’
-কি বলছেন ? ঠিক আছে আমি দেখছি...
বাথরুমে গিয়ে বাথটাবের চারপাশে উকি ঝুঁকি মেরে পানির পাইপগুলো পরীক্ষা করে দেখলাম। নাহ্ ঠিক আছে। ওরা মনে হয় ভুল ইনফরমেশন পেয়েছে। ফিরে গিয়ে বলতেই ওরা বলল,'তারা নাকি ঠিক জায়গাতেই এসেছে। আমাদের কথা নাকি ওদের বিশ্বাস হচ্ছেনা। নিজেরা সচক্ষে দেখতে চায়।'
মহা ফ্যাসাদ । বন্ধুকে শুধালাম,-কি করব ?
ও বলল দরজা খুলতে । অগত্যা দরজা খুলতেই হল।
দুজনে একসঙ্গে হুড়মুড় করে ঢুকে হাসি মুখে বলল,-
‘শুভ সকাল।’ কি ভয় পেয়েছিলে নাকি ।’
সহজ হবার চেষ্টা করে আমতা আমতা করে বললাম,- ন-না ...।
-দেখি তোমাদের বাথরুম?
আমি সাথে করে তাদের বাথরুমে নিয়ে গেলাম। তারা গিয়ে অনেক্ষণ ধরে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পরীক্ষা করল। স্বাস্থ্যবান লম্বা লোকটি আমার দিকে তাকিয়ে অমায়িক হেসে বলল ,
-না সব ঠিক আছে।
আমিও হাসলাম স্বস্তির হাসি । যাক এবার আপদ বিদেয় হলে বাঁচি!
এবার সে দু'কদম এগিয়ে চারিদিকে ভাল করে চোখ বুলিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বেশ একটা ভাব নিয়ে বলল,
-কিন্তু আমার কাছে আরেকটা ইনফরমেশন আছে।
আমি কপাল কুচকে জিজ্ঞেস করলাম - কি ইনফরমেশন?
কঠিন মুখে ভয়ঙ্কর চাপা হাসি হেসে বলল- তোমাদের কাছে নাকি -'নারকোতিক’ আছে!
আমার অন্তরাত্মা ভীষণ ভাবে কেঁপে উঠল,
-'নারকোতিক' মানে ড্রাগ ;তাহলে কি এরা ঠাউরেছে আমরা ড্রাগ বিজনেস করি?
২য় পর্ব শেষ
আগের পর্বের লিঙ্ক;
http://www.somewhereinblog.net/blog/sherzatapon/29793529
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই মে, ২০২৩ সকাল ১০:৩৫