somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাবনিক-৬ (শেষ খন্ড)

২৭ শে জুলাই, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ডে কেয়ার থেকে বার বার ফোন আসছিল। সন্ধ্যে হতে চলল এখনো মেয়েকে নিতে কেন কেউ আসেনি।
ববির ফোন পেয়ে প্রথমে বিরক্তি লাগছিল। ধীরে ধীরে দুঃচিন্তা হতে লাগল। সন্ধ্যে অতিক্রান্ত হয়ে রাতের এধার নেমেছে তখন। ববি সম্ভ্যাব্য-অসম্ভাব্য সবখানে এলিনার খোঁজ করেছে। স্কুলের কেউ ফোন রিসিভ করেনি। এলিনা সেলফোন ব্যবহার করে না- তাকে ফোন দেবার উপায় নেই।
ববি মেয়েকে দজেচিস্কি দোম থেকে নিয়ে গিয়ে পাশের বাসায় এলিনার বান্ধবী কাম ওর এক বন্ধুর অলিখিত বৌ এর বাসায় রেখে আসল।
সারা রাত ভরে চলল খোঁজাখুঁজি। অবশেষে পরদিন সকাল দশোটার দিকে সেই বনের মধ্য থেকে মস্কো পুলিশ এলিনার অর্ধচেতন ক্ষত বিক্ষত দেহখানা উদ্ধার করল!

নিঃসন্দেহে এখবর সৌম্যের জন্য একেবারেই অনভিপ্রেত ছিল। কতটুকু বেদনা বা কষ্ট অনুভব করেছিল সে তা এখন মুখ্য বিষয় নয়। যদিও ভয়াবহ দুঃসংবাদটা সে পেয়েছিল সে একটু দেরিতে- ততদিনে এলিনা হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যে অনেকটা সুস্থ্যতার পথে।

টনার মাস তিনেক বাদে ববি দেশে আসল। ঢাকায় এসে ওর সাথে একান্তে বসে গল্প করলাম কিছুক্ষণ। সারাক্ষন বন্ধু আত্মীয়দের বলয় থেকে বের করে ওকে একা পাওয়া চরম ঝক্কির!
এলিনার দুর্ঘটনার বিষয় নিয়ে আমি কোন প্রশ্ন করিনি তাকে- ভেবেছিলাম সে-ই বলবে। এতবড় একটা ঘটনা সে আমার কাছে অন্তত চেপে রাখবে না। কিন্তু সে ট্রিপিক্যাল বাঙ্গালী মানসিকতার পরিচয় দিয়ে বিষয়টা পুরোপুরি চেপে গেল! উল্টো এলিনার অনেক দোষ কীর্তন গাইল;
সে কেমন নিষ্ঠুর পাষাণ রোবট টাইপের হয়ে গেছে। একসাথে শোয়াতো দুরের কথা ও নাকি চেনেই না এমন মুখ করে সারাক্ষন বসে থাকে। সারাক্ষন পড়শী বান্ধবীর বাসায় পড়ে থাকে। কি সব বই এনে পড়ে- একাহারী, দিনে একবার মাত্র আহার করে। শুকিয়ে কাঠের মত হয়ে গেছে- শোত বকাবকি ধমক ধামকেও কোন রা নেই তার। না আছে সংসারের প্রতি বিন্দুমাত্র মোহ না আছে সন্তানের প্রতি কোন টান। মেয়েটা সারাক্ষন পড়ে পড়ে কাদে- এলোমেলো পায়ে মায়ের কাছে গিয়ে আধো আধো বোলে কত কষ্ট আর অভিমানের কথা কয়। মা ফিরেও তাকায় না। হয়তো নির্নিমিষে চেয়ে থাকে নিরুদ্দেশ পানে মুখ গুঁজে কি সব আবোল তাবোল বই পড়ে।
জানিস দোস্ত, পাশের বাসার ওই মহিলাটা যত নষ্টের মুল- নিজের দিন দুনিয়ায় কেউ নেই, উদ্ভট কি সব ধর্ম টর্ম নিয়ে থাকে ওরেও কু মন্ত্রনা দেয়।
~~~~~~~~~~~~~~~~~
ব্বুই এর দশকে পেরেস্ত্রোইকার ধকল সামলাতে গিয়ে পুরো সোভিয়েত ইউনিয়নের ভেঙ্গে যাওয়া দেশগুলোর জেরবার অবস্থা! সরকারি চাকুরির বাইরে কেমনে কামাই রোজগার করতে হয় ওরা জানে না। একের পর এক সরকারি কলকারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে- মুদ্রাস্ফীতি আকাশে গিয়ে ঠেকেছে। কোনমতে পেটে ভাত জোগার করতেই কারো কারো নাভিশ্বাস উঠছে।
সত্তুর বছরের অধিককাল নিষিদ্ধ থাকা ধর্মগুলো মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে- হতাশায় ভেঙ্গে পড়া নুয়ে পড়া সব হারানো মানুষগুলো উপায়ান্তর না পেয়ে ধর্মের কোলে মাথা গুঁজে অদৃশ্য কারো কাছে নিজেদের অসহায়েত্বের কথা বলতে চাইছে।
ক্যাথেলিক,ইহুদী, ইসলাম, বৌদ্ধ ধর্মগুলো মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। তাঁর ফাকে হিন্দুইজমের পশ্চিমে বেশ জনপ্রিয় হওয়া আধুনিক এক ধারা -হরে রাম কৃষ্ণ গ্রুপ পথে ঘাটে দৃষ্টিগোচড় হচ্ছে। গেরুয়া বসনে কপালে তিলক এঁকে গলায় রুদ্রাক্ষের মালা জড়িয়ে খোল-করতাল বাজিয়ে রুশীয়রা কেউ কেউ ন্যাড়া মাথার বিকৃত সুর আর শব্দে হরে রাম হরে কৃষ্ণ গাইছে পথে পথে।
এর বাইরে স্পিরিচুয়াল রিলিজিয়াস ও কিছু গোপন ধর্মীয় সংগঠন তাদের কার্যক্রম জোড়েসোরেই চালাচ্ছে। কেউ কেউ ভুত-টুতের তন্ত্র মন্ত্রের সাধনায় ব্যাস্ত!

মন একটা সংগঠনের সাথে জড়িয়ে পড়েছিল এলিনা। কিছুটা আদ্ধাত্যবাদ বা সন্ন্যাসধর্ম টাইপের। পৃথিবীর সব মোহ মায়া শোক তাপ দুঃখ সুখ আনন্দ থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়ে উচ্চমার্গীয় এক সাধনা।এই ধর্মীয় সংগঠনটা গোপনে কাজ করত। যারা এর সাথে জড়িত নয়ে তারা এদের কার্যক্রম সন্মন্ধে তেমন কিছুই জানতে পারত না। পৃথিবীর সব মোহ মায়া কাটিয়ে না উঠতে পারলে এই ধর্মের শেকড়ে প্রবেশ করা যায় না বলেই জানি।( সম্ভবত এটা ‘মডার্ন প্যাগানিজম, নিওপ্যাগানিজম বা ইস্টার্ন রিলিজিওন টাইপের কিছু)
এই ধর্ম এলিনার সব শোক দুঃখ আপাতদৃষ্টিতে ভুলিয়ে দিলেও দুজন মানুষ পড়ল আকুলপাথারে। ববি আর তার মেয়ে।

ববির এখন ভয় হচ্ছে এলিনা তার সাথে শীঘ্রই বৈবাহিক সম্পর্ক ছিন্ন করবে হয়তো। এমন হলে সমস্যা তার নিজের থেকে মেয়ের জন্য বেশী- এই কচি ছোট্ট বাচ্চাকে নিয়ে কি করবে সে।
তার ভাবনা অমুলক নয় কিংবা এমন কিছু একটার আভাস সে আগেই পেয়েছে। মস্কোতে ফিরে যাবার মাস খানেকের মাথায় তাদের সংসারের ভাঙ্গন অনিবার্য হয়ে উঠল।
* এই ধরনের ধর্মীয় সংগঠনের নাম কারো জানা থাকলে জানাবেন দয়া করে?

আগের পর্বের জন্যঃ Click This Link
পরের পর্বের জন্যঃ Click This Link
প্রথম খন্ড প্রথম পর্বের জন্যঃ Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই আগস্ট, ২০২২ সকাল ১১:৩৫
১১টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকান্ড

লিখেছেন রাজীব নুর, ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ রাত ১০:৪৬



সময় তখন ১৯১৯ সাল।
ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশের অমৃৃতসর (অমৃতসর শিখ সম্প্রদায়ের একটি পবিত্র শহর) শহরে ইংরেজ সেনানায়ক ব্রিগেডিয়ার রেগিনাল্ড ডায়ারের (১৯২০ সালের মার্চে ডায়ারকে পদত্যাগ করতে বলা হলো। পরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিবে কিন্তু নাম প্রকাশ করবে না কেন?

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০১ লা অক্টোবর, ২০২৩ রাত ১:১০

আমেরিকা বাংলাদেশে ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিবে কিন্তু নাম প্রকাশ করবে না।
কেন ভাই, লুকোচুরির কি আছে ?
ইতিপূর্বে RAB এর কিছু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আমেরিকা স্যাংশন দিয়েছে, বেনজির সহ ৭ জন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগের কবি ও কবিতা

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ০১ লা অক্টোবর, ২০২৩ সকাল ৯:৪৭

ব্লগে বেশি কেউ কবিতা পড়তে আসে না;
এটা কবিতা লিখিয়েরাও বেশ জানে।
উৎসুক তাদের মনটা জবাব খুঁজে পায় না,
কবিতা-পাঠক আজ নেই কেন কোনখানে।

তবু তারা মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাকার ফিস আশির্বাদ না অভিশাপ!!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ০১ লা অক্টোবর, ২০২৩ সকাল ১০:২৮


অদ্ভুত উটের পিঠে চলেছে স্বদেশ- কবি শামসুর রহমান মনে হয় এই লাইনে একটু ভুল করেছিলেন। মরুভুমি নাই; উট আসবে কোত্থেকে। তাঁর লেখা উচিৎ ছিল অদ্ভুত ছাগলের পিঠে চলেছে স্বদেশ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বান্দরের হাতে বন্দুকঃ কতোটা স্বস্তিদায়ক!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ০১ লা অক্টোবর, ২০২৩ দুপুর ১২:১০



বান্দরের হাতে বন্দুক দিলে কি হয় বা হতে পারে, সেটা তো আমরা সবাই জানি। তেমনি কিছু চোর-বাটপার, আবাল, দেশপ্রেমহীন মানুষের হাতে রাষ্ট্রক্ষমতা গেলে কি হয়, সেটাও আমরা সবাই হাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×