somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

শেরজা তপন
মাঝে মাঝে মনে হয় জীবনটা অন্যরকম হবার কথা ছিল!

বাবনিক- পর্বঃ ৫ (শেষ খন্ড)

২৩ শে জুলাই, ২০২২ দুপুর ১:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


স্কো থেকে ফিরে যবার সময় হয়েছে। কিভাবে দু-সপ্তাহ কেটে গেল ঠাহর হোল না! বন্ধুরা ব্রিজ খেলার আয়োজন করেছিল। আয়োজন না বলে প্রতিযোগিতা বলাই শ্রেয়। এই খেলাটায় আমার দুর্বার টান। খেলতে খেলতে চুরি-চামারি বের করেছি বিস্তর। ইন্টারন্যাশনাল কিংবা অকশান ব্রিজ যেমন উঁচু মাপের খেলা তেমনি আমাদের চুরি করার টেকনিকও অন্য লেভেলের।
যেমন আমার হাতে ক্লাবের কার্ড নেই। আমি কল দিলাম প্রথমেই দুটো ক্লাব! অপসিট পার্টি তখন মনে মনে ফুলে ফুলে হাসছে।তারা কোনমতে ডাক ছেড়ে দিতে পারলে বাঁচে। কিন্তু আমার পার্টনার জানে আমার হাতে সেই কার্ড নেই। সে কল ঘোরাবেই। তবে কখনো বা হিতে বিপরীত হয়ে যায়।
সে খেলা পুরো কসমস সেন্টার জুড়ে তু্মুল জমে গেল। আর আমার সময় চলে গেল হু-উস করে!

র মাঝে আর ববির সাথে এলিনাকে নিয়ে আলাপ হয়নি। সে ও কিছু বলেনি আর আমিও কুলুপ এঁটেছি। ওদের সাথে আর শেষ দেখা হোল না। ববির মেয়েটার চেহারা বার বার চোখে ভাসছিল শুধু।
ফেরার সময়ে হুলস্থুল অবস্থা! কোন বন্ধু এখানে দু-চার দশ দিনের জন্য বেড়াতে আসে না বিশেষ। সে কারনে আমার সমাদার ছিল চরম। ফেরার দিন যেন একডজন গাড়ি আসল এয়ারপোর্টে এসকর্ট করে। নিজেকে বেশ ভিভিআইপি ভাবছিলাম।
বিদায়ের সময়ে সে কি জড়াজড়ি আর হুড়োহুড়ি-এ জন্মে যেন দেখা হবে না আর। আসলে সেই বয়সের আবেগটাই ছিল অন্যরকম।

বাংলাদেশের এয়ারপোর্ট বড্ড বেশী ম্যাড়ম্যাড়ে লাগছিল। এয়ারপোর্টে নেমেই নিজের গাড়িতে সরাসরি চাঁটগায়ের পথে রওনা হলাম।

ছর ঘুরতে চলল। পুতিন সবে রাশিয়ার নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়েছে। অর্থাভাবে কিংবা উন্নত জীবনের আশায় সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে রাশিয়ান রমণিরা। তারা অনেকেই নতুন সব দেশের ভাব ভাষা না বুঝে জড়িয়ে পড়েছে দেহ ব্যবসায়। রাশিয়ায় মুদ্রাস্ফীতি তখনো চরমে। ইনফ্লেশনের সাথে তাল মিলিয়ে চলা বড্ড কঠিন ছিল তখন। চরম মাফিয়ার উত্থান হচ্ছে তখন। এর পাশাপাশী চরমপন্থি ন্যাকেড হেডদের দৌরাত্ম্য। ওদের নিঃশ্বংসতায় দক্ষিন এশীয়দের নাভিশ্বাস উঠেছে- লোকসানে আর হুমকির মুখে বিদেশীরা ব্যাবসা গোটাচ্ছে ।
মাতাল ইয়েলিৎসিনের হাতে হাঁসফাঁস করা সমগ্র জাতি পুতিনের দিকে চেয়ে আছে–কোন মিরাকল ঘটবে সেই আশায়।
ববির ব্যাবসার অবস্থা বিশেষ ভাল নয়। সরকারের হাতে টাকা নেই- ব্যাবসায়ীদের উপরে চাপ বাড়ছে। ওদিকে মাফিয়াদের রক্ত চক্ষু এদিকে সরকারী সন্ত্রাসীদের উৎপাত। সবারই ত্রাহি অবস্থা! দেশ চালাচ্ছে মাফিয়ারা- সরকার যেন ঠুঁটো জগন্নাথ।

সেবার মস্কো থেকে ফেরার পরে ববির সাথে হৃদ্যতা কমেছে খানিকটা। এখন আর চরম আবেগে ঘন্টার পর ঘন্টা কথা হয় না। কথা হলে এলিনার কথা আর কখনোই জিজ্ঞেস করিনি। মেয়েটার কথাই বার বার জিজ্ঞেস করতাম।
ও বরাবরই বাচ্চাদের আদর করে। মেয়ের কথা তার মন আর্দ্র হোত। তাকে নিয়ে বেশ খোশ মেজাজে গল্প করত।
--------------------------------------
বরটা পেলাম অন্য বন্ধু মারফৎ। ববি আমাকে এ ব্যাপারে কখনোই কিছু বলেনি;
এলিনা চাকুরির জন্য হন্যে হয়ে ঘুরছিল! যেমন করেই হোক চাকরি একটা তার চাই। এর আগে কিন্ডারগার্ডেনে শিক্ষকতা করার অভিজ্ঞতা তার আছে। কিন্তু মস্কোতে তখন ইংরেজীর রমরমা বানিজ্য। সব মস্কোবাসীরা ইংরেজী শেখার জন্য পড়িমড়ি করে ছুটছে। ইংরেজীরে দখল না থাকলে শিক্ষকতার চাকরি জোটানো কষ্ট তখন।
অনেক খুঁজে 'পাদ মস্কো'তে( ডাউন টাউন) একটা স্কুলে চাকুরি জোটাল সে। বাসেই যাতায়াত করে। ববি বার বার গাড়ি নিতে অনুরোধ করলেও সে গাড়ি নেয় নি কখনো। বাচ্চাকে রাখে ‘দজেচিস্কি দোমে’( ডে কেয়ার বা চাইল্ড হোমে)। বাস থেকে নেমে বেশ খানিকটা নির্জন বনভুমির ধারের পথ হেটে যেতে হয়।

রতের শেষ। শীত পড়া শুরু হবে তখন। গাছের পাতাগুলো বাহারি রঙ ছড়িয়ে ধরাভুমে লুটিয়ে পড়ছে টুপ টুপ করে। স্কুলের অফিসিয়াল কাজে ফিরতে দেরি হয়ে গিয়েছিল সেদিন ওর। এমনি এক সান্ধ্যকালে সেই বনভুমির ধার দিয়ে বাসস্ট্যান্ড দিয়ে আসার পথে ক’জন ছোকড়া পথ আগলে দাড়াল তার।
রাশিয়ায় কস্মিনকালেও যে ঘটনা শুনিনি সেদিন সেই ব্যতিক্রমী ভয়ঙ্কর ভয়াবহ নিঃশ্বংস ঘটনা ঘটল তার সাথে। সেদিন সন্ধ্যায় সে 'ব্রুটালি রেপড' হোল!!!

আগের পর্বের জন্যঃ Click This Link
পরের পর্বের জন্যঃ Click This Link
প্রথম খন্ড প্রথম পর্বের জন্যঃ Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই আগস্ট, ২০২২ সকাল ১১:৩৪
১৩টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×