somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি অসভ্য জাতির আড্ডার গল্প!

২৯ শে নভেম্বর, ২০২২ বিকাল ৪:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


(নিন্মোক্ত আলোচনার বিষয়বস্তু কাল্পনাপ্রসুত হতে পারে)
চারবন্ধু বসে আড্ডা দিচ্ছে মোড়ের চায়ের দোকানের পাশেই গুটি কতক চেয়ার পেতে। বেশ কয়েক বছর বাদে চার বন্ধু একখানে দেখা করার সুযোগ পেয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে সুদর্শন যে সে থাকে কানাডার ভ্যাঙ্কুবারে। বিশ্বের অন্যতম তিলোত্তমা শহরে থেকেও সে চরম বিরক্ত! তার এখনো পল্লবীর এই মোরের আড্ডাই ভাল লাগে। ময়লা কাপে কাঁচা পাত্তির চা আর একখানা সিগারেট চারজনে মিলে টানতেই সুখ পায়। যদিও ওখানে তার জমিয়ে চলছে ব্যাবসা। বউ কর্পোরেট জব করে, ভাল বেতন পায়। কিন্তু দেশ তাকে টানে খুব- এখানে জম্ফা আর বিন্দাস আড্ডা তাকে চরম টানে। সে যে এলাকায় বাস করত আমি সাক্ষী; একসময় সেখানকার বাতাস ভারি হয়ে থাকত গাঁজার ধোঁয়ায়!! গাঁজার টানের থেকে গাঁজার ধোঁয়ার পিনিকে সুখ নাকি বেশী।
মাঝারি গড়ন উজ্জ্বল গাত্রবর্ণের রাশভারী অথচ বাকপটু বন্ধুটা নামীদামী ব্যারিস্টার। সুপ্রিম কোর্টে এনলিষ্টমেন্ট হয়েছে বছর দশেক আগে। এর পাশাপাশি বাপের বিশাল ব্যাবসা সামলাতে হয় তাকে। দেশ নিয়ে সে চরম কনসার্ন! দেশের ভাল মন্দ নিয়ে তার মত এমন করে ভাবে কম মানুষ। অনেক ভাল সুযোগ থাকার পরেও বিদেশে সেটেল হবার তার কোন ইচ্ছে নেই। হাজার হাজার শ্রমিকের রুটিরুজি কেড়ে নিয়ে বিদেশবাস করা তার পক্ষে সম্ভব নয় সেটা সে বেশ জোর গলায় বলে।
ছোট খাট গড়নের একটু স্ফীত উদর শ্যামলা বর্ণের চরম রসিক আর বাঁচাল বন্ধুটি সদ্য প্রোমোশন পেয়ে নামকরা একটা ব্যাঙ্কের ডি এম ডি হয়েছে। বন্ধুদের আড্ডায় তার সবচেয়ে কদর, চমৎকার আড্ডাবাজ আর হামবড়া ভাব নেই বলেই শুধু নয়- যে কারো যে কোন সমস্যার সমাধান যে কোন উপায়ে করে দিতে তার জুড়ি নেই। মানুষের উপকারের জন্য একটু বাঁকা পথে যেতেও সে রাজী। যশোহর বাড়ি তার। ঢাকায় বসত গেড়েছে দুই যুগের উপরে। কিন্তু ঢাকাকে এখনো আপন করতে পারেনি। দু-দুখানা এপার্টমেন্ট আছে এখানে- কিন্তু সুযোগ পেলেই আদি বসতে চলে যায় । তার ধ্যান জ্ঞান সপ্ন কল্পনা সব কিছুই তার জন্মস্থান ও বাল্য বন্ধুদের ঘিরে। মাসখানেক দেশে(যশোহর) যেতে না পারলে সে মাঝে মধ্যেই আনমনা হয়ে ফোঁৎ ফোঁৎ করে দ্বীর্ঘশ্বাস ছাড়ে।
চতুর্থজনের দেশের প্রতি উন্মাদনা নেই কিন্তু এদেশ ছেড়ে অদুর ভবিষ্যতে কোথায় যাবার সম্ভাবনা আছে বলে মনে হয়না। জামাই বউ দেশের সেরা দুটো বহুজাতিক কোম্পানির মার্কেটিং ও সেলস বিভাগের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। ছয় অঙ্কের কোঠায় বেতন আরো দেড় যুগ আগেই পেত। এখন তো ধরা ছোঁয়ার বাইরে। যদিও বহু বছর আগেই বনানীতে তিন হাজার স্কয়ার ফুটের ফ্লাটে উঠে গেছে কিন্তু পল্লবীর এই আড্ডা তাকে এখনো টানে। ছ'মাস অন্তর কিংবা বছর বাদে এলেও উঠতি পুলাপান সিগারেট পেছনে লুকিয়ে সালাম দিয়ে চেয়ার ছেড়ে দেয়। নিজের এলাকায় শান্তি আলাদা! রাস্তার কুত্তা বিলাই ও চেনে। সে রাজকীয় একটা হাসি দিয়ে ভারি কন্ঠে উচ্চ স্বরে বলে,
-আরে সিগারেট লুকাইছ ক্যান? তোমরাতো এখন বড় হয়ে গ্যাছ, টানো টানো সমস্যা নাই।' একথা শুনে পুলাপান শ্রদ্ধায় বিগলিত হয়ে মাথা নুইয়ে ফেলে।
ব্যারিস্টার বন্ধু কথায় কথায় কানাডা প্রবাসী বন্ধুকে জিজ্ঞেস করল,
-তোর ওইখানে এখন বাড়ির দাম কেমন?
-ফ্লাট না ভিলা?
-কোনটা কেমন?
কর্পোরেট বন্ধু বলল, কানাডায়তো ট্রুডো বাইশ মাসের জন্য বিদেশীদের কাছে বাড়ি বিক্রি বন্ধ রাখছে।
ব্যারিস্টার বন্ধু হেসে একটু খোঁচা দিয়ে বলল, -কিনবি নাকি-তোর কয়খান লাগবে?
-নারে দোস্ত কানাডায় গিয়া কি ‘বাল’ করব।
কানাডা প্রবাসী বন্ধু বলল,- আমার এলাকায় দাম বেশী।এক টুকরো জমি সহ ভিলা টাইপ বাড়ি কিনতে চাইলে ছয় সাত লাগবে। আর ফ্লাট চার এর মধ্যে পাওয়া যায়।
-ছয় সাত কি –লাখ ডলারে?
- হ আবার কি! শহর থেকে দূরে নিলে আরেকটু কমে পাবি। কিনবি নাকি?
- না জিজ্ঞেস করলাম আর কি? দেশেই ভাল আছি।
ব্যাঙ্কার বন্ধু ফোঁড়ন কেটে বলল,
- এত টাকা পয়সা দিয়া কি করবি তুই। তোর একখান মাত্র পোলা- দেশের যে অবস্থা, কবে বিদেশে ভাগা লাগে। কানাডায় একটা বাড়ি থাকলে তোর পুলা ভবিষ্যতে দুই হাত তুলে দোয়া করবে। বাড়ি ছিল বলে 'ভাগোনের' যায়গা পাইছে।
- যাঃ শালা! ব্যাবসা করলে বুঝতা। মাস গেলে কর্মীদের বেতন দিতে ফাইট্যা যায়!
কর্পোরেট বন্ধু মাঝখান থেকে আচমকা বলল,
এই সিদ্দিক জানছ, ওতো কুমিল্লায় বিশাল বাগানবাড়ি বানাইছে। সেই রকম। ইনফিনিটি সুইমিং পুল।
ব্যারিস্টার খানিকটা বিব্রত। টম্যাটোর রঙের ছোপ মুখে।
-নারে দোস্ত এমন কিছু না। ও একটু বাড়ায় কয়। আব্বার সখ ছিল গ্রামে একটা বাড়ি করার। তাই করলাম একটা আর কি।এই করোনায় একটা ধাক্কা দিল, আব্বারে নিয়ে ভয়ে ছিলাম। কবে বাঁচি মরি ঠিক নাই- বউ বাচ্চা নিয়ে সবাই মিলে সময় বের করা কষ্ট।
প্রোগ্রাম কর সায়েম(প্রবাসী বন্ধু) থাকতে থাকতে- আমরা গিয়ে একদিন ঘুরে আসি।
ব্যাঙ্কার বন্ধু রাশিদ বলল, কয়দিন পরে কর –আবুল তো আসতেছে!
-তাই -কবে?
- ও আগের ভার্সিটি ছেড়ে অকল্যান্ডের ভার্সিটিতে জয়েন করতেছে। ওখানে জয়েন করার আগে দেশ থেকে ঘুরে যাবে।
সায়েম বলল,
-আমিতো থাকতেছিনা দোস্ত। চার তারিখে শিডিউল।
- এইডা কি কইলি? কদ্দিন পরে আসলি, আরে থাক শালা সপ্তা খানেক পরে যা। জম্পেশ পার্টি হবে। তুইতো বোতল খাইস?
- হ আবার জিগায়। তুই খাইস না?
- না দোস্ত ছাইড়া দিছি। সুমন( কর্পোরেট বস) আগে এক রাইত ও মিস দিতনা, এখনতো ছাইড়া দিয়া হজ করে হাজী সাব হয়ে গেল।
সুমন ঠা ঠা করে অট্টহাসি দিয়ে বলল,
- আর কইস না দোস্ত। যে টাকা মদের পেছনে উড়াইছি ওই টাকা দিয়া কানাডায় দুইখান বাড়ি কিনতে পারতাম।
আচমকা সায়েম প্রসংগ ঘোরাল, রাশিদ দোস্ত একটা উপকার করতে হবে।
- কি, ক?
- লাখ পাঁচেক টাকা পাঠাইতে হবে। চ্যানেল আছে?
- লাখ পাঁচেক মানে- পাঁচ লাখ ডলার?
- হ- আবার জিগায়!
- ব্যাবস্থা করা যাবে। আমি ফোন নম্বর দিবো- ফোন দিয়ে বাসায় আসতে কবি। সে এখানে বইসাই টাকা ট্রান্সফার করে দিবে। কানাডায় তোর একাউন্টে টাকা ঢুকলে তারপরে তুই তার টাকা বুঝায় দিবি। যা হবে স্পটে। বিশ্বস্ত মানুষ।
আমি বললাম
-এত টাকা একবারে সম্ভব?
সায়েম ফিচ করে হাসি দিয়ে বলল,
-আবার জিগায় মামা। ট্রুডো ব্যাপক খুশী। বিন্দাস টাকা ঢুকাইতে পার- কোন জিগা জিগি নাই। বেগম পাড়া কি এমনিই হইল!
-তোর টাকা?
- আমি এত টাকা পাব কই। আমার এক বন্ধুর টাকা।
- যাঃ শালা! তোর হইলে কথা ছিল।
ব্যারিস্টার বন্ধু বলল,
-অস্ট্রেলিয়ায়তো একদিনে দশ হাজারের বেশী ঢুকানো যায় না। আমার এক বন্ধু পাঠাইছিল। পনের বিশ দিনে পুরা টাকা পাঠাইতে হইছে।
ব্যাঙ্কার বন্ধু বলল,
ইউরোপের বেশীরভাগ দেশেই রেস্টিক্ট্রেট- তাইতো পয়সাওয়ালারা ওইদিকে যায় না। জাপানতো এই ব্যাপারে চরম সিরিয়াস! মালয়েশিয়া-টেশিয়ার মত দেশের ব্যাপার না হয় মেনে নেয়া যায়। কিন্তু কানাডায় ক্যামনে? ট্রুডো তো মানবতার সেরা উদাহরন সবার কাছে।
আমি কইলাম,
নেটফ্লিক্সে ‘ব্যাড ব্লাড’ সিরিজটা দেখছ? দেখলে কানাডা নিয়ে ধারনা পাল্টে যাবে। যত গর্জে তত বর্ষে না।
ব্যারিস্টার বন্ধু বলল, আমরা না হয় চরম খারাপ! দেশের প্রতি টান নাই, ভালবাসা নাই। বর্বর- অসভ্য। কিন্তু ওরাতো সভ্য বিশ্বের সেরা সভ্য দেশ-সভ্য জাতি। ওরাতো জানে এইসব টাকা একটা গরিব দেশের অবৈধ, চুরি করা টাকা। ওরা ক্যামনে এই টাকা নিতে দেয়? এইসব বদমাইশ, চোর, জোচ্চোর, লুটেরাদের আশ্রয় প্রশ্রয় দিয়ে শেষ মেষ ওদের সর্বনাশ একদিন ডেকে আনবে। এরা ওইসব দেশরেও একদিন 'খোলা' বানায় দিবে।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে নভেম্বর, ২০২২ বিকাল ৪:২৯
১২টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদী নামের এই ছেলেটিকে কি আমরা সহযোগীতা করতে পারি?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১০:০৪


আজ সন্ধ্যায় ইফতার শেষ করে অফিসের কাজ নিয়ে বসেছি। হঠাৎ করেই গিন্নি আমার রুমে এসে একটি ভিডিও দেখালো। খুলনার একটি পরিবার, ভ্যান চালক বাবা তার সন্তানের চিকিৎসা করাতে গিয়ে হিমশিম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভালোবাসা নয় খাবার চাই ------

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:০৬


ভালোবাসা নয় স্নেহ নয় আদর নয় একটু খাবার চাই । এত ক্ষুধা পেটে যে কাঁদতেও কষ্ট হচ্ছে , ইফতারিতে যে খাবার ফেলে দেবে তাই ই দাও , ওতেই হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতীয় ইউনিভার্সিটি শেষ করার পর, ৮০ ভাগই চাকুরী পায় না।

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৭



জাতীয় ইউনিভার্সিটি থেকে পড়ালেখা শেষ করে, ২/৩ বছর গড়াগড়ি দিয়ে শতকরা ২০/৩০ ভাগ চাকুরী পেয়ে থাকেন; এরা পরিচিত লোকদের মাধ্যমে কিংবা ঘুষ দিয়ে চাকুরী পেয়ে থাকেন। এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×