সময়ঃ ১২:৩০ ২১শে জানুয়ারি ২০২৩ (বড় লেখা- সময় না থাকলে শেষটুকু পড়ার অনুরোধ রইল...)
আমি যেই মুহূর্তে এই লেখাটা লিখছি তখন ব্লগে একটিভ ব্লগার আছেন ২৩ জন, ১০২৬ জন ভিজিটর যার মধ্যে ৮৪৯ জন মোবাইল থেকে।
শীতের এই ছুটির দিনে ২৩ জন একটিভ ব্লগার নেহায়েত কম নয়। ব্লগের পিক সময়ে সর্বোচ্চ কতজন ব্লগার একটিভ থাকতেন এমন ডাটা কি কারো কাছে আছে? আমার দেখা মতে ১২০-১৫০ জন।
আমরা যারা এখনো ব্লগে একটিভ আছি- মাঝ যৌবনে এসে ব্লগিং শুরু করে যৌবন গত প্রায়, কিংবা যারা প্রথম যৌবনে এসে মাঝখানে এসে পৌঁছেছেন অথবা পঞ্চাশ এ শুরু করে বার্ধক্যের দোরগোড়ায়- তাদের কাছে ব্লগ বা ব্লগিং কতটা গুরুত্বপূর্ণ? আমার কাছে কিন্তু বেশ গুরুত্বপূর্ণ। ব্লগ আমার জীবনের একটা অংশ হয়ে গেছে। ব্লগে ঢুঁ না দিয়ে দীর্ঘসময় কাটানো বেশ কষ্টকর বটে। দেখা সাক্ষাৎ নেই তবুও সোনাবীজ ভাই কিংবা জুল ভার্ন ভাইকে কত আপন মনে হয়। দীর্ঘ সময় ধরে শায়মা আপু বা জুন আপু ব্লগে অনুপস্থিত দেখে এদিক ওদিক খোঁজ খবর নিয়ে তাদের হাল হকিকত জানবার চেষ্টা করি। ব্লগের ম্যারাডোনা সোনাগাজী সাহেবর জন্যও শঙ্কা জাগে একদিন ব্লগে না দেখলে।
চমৎকার মানবিক রাজীব নুরের বিশৃঙ্খল ব্লগিং আমাকে পীড়া দেয়।
শূন্য সারমর্মের পোস্ট ছাড়া ব্লগ শূন্য লাগে। মন্তব্য কম করলেও সত্যপথিক সাইয়্যানের পোস্টের জন্যও অপেক্ষা করি।
কবিতা পড়া খুব কম হয় তবুও সেলিম আনোয়ার ভাই, ইসিয়াক,স্প্যানডক, ব্লগের অন্যতম সু-সাহিত্যিক খায়রুল হাসান ভাই, সোনাবীজ ভাই,মনিরা আপু, আলমগীর সরকার লিটন প্রমুখ এদের কবিতায় চোখ বোলাই। এমনকি কোনদিন পড়া হয়নি এমন ব্লগার সাইফুলসাই-এর নাম দেখার জন্য উদগ্রীব থাকি।
বামদিকে একদম ধ্যানী বকের মত চুপচাপ বসে মাঝে মধ্যে জলে ঠোঁট ডুবিয়ে টুক করে একটা মাছ ধরা নজসু, রেজা ঘটক, নতুন ( অবশয় ব্লগার নতুন বেশ একটিভ) আছে কিনা ঘাড় বাঁকা করে দেখে নিই। পদাতিক ভাই,ঊণকৌটী আর গেছো দাদা আসেন ওপার বাংলার ফ্লেভার নিয়ে। দুই বাংলা যেন এক উৎসবে মেতে ওঠে।
অর্কের সাথে একটু মনোমালিন্য হয়েছে সত্য তবুও তাকে মিস করি।
আহমেদ জি এস ভাই বা আলী ভাই এর একটা দুর্দান্ত নিবন্ধ আর মন্তব্যের জন্য আমি তীব্র আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করি। এঁরা যেন ব্লগের হিরকখণ্ড।
আমি উন্মুখ হয়ে বসে থাকি মা হাসানের ফিরে আসার জন্য। কিংবা করুণাধারা আপু আর বিদ্রোহী ভৃগুর একটা পোস্টের জন্য।
ঈশ্বরকণার একটা মন্তব্য আমাকে দারুণভাবে অনুপ্রাণিত করে। বিটপি কিংবা নিমো তাদের খাট্টা মিঠা ধারালো যুক্তির মন্তব্যে বিদ্ধ করলেও ভাল লাগে।
ব্লগে কামাল ভাই এর মত অতি অভিজ্ঞ বিজ্ঞ মানুষ কোন একদিন তার জীবনের গল্প লিখবে এই আশায় উন্মুখ হয়ে থাকি।
এমনকি নাহল তরকারি ছাড়াও ব্লগ ঝাল নুন-হীন লাগে।
প্রিয় ব্লগার নিবর্হণ নির্ঘোষ, সাড়ে চুয়াত্তর আর নতুন নকিব ও মোহাম্মদ কামরুজ্জামানের পোস্ট পড়ার আগে ঘড়িতে সময় দেখে নিই। কি চমৎকার তথ্য সমৃদ্ধ নিবন্ধ লিখেন এঁরা। এদের কেউ তেড়ে এসে তেতো মন্তব্য করলে নাখোশ হই।
ঘোষণা দিয়ে সাসুম আর জটিল ভাই এর চলে যাওয়ায় কষ্ট পেয়েছি ভীষণ!
আর হেনা ভাই ও ডাই হার্ট ব্লগার নুরু ভাই-এর অসীমের পানে প্রস্থান কতটুকু কষ্ট দিয়েছে সেটা ভাষায় ব্যক্ত করবার নয়।
ব্লগার নূর মোহাম্মদ নূরু মজার ছলে মনের কষ্ট খেদ উগড়ে দিয়ে আমার একটা পোস্টে বলেছিলেন:
তপন দাদা
আমি এখনো দোলচালের মাঝে আছি !!
আমি কি আসল ব্লগার? যদিও সারা জীবন
তাই ভাবতাম তবে আপনার লেখা পড়ে বুঝলাম
আসল ব্লগার হতে হলে অনেক নাকানি চুবানি খাবার
পরেও ব্লগ কামড়ে থাকতে হয় ! মনে হয় পারবো না !! ~ শেষ-মেষ তিনি চলেই গেলেন পৃথিবী ছেড়ে একেবারে!!!!
ব্লগের আপুরা মানে ছবি আপু তার ছবির মত ছবি ও কবিতা না নিয়ে আসলে, দুর্দান্ত লিখিয়ে রোখসানা লেইস, মানব দরদী, ডাকাবুকো সোহানী আপু, কাতিআশা আপু তাদের ভিন দেশের অভিজ্ঞতার গল্প নিয়ে না আসলে মনে হয় ব্লগে দুর্দিন চলছে। ভাল লিখেন সামরিন হক, লায়লা আরজুমান খানম লায়লা,সামিয়া প্রমুখ।
আরেক আপুর কথা না বললেই নয় তিনি হচ্ছেন ব্লগার 'নান্দনিক নন্দিনী'। দারুন লেখেন তিনি।
মেহবুবা-আপু ইদানিং ব্লগে অনুপস্থিত! আরেক ডাকসাইটে নারী ব্লগার ওমেরা-আপুও লাপাত্তা দীর্ঘদিন।
নারী ব্লগার আরো দু'তিনজন আছেন যাদের লেখা আমি পড়ি কিন্তু এই মুহুর্তে তাদের সঠিক নাম মনে পড়ছে না- মনে পড়লে সংযুক্ত করে দিব।
অনেকদিন ব্লগার গোফরান নেই সুন্দরী তন্বী-রমণীদের দেখা হয় না। হাবিব ভাই ও লাপাত্তা।
আমাদের অতি-প্রিয় বয়ঃজৈষ্ঠ গুণী ব্লগার ঠাকুর মাহমুদ আচমকা ফাঁকা থেকে গুলি ছুড়ে অদৃশ্য হয়ে যান। এমনি করে হুট হাট হারিয়ে যায় আরেক ব্লগার আরইউ।
আরেকজন আছেন হাসান মাহবুব-ব্লগে এখনো এত জনপ্রিয়তার পরেও তিনি ধূমকেতুর মত উদয় হয়ে লাপাত্তা হন।
নীলআকাশ এর রঙ হলুদ কেন আমার বোধগম্য হয়নি। তবে তিনি লেখেন ভাল।
সাখাওয়াত হোসেন বাবনের বৈজ্ঞানিক কল্প কাহিনী, ব্লগার রিনকু’র মুভি রিভিউ মাঝে মধ্যেই মিস হয়ে যায়।
আজ ব্লগের প্রাণ ভোমরা জলদস্যুকে দেখছি না (পরে দেখেছি)। আহা ফুল লতা পাতা গাছ গাছালি নিয়ে কত কিছুই না জানলাম শিখলাম তার কাছ থেকে।
ব্লগের ভীষণ একটিভ ও সেনসিটিভ ব্লগার দারুণ লিখিয়ে মনিরা আপুর খোঁজ নিই ফেসবুক থেকে। বড্ড ঝামেলার মাঝে আছেন তিনি।
~এখানে বলে রাখা ভাল আমার হাতের বিরিয়ানি এবং কাচ্চা খেয়ে উহ-আহ করেনি এমন আদম খুব কমই আছে!
এমন উক্তি করা ব্লগার ‘কাছের মানুষে’র বিরিয়ানি খাবার সেই ‘আদম’ হবার সখ আছে আমার।
সাহিত্য জগতে সুনামের সাথে বিচরণ গুলশান কিবরীয়ার ব্লগারের সান্নিধ্যে আমরা ধন্য
তেমন ধন্য অধীতি, ঋণাত্মক শূণ্য, মহাজাগতিক চিন্তা, নূর আলম হিরণ- এর সাহচর্যে।
কবি বাকপ্রবাস, সামিউল ইসলাম বাবু মুবিন খান, আমি আগন্তুক নই, বিচার মানি তালগাছ আমার, এস এম মামুন অর রশীদ- ভাই আপনাদের কবিতা পড়া হয় কম কিন্তু নজরে নজরে রাখি।
মাঝে মধ্যে দারুণ কিছু লেখা দেয় তবে মন্তব্যে উদার-হস্ত সৈয়দ মশিউর রহমান
কিছু ব্লগার নীরবে নিভৃতে ব্লগিং করে যান তেমন ক’জন মোস্তফা সোহেল, জিএম হারুন -অর -রশিদ, ইমতিয়াজ১৩, জিয়াউর রহমান ফয়সাল, শ্মশান ঠাকুর, নয়ন বিন বাহার,পবিত্র হোসাইন, কালো যাদুকর, মারুফ রাশেদ, মোস্তফা কামাল পলাশ, অকপটে।
বেশ জ্ঞানী গুনি ঋদ্ধ ব্লগার অনল চৌধুরী, নীলসাধু, কলাবাগান১,আল ইফরান কে ব্লগে দেখলে বেশ চনমনে ভাব আসে। ব্লগার কলাবাগান১ তো লেখা আর মন্তব্য দুটোতেই দুর্দান্ত! নিঃসন্দেহে তিনি সেরা ব্লগারদের একজন।
যার কথা না বললেই নয় অপু তানভীর। সাহিত্য গল্প কাহিনী আর নিবন্ধে যার জুড়ি মেলা ভার।
মিশু মিলনের মত ব্লগারেরা খুব ভারি ভারি কথা লিখেন- কেন যেন কারো পোস্টে ইনি মন্তব্য করেন না অন্য তার পোস্টে মন্তব্য না করলেও কিছু এসে যায় না। তেমন আছেন আরো কজন –এঁরা খুব কেউকেটা ব্লগার তাই নাম বললাম না। একজনকে কেন মন্তব্য করেন না বা মন্তব্যের উত্তর দেন না বলতে গিয়ে ফেঁসে গিয়েছিলাম! কি বড় মাপের কমিউনিটি সামলাতে হয় তার- তাই এসব ফালতু কাজে সময় দেবার সময় নেই তার।
প্রতিদিন একটা করে গল্প তৈরি করা মোঃ মাইদুল সরকার
কারো পোস্টে কোনদিন মন্তব্য না করা আইন আদালতে সিদ্ধহস্ত আখনূখ জাবীউল্লাহ তবে এ বিষয়ে আরেক উল্লাহ আছেন তিনি এম টি উল্লাহ
মন্তব্য পোস্টে বৈশাখী ঝড়ের মত আলোড়ন তোলা হাসান কালবৈশাখী
দিনমান কবিতা নিয়ে পড়ে থাকা আর মাঝে মধ্যে গদ্যের গলিতে ঘুরে আসা রানার ব্লগ কিন্তু মন্তব্যে জ্বালা ধরিয়ে দেয়।
খাঁজা বাবা নাম দেখলেই মনে হয় উনি গাঁজা খান( সরি ব্রো)
মাঝে মধ্যে পোস্ট দিয়ে ব্লগ কাঁপানো ঢাবিয়ান
নীরবে নিভৃতে মন্তব্য করে যাওয়া ইদানীং শরীরটা ঠিকমত সঙ্গ না দেয়া নেওয়াজ আলি ভাই
মিরোরডডল-আপু আপনাকে ছাড়া ব্লগ একেবারে পানসে। ব্লগে ঢুকেই আপনাকে খুঁজি হারিকেন দিয়ে
শাহ আজিজ ভাই মনের দিক থেকে তিনি দারুণভাবে তারুণ্য ধরে রেখেছেন। তার নিয়মিত ভিন্ন-ধারার ব্লগিং সেটাই প্রমাণ করে।
১১ বছর ৪ মাস ব্লগিং করা ‘রবিন হুডে’র শেষ চারটে পোস্টের মধ্যে তিনটে পোস্ট কেন মন্তব্য শূন্য সেটা মার মাথায় আসছে না!!!
যার লেখা পড়লে সম্মানী দাবি করেন তেমন ব্লগার আবদুর রব শরীফ – তবে ভাল মানুষ মনে হয়- সাতেপাঁচে নেই।
বাবা যার ধ্যান জ্ঞান। আর দিনমান স্বপ্ন দেখেন হারিয়ে ফেলা সেই সোভিয়েত রাশিয়ার তিনি আমাদের স্বপ্নবাজ সৌরভ
আরে ভাই ভুত কেমনে গেঁয়ো হয় সেই প্রশ্ন করেও করা হয়নি যাকে তিনি প্রিয় ব্লগার গেঁয়ো ভূত
কবিতা কথ্যকে আমি নাম শুনে ভাবিনি সে পুরুষ ব্লগার!!
ও ভুয়া মফিজ ভাই আপনি কই গেলেন? নিশ্চিত ওই সাদা চামড়ার বেটির লগে দারুণ কিছু টক মিষ্টি গল্প নিয়ে আসছেন নাকি ফের?
চমৎকার সব পোস্ট আর মন্তব্য দিয়ে কখনোই ব্লগ মাতান নি- কেউ কেউ ভাবে তিনি বাগ। আমি বলেছিলাম এলিয়েন ব্লগার ঘোর অমানিশায়....আমি একলা নিশাচর!!
গত পাঁচ বছরে পরিবারের তিন জন সদস্য হারানোর ট্রমা কাটিয়ে না উঠতে পারা ব্লগার বিষাদ সময়ের দ্রুত ভাল সময় ফিরে আসুক।
দুর্দান্ত সব ব্লগার কল্পদ্রুম, ১১ বছরে ৯ খানা পোস্ট করা অশুভ,আমি ব্লগার হইছি, মোস্তাফিজুর রহমান তমাল যেন ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে।
আরও কত প্রিয় ব্লগার আছে আমার এ আর ১৫, মোগল,এমএলজি
ব্লগের সর্বকালের অন্যতম সেরা ব্লগার শের শায়রী যখন বলেন: আপনি লিখলে খারাপ হবে না, আগের কিস্তিতে যখন লিখতাম ( মাঝে প্রায় ছয় বছর ব্লগে লিখি নি) তখন সেভাবে পড়া হয় নি, এই কিস্তিতে আমি কিন্তু আপনার ভক্ত হয়ে গেছি। আই মীন ইট।
~তখন আমি আকাশে উড়ি!!!
তার এই লেখাটায় সামুর বর্তমান অবস্থা নিয়ে অনেক প্রশ্নের উত্তর পাবেন আশা করি; সামু ব্লগে কেন আসে না আগের মত লেখা
ও এখানে শরৎ ভাই ও জাদিদ ভাই যদিও ব্লগের সাথে বিশেষভাবে সম্পৃক্ত তবুও তাদের কথা বলা হয়নি। একসময় শরৎ-ভাই এর মন্তব্য আমাকে বিশেষভাবে অনুপ্রাণিত করেছে। ব্লগে এখন তিনি ভীষন অনিয়মিত।
আর ওহ আমাদের এক গায়ক ভায়ের খোঁজ পাচ্ছিনা অনেক দিন। একখানা মন্তব্য না পেলেও দিনের পর দিন তিনি নিজের গাওয়া গানের ভিডিও পোস্ট করতেন। গানের প্রতি তার একাগ্রতা ও ধৈর্য দেখে আবাক হয়েছি।
আহা আখেনাটেন গুরুর কথা ক্যামনে ভুলে গেলাম!!! দুর্দান্ত এই ব্লগার ইদানিং ব্লগের পথ ভুলে গেছেন।
২৫ জানুয়ারি আপডেটঃ আরো যে ব্লগারদের নাম মনে আসল তারা হলেন; সোনালি কাবিন, সবসময়ই আমাকে অনুপ্রাণিত করা ব্লগার আকন বিডি , আমার অতি প্রিয় একজন ব্লগার অলস ছেলে, প্রামানিক ভাই, আমি সাজিদ, বিবর্তনবাদ নিয়ে সিরিজ লেখা গিয়াস উদ্দিন লিটন ভাই, ঢুকিচেপা,সাহাদাত উদরাজী, মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন , দেশ প্রেমিক বাঙালী ও ব্রুস উইলিসের প্রেতাত্মা জ্যাকেল।
যার নাম আমি কখনো পড়তে পারিনি তিনি হচ্ছেন; ব্লগার ৎঁৎঁৎঁ !! আপনারাকি পেরেছেন???
ধীরে ধীরে কত জনকে স্মরণ হচ্ছে কিংবা পুরনো পোস্টে ( সালঃ ২১-২২) গিয়ে তাদের মন্তব্য দেখে মনে পড়ছে।
***
শতাধিক ব্লগারের কথা বললাম। নিয়মিত বা অনিয়মিত কিন্তু ব্লগিং করেন আরো জনা বিশেক ব্লগারের কথা বাদ পড়ে গেছে নিশ্চিত। নতুন ব্লগার আছেন অনেকেই যাদের কথা আসেনি।
আমরা ধরে নিতে পারি গত ছয় মাসে নিয়মিত কিংবা অনিয়মিতভাবে শ’দুয়েক ব্লগার ব্লগিং করেছেন একটিভলি।
এর মধ্যে ন্যুনতম পঞ্চাশ এর অধিক ব্লগার ব্লগিং করছেন ১০ বছর বা তার কিছু বেশী সময় ধরে। ব্লগের উত্থান পতন এর সাক্ষী ছিলেন এঁরা। প্রথম আলো ব্লগ,সচলায়তন,নাগরিক ব্লগ, আমার ব্লগ থেকে শুরু করে অনেক জনপ্রিয় ব্লগিং প্লাটফর্ম তাদের কার্যক্রম গুটিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছেন বিবিধ কারণে সেটা প্রায় সবাই কম-বেশী জানেন। একমাত্র টিম টিম করে টিকে আছে একসময়ের বিশ্বের সবচেয়ে বড় বাংলা কমিউনিটি সামহোয়্যার ইন ব্লগ!
পুরনোরা তাদের চরম ব্যস্ততার ফাঁকে এখানে এসে রৌদ-তপ্ত দুপুরে অশ্বত্থের ছায়ায় যেন একটু বিশ্রাম নেন। কেউ পুরনো স্মৃতি রোমন্থন করেন- কেউ ইতি উতি খোঁজেন তার সময়ের ব্লগারদের। দেখা পেলে দারুণ উৎফুল্ল হন। কেউকেটা কেউ এসে নিজের মুনশিয়ানা দেখাতে গিয়ে হাজা মজা এই পুকুরের জলে কোন আলোড়ন তুলতে না পেরে অতি বিষণ্ণ মনে হারিয়ে যান। কেউ পুরনোদের ভালবাসা ও আন্তরিকতার ছোঁয়ায় দারুণভাবে উদ্বেলিত হন। মন আকুপাকু করে ফিরে আসতে কিন্তু যাপিত জীবনের হাজারো ব্যস্ততা তাকে আর ফিরে আসতে দেয় না।
নতুন ব্লগারেরা এসে খেই হারিয়ে ফেলে এইসব ডাকাবুকো ব্লগারদের ছেলেমানুষী ব্লগিং দেখে। তবে এঁরাও একসময় স্রোতে গা ভাসিয়ে দিয়ে খিস্তি খেঁউড়ে লিপ্ত হয়। যে জলাধারে পানি কম সেখানে কাদা ছোড়াছুড়ি বেশী হয়- ঘোলা পানিতে বড় মাছ হাঁসফাঁস করে।
অনেকে আবার ভিন্ন আইডিতে এসে নতুন করে নিজেকে তুলে ধরতে চান – কেউবা তার অপছন্দের ব্লগারকে একহাত দেখে নেবার বাসনায়।
ব্লগের বাইরে থেকে কখনো দু’শ পাঁচ’শ থেকে কখনো হাজার-দু’হাজার মানুষ উঁকি ঝুঁকি মারেন কেন? এঁরা কি উদ্দেশ্যে ব্লগের দিকে চোখ রাখেন?
আমি নিশ্চিত সেখানে বহু পুরনো ব্লগার, পেশাজীবী সাংবাদিক একনিষ্ঠ পাঠক কিংবা প্রশাসনের কেউ সুতীক্ষ্ণ নজর রাখেন গত দশকের মত ফের বেতাল বেচাল হয়ে না যায় তাই দেখতে। সেখানে আস্তিক-নাস্তিক শত্রু মিত্র সবাই আছেন।
ফেসবুক,ইন্সটাগ্রাম, টুইটারে কেউ পুরোপুরি স্বাধীন নয়- সেখানে ইচ্ছেমত মত প্রকাশের স্বাধীনতা রহিত করা হয়েছে। কিন্তু এখনো বাংলা ভাষার একমাত্র স্বাধীন কমিউনিটি প্লাটফর্ম এই সামু। তাই অনেক ব্লগারেরা যা ইচ্ছে তাই লিখে- তাদের অত্যাচারে অনেক সুশীল ব্লগার নীরবে নিভৃতে কেটে পড়েন, কেউবা প্রতিবাদ করে তোপের মুখে পড়েন।
ধরে নিই কোন একদিন সকালে সামু ঘোষণা দিল ‘আমরা অতীব দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে,অনিবার্য কারণ-বশত আগামীকাল থেকে সামহোয়্যারইন- এর যাবতীয় কার্যক্রম বন্ধ করে দিতে হচ্ছে।পৃথিবীর সেরা বাংলা কমিউনিটি ব্লগ আপনাদের শেষ বিদায় জানাচ্ছে‘
~তাহলে কে কে কষ্ট পাবেন বলুন-তো? হতে পারে আমাদের জানা আপা আর ইন্টারেস্ট পাচ্ছেন না কিংবা তিনি আর অর্থনৈতিক সহযোগিতা করতে পারছেন না, কিংবা জাদিদ সাহেব অন্য কাজে ভীষণ ব্যস্ত হয়ে পড়লেন- নতুন আর মডারেটর মিলছে না। তখন আমাদের মানে যারা পুরনো ব্লগার তাদের করণীয় কি হবে?
ব্লগের প্রতি আমাদের কি দায়বদ্ধতা নেই। ব্লগ আমাদের মত প্রকাশের অধিকার দিয়েছে। দিয়েছে নিজের অনুভূতি কিংবা অনুভব প্রকাশের সুযোগ। সারা বিশ্বের বাঙ্গালীদের এক সুতোর বন্ধনে বেঁধেছে, এগুলো কি দায়ভার নয়?
এই ব্লগ থেকে কত শত অ-সাহিত্যিক কিংবা নিজের ডায়েরিতে মনের দু’কথা লিখে রেখে সংগোপনে চিপা চাপায় রেখে দেয়া কত মানুষ আজ মুল ধারার সাহিত্যের দরজায় কড়া নাড়ছে কিংবা ইতিমধ্যে বিখ্যাত হয়েছেন। নেগেটিভ দিক কিছু আছে নিশ্চিত কিন্তু আজ অনেকের রুটি রুজির মাধ্যম হয়েছে এই ব্লগ! বই মেলায় প্রতি বছর শতাধিক বই বেরোয় ব্লগারদের- তার মধ্যে কিছু বই তো অবশ্যই দারুণ জনপ্রিয়তা পায়। তাদের কি ব্লগের প্রতি দায়বদ্ধতা নেই?
অতীব সাধারণ মানের একজন ব্লগার হিসেবে আমি বলব; অবশ্যই আছে। বাংলা ভাষার সবচেয়ে বড় এই ব্লগিং কমিউনিটিকে টিকিয়ে রাখার দায়িত্ব আমার আপনার মায় পুরনো নতুন সব ব্লগারদের। মনে রাখবেন আপনি যত-বড় কেউকেটা কিংবা ঋদ্ধ সাহিত্যিক ব্লগার হন না কেন এই ব্লগের আপনার কাছে কোন দায় নেই- আমার আপনার আছে।
কবি সাহিত্যিক আর হুজুরদের মধ্যে একটা বড় মিল রয়েছে। এঁরা বেশীরভাগ শুধু নিতে জানে- দিতে জানে না। মনে করে তারা কবিতা সাহিত্য দিয়ে পুরো জাতিকে ঋনভারে আবদ্ধ করছেন।
আমার এই লেখাটার বিশেষ উদ্দেশ্য গতকালের মডারেটর জাদিদ ভাই মানে কাল্পনিক_ভালবাসা'র ফেসবুকের একটা পোস্ট উপলক্ষে। আসুন আগে পড়ে নিই সেই পোস্ট টা আগে;
প্রিয় ব্লগার,
শুভেচ্ছা নিন। সকলের মতামতের ভিত্তিতে আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ব্লগারদের পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। অনুগ্রহ করে সবাই দ্রুত নিবন্ধন করুন।
ব্লগারদের পুনর্মিলনীয় উপলক্ষে বিভিন্ন স্যুভেনিয়র, বই প্রকাশ ও অনুষ্ঠান স্থল অগ্রিমসহ বিভিন্ন কাজে অর্থ প্রয়োজন। এখন পর্যন্ত নিবন্ধনেরকৃত ব্লগারদের সংখ্যা খুবই কম। আমরা অতি সামান্য কিছু ব্যক্তিগত ডোনেশন পেয়েছি।
আমরা একটি স্পন্সরের সাথে আলাপ করেছিলাম, কিন্তু তাদের পুরো বিষয়টি অনেক আমলাতান্ত্রিক জটিলতা থাকায় তাদের অর্থ ছাড় হতে হতে আমাদের অনুষ্ঠানের সময় প্রায় চলে আসবে। এই অবস্থায় অনুষ্ঠানটি সঠিকভাবে আয়োজন করতে গেলে কিছুটা ঝামেলা সৃষ্টি হতে পারে। তাই আমরা অন্য স্পন্সর দেখছি।
যদি আপনাদের মধ্যে কেউ স্পন্সর সংক্রান্ত কাজে আমাদের হেল্প করতে পারেন, তাহলে দ্রুত যোগাযোগের জন্য অনুরোধ রইলো।
আমাদের ব্লগ আর ব্লগারদের উজ্জীবিত করতে পুনর্মিলনীর ভীষণ দরকার।
আজকে কত বড় বড় ডায়লগ। ভাষা আর শব্দ নিয়ে কত কারিকুরি- নিজেকে কত কেউকেটা ভাবা। কিন্তু যে, আঁতুড়ঘরে জন্ম হোল আপনার শিল্প প্রতিভার সেটাকে ভুলে যাবেন?
ব্লগের সবচেয়ে একনিষ্ঠ ডাই-হার্ট ব্লগার আমার দেখা মতে জনাব সোনাগাজী।তিনি নিজে যেমন ঝড় তুলেছেন তেমনই সবচেয়ে বেশী ঝড় ঝাপটা গেছে তার উপর দিয়ে। তবুও তিনি অবিচল। তার মন্তব্যের ধারা এখনো পালটায় নি। ব্লগ চিরতরে বন্ধ হলে আপনি কেমন কষ্ট পাবেন গাজী সাহেব?
এখানে আমাদের করণীয় কি? শুধু সহমর্মিতা,আশ্বাস, ফাঁকা বুলি আর লাইক রিয়্যাক্ট? এগুলোর দরকার আছে বটে কিন্তু সবচেয়ে বড় প্রয়োজন যেটার সেটা হচ্ছে অর্থ। সামু'র আজ কি দুর্ভাগ্য যে,একটা স্পন্সরের জন্য আজ ব্লগারদের সাহায্য চাইতে হচ্ছে!! গভীরভাবে ভেবে দেখেছেন ব্যাপারটা?
সামু হয়তো আজ খাদের কিনারায়( আমার ধারনা) দাঁড়িয়ে আছে। একে আজ নার্সিং করতে হবে- না হয় হয়তো চিরতরে হারিয়ে যাবে একদা গর্ব করা একদা বাংলা ভাষায় বিশ্বের সবচেয়ে বড় কমিউনিটি। আমাদের তখন শুধু দীর্ঘশ্বাস ফেলে আর হা-হুতাশ করা ভিন্ন কোন উপায় থাকবে না।
সামুর প্রতি আজ সহমর্মিতা ও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে-যাতে আমরা কোনদিন হীনমন্যতায় না ভুগি কিংবা আফসোস না করি।
*****
প্রিয় ব্লগারস,
আগামী ২৪শে ফেব্রুয়ারি 'ব্লগারদের পুনর্মিলনী' অনুরোধ থাকবে সবাইকে নিবন্ধন করতে।
*****
অনেকের নাম অনিচ্ছাকৃত মিস গিয়েছে। কিছু ব্লগারের আইডি'র বানানে ভুল আছে- শুধরে দিবেন।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জানুয়ারি, ২০২৩ রাত ৯:০৮