এ দন্ডে রসুনের গল্পটা সেরে নিই! রান্না করতে গিয়ে সেই যে দাগা খেলাম- এর পর থেকে আমার শেফ হবার খায়েশ চিরজন্মের মত শেষ হয়ে গেল তা নয়- মনের মধ্যে সুপ্ত বাসনা ছিল! দেখিস একদিন আমিও হবার!
আমাকে হাতে কলমে প্রথমে রান্না শেখাল নাতাশা! নাতাশা নাম শুনেই নিশ্চয়ই নিশ্চিত হলেন একজন রাশিয়ান ললনা? ঠিক আছে কিন্তু ভাববেন না সে আমার জি এফ! সে ছিল আমার বন্ধু লিটনের গার্ল ফ্রেন্ড। লিটনের আবলুশের কাঠের মত গায়ের রঙ আর এথলেটিক ফিগার! এ মেয়েও তেমন ডাকাবুকো চেহারার। ওর পাশে আমাকে ল্যা্দা প্যাদা গুটি বয় লাগে। বয় কাট বিরল লাল চুলের মেয়ে - বয়স উনিশ কুড়ি। বিশাল বক্ষ দুলিয়ে চলে, কেউ আড়চে-তেড়চে তাকাল কিনা তাই নিয়ে ভ্রুক্ষেপ নেই। সবসময় ছটফট করে।
এই মেয়ে কি না দুনিয়ার সুপারসনিক গতির রান্নার উস্তাদ! তার সেই রান্নার সবগুলো রেসিপি আজ আমার মনে নেই তবে দু-য়েকটা পৃথিবীর সেরা রেসিপির তালিকায় অনায়াসে পড়তে পারে আমি নিশ্চিত!
রাশীয়ায় সারাবছর ক্যামনে কোন গতিকে তাজা থাকত এর এলেম আজ অব্দি আমি বের করতে পারিনি। সারা বছর আলু ঝকঝকে তকতকে চামড়া টান থাকত। কাটলেই যেন রস ঝড়ে পড়ে।
***
নাতাশার রেসিপি~১
নাতাশা প্রথমে আট দশটা আলু নেয়। সাথে তিন চারটে সেই গাবলু গুবলু আস্ত রসুন। এক ডেলা মাখন আর একটু লবন ও গোল মরিচ। প্রথমেই চুলা ধরিয়ে প্যান চড়িয়ে দেয়। সিঙ্কে সব আলু দিয়ে ট্যাপ ছেড়ে দিয়ে পিলের দিয়ে ঘ্যাচাঘ্যাচ ছুলতে থাকে। এক মিনিটেই সব আলু ছিলে ছিলে কড়াইতে মাখন দিয়ে সেই মাখনেই হাতে আলু রেখে সাটাসাট কেটে কড়াইতে ছাড়তে থাকে। আলু পুরোটা দেবার পরে গোটা রসুনের দু মাথা কেটে বড় একটা চামচের মাথা দিয়ে ছ্যাচা দিয়ে কি অদ্ভুত উপায়ে সব ছাল ছাড়িয়ে ফেলে একবারে। সব রশুনগুলো আলুর উপরে ছড়িয়ে গোল মরিচের গুড়ো আর লবন দিয়ে ঢেকে দেয়। পাক্কা আট দশ মিনিট 'মিড ফ্লেমে' ভাজার পরে দেখা যায় একপাশে একদম মচমচে হয়ে গেছে!
রান্না শেষ - কি চমৎকার স্বাদ আর ঘ্রান সেই আলুভাজার সাথে বান বা পাউরুটি আর কালো কফি দিয়ে খেতে খেতে আপনি অন্যভুবনে চলে যাবেন নিশ্চিত।
(বাঙ্গালীয়ানাঃ এর সাথে বান বা পাউরুটি শুধু, ভুলেও ভাত রুটি আর খিচুরি দিয়ে খাবেন না। ঝালের জন্য একটু লাচা মরিচ ফালি করে কিংবা চিলিফ্লেক্স ও ভাজা জিরার গুড়ো দিতে পারেন তবে মরিচের গুড়ো দিবেন না। আর একপাশে ভাজা হলে একবার উলটে দিয়ে রশুনের একপাশটা ভেজে নিতে পারেন তবে কোনভাবেই নাড়াচাড়া করবেন না।)
***
নাতাশা , সিভিয়েতা, অকসানা এমন কিছু কমন নাম রাশিয়ায় যে, দশজনের মেয়েদের একটা গ্রুপে আপনাকে নিশ্চিত দু'তিনজন করে একই নামের এমন মেয়ে পাবেন।
আমাদের মধ্যেও এমন কয়েকখানা পরিচিত নাতাশা ছিল। এই নাতাশাকে চিনিতাম 'লিটনা নাতাশা' নামে। কাকোই নাতাশা( কোন নাতাশা)
লিটনা নাতাশা( লিটনের নাতাশা)
***
নাতাশার সেরা রেসিপি
আস্ত একটা মুরগী নিয়ে ছুরির মাথা দিয়ে শরিরে বেশ কিছু আড়া আড়ি গর্ত করে তারপরে সেই গর্তে একটা করে রসুনের কোয়া পুরে দিল। একটু সি সল্ট (কিংবা রক সল্ট হলেও চলে যে কোন সাদা তেল অলিভ আর সুর্যমুখী হলে ভাল হয়) তেল তার সাথে গোল মরিচের গুড়া দিয়ে হালকা করে মুরগীর গায়ে প্রলেপ দিয়ে একটা কাচের জারের মধ্যে অর্ধের জার ভর্তি পানি নিল ( সব মিলিয়ে সময় লাগল দশ মিনিট)। তারপরে সেই মুরগীর পশ্চাৎদেশ ওই কাঁচের জারের মুখে ঠেসে বসিয়ে দিল। এর পর গ্যাস ওভেনে ৩০ মিনিট বেক কিংবা গ্রিল। ব্যাস হয়ে গেল!
*প্রায় তিন মাস শুধু ডিম খেয়ে বিস্বাদ হয়ে যাও জিভের জন্যেই কি না জানি না। এমন স্বসাদু মুরগী আর আমি কবে খেয়েছি মনে করতে পারি না। (এই রেসিপি আমি নিজে কখনো ট্রাই করিনি- নিজ দায়িত্বে করবেন

***
রসুনের ফাঁকিবাজি সসটাও শিখেছিলাম তার কাছ থেকেই। বাসায় যদি কেউ চাপড়ি বা ধাপড়া বানিয়ে খান তো ট্রাই করে দেখতে পারেন এই সসটা দিয়ে। পিয়াজু, পাকোরা ,বড়ার কিংবা মমো'র সাথেও বেশ লাগে!
কয়েক কোয়া রসুন লবন দিয়ে ছেঁচে নিন তারপর একটু সরিষার তেল ( গন্ধ সহ্য না হলে অলিভ অয়েল বা সুর্যমুখীর তেল ভাল তবে সয়াবিন তেল ভুলেও দিবেন না) আর পানি দিয়ে গুলে নিন। একবার চেখে দেখুন- আগেই নাক সিঁটকাবেন না।
***
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ বিকাল ৩:২৬