somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমাদের ক্যান্টিন

২৬ শে ডিসেম্বর, ২০২৩ দুপুর ১:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


তাম্বুভে আমাদের হোস্টেল 'তনুস' থেকে ক্যান্টিনের দুরুত্ব ছিল কম বেশি দু'শ মিটার! সারা সামার জুড়ে ছুটি থাকে তাই সামারে কখনো সেখানে যাওয়া হয়নি- শীতের সময়ে খিদে পেটে বরফ ডিঙ্গিয়ে সেই দু'শ মিটার দুই মাইলের বেশী দূর মনে হোত। বহু আগে আমাদের সেই ক্যান্টিন নিয়ে 'মদন বাবুর্চী' নামক একটা ছোট গল্পে আমি সেই ক্যান্টিন নিয়ে বেশ খানিকটা লিখেছিলাম;
আপনাদের কি জানতে ইচ্ছে করছে সেই ক্যান্টিনে কেমন লোভনীয় দুর্দান্ত সব রাশিয়ান ডিস রান্না হোত? বলছি তবে; ওদের মান সম্ভবত ভাল ছিল,পরিচ্ছন্ন টাটকা কিংবা জারানো খাবার পরিবেশন করত গরম গরম কিন্তু স্বাদ আর গন্ধের কথা বলতে গেলে আমার দম আটকে আসে। ধরুন আপনাকে কেউ রাশিয়ায় দাওয়াত দিয়ে নিয়ে গেল! ওখানে যে কয়দিন থাকলেন আপনি প্রতিদিন যদি সে সেই ক্যান্টিনে আপনাকে খাওয়ায় তবে দেশে ফিরে এসে বাকি জীবন রাশিয়ান খাবারের নাম শুনলেই আপনার বমি আসবে, যদি কখনো কেউ আপনার সামনে রুশীয় খাবারের সুনাম করে তবে তাকে জুতো খুলে দাবড়াবেন।
প্রথম তিনমাস আমাদের ধারনা ছিল রাশিয়ান খাবার মনে হয় এমন জঘন্য বিস্বাদ। কিন্তু ধীরে ধীরে যখন গণ্ডীর বাইরে যেতে শুরু করলাম- আধখানা রুশ ভাষা শিখে হোটেল মোটেলে পার্টি ফার্টি শুরু করলাম- এর ওর ওখানে দাওয়াত খেলাম, তখন বুঝলাম রাশিয়ান ডিস আসলে অত খারাপ নয়। বিশেষ করে আমাদের হোস্টেলের নীচের তলায় যে স্পেশাল ক্যান্টিনটা ছিল শূধুমাত্র ফাইনাল ইয়ারের অবজারভেশনে রাখা ছাত্রদের জন্য তার স্বাদ ও গন্ধ ছিল অতুলনীয়! কিন্তু সেখানে আমাদের খাবার অনুমতি ছিলনা।
***
আমাদের ক্যান্টিনের খাবারের স্বাদ জঘন্য হবার মুল কারন হচ্ছে; সেটা ছিল গার্হস্থ বিজ্ঞানের ছাত্রদের (মুলত ছাত্রী) রান্নার ট্রেনিং সেন্টার! নবীশ সেই ছাত্ররা ট্রেনিং এর সময়ে দিন দুনিয়ার যত সব অখাদ্য রান্না করত আর আমরা ছিলাম তাদের গিনিপিগ। ১৮ থেকে ২১ বর্ষীয়া দুর্দান্ত সব রুশ রূপসী ছাত্রীরা হাসিমুখে যখন খাবার সার্ভ করত তখন সব ভুলে ক্যাবলাকান্তের মত তাদের রূপসুধা পান করতে করতে পাতে কি নিচ্ছি সেটা ভুলেই যেতাম। সব রোমান্টিসিজম উধাও হয়ে যেত পয়লা লোকমা মুখে তুলেই। প্রচন্ড খিদেয় নাকি পেটে ছুঁচোতে ডন মারে- সেই ছুঁচোটাও ডন মারা ক্ষান্ত দিয়ে গলার কাছে এসে বমি হয়ে আটকে যেত!
সাড়ে ছয়ফুট লম্বা দৈত্যাকৃতির মদন বা ইগর ছিল সেই ক্যান্টিনের প্রধান শেফ! রান্না-বান্ন বাদ দিয়ে গায়ে ফুঁ দিয়ে মনে হয় সে ঘুরে বেড়াত সারাক্ষন! একদিন তাকে গিয়ে ধরলাম; কাগুরে না খাইতে খাইতে আমাগো জান কাবার- আর মাস খানেক এই অখাদ্য খাইলে আমাগোর লাশ দেশে পাঠাইতে হবে।
ইগোরের বিশাল শরিরের মত মনটাও বড় ছিল। দয়ালু মানুষ - আমাদের দুঃখে প্রায় কেঁদে দেয়। সে ক্যান্টিবের পেছনে হোটেলের কায়দায় বেশ সাজানো গোছানো বিশাল এক হলরুমে নিয়ে বসালো। তারপর বাচ্চাসুলভ একটা হাসি দিয়ে কইল; কহ বাছারা তোমরা কি খাইতে চাহ?
আমাদের আর পায় কে- শুরু হল হাজারো ফরমায়েশ! কেউ চায় কৈ মাছ ভাঁপা, কেউ ইলিশের ঝোল, কারো খাঁটি দেশি মুরগী আলু দিয়ে কষা কারো শুকনো মরিচের ঝালে লাল ঝোলে চুবানো তাজা গরুর মাংস।দু-য়েকজন চিংড়ি আর নারকেল দিয়ে কচুর লতি বা মাসকালাইয়ের ডাল দিয়ে কচি লাউ ঘন্টও আবদার করে বসল!
সব শুনে ইগোরের মাথায় হাত। কোন বজ্জাতদের সে দাওয়াত দিয়ে এনেছে।ওর ভান্ডারে সবজি আছে তিন/চারখানা; আলু বাধাকপি গাজর আর ক্যাপসিকাম। গোস্ত বলতে বয়লার মুরগী আর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে জবেহ করা ডিপ চিলড গরু আর শুকরের মাংস। মাছ জাতীয় আমিষ ক্যান্টিনের জনমে কোনদিন রান্না হয়নি। বহু চেষ্টাতেও সে চাউল নামক শস্যদানা যেন চিনতেই পারছিল না। ও চেনে জব গম আর ভুট্টা। আর মশলা বলতে ওর ভান্ডারে একখানা জিনিসই আছে - সেটা হল ' গোল মরিচ'।
তবে সানফ্লাওয়ার অয়েল আর মাখনের অভাব নেই।
ইগোর তার লিস্টি বলে হাসি মুখে সদা এপ্রোন পরে ফরমায়েশের জন্য দাঁড়িয়ে আছে; আর ভাবনা চিন্তায় আমাদের মাথা চুলকাতে চুলকাতে ঘা হবার দশা!
ঠিক আছে; কাগু তুমি মুরগী গোল মরিচ দিয়ে ভাল করে মেখে মাখনে ভেজে আন। আর আলু ছ্যানার মধ্যে পিয়াজ ক্যাপসিকাম কুচি আর সানফ্লাওয়ার অয়েল দিয়ে চটকায় নিয়ে আস। আর ভাতের পরিবর্তে যবের জাউ।
***
ইগোরের এই রান্নার খুব বদনাম করেছিলাম প্রথমে- খাবার বিস্বাদ হয়েছিল সন্দেহ নেই, আর সে খাবার খেয়ে অনেকের পেট খারাপ হয়েছিল কিন্তু আমাদের মনমত খাবার রান্না করার চেষ্টার খামতি ছিলনা তাঁর। কিন্তু জনা পচিশেক ছাত্রের পচিশ কিসিমের আব্দার রক্ষা করতে গিয়েই বেধেছিল বিপত্তি! রান্নাঘরে গিয়ে সে তালগোল পাকিয়ে ফেলেছিল!
এরপরে অবশ্য একসময় সে আমাদের পিড়াপিড়িতে পুরো রান্নাঘরটাই আমাদের হাওলায় ছেড়ে দেয়, বাপুরে তোরা তোদের যা খুশী রেধে খেয়ে যা!
সে এক অন্য গল্প; যে গল্প করেছিলাম বহু আগে 'মদন বাবুর্চী' গল্পে!

মদন বাবুর্চী

তাম্বোভ স্টেট টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি
С 1991 г. в ТИХМ поступают первые иностранные граждане более чем из 20 стран Азии и Африки.
Since 1991, the first foreign citizens from more than 20 countries in Asia and Africa have been admitted to TIHM.
তাম্বোভ স্টেট টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটির ১৯৯১ সালের প্রথম সেই বিদেশী ছাত্র ছিলাম আমরাই।


চেরনোবিল পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ট্র্যাজেডির ২৫ তম বার্ষিকীতে ২৬ এপ্রিল,২০১১ তারিখে তাম্বুভ বাঁধের সোচি পার্কে পারমাণবিক বিপর্যয়ের শিকারদের স্মৃতিসৌধটি নির্মিত হয়েছিল। প্রকল্পের লেখকদের মতে, ভাস্কর্য এম. স্যালিচেভ এবং এন. সিতসিনা, মাঝখানে লাল গ্রানাইটের একটি বল সহ স্মৃতিস্তম্ভের দুটি গ্রানাইট স্ল্যাব পারমাণবিক নিউক্লিয়াসের শক্তিশালী অনিয়ন্ত্রিত শক্তি দ্বারা বিচ্ছিন্ন বিশ্বের প্রতীক। স্মৃতিস্তম্ভটি এই অঞ্চলের আড়াই হাজারেরও বেশি বাসিন্দাদের কৃতিত্বকে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ নির্মিত হয়েছে যারা দুর্ঘটনার কবলিত মানুষের উদ্ধারকার্যে অংশ নিয়েছিল।

ছবিসুত্রঃ
* শিরোনামের ছবি রুশীয় ফিল্ম থেকে ক্যামেরায় তোলা বাকি ছবিগুলো অনলাইন থেকে নেয়া।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০২৩ সকাল ৮:৫২
৪৯টি মন্তব্য ৫০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শোকের উচ্চারণ।

লিখেছেন মনিরা সুলতানা, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ সকাল ১০:১৬

নিত্যদিনের জেগে উঠা ঢাকা - সমস্তরাত ভারী যানবাহন টানা কিছুটা ক্লান্ত রাজপথ, ফজরের আজান, বসবাস অযোগ্য শহরের তকমা পাওয়া প্রতিদিনের ভোর। এই শ্রাবণেও ময়লা ভেপে উঠা দুর্গন্ধ নিয়ে জেগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

যা হচ্ছে বা হলো তা কি উপকারে লাগলো?

লিখেছেন রানার ব্লগ, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ দুপুর ১:২৮

৫ হাজার মৃত্যু গুজব ছড়াচ্ছে কারা?

মানুষ মারা গিয়েছে বলা ভুল হবে হত্যা করা হয়েছে। করলো কারা? দেশে এখন দুই পক্ষ! একে অপর কে দোষ দিচ্ছে! কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

আন্দোলনের নামে উগ্রতা কাম্য নয় | সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যবাদকে না বলুন

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ বিকাল ৫:২৭



প্রথমেই বলে নেয়া প্রয়োজন "বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার সমস্ত অপচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে" ধীরে ধীরে দেশে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসছে। ছাত্রদের কোটা আন্দোলনের উপর ভর করে বা ছাত্রদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোন প্রশ্নের কি উত্তর? আপনাদের মতামত।

লিখেছেন নয়া পাঠক, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৬

এখানে মাত্র ৫টি প্রশ্ন রয়েছে আপনাদের নিকট। আপনারা মানে যত মুক্তিযোদ্ধা বা অতিজ্ঞানী, অতিবুদ্ধিমান ব্লগার রয়েছেন এই ব্লগে প্রশ্নটা তাদের নিকট-ই, যদি তারা এর উত্তর না দিতে পারেন, তবে সাধারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাকুরী সৃষ্টির ব্যাপারে আমাদের সরকার-প্রধানরা শুরু থেকেই অজ্ঞ ছিলেন

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ রাত ৯:০৭



আমার বাবা চাষী ছিলেন; তখন(১৯৫৭-১৯৬৪ সাল ) চাষ করা খুবই কষ্টকর পেশা ছিলো; আমাদের এলাকাটি চট্টগ্রাম অন্চলের মাঝে মোটামুটি একটু নীচু এলাকা, বর্ষায় পানি জমে থাকতো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×