
মধ্যরাতে গিন্নী ধাক্কা দিয়ে ঘুম ভাঙাল। আমি ধড়মড়িয়ে উঠে বসতেই বলল, এলাকায় নাকি ডাকাত পড়েছে!
কাঁচা ঘুম ভাঙা চোখে কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে ক্যাবলার মতো চেয়ে রইলাম তার দিকে।
বড় আপা ফোন করেছিল, মসজিদে নাকি মাইকিং করছে। এলাকার সব লোকজন বাইরে বেরিয়ে পড়েছে।
আমি দৌড়ে বারান্দায় গিয়ে দেখি, প্রায় সব বাসার সবগুলো আলো জ্বলছে। শুধু আমাদের এলাকায় নয়, আশেপাশের সব এলাকার মসজিদে ঘন ঘন আর্তচিতকারের মতো মাইকিং শোনা যাচ্ছে! তার মানে শুধু আমাদের এলাকায় নয়, বিশাল এলাকাজুড়ে আক্রমণ হয়েছে। রাস্তায় হৈ হুল্লোড়, বাইরে লাঠি হাতে শত শত মানুষ।
মিনিট দশেক পরে সাইরেন বাজিয়ে সেনাবাহিনীর গাড়ি এসে উপস্থিত! তারা আগে থেকেই এলাকাভিত্তিক জরুরি প্রয়োজনের জন্য নম্বর দিয়ে রেখেছিল। সেটা এখন কাজে লাগল।
এমন একটা আশঙ্কাই করছিলাম। এর আগের রাতে মোহাম্মদপুরে এমন ডাকাতদের আক্রমণ হবার পর সারাদেশের লোক এলার্ট হয়ে গেছে। সবাই ছিল সতর্ক।
ভোর ৫:২৩ মিনিটে লাটু ভাইয়ের ম্যাসেজ পেলাম; দাদা, আমরা সারারাত ঘুমাইনি। বিরাট গ্যাঞ্জাম! এইমাত্র বাসায় যাই। রাতভর ডাকাত দাবড়াইছি। মোট আটজন ধরা পড়েছে, এরমধ্যে চারজন আমাদের মহল্লায়। সাবধানে থাকেন—ভাল থাকেন।
ভিডিওতে দেখলাম, এই ডাকাত দলের সর্দার নাকি নাহিদ নামের একজন। সে বিভিন্ন ছোট বড় অস্ত্র দিয়ে ঢাকা শহরে ৫০০ জন টোকাই, হিরোইনখোর, ছিনতাইকারী, পকেটমারসহ বিভিন্ন অপকর্মের সাথে জড়িতদের ছিনতাই ও ডাকাতির জন্য নামিয়ে দিয়েছে! সত্যি হলে কী ভয়াবহ ব্যাপার! কত মানুষ কাল সর্বশান্ত হয়েছে, কে জানে!!
***
অথচ গতকাল সারাদিন রাস্তায় অভূতপূর্ব দৃশ্য ছিল! ছাত্র-ছাত্রীরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ট্রাফিক কন্ট্রোল করছে, বৃদ্ধ মানুষকে রাস্তা পার করিয়ে দিচ্ছে, অসুস্থ মানুষকে সেবা করছে, রাস্তা পরিষ্কার করছে। নোংরা দেয়াল লিখন মুছে ফেলে নতুন দিনের স্বপ্নের কথা লিখছে।
আর অন্যদিকে তাদের মায়ের মতো রমণীরা আর বাবার মতো পুরুষেরা এগিয়ে যাচ্ছে পানি, জুস, বিস্কুট, কেক হাতে। ফুটপাথ আর আইল্যান্ড স্তুপ হয়ে আছে পানির ক্রেট, জুস আর বিস্কুটের প্যাকেটে। কত মহিলাকে দেখেছি, নিজের বাচ্চার জন্য কেনা কোল্ড ড্রিংকসটা বাবুর হাত থেকে নিয়ে কড়া রোদে ট্রাফিকের কাজে দাঁড়িয়ে থাকা কচি কিশোর শিক্ষার্থীর হাতে দিয়ে গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দোয়া করছেন। কত বেয়াড়া মোটরসাইকেল চালক অনুরোধে মাথায় হেলমেট গলিয়ে হাসি দিয়ে চলে যাচ্ছে। রিকশা চালকেরা উল্টো পথে এসেও নিজেই ভুল বুঝতে পেরে জিভে কামড় দিয়ে ফিরে যাচ্ছে। কখনো ঘর্মাক্ত ক্লান্ত বাস চালককে কিংবা ভ্যান চালককে ওরা নিজের হাতের পানি এগিয়ে দিচ্ছে। তখন তাদের সে স্বর্গীয় হাসিতে উদ্ভাসিত হয়ে নতুন এক বাংলাদেশের রূপ।
রাত দশটায় ওরা একে একে চলে গেল। আর অন্ধকারে হিংস্র শ্বাপদের দল নেমে এল চুপি চুপি…
যদিও আমি সব রকম হত্যা নির্যাতন খুন খারাপির বিপক্ষে তবুও এখন মনে হচ্ছে কার্ল মার্ক্স কথাটা খারাপ বলেন নি;
The Classes and the races too weak to master the new condition of life must give way.
They must perish in the revolutionary holocaust. -Karl Marx April 16 1858

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


