somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কফি হাউজ নিয়ে পরের সেই গানটাই কোথায় হারিয়ে গেল- আজ আর নেই!

২৮ শে আগস্ট, ২০২৪ রাত ১১:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

~ গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার ও মান্না দে।
ফিহাউজ গানটি নিয়ে মান্না দে সবসময় নিজের চেয়েও বেশি কৃতিত্ব দিয়েছিলেন গীতিকার সুরকারকে - তিনি শুধু গানটা গেয়েছিলেন মাত্র।। আসলেই তো এমন কালজয়ী একটা গান লেখা আর সুর দেয়া চাট্টিখানি কথা নয়। একটা গানে যেন অনেকগুলো মানুষের পুরো একটা জীবনের গল্প বলা আছে।
তার মতে, হেমন্ত গাইলে গানটা সুপারহিট হতো আর শ্যামল মিত্র গাইলে তো হিট। তবে মান্নার কণ্ঠে যে গানটি চিরকালীন পছন্দের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে সেকথা স্বীকার করে নিয়েছেন গানটির সুরকার সুপর্ণকান্তি।
তবে মান্না দে এ গানটির দ্বিতীয় অংশ হিসেবে ‘স্বপ্নের কফি হাউস’ শীর্ষক একটি গান প্রথম গানটির ঠিক কুড়ি বছর বাদে গেয়েছিলেন। কিন্তু রহস্যময় কারণে সেটি শোনার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন বাঙালি।
কফি হাউসের দ্বিতীয় অংশ হিসেবে ‘স্বপ্নের কফি হাউস’ নামে গানটি একটি নতুন রেকর্ড কোম্পানিই রেকর্ড করিয়েছিল । কিন্তু সুপর্ণকান্তি জানিয়েছেন, সেই গানের অরিজিনাল স্পুলটি পাওয়া যায়নি। ফলে অন্য স্পুল দিয়ে কাজ করতে হয়েছিল। নিখিলেশ, মইদুলদের নিয়ে দ্বিতীয় গানটি লিখেছিলেন শমীন্দ্র রায় চৌধুরী। প্রথম গানের স্কেলেই গানটা করেছিলেন মান্না দে। দ্বিতীয় গানটি প্রথমটির থেকেও সুরের বৈচিত্রের বিচারে অনেক ভাল হয়েছিল। কিন্তু কোথায় গেল সেই স্বপ্নের কফি হাউস কেউ জানে না। মান্না দেও হতাশ। তিনি শুধু বলেছেন, বাঙালি তো জানতেই পারল না সেই গানের কথাঃ

কফি হাউজ-২
স্বপ্নের মতো ছিল দিনগুলো কফি হাউজেই, আজ আর নেই
জীবনে চলার পথে হারিয়ে গিয়েছে অনেকেই, আজ আর নেই
নিখিলেশ লিখেছে প্যারিসের বদলে-এখানেই পুজোটা কাটাবে
কী এক জরুরি কাজে ঢাকার অফিস থেকে-মইদুলকেও নাকি পাঠাবে
একটা ফোনেই জানি রাজি হবে সুজাতা-আসবেনা অমল আর রমা রায়
আমাদের ফাঁকি দিয়ে কবেই তো চলে গেছে-ওদের কখনো কি ভোলা যায়?
স্বপ্নের মতো ছিল দিনগুলো কফি হাউজেই,আজ আর নেই
জীবনে চলার পথে হারিয়ে গিয়েছে অনেকেই,আজ আর নেই

ওরা যেন ভালো থাকে একটু দেখিস তোরা-শেষ অনুরোধ ছিল ডিসুজার
তেরো তলা বাড়িতে সবকিছু আছে তবু-কিসের অভাব যেন সুজাতার
একটাও তার লেখা হয়নি কোথাও ছাপা-অভিমান ছিল খুব অমলের
ভালো লাগে দেখে তাই সেই সব কবিতাই-মুখে মুখে ফেরে আজ সকলের

নাম যশ খ্যাতি আর অনেক পুরস্কার-নিখিলেশ হ্যাপি থেকে গিয়েছে
একটা মেয়ে বলে সুজাতা বিয়েতে তার-দুহাত উজার করে দিয়েছে
সবকিছু অগোছালো ডিসুজার বেলাতে-নিজেদের অপরাধী মনে হয়
পার্ক স্ট্রীটে মাঝরাতে ওর মেয়ে নাচে গায়-ইচ্ছে বা তার কোন শখে নয়

কার দোষে ভাঙলো যে মইদুল বলেনি-জানি ওরা একসাথে থাকেনা
ছেলে নিয়ে মারিয়ম কোথায় হারিয়ে গেছে-কেউ আর কারো খোঁজ রাখেনা
নাটকে যেমন হয় জীবন তেমন নয়-রমা রয় পারেনি তা বুঝতে
পাগলা গারদে তার কেটে গেছে শেষ দিন-হারালো সে চেনা মুখ খুঁজতে

দেওয়ালের রঙ আর আলোচনা পোস্টার-বদলে গিয়েছে সব এখানে
তবুও প্রশ্ন নেই,যে আসে বন্ধু সেই-আড্ডা তর্ক চলে সমানে
সেই স্বপ্নের দিনগুলো বাতাসে উড়িয়ে ধুলো-হয়ত আসছে ফিরে আজ আবার
অমলের ছেলেটার হাতে উঠে এসেছে-ডিসুজার ফেলে যাওয়া সে গীটার
স্বপ্নের মতো ছিল দিনগুলো কফি হাউজেই,আজ আর নেই
জীবনে চলার পথে হারিয়ে গিয়েছে অনেকেই,আজ আর নেই।।

মান্নাদের মধ্য বয়সের উদাত্ত কন্ঠের এই গানটির প্রথম সুর চিরতরে হারিয়ে গেছে। তবু দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানোর জন্য তার শেষ বয়সের কফি হাউজের সেই আড্ডার মত ভেঙ্গে যাওয়া কন্ঠে এই গানটি শুনে শ্রোতা আপাতত আক্ষেপ মেটাতে পারেন;

সপ্নের কফি হাউজ
***
এবার আসি অন্য একটা প্রসঙ্গেঃ

~ কফি হাউজের সুরকার সুপর্নকান্তি ঘোষ (নচিকেতা ঘোষের ছেলে) ।
এই গানের সুরকার সুপর্নকান্তি ঘোষ একটা কথা বলেছেন; কফি হাউজের সব চরিত্র নাকি কাল্পনিক! আপনার কি মনে হয়? তাহলে ঢাকার সেই মইদুল কোত্থেকে আসল?


~নুর আহমেদ মঈদুল ১৯৩৬ সালের ১৩ জানুয়ারি কলকাতার উত্তর চব্বিশ পরগণায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬৪ সালে তিনি সপরিবারে ঢাকায় চলে আসেন। ১৫ বছর বয়সে মান্না দে'র সঙ্গে পরিচয় হয়। মান্না দে'র গানের আসরে নিয়মিত যোগ দিতেন। কলকাতার ক্রীড়াঙ্গনে খেলোয়াড় হিসেবে সফল মঈদুল ঢাকায় এসে ভিক্টোরিয়া স্পোর্টিং ক্লাব এবং ইকবাল স্পোর্টিং ক্লাবের হয়ে ব্যাডমিন্টন ও ফুটবল খেলেন। ১৯৬৪ সালেই তিনি পাকিস্তান রেডিওতে ক্রীড়া ধারা ভাষ্যকার হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করেন। ১৯৬৬ সাল থেকে দৈনিক আজাদ, ইত্তেফাক, দৈনিক বাংলা, ইনকিলাব, সংবাদ, বাংলার বাণী ও দৈনিক পূর্বদেশে খেলাধুলা নিয়ে নিয়মিত লেখালেখি চালিয়ে গেছেন। বিভিন্ন সাপ্তাহিক ও পাক্ষিকেও লেখালেখি করে গেছেন তিনি। ~ কফি হাউস গানের সুরকার সুপর্নকান্তি ঘোষ কথা সত্য হলে সারাজীবন মিথ্যে কথা বলে গেছেন মঈদুল। তার কথায় গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার নিজে কখনো কফি হাউজে আড্ডা দেন নি। সব চরিত্রগুলো তার কল্পনায় আঁকা। হয়তো মান্নাদের পরিচয়ের সুত্র ধরে ঢাকার মঈদুলের সাথে পরিচয় হয়ে এই নামটা তার মাথায় গেঁথে গিয়েছিল।


এরপরে আসি সুজাতার কথায়;
লকাতা আর্ট কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন সুজাতা রানী দাশ। গাইবান্ধা থেকে সত্তরের নির্বাচিত এমপি ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ওয়ালিউর রহমান রেজাকে ভালোবেসে বিয়ে করেন তিনি। যদিও তাঁদের প্রেম হয় ১৯৬২ সালে, তাঁরা বিয়ে করেন ১৯৭২ সালে। সুজাতার বাসস্থান ঢাকার মোহাম্মদপুরে।
সুজাতা এখনো বেঁচে আছেন - আমি তার কোন সাক্ষাতকার পাইনি। কেউ কেউ বলেন তাকে নাকি গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার ভালবেসেছিলেন।
এটাও একেবারে ডাহা মিথ্যে কথা। সুপর্নকান্তি ঘোষ নিজের মুখে বলেছেন এসব চরিত্র কেউ নেই পৃথিবীতে।
হায় আমরা কত কত ভুল ইতিহাস আর ভুল মানুষকে ভুল জেনেই না বেঁচে আছি ...


*** সুত্রঃ বিভিন্ন অনলাইন নিউজ মিডিয়া***
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে আগস্ট, ২০২৪ রাত ১১:৪৬
১৬টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিচার চাই? না ভাই, আমরা "উল্লাস" চাই

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৩৭





দীপু চন্দ্র দাস একটি পোশাক শিল্প কারখানায় চাকরি করতো। সম্প্রতি দীপু দাস তার যোগ্যতা বলে সুপার ভাইজার পদে প্রমোশন পেয়েছিলো।

জানা যায়, সুপারভাইজার পজিশনটির জন্য আরও তিনজন প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×