অনেকক্ষণ বসে ছিলাম চুপচাপ । কিছুতেই শান্তি পাচ্ছিলাম না । না পাওয়াটাই স্বাভাবিক। শান্তি অর্জনের কাজে আজ একটু ঘাটতি হয়েছে । একটা উচুঁ পাহাড়ের উপর চলে গেলাম । লোকালয় থেকে অনেক দূরে। নিচে সবকিছু দেখা যাচ্ছিলো ছোটো ছোটো । এর মাঝে হঠাৎ ক্লান্তিরা এসে ভিড় করলো । অনেক দিন আগে পড়া একটা উপন্যাসের কথা মনে পড়লো । এরকম পরিস্থিতিতে মুক্তোর মালা ছিঁড়ে যায় । সবকিছু স্বতঃস্বূর্তভাবে ঘটতে থাকে।আমার কিচ্ছু করার থাকে না । নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন ছাড়া । দূর থেকে আমি সবকিছু দেখতে পাচ্ছি “from an elevated land, even I could watch myself’’। নিরব দর্শক আমাকে সবসময় দেখে না। কিছু কিছু সময় দেখে। নির্জনতায় আমাকে দেখে আর দেখে জনারণ্যে । কারণ উভয় সময়েই আমি নিজেকে দেখতে পাই।আজও তেমনি একটি দিন ছিল, যখন পূঁতির মালা ছিঁড়ে গিয়েছিল , মালার পতন দেখার জন্য আমার হাতে অনেক সময় ছিল। অনেক ক্ষেত্র ছিল। আমি দেখতে পাচ্ছিলাম অনেক উপর থেকে, মালা থেকে মুক্তোর পতন। মুক্তোর চেয়েও দামি ছিল আমার কাছে, তবু হয়তো মুক্তোও ছিলনা, কিন্তু আমি হারাচ্ছিলাম না কিছুই । আমার ভুমিকা ছিল কেবল নিরব দর্শকের । যে দর্শক শুধু দেখতে পারে, দেখে আবেগে আক্রান্ত হতে পারে কিন্তু প্রভাবক হতে পারে না। তার ভুমিকা কেবল মালার পতন দেখাতেই সীমাবদ্ধ । পাহাড় থেকে লোকালয় অনেক আজব । কিছুটা অদৃশ্য, কিছুটা প্রকাশ্য আর বাকিটা নিরব দর্শকের কাছেও অপ্রকাশ্য ,হয়তো না ,সে দেখে আর লিখতে থাকে ।
কিন্তু এখন কেন লিখবে তুমি ? এখন তো সবকিছু স্থির হয়ে আছে । আমার জাহাজ মাঝ সমুদ্রে থেমে আছে আঁকা ছবির মতন, নিস্তরঙ্গ ,নিথর হয়ে একটুও হাওয়া নেই পালে ।
পুরনো আরেকটি ছোটো গল্প পড়ল মনে। শীতকাল । সন্ধ্যা । কুঁয়াশা । শীতের কুঁয়াশা যেমন হয়, সামনে পিছে ,ডানে বামে একটা অদৃশ্য গোলার্ধ এঁকে রাখে যার বাইরে কিচ্ছু দেখা যায় না, কিন্তু অবাক ব্যাপার উপর দিকে কোনো বলয় আঁকতে পারে না শীতের কুঁয়াশা, উপরে থাকে স্বচ্ছ আকাশ, জ়ীবনানন্দের তারাময় আকাশ, আমার তারাময় আকাশ । ওই সন্ধ্যাটা ছিল নদীর পাড়ে। একটা বেঞ্চিতে বসে চাদর মুড়ি দিয়ে বসে ছিলাম । আস্তে আস্তে লোকজন কমে আসল । জানি নিরব দর্শক তখনো লিখে চলছিলো কিছু।
কিন্তু এখন কেন লিখবে তুমি ? এখন তো সবকিছু স্থির হয়ে আছে । আমার জাহাজ মাঝ সমুদ্রে থেমে আছে আঁকা ছবির মতন, নিস্তরঙ্গ ,নিথর হয়ে একটুও হাওয়া নেই পালে ।