somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

লিঙ্গসূত্র

১৭ ই জুন, ২০১৩ রাত ১২:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

তসলিমা নাসরিন : তেরো বছর বয়স আমার তখন। এক দিন শুনি, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র হঠাৎ মেয়ে হয়ে গেছে। নাম ছিল আবুল হোসেন, মেয়ে হওয়ার পর নাম হোসনে আরা। ক’দিন পরই লাল বেনারসি পরে হোসনে আরা বিয়ে করে ফেলল তার হোস্টেলের রুমমেটকে। খবরের কাগজে আবুল হোসেন আর হোসনে আরা-র ছবি পাশাপাশি ছাপা হত। আবুল হোসেন সব সময় মৌলানাদের স্কার্ফের মতো একটা স্কার্ফ পরত, বুক আড়াল করার জন্য। ভেতরে ভেতরে মেয়েই ছিল সে, কিন্তু জন্মের পর আত্মীয়স্বজন ভেবেছিল সে ছেলে, ভাবার নিশ্চয়ই কোনও কারণ ছিল। বড় হয়ে আবুল হোসেন বুঝতে পরেছিল সে ছেলে নয়। লজ্জায় ভয়ে অনেক বছর কাউকে কিছু বলেনি। ছেলেদের হোস্টেলে থাকত, সবাই তাকে ছেলে বলেই জানত। কিন্তু এক সময় অস্বস্তির চরমে পৌঁছে ডাক্তারের শরণাপন্ন হল। ডাক্তার কী একটা অপারেশন করলেন, ব্যস, আবুল হোসেন মেয়ে হয়ে গেল। খবরটা পড়ে আমার খুব ইচ্ছে হয়েছিল হঠাৎ এক দিন ছেলে হয়ে যেতে। কিন্তু বুঝতাম, আবুল হোসেনের শরীরটা যেমন ভেতরে ভেতরে মেয়ের শরীর ছিল, আমার শরীরটা ভেতরে ভেতরে ছেলের শরীর নয়। আসলে মেয়েদের ওপর পারিবারিক সামাজিক ধার্মিক রাষ্ট্রিক অত্যাচার এত বেশি হত যে ছেলেতে রূপান্তরিত হয়ে এ সব থেকে বাঁচতে চাইতাম। অন্য কোনও কারণ ছিল না।
লিঙ্গ কিন্তু তত সহজ নয়, যত সহজ বলে একে ভাবা হয়। লিঙ্গ শুধু শারীরিক নয়, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, মানসিক, মনস্তাত্ত্বিকও। অধিকাংশ লোক ভাবে, জগতের সব সুস্থ মানুষই বুঝি শরীরে পুরুষ, মনেও পুরুষ; অথবা শরীরে নারী, মনেও নারী। কিন্তু এর ব্যতিক্রমও আছে। ব্যতিক্রমটা বুঝতে হলে জেন্ডার বা মনোলিঙ্গ বুঝতে হবে। শরীরে যেমন লিঙ্গ থাকে, মনেও এক ধরনের লিঙ্গ থাকে, লিঙ্গবোধ থাকে। যাদের শারীরিক জৈবলিঙ্গের সঙ্গে মনোলিঙ্গের কোনও বিরোধ নেই, তাদের আজকাল ‘সিসজেন্ডার’ বলা হয়। জগতের সবাই সিসজেন্ডার নয়, অনেকে ট্রান্সজেন্ডার, সিসজেন্ডারের ঠিক উলটো। পুরুষের শরীর নিয়ে জন্মেছে, কিন্তু মনে করে না যে সে পুরুষ, মনে করে সে নারী; আবার ও দিকে নারীর শরীর নিয়ে জন্মেছে, কিন্তু মোটেও সে বিশ্বাস করে না যে সে নারী, তার দৃঢ় বিশ্বাস সে পুরুষ। এই ট্রান্সজেন্ডাররা বা রূপান্তরকামীরা নড়নচড়নহীন রক্ষণশীল পুরুষতান্ত্রিক সমাজের ‘পেন ইন দি অ্যাস’। এদের দুর্ভোগ প্রতি পদে পদে। প্রচলিত ধ্যানধারণার বাইরে গেলে সবাইকেই অবশ্য দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
ধরা যাক, জন্মানোর প্রায় সঙ্গে সঙ্গে শরীরে পুরুষাঙ্গের উপস্থিতি দেখে বাবা মা বা ডাক্তাররা রায় দিয়ে দিলেন, সন্তান ছেলে, পরিবারের এবং সমাজের সকলে জানল যে সে ছেলে, কিন্তু নিজে সে ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে আর অনুভব করতে থাকে সে ছেলে নয়, মেয়ে। সে যখন নিজেকে মেয়ে ভেবে মেয়েদের সাজপোশাকে বাইরে বেরোয়, এবং সত্য কথাটা প্রকাশই করে ফেলে যে, পুরুষের শরীর সে ধারণ করছে বটে, কিন্তু সে আসলে পুরুষ নয়, নারী লোকেরা তাকে হাস্যরসের বস্তু ভাবে, সার্কাসের ক্লাউনের চেয়েও বড় ক্লাউন ভাবে, চিড়িয়াখানার চিড়িয়া ভাবে, তাকে শেকলে বাঁধে, পাগলা-গারদে বন্দি করে। কেউ ছি ছি করে, কেউ বিদ্রুপ ছোড়ে, ঢিল ছোড়ে, কেউ গালি দেয়, ন্যাংটো করে, পেটায়। কেউ কেউ জন্মের মার মেরে তার মাথার ভূত তাড়াতে চায়। মাথার ভূত মাথা ছেড়ে কিন্তু এক পা নড়ে না। মাথার লিঙ্গ মাথা কামড়ে পড়ে থাকে।
মেয়েরা ছেলেদের মতো আচরণ করলে আজকাল তবু সহ্য করে মানুষ, কিন্তু ছেলেরা মেয়েদের মতো আচরণ করলে সহ্য করে না। দ্বিতীয় লিঙ্গ প্রথম লিঙ্গকে অনুকরণ করে করুক, কিন্তু প্রথম লিঙ্গের লিঙ্গাভিমান এমনই যে, দ্বিতীয় লিঙ্গের কোনও কিছুকে অনুকরণ করার মানে দাঁড়ায় প্রথম লিঙ্গের অপমান। মেয়েরা দিব্যি ছেলেদের মতো পোশাক পরছে, ব্যবসা বাণিজ্য করছে, মদ-গাঁজা খাচ্ছে, মোটরবাইক চালাচ্ছে, ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার বিজ্ঞানী বৈমানিক নেতা মন্ত্রী হচ্ছে, অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করছে, মানুষ খুন করছে। আর ও দিকে, ছেলেরা চোখে সামান্য একটু কাজল, ঠোঁটে একটুখানি লিপস্টিক আর মেয়েদের মতো জামাজুতো পরলেই সমাজের ভিত কেঁপে ওঠে।
কোনও পুরুষ যদি বলে সে নারী, অথবা কোনও নারী যদি বলে সে পুরুষ, অথবা কোনও নারী বা পুরুষ যদি বলে সে নারীও নয় পুরুষও নয়, পাগল সন্দেহ না করে তাকে বরং আমাদের বিশ্বাস করা উচিত। কারণ একমাত্র সেই মানুষটাই জানে, সে কী। আমাদের সমাজ এখনও নারী আর পুরুষের ভাঙা-ভোঁতা সংজ্ঞা খাড়া করে। এও জোর গলায় বলে, যাদের শরীরে এক্স এক্স ক্রোমোজোম, তারা কেউ পুরুষ হতে পারে না, আর যাদের শরীরে এক্স ওয়াই, তারা কেউ নারী হতে পারে না! কেন হতে পারে না, শুনি? নিশ্চয়ই হতে পারে। কোনও ক্রোমোজোম আর কোনও জৈবলিঙ্গের ওপর মনোলিঙ্গ নির্ভর করে না। জেন্ডার বা মনোলিঙ্গ, সেক্স বা জৈবলিঙ্গের চেয়েও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কেটে ছিঁড়ে মাড়িয়ে পুড়িয়ে আর যে লিঙ্গকেই দূর করা যাক, মনের লিঙ্গকে করা যায় না। জৈবলিঙ্গ থাকে শরীরে, মনোলিঙ্গের সঙ্গে জড়িয়ে আছে আইডেন্টিটি, প্রেজেন্টেশন, সেল্ফ-এক্সপ্রেশন, ইন্টার-পার্সোনাল সম্পর্ক, সোশিয়ো-কালচারাল রোল।
কোনও মেয়ে তার নিজের শরীরের দিকে তাকালেই যদি দেখে শরীরটা অন্য কারও, অচেনা, অদ্ভুত; শরীরটা পুরুষের, যে শরীরটা তার শরীর হলেও তার শরীর নয়, শরীরটাকে নিজের বলে ভাবতে তার অস্বস্তি হয়, কষ্ট হয়, এ শরীর তাকে শুধুই দুঃসহবাস দেয়, তবে কী করবে সে? গুমরে গুমরে একলা ঘরে কাঁদবে সারা জীবন? দরজা বন্ধ করে পুরুষের পোশাক খুলে নারীর পোশাক পরে চোরের মতো নিজেকে দেখবে আয়নায়, বছরের পর বছর? বন্ধ দরজাটা খুললেই বা সত্য উচ্চারণ করলেই লোকের লাঞ্ছনা-গঞ্জনা সইতে হবে তাকে! এ কার দোষ, তার? না, যারা বাস্তবকে মেনে নেয় না তাদের? এ তাদের দোষ, যারা প্রকৃতির এক রূপকে স্বীকার করে, আর এক রূপকে করে না; যারা মনে করে দুনিয়াতে অ-রূপান্তরকামীরাই সত্য, রূপান্তরকামীরা নয়, যারা মনে করে নারী ও পুরুষের যৌন আকর্ষণই ঠিক যৌন আকর্ষণ, বাকি সব যৌন আকর্ষণ ভুল, মিথ্যে।
তুমি ট্রান্স-নারী। তুমি লিঙ্গ পরিবর্তন করেছ। তুমি সাজতে ভালবাসো, গয়না পরতে ভালবাসো, মেয়েদের পোশাক পরতে পছন্দ করো, পুরুষের সঙ্গে শুতে পছন্দ করো, কিন্তু শুধু সেই কারণগুলোর জন্যই যে তুমি লিঙ্গ পরিবর্তন করেছ তা নয়। তুমি লিঙ্গ পরিবর্তন করেছ, কারণ তুমি মূলত নারী, তুমি তোমার মতো করে তোমার নারীত্বকে প্রকাশ করেছ। তোমার জেন্ডার নারীর, তোমার শরীরটা দেখতে আকাশ বাতাস হাতি ঘোড়া এক্স ওয়াই বা যা-কিছুই হোক না কেন, তুমি মনে প্রাণে, অন্তরে বিশ্বাসে নারী। যৌন সম্পর্কের জন্য পুরুষকে পছন্দ না করে, তুমি কোনও মেয়েকেও পছন্দ করতে পারতে। সম্ভবত তুমি মনে মনে ‘বিষমকামী নারী’ বলেই পুরুষের প্রতি যৌন আকর্ষণ বোধ করেছ। কিন্তু তোমার প্রেমিক পুরুষকে ‘বিষমকামিতা’-র সুখ দিতে নিজের লিঙ্গ বদলাওনি, লিঙ্গ বদলেছ কারণ তোমার ভয়ংকর যন্ত্রণা হচ্ছিল একটা পুরুষের শরীরকে বছরের পর বছর অকারণে বহন করতে, এ অনেকটা কাঁধে হিমালয় নিয়ে হাঁটার মতো। ভালুকের ছাল পরে প্রতিটা দিন যাপন করলে আমার ঠিক কেমন বোধ হবে, ভাবি। ট্রান্সজেন্ডার বা রূপান্তরকামী মানুষদের বোধ হয় ঠিক সে রকমই অসহ্য অস্বস্তি হয় আর ওই ওপরের আবরণটা খোলসটা ঝামেলাটা উপদ্রবটা খুলে ফেলতে তারা মরিয়া হয়ে ওঠে। লিঙ্গ বদল সব ট্রান্সরা করে না। কেউ কেউ করে। করুক বা না করুক, করার অধিকার সবারই আছে। মানবাধিকার সবার জন্যই।
জীবন একটাই, এই একটা মাত্র জীবনকে যেমন ইচ্ছে যাপন করার অধিকার সবার। লিঙ্গ যারা অক্ষত রাখতে চায় রাখুক, যারা কেটে বাদ দিতে চায় দিক, যে লিঙ্গকে তাদের মন এবং মস্তিষ্ক নিজের লিঙ্গ বলে বিশ্বাস করে তাকে যদি শরীরে লাগাতে চায় লাগাক। নারীর শরীরটাকে পুরুষের শরীর করে ফেলা, অথবা পুরুষের শরীরকে নারীর করে ফেলা যদি সম্ভব হয়, তবে করবে না কেন? আমার শরীর নিয়ে আমি যা খুশি করব, এতে অন্যের আপত্তি হবে কেন? শরীরটা আমার না অন্যের?
পুংলিঙ্গ ও স্ত্রীলিঙ্গ অথবা পুরুষ ও নারী, এ নিয়েই যদি মানুষের দুনিয়াটা হত, তা হলে তা নিতান্তই বেরসিক, বিদঘুটে, বোরিং হত। ভাল যে দুনিয়াটা বিচিত্র। ভাল যে দুনিয়াতে দুটো লিঙ্গের বাইরেও তৃতীয় লিঙ্গ আছে। উভলিঙ্গের কথাই ধরি না কেন, পুংলিঙ্গ আর স্ত্রীলিঙ্গ এক শরীরেই জড়াজড়ি করে থাকে। প্রকৃতি যদি সবাইকে নারী ও পুরুষ হিসেবে চাইত, তা হলে উভলিঙ্গ বলে কিছু থাকত না দুনিয়ায়।
বিচিত্র সব কাম চার দিকে। সমকাম, বিষমকাম, উভকাম, রূপান্তরকাম, বহুকাম, সর্বকাম, নিষ্কাম। কোনওটিই অপ্রাকৃতিক নয়। সব কামই, সব যৌন আচরণই যত কম সংখ্যক লোকই সে আচরণ করুক না কেন প্রাকৃতিক; যেহেতু প্রকৃতিতেই এই ঘটনাগুলো ঘটছে। বেশি সংখ্যক লোক যে আচরণটা করে, সেটাকেই ‘ন্যাচারাল’ বা ‘স্বাভাবিক’ বলে ধরা হয়। তা ধরলেও ভিন্নতাকে আর বৈচিত্রকে স্বাভাবিক বলে না মানার কোনও যুক্তি নেই। সংখ্যালঘুরা প্রকৃতির বাইরের কোনও ঘটনা নয়।
প্রকৃতির শত শত প্রজাতির মধ্যে আছে বিচিত্র যৌন প্রবৃত্তি। ভেড়া, শিম্পাঞ্জি, হাতি, জিরাফ, সিংহ, ডলফিন, পেঙ্গুইন, হাঁস ফাঁক পেলেই সমকামে মেতে ওঠে। মানুষের সবচেয়ে কাছের আত্মীয়, ‘বনোবো’, যাদের ডিএনএ-র সঙ্গে আমাদের ডিএনএ-র মিল ৯৮%, ভীষণই উভকামী। প্রকৃতি শুধু ‘প্রজনন করো, প্রজাতি টেকাও’ মন্ত্র জপে না। প্রকৃতি আরও অনেক কিছুর হিসেব করে। বিবর্তনের তত্ত্ব দিয়ে বিচার করলেও সমকামীরা সমাজে অপ্রয়োজনীয় নয়। যৌনতার একমাত্র উদ্দেশ্য বংশ বিস্তার করা নয়। সামাজিকতাও যৌনতার উদ্দেশ্য। বনোবোরা হাতের কাছে স্ব-প্রজাতির যাকেই পায়, তার সঙ্গেই যৌন সঙ্গম করে। এর ফলে পরস্পরের মধ্যে বন্ধুতা গড়ে ওঠে, এক জনের বিপদে বিপর্যয়ে আর এক জন দাঁড়ায়, সকলে মিলে নিজেদের প্রজাতিকে নির্মূল হওয়া থেকে বাঁচায়। যদি বংশ বিস্তারই প্রজাতির টিকে থাকার পেছনে একমাত্র পদ্ধতি হত, তা হলে পিঁপড়ে, মৌমাছি, বোলতাদের জগতে এত বন্ধ্যা সৈন্য থাকত না, যাদের কাজ বংশ বিস্তার করা নয়, বরং প্রজাতিকে বাইরের শত্রু থেকে রক্ষা করা।
বিবর্তনের ভূরি ভূরি প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও বেশির ভাগ মানুষ বিবর্তনে না বিশ্বাস করে ভগবানে করছে, যে ভগবানের অস্তিত্বের আজও কোনও প্রমাণ মেলেনি। প্রকৃতি থেকে তুলে যত প্রমাণই চোখের সামনে রাখি না কেন, রূপান্তরকাম, সমকাম, উভকাম কোনওটাই ‘ন্যাচারাল’ নয়, এমন কথা বলবেই কিছু লোক। ধরা যাক, ন্যাচারাল নয়। তাতে কী? সবাইকে ন্যাচারাল হতেই বা হবে কেন, শুনি? ন্যাচারাল ব্যাপারগুলো বরাবরই বড় পানসে। ন্যাচারাল হওয়ার জন্য স্বাধীনতা বা অধিকারের দরকার হয় না, ‘আনন্যাচারাল’ হওয়ার জন্য দরকার। আনন্যাচারাল হওয়ার জন্য বুকের পাটারও বেশ দরকার।
‘প্রকৃতি’কে হাতিয়ার করে মূর্খ আর দুষ্ট লোকেরা কি আজ থেকে মানুষকে ভোগাচ্ছে! এক সময় মেয়েদের লেখাপড়া করা, ঘরের বার হওয়া, চাকরিবাকরি করা, সব কিছুকেই এরা প্রকৃতিবিরুদ্ধ বলেছে। প্রকৃতি চির কালই বিস্ময়কর, বৈচিত্রময়, বর্ণময়। যৌনতার মতো। আবার, আরও একটা প্রশ্নও এখানে করা যায়, কে বলেছে প্রকৃতির সব কিছু সব সময় ভাল এবং গ্রহণযোগ্য, কে বলেছে প্রকৃতিকে মেনে নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ? প্রকৃতিকে দিনরাত আমরা অস্বীকার করছি না? অস্বীকার করে নির্মাণ করছি না প্রকৃতি যা দিতে পারে, তার চেয়েও চমৎকার কিছু? হাত-পা নষ্ট হয়ে গেলে নকল হাত-পা লাগাচ্ছি, হৃদ্পিণ্ড অকেজো হলে হৃদ্পিণ্ড অবধি লাগিয়ে নিচ্ছি। স্মৃতিশক্তির স্বল্পতা আছে বলে কম্পিউটার ব্যবহার করছি। নানা যন্ত্রপাতির মাধ্যমে প্রকৃতির ভুল-ভ্রান্তি, প্রকৃতির অপারগতা, অক্ষমতা, সীমাবদ্ধতা সংশোধন করছি প্রতি দিন; আমাদের ডানা নেই, বিমান বানিয়েছি ওড়ার জন্য, প্রকৃতি আমাদের যে চোখ দিয়েছে, তার ক্ষমতা যথেষ্ট নয় বলে টেলিস্কোপ বানিয়েছি, মাইক্রোস্কোপ ব্যবহার করছি।
সমাজে সম্মান নিয়ে বাঁচার অধিকার সব লিঙ্গের সমান। পুরুষ লিঙ্গের যেমন অধিকার, নারী লিঙ্গেরও একই অধিকার, উভলিঙ্গেরও একই। বিষমকামীদের অধিকার যতটুকু, সমকামী, উভকামী, রূপান্তরকামীদেরও ততটুকুই। এতে যাদের বিশ্বাস নেই, তাদের মানবাধিকারে বিশ্বাস নেই। যারা সমকামীদের নির্যাতন করছে, রূপান্তরকামীদের নিগ্রহ করছে, যারা পুরুষ আর নারীর কাম ছাড়া আর সব কামকে অস্বাভাবিক আর প্রকৃতিবিরুদ্ধ বলে ঘোষণা করে দিচ্ছে, তাদের শিক্ষিত করা, সচেতন করা, মানুষ করা অত্যন্ত জরুরি। আকাট মূর্খের সংখ্যা বেশি বলেই তাদের মূর্খামি মেনে নিতে হবে, গণতন্ত্রও বলে না। সমকামীদের আন্দোলন, রূপান্তরকামীদের মানবাধিকার নিয়ে সংগ্রাম চলছে চার দিকে। ওঁরা চাইছেন নিজের জেন্ডার নিজের নির্ণয়ের অধিকার এবং সেই জেন্ডারকে জনসমক্ষে প্রকাশ করার অধিকার, নিগৃহীত না হওয়ার অধিকার, নিজের জৈবলিঙ্গকে পরিবর্তন করার অধিকার, মানসিক রোগী হিসেবে চিহ্নিত না হওয়ার অধিকার, যৌন সঙ্গমের অধিকার, বিয়ে করার অধিকার, সন্তান দত্তক নেওয়ার অধিকার। যে সমাজে আজও নারীকে নারী হয়ে জন্ম নেওয়ার অপরাধে লাঞ্ছিত হতে হয়, সে সমাজে সমকামী আর রূপান্তরকামীদের অধিকারের জন্য আরও দীর্ঘ দীর্ঘ কাল সংগ্রাম করতে হবে, অনুমান করতে পারি। মানুষ প্রজাতি সে দিন সত্যিকার সভ্য হবে, যে দিন কোনও মানুষকেই নিজের মৌলিক অধিকারের জন্য আর লড়াই করতে হবে না। সূত্র : আনন্দ বাজার

(ঋতুপর্ণ ঘোষের সম্মানে
http://dnewsbd.com/single.php?id=34656
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×