somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কয়েকটি কবিতা

১৮ ই জুন, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
বাংলা সাহিত্যের গৌরবোজ্জ্বল একটি নাম। বাংলা সাহিত্যে প্রথম নোবেল পুরষ্কার বিজয়ী লেখক। তার সম্পর্কে বিশেষভাবে বলার কিছু নাই। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় প্রথম শ্রেণী থেকে তার কবিতা পড়ানো শুরু হয়।
আজ আপনাদের সাথে শেয়ার করতে যাচ্ছি ‘কবিগুরু’ ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের’ ছয়টি কবিতা।


অনবচ্ছিন্ন আমি
আজি মগ্ন হয়েছিনু ব্রহ্মাণ্ড-মাঝারে,
যখন মেলিনু আঁখি হেরিনু আমারে।
ধরণীর বস্ত্রাঞ্চল দেখিলাম তুলি,
আমার নাড়ীর কম্পে কম্পমান ধূলি।
অনন্ত আকাশতলে দেখিলাম নামি,
আলোকদোলায় বসি দুলিতেছি আমি।
আজি গিয়েছিনু চলি মৃত্যুপরপারে,
সেথা বৃদ্ধ পুরাতন হেরিনু আমারে।
অবিচ্ছিন্ন আপনারে নিরখি ভুবনে
শিহরি উঠিনু কাঁপি আপনার মনে।
জলে স্থলে শূন্যে আমি যত দূরে চাই
আপনারে হারাবার নাই কোনো ঠাঁই।
জলস্থল দূর করি ব্রহ্ম অন্তর্যামী,
হেরিলাম তার মাঝে স্পন্দমান আমি।


অশেষ
আবার আহ্বান?
যত-কিছু ছিল কাজ সাঙ্গ তো করেছি আজ
দীর্ঘ দীনমান।
জাগায়ে মাধবীবন চলে গেছে বহুক্ষণ
প্রত্যুষ নবীন,
প্রখর পিপাসা হানি পুষ্পের শিশির টানি
গেছে মধ্যদিন।
মাঠের পশ্চিমশেষে অপরাহ্ন ম্লান হেসে
হল অবসান,
পরপারে উত্তরিতে পা দিয়েছি তরণীতে,
আবার আহ্বান?

নামে সন্ধ্যা তন্দ্রালসা সোনার আঁচল খসা,
হাতে দীপশিখা—
দিনের কল্লোল-’পর টানি দিল ঝিল্লিস্বর
ঘন যবনিকা।
ও পারের কালো কূলে কালী ঘনাইয়া তুলে
নিশার কালিমা,
গাঢ় সে তিমিরতলে চক্ষু কোথা ডুবে চলে
নাহি পায় সীমা।
নয়নপল্লব-’পরে স্বপ্ন জড়াইয়া ধরে,
থেমে যায় গান—
ক্লান্তি টানে অঙ্গ মম প্রিয়ার মিনতি-সম,
এখনো আহ্বান?

রে মোহিনী, রে নিষ্ঠুরা, ওরে রক্তলোভাতুরা
কঠোর স্বামিনী,
দিন মোর দিনু তোরে— শেষ নিতে চাস হ’রে
আমার যামিনী?
জগতে সবারি আছে সংসারসীমার কাছে
কোনোখানে শেষ,
কেন আসে মর্মচ্ছেদি’ সকল সমাপ্তি ভেদি
তোমার আদেশ?
বিশ্বজোড়া অন্ধকার সকলেরি আপনার
একেলার স্থান,
কোথা হতে তারো মাঝে বিদ্যুতের মতো বাজে
তোমার আহ্বান?

দক্ষিণসমুদ্রপারে তোমার প্রাসাদদ্বারে
হে জাগ্রত রানী,
বাজে না কি সন্ধ্যাকালে শান্ত সুরে ক্লান্ত তালে
বৈরাগ্যের বাণী?
সেথায় কি মূক বনে ঘুমায় না পাখিগণে
আঁধার শাখায়?
তারাগুলি হর্ম্যশিরে উঠে নাকি ধীরে ধীরে
নিঃশব্দ পাখায়?
লতাবিতানের তলে বিছায় না পুষ্পদলে
নিভৃত শয়ান?
হে অশ্রান্ত শান্তিহীন, শেষ হয়ে গেল দিন,
এখনো আহ্বান?

রহিল রহিল তবে— আমার আপন সবে,
আমার নিরালা,
মোর সন্ধ্যাদীপালোক, পথ-চাওয়া দুটি চোখ,
যত্নে গাঁথা মালা।
খেয়াতরী যাক বয়ে গৃহ-ফেরা লোক লয়ে
ও পারের গ্রামে,
তৃতীয়ার ক্ষীণ শশী ধীরে পড়ে যাক খসি
কুটিরের বামে।
রাত্রি মোর, শান্তি মোর, রহিল স্বপ্নের ঘোর,
সুস্নিগ্ধ নির্বাণ—
আবার চলিনু ফিরে বহি ক্লান্ত নতশিরে
তোমার আহ্বান।

বলো তবে কী বাজাব, ফুল দিয়ে কী সাজাব
তব দ্বারে আজ—
রক্ত দিয়ে কী লিখিব, প্রাণ দিয়ে কী শিখিব,
কী করিব কাজ?
যদি আঁখি পড়ে ঢুলে, শ্লথ হস্ত যদি ভুলে
পূর্ব নিপুণতা,
বক্ষে নাহি পাই বল, চক্ষে যদি আসে জল,
বেধে যায় কথা—
চেয়ো নাকো ঘৃণাভরে, কোরো নাকো অনাদরে
মোর অপমান—
মনে রেখো, হে নিদয়ে, মেনেছিনু অসময়ে
তোমার আহ্বান।

সেবক আমার মতো রয়েছে সহস্র শত
তোমার দুয়ারে—
তাহারা পেয়েছে ছুটি, ঘুমায় সকলে জুটি
পথের দু ধারে।
শুধু আমি তোরে সেবি বিদায় পাই নে দেবী,
ডাক’ ক্ষণে ক্ষণে—
বেছে নিলে আমারেই, দুরূহ সৌভাগ্য সেই
বহি প্রাণপণে।
সেই গর্বে জাগি রব সারারাত্রি দ্বারে তব
অনিদ্র-নয়ান,
সেই গর্বে কণ্ঠে মম বহি বরমাল্যসম
তোমার আহ্বান।

হবে, হবে, হবে জয়, হে দেবী, করি নে ভয়,
হব আমি জয়ী।
তোমার আহ্বানবাণী সফল করিব রানী
হে মহিমাময়ী।
কাঁপিবে না ক্লান্ত কর, ভাঙিবে না কণ্ঠস্বর,
টুটিবে না বীণা—
নবীন প্রভাত লাগি দীর্ঘরাত্রি রব জাগি,
দীপ নিবিবে না।
কর্মভার নবপ্রাতে নবসেবকের হাতে
করি যাব দান,
মোর শেষ কণ্ঠস্বরে যাইব ঘোষণা করে
তোমার আহ্বান।


জগদীশচন্দ্র বসু
বিজ্ঞানলক্ষ্মীর প্রিয় পশ্চিমমন্দিরে
দূর সিন্ধুতীরে,
হে বন্ধু, গিয়েছ তুমি; জয়মাল্যখানি
সেথা হতে আনি
দীনহীনা জননীর লজ্জানত শিরে
পরায়েছ ধীরে।

বিদেশের মহোজ্জ্বল মহিমামণ্ডিত
পণ্ডিতসভায়
বহু সাধুবাদধ্বনি নানা কণ্ঠরবে
শুনেছ গৌরবে।
সে ধ্বনি গম্ভীরমন্দ্রে ছায় চারি ধার
হয়ে সিন্ধু পার।

আজি মাতা পাঠাইছে অশ্রুসিক্ত বাণী
আশীর্বাদখানি
জগৎসভার কাছে অখ্যাত অজ্ঞাত
কবিকণ্ঠে ভ্রাতঃ!
সে বাণী পশিবে শুধু তোমারি অন্তরে
ক্ষীণ মাতৃস্বরে।



জুতা-আবিষ্কার
কহিলা হবু, ‘শুন গো গোবুরায়,
কালিকে আমি ভেবেছি সারা রাত্র—
মলিন ধূলা লাগিবে কেন পায়
ধরণী-মাঝে চরণ-ফেলা মাত্র!
তোমরা শুধু বেতন লহ বাঁটি,
রাজার কাজে কিছুই নাহি দৃষ্টি।
আমার মাটি লাগায় মোরে মাটি,
রাজ্যে মোর একি এ অনাসৃষ্টি!
শীঘ্র এর করিবে প্রতিকার,
নহিলে কারো রক্ষা নাহি আর।’

শুনিয়া গোবু ভাবিয়া হল খুন,
দারুণ ত্রাসে ঘর্ম বহে গাত্রে।
পণ্ডিতের হইল মুখ চুন,
পাত্রদের নিদ্রা নাহি রাত্রে।
রান্নাঘরে নাহিকো চড়ে হাঁড়ি,
কান্নাকাটি পড়িল বাড়িমধ্যে,
অশ্রুজলে ভাসায়ে পাকা দাড়ি
কহিলা গোবু হবুর পাদপদ্মে,
‘যদি না ধুলা লাগিবে তব পায়ে,
পায়ের ধুলা পাইব কী উপায়ে!’

শুনিয়া রাজা ভাবিল দুলি দুলি,
কহিল শেষে, ‘কথাটা বটে সত্য—
কিন্তু আগে বিদায় করো ধুলি,
ভাবিয়ো পরে পদধুলির তত্ত্ব।
ধুলা-অভাবে না পেলে পদধুলা
তোমরা সবে মাহিনা খাও মিথ্যে,
কেন বা তবে পুষিনু এতগুলা
উপাধি-ধরা বৈজ্ঞানিক ভৃত্যে?
আগের কাজ আগে তো তুমি সারো,
পরের কথা ভাবিয়ো পরে আরো।’

আঁধার দেখে রাজার কথা শুনি,
যতনভরে আনিল তবে মন্ত্রী
যেখানে যত আছিল জ্ঞানীগুণী
দেশে বিদেশে যতেক ছিল যন্ত্রী।
বসিল সবে চশমা চোখে আঁটি,
ফুরায়ে গেল উনিশ পিপে নস্য।
অনেক ভেবে কহিল, ‘গেলে মাটি
ধরায় তবে কোথায় হবে শস্য?’
কহিল রাজা, ‘তাই যদি না হবে,
পণ্ডিতেরা রয়েছ কেন তবে?’

সকলে মিলি যুক্তি করি শেষে
কিনিল ঝাঁটা সাড়ে সতেরো লক্ষ,
ঝাঁটের চোটে পথের ধুলা এসে
ভরিয়ে দিল রাজার মুখ বক্ষ।
ধুলায় কেহ মেলিতে নারে চোখ,
ধুলার মেঘে পড়িল ঢাকা সূর্য।
ধুলার বেগে কাশিয়া মরে লোক,
ধুলার মাঝে নগর হল উহ্য।
কহিল রাজা, ‘করিতে ধুলা দূর,
জগৎ হল ধুলায় ভরপুর!’

তখন বেগে ছুটিল ঝাঁকে ঝাঁক
মশক কাঁখে একুশ লাখ ভিস্তি।
পুকুরে বিলে রহিল শুধু পাঁক,
নদীর জলে নাহিক চলে কিস্তি।
জলের জীব মরিল জল বিনা,
ডাঙার প্রাণী সাঁতার করে চেষ্টা—
পাঁকের তলে মজিল বেচা-কিনা,
সর্দিজ্বরে উজাড় হল দেশটা।
কহিল রাজা, ‘এমনি সব গাধা
ধুলারে মারি করিয়া দিল কাদা!’

আবার সবে ডাকিল পরামর্শে;
বসিল পুন যতেক গুণবন্ত—
ঘুরিয়া মাথা হেরিল চোখে সর্ষে,
ধুলার হায় নাহিক পায় অন্ত।
কহিল, ‘মহী মাদুর দিয়ে ঢাকো,
ফরাশ পাতি করিব ধুলা বন্ধ।’
কহিল কেহ, ‘রাজারে ঘরে রাখো,
কোথাও যেন থাকে না কোনো রন্ধ্র।
ধুলার মাঝে না যদি দেন পা
তা হলে পায়ে ধুলা তো লাগে না।’

কহিল রাজা, ‘সে কথা বড়ো খাঁটি,
কিন্তু মোর হতেছে মনে সন্ধ,
মাটির ভয়ে রাজ্য হবে মাটি
দিবসরাতি রহিলে আমি বন্ধ।’
কহিল সবে, ‘চামারে তবে ডাকি
চর্ম দিয়া মুড়িয়া দাও পৃথ্বী।
ধূলির মহী ঝুলির মাঝে ঢাকি
মহীপতির রহিবে মহাকীর্তি।’
কহিল সবে, ‘হবে সে অবহেলে,
যোগ্যমতো চামার যদি মেলে।’

রাজার চর ধাইল হেথা হোথা,
ছুটিল সবে ছাড়িয়া সব কর্ম।
যোগ্যমতো চামার নাহি কোথা,
না মিলে তত উচিত-মতো চর্ম।
তখন ধীরে চামার-কুলপতি
কহিল এসে ঈষৎ হেসে বৃদ্ধ,
‘বলিতে পারি করিলে অনুমতি,
সহজে যাহে মানস হবে সিদ্ধ।
নিজের দুটি চরণ ঢাকো, তবে
ধরণী আর ঢাকিতে নাহি হবে।’

কহিল রাজা, ‘এত কি হবে সিধে,
ভাবিয়া ম’ল সকল দেশ-শুদ্ধ!’
মন্ত্রী কহে, ‘বেটারে শূল বিঁধে
কারার মাঝে করিয়া রাখো রুদ্ধ।’
রাজার পদ চর্ম-আবরণে
ঢাকিল বুড়া বসিয়া পদোপান্তে।
মন্ত্রী কহে, ‘আমারো ছিল মনে
কেমনে বেটা পেরেছে সেটা জানতে।’
সেদিন হতে চলিল জুতা পরা—
বাঁচিল গোবু, রক্ষা পেল ধরা।


বৈশাখ
হে ভৈরব, হে রুদ্র বৈশাখ,
ধুলায় ধূসর রুক্ষ উড্ডীন পিঙ্গল জটাজাল
তপঃক্লিষ্ট তপ্ত তনু, মুখে তুলি বিষাণ ভয়াল
কারে দাও ডাক—
হে ভৈরব, হে রুদ্র বৈশাখ!

ছায়ামূর্তি যত অনুচর
দগ্ধতাম্র দিগন্তের কোন্ ছিদ্র হতে ছুটে আসে!
কী ভীষ্ম অদৃশ্য নৃত্যে মাতি উঠে মধ্যাহ্ন-আকাশে
নিঃশব্দ প্রখর—
ছায়ামূর্তি তব অনুচর!

মত্তশ্রমে শ্বসিছে হুতাশ,
রহি রহি দহি দহি উগ্রবেগে উঠিছে ঘুরিয়া,
আবর্তিয়া তৃণপর্ণ, ঘূর্ণচ্ছন্দে শূন্যে আলোড়িয়া
চূর্ণ রেণুরাশ—
মত্তশ্রমে শ্বসিছে হুতাশ।

দীপ্তচক্ষু হে শীর্ণ সন্ন্যাসী,
পদ্মাসনে ব’স আসি রক্তনেত্র তুলিয়া ললাটে,
শুষ্কজল নদীতীরে শস্যশূন্য তৃষাদীর্ণ মাঠে
উদাসী প্রবাসী—
দীপ্তচক্ষু হে শীর্ণ সন্ন্যাসী!

জ্বলিতেছে সম্মুখে তোমার
লোলুপ চিতাগ্নিশিখা, লেহি লেহি বিরাট অম্বর,
নিখিলের পরিত্যক্ত মৃতস্তূপ বিগত বৎসর
করি ভস্মসার—
চিতা জ্বলে সম্মুখে তোমার।

হে বৈরাগী, করো শান্তিপাঠ।
উদার উদাস কণ্ঠ যাক ছুটে দক্ষিণে ও বামে,
যাক নদী পার হয়ে, যাক চলি গ্রাম হতে গ্রামে,
পূর্ণ করি মাঠ—
হে বৈরাগী, করো শান্তিপাঠ।

সকরুণ তব মন্ত্র-সাথে
মর্মভেদী যত দুঃখ বিস্তারিয়া যাক বিশ্ব-’পরে,
ক্লান্ত কপোতের কণ্ঠে, ক্ষীণ জাহ্নবীর শ্রান্তস্বরে,
অশ্বত্থছায়াতে—
সকরুণ তব মন্ত্র-সাথে।

দুঃখ সুখ আশা ও নৈরাশ
তোমার-ফুৎকার-লুব্ধ ধুলা-সম উড়ুক গগনে,
ভ’রে দিক নিকুঞ্জের স্খলিত ফুলের গন্ধ-সনে
আকুল আকাশ—
দুঃখ সুখ আশা ও নৈরাশ।

তোমার গেরুয়া বস্ত্রাঞ্চল
দাও পাতি নভস্তলে, বিশাল বৈরাগ্যে আবরিয়া
জরা-মৃত্যু ক্ষুধা-তৃষ্ণা লক্ষকোটি নরনারী-হিয়া
চিন্তায় বিকল—
দাও পাতি গেরুয়া অঞ্চল।

ছাড়ো ডাক হে রুদ্র বৈশাখ!
ভাঙিয়া মধ্যাহ্নতন্দ্রা জাগি উঠি বাহিরিব দ্বারে,
চেয়ে রব প্রাণীশূন্য দগ্ধতৃণ দিগন্তের পারে
নিস্তব্ধ নির্বাক্—
হে ভৈরব, হে রুদ্র বৈশাখ!


নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ
আজি এ প্রভাতে রবির কর
কেমনে পশিল প্রাণের পর,
কেমনে পশিল গুহার আঁধারে প্রভাতপাখির গান!
না জানি কেন রে এত দিন পরে জাগিয়া উঠিল প্রাণ।
জাগিয়া উঠেছে প্রাণ,
ওরে উথলি উঠেছে বারি,
ওরে প্রাণের বাসনা প্রাণের আবেগ রুধিয়া রাখিতে নারি।

থর থর করি কাঁপিছে ভূধর,
শিলা রাশি রাশি পড়িছে খসে,
ফুলিয়া ফুলিয়া ফেনিল সলিল
গরজি উঠিছে দারুণ রোষে।
হেথায় হোথায় পাগলের প্রায়
ঘুরিয়া ঘুরিয়া মাতিয়া বেড়ায় -
বাহিরেতে চায়, দেখিতে না পায় কোথায় কারার দ্বার।
কেন রে বিধাতা পাষাণ হেন,
চারি দিকে তার বাঁধন কেন!
ভাঙ রে হৃদয়, ভাঙ্রে বাঁধন,
সাধ রে আজিকে প্রাণের সাধন,
লহরীর পরে লহরী তুলিয়া
আঘাতের পরে আঘাত কর।
মাতিয়া যখন উঠেছে পরান
কিসের আঁধার, কিসের পাষাণ!
উথলি যখন উঠেছে বাসনা
জগতে তখন কিসের ডর!

আমি ঢালিব করুণাধারা,
আমি ভাঙিব পাষাণকারা,
আমি জগৎ প্লাবিয়া বেড়াব গাহিয়া
আকুল পাগল-পারা।
কেশ এলাইয়া, ফুল কুড়াইয়া,
রামধনু-আঁকা পাখা উড়াইয়া,
রবির কিরণে হাসি ছড়াইয়া দিব রে পরান ঢালি।
শিখর হইতে শিখরে ছুটিব,
ভূধর হইতে ভূধরে লুটিব,
হেসে খলখল গেয়ে কলকল তালে তালে দিব তালি।
এত কথা আছে, এত গান আছে, এত প্রাণ আছে মোর,
এত সুখ আছে, এত সাধ আছে – প্রাণ হয়ে আছে ভোর।।

কী জানি কী হল আজি, জাগিয়া উঠিল প্রাণ -
দূর হতে শুনি যেন মহাসাগরের গান।
ওরে, চারি দিকে মোর
এ কী কারাগার ঘোর -
ভাঙ ভাঙ ভাঙ কারা, আঘাতে আঘাত কর্।
ওরে আজ কী গান গেয়েছে পাখি,
এসেছে রবির কর।।

....................................................................................
পোস্টটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই মার্চ, ২০১৫ ভোর ৬:১৫
৪টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ভণ্ড মুসলমান

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:২৬

ওরে মুসলিম ধর্ম তোমার টুপি পাঞ্জাবী মাথার মুকুট,
মনের ভেতর শয়তানি এক নিজের স্বার্থে চলে খুটখাট।
সবই যখন খোদার হুকুম শয়তানি করে কে?
খোদার উপর চাপিয়ে দিতেই খোদা কি-বলছে?

মানুষ ঠকিয়ে খোদার হুকুম শয়তানি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসবে তুমি কবে ?

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪২



আজি আমার আঙিনায়
তোমার দেখা নাই,
কোথায় তোমায় পাই?
বিশ্ব বিবেকের কাছে
প্রশ্ন রেখে যাই।
তুমি থাকো যে দূরে
আমার স্পর্শের বাহিরে,
আমি থাকিগো অপেক্ষায়।
আসবে যে তুমি কবে ?
কবে হবেগো ঠাঁই আমার ?
... ...বাকিটুকু পড়ুন

(রম্য রচনা -৩০কিলো/ঘন্টা মোটরসাইকেলের গতি )

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ২:৫০



একজন খুব পরিশ্রম করে খাঁটি শুকনো সবজি( দুষ্টু লোকে যাকে গাঁ*জা বলে ডাকে) খেয়ে পড়াশোনা করে হঠাৎ করে বিসিএস হয়ে গেলো। যথারীতি কষ্ট করে সফলতার গল্প হলো। সবাই খুশি। ক্যাডারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোথাও ছিলো না কেউ ....

লিখেছেন আহমেদ জী এস, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:১৯




কখনো কোথাও ছিলো না কেউ
না ছিলো উত্তরে, না দক্ষিনে
শুধু তুমি নক্ষত্র হয়ে ছিলে উর্দ্ধাকাশে।

আকাশে আর কোন নক্ষত্র ছিলো না
খাল-বিল-পুকুরে আকাশের ছবি ছিলো না
বাতাসে কারো গন্ধ ছিলোনা
ছিলোনা... ...বাকিটুকু পড়ুন

#প্রিয়তম কী লিখি তোমায়

লিখেছেন নীল মনি, ২১ শে মে, ২০২৪ সকাল ৭:৫১


আমাদের শহর ছিল।
সে শহর ঘিরে গড়ে উঠেছিল অলৌকিক সংসার।
তুমি রোজ তাঁকে যে গল্প শোনাতে সেখানে ভিড় জমাতো বেলা বোস, বনলতা কিংবা রোদ্দুর নামের সেই মেয়েটি!
সে কেবল অভিমানে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×