ঈদের দিন যতই এগিয়ে আসছে, আমার ততই অসহায় লাগছে নিজেকে! মনে হচ্ছে কোথাও লুকিয়ে ফেলি নিজেকে, গর্তে ঢুকে যাই ক’দিনের জন্য! কি করবো ঈদের দিন! কোথায় যাবো, কাদের সঙ্গে থাকবো! কিছুই জানিনা। কিন্তু এটা নিশ্চিত জানি এবার ঈদে আর মায়ের ডাকে ঘুম ভাঙ্গবেনা! মা আমার আছেন পবিত্র হজে! একজন মানুষের ক’দিনের অনুপস্থিতি একটা গোটা জীবনের গল্প বদলে দেয় কেমন! স্মৃতিকে যতদূর পযর্ন্ত পাই, প্রতি ঈদের দিন সকালবেলা ঘুম ভাঙত মায়ের ডাকে। শুনতাম মা ডাকছেন নিচতলা থেকে Ñএবার ওঠ বাবা, নইলে তো নামাজও পাবি না! ঘুম ঘুম চোখে শেষমেশ উঠে দেখতাম নামাজের আর মাত্র ১৫/২০ মিনিট বাকি। ‘বাড়ির লোক হজ পায়না’ প্রবাদের মতোই রোজ প্রায় শেষ মূহূর্তে আমি ঘরের পাশের ঈদগাহ মাঠে পৌছাতাম। নামাজের প্রস্তুতি প্রতিবারই আমার ছোটখাটে মেরাথন-এর মতো। জলদি..... জলদি ! বোনদের দেখতাম ঘরের সমস্ত দরজা জানালার পর্দা, সোফার কুশন, বিছানা-বালিশ এর নতুন জামা পড়ানোর ব্যস্ততা। কোনরকমে রান্নাঘর থেকেই দু-এক চামচ সেমাই মুখে দিয়েই ছুটতাম ঈদগাহ এ। নামাজ শেষে বাড়ি ফিরে হতো আনুষ্ঠানিক খাওয়া-দাওয়া।
তারপর আর তেমন কিছুই করার থাকত না। আজকাল মানুষ এমন ভদ্র সভ্য হয়েছে যে, আজকাল কেউ আর সেমাই খাওয়ার জন্য দ্বারে দ্বারে ঘোরেনা! সারাদিনটা যেমন তেমন করে কাটিয়ে বিকেল থেকে মধ্যরাত অব্দি বন্ধুদের সাথে তুমুল আড্ডাই আমার মূল ঈদ। বিশেষত বর্ষরান্তে দর্শন পাওয়া বন্ধুদের রোজনামচার বর্ণনা আর বিশ্লেষণ!
কিন্তু এবার তার কিছুই হবেনা। স্মৃতি হাতড়ে যতটা পাই সম্ভবত এবারই প্রথম। কোথায় যাব, কেমন থাকবো, কি করবো তার কিছুই জানিনা। কেবল এটা নিশ্চিত জানি মা আমার ঘুম ভাঙাবেন না! ভাবতেই বুকের ভেতরটা কেমন খাঁ খাঁ করছে। বাইরে বাইরে যতই স্বাভাবিক থাকছি না কেন, যতই দিনটা এগিয়ে আসছে আমি ভেতরে ভেতরে কেমন ভেঙ্গে পড়ছি। বুক ভেঙ্গে কান্না পাচ্ছে আমার। ঐ পবিত্র ভূমিতে দাড়িয়ে আমার মা উচ্চারণ করছেন একটিমাত্র শব্দ, লাব্বায়েক...আল্লাহুম্মা লাব্বায়েক। আর আমি তোমার একমাত্র পুত্রধন চিৎকার করে উচ্চারণ করছি কেবল একটি শব্দই, মা.........ও মা................!
(পুণশ্চঃ আমার এবারের ঈদ আমি পৃথিবীর সমস্ত মা হীন সন্তানদের উৎসর্গ করলাম।)