আমি নিশ্চিত, যারা ছবিভক্ত তাদের মধ্যে এমন কাউকে খুঁজে পা্ওয়া যাবে না ,যে টেকেন (Taken)খ্যাত নায়ক লিয়াম নিসন(Liam Nesson) কে চিনে না অথবা তার ছবি দেখেনি । আর এমন যদি হয়ে থাকেন তবে এখনই রিভিউ পড়ে , মুভিটা দেখে ফেলুন । আমি নিশ্চিত আপনি নিসন সাহেবের ভক্ত না হয়ে থাকতে পারবেন না এবং আগামী ছবির রিভিউ আপনি নিজ দায়িত্বেই দিবেন । আর মনে মনে আফসোস করবেন , “আর কিছু বয়স কম হলে ভালো হতো” আপনার না , নিসান সাহেবের । এতে আরো কিছু নতুন ছবিতে উনাকে দেখার সুযোগ হতো ।কারন ছবির নায়কের বয়স ৬৩ বছর । একবার ভাবুনতো ৬৩ বছর বয়সী এক বাংলা ছবির নায়কের কথা , না এই বয়সের কোন অভিনেতা বাংলা ছবিতে নায়কের চরিত্রে তো নহে, দাদা চরিত্রেও পাওয়া মুশকিল।অথচ নিসন!! কি অবাক করা অভিনয়ের মাধ্যমে বুঝিয়ে দিলেন , আমি এখন্ও ফুরিয়ে যাই নি।এর জন্য যতটা প্রয়োজন শরীরিক সক্ষমতা তার চেয়ে বেশি দরকার মানসিক শক্তি । আর দরকার এমন বয়সী অভিনেতা দিয়ে কাজ করানোর মতো সাহসী পরিচালক । যেটা এ বাংলায় কেন বলিউডেও খুঁজে পাওয়া প্রায় দুষ্কর ।
চলুন ছবির কাহিনী টা একটু জেনে নিই ।ছবিতে নিসন( জিমি) একজন বৃদ্ধ আইরিস ব্যক্তি যে কিনা বেইমানি করে তার পরিবার, বন্ধুদের সাথে, খুন করে আপন মামাতে ভাইকে , বন্ধুকে । খুন করে আরো অনেককে ।তার এই সব খারাপ কর্মকান্ডের জন্য ছেলের পরিবার, আত্নীয়-স্বজন এবং বন্ধু বান্ধব থেকে সে আজ বিচ্ছিন্ন।কেউ তাকে আজ বিশ্বাস করে না। শুধু তার পূর্বের একমাত্র বন্ধু এবং একসময়ের বস শন(ইডি হ্যারিস),যে কিনা তাকে তার সন্তান ড্যানির চেয়েও বেশি বিশ্বাস করে । এখন সে এখানেই আশ্রিত। একদিন ড্যানি এক হিরোইন চোরাকারবারি দলের সাথে তার বাবার ব্যবসায়িক যুক্তি করিয়ে দিবে বলে তাদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নেয় কিন্তু দুর্ভ্যাগবশত শন যুক্তি করে না। ফলে ড্যানি পড়ে মহাবিপদে, হয়তো তাকে টাকা ফেরত দিতে হবে নতুবা মরতে হবে। সে ঐ চক্রের লোকদেরকে মেরে ফেলে কিন্তু তা দেখে ফেলে নিসনের সন্তান মাইকেল ফলে ড্যানি তাকে মারতে যায় তার বাসায় আর সেখানেই ঘটে বিপত্তি । ড্যানি উল্টো মারা যায় নিসনের হাতে কারণ সেখানে আগেই উপস্থিত ছিল সে। এখান থেকেই শুরু হয় ছবির মুলগল্প , দুই পিতার মনস্তাত্ত্বিক খেলা । একদিকে শন বন্ধুত্বের কথা ভুলে তার ছেলের খুনের প্রতিশোধ হিসেবে জিমি(নিসন) নহে বরং তার ছেলে মাইকেলকে মারার সিদ্ধান্ত নেয় অন্যদিকে মাইকেলকে বাঁচানোর সবধরনের চেষ্টা করতে থাকে বাবা জিমি ।সবশেষে কি হয় তা জানতে কষ্ট করে ছবিটা দেখতে হবে ।
আচ্ছা আপনাদের মনে প্রশ্ন জাগে না, কেন হাজার হাজার ছবির ফেলে, আমি এই ছবির রিভিউ দিলাম? উত্তর : কারণ হলিউডের এই ছবি দেখে আমি কান্না করেছি ।তবে ছবির করুণ দৃশ্য এক বন্ধু,আরেক বন্ধুকে গুলি করে মেরে ফেলার পর আবার তাকে জড়িয়ে কান্না, অনেকটা ”ফানা” ছবির শেষ দৃশ্যের মতো দেখে নহে বরং এই ছবি আমাদেরকে নিয়ে যাবে আমাদের অতীত জীবনে , মনে করিয়ে দিবে আমাদের বন্ধুত্বের কথা যাদের ছাড়া আমাদের একদিনও চলতো না, আজ তারা অনেকেই নেই ।অথচ আমরা এক এক জন নিরব স্বাক্ষী হযে আজও বেঁচে আছি ।আর বাকী চলার পথে তারা আসবে ফিরে,কখনও চায়ের দোকানের আড্ডায় , কখন শোবার ঘরে যেখানে বালিশ ছিল দুইজনের আর আমরা ছিলাম ৫ জন।অথচ আজ ঐরুমের পুরো বিছনাই খালি ।বাবা ছেলে বা বন্ধুত্বের যে সংলাপ বা দৃশ্য ফুটিয়ে তুলেছে আনকোরা এই পরিচালক Jaume Collet-Serra তা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার ।
আমি কেঁদেছি আপনিও যে কাঁদবেন এমন কোন ধরাবাঁধা নিয়ম নাই । অতএব কান্নার কথা বাদ দিয়ে ছবিটি দেখা শুরু করুন আশা করি হতাশ হবেন না । সবই পাবেন কাহিনি , একশ্যান, কমেডি আর একটু ভালো করে সংলাপ শুনলে পাবেন ১৮+ এর স্বাদ।
আমার রেটিং:: ৮/১০
বাংলা সাবটাইটেল