somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চর্যাপদ (১৬-২১) [সুব্রত অগাষ্টিন গোমেজের পাঠোদ্ধারসহ]

২৪ শে এপ্রিল, ২০১১ দুপুর ২:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

চর্যাপদ (১-১৫) [সুব্রত অগাষ্টিন গোমেজের পাঠোদ্ধারসহ]
Click This Link

চর্যা-১৬ [রাগ ভৈরবী]
মহীধরপাদানাম

তিনিএঁ পাটেঁ লাগেলি রে অণহ কসণ গাজই।
তা সুনি মার ভয়ঙ্কর রে বিসঅমণ্ডল ভাজই॥ ধ্রু॥
মাতেল চীঅগএন্দা ধাবই।
নিরন্তর গঅণন্ত তুসেঁ ঘোলই॥ ধ্রু॥
পাপ পুণ্ণ বেণি তোড়িঅ সিকল মোড়িঅ খম্ভাঠাণা।
গঅণটাকলি লাগি রে চিত্ত পইঠ নিবাণা॥ ধ্রু॥
মহারসপানে মাতেল রে তিহুঅন সএল উএখী।
পঞ্চবিসঅনায়ক রে বিপখ কোবি ন দেখি॥ ধ্রু॥
খররবিকিরণসন্তাপে রে গঅণাঙ্গণ গই পইঠা।
ভণন্তি মহিত্তা মই এথু বুড়ন্তে কিম্পি ন দিঠা॥ ধ্রু॥

অনুবাদ:
তিনটি পাটে কৃষ্ণ হাতির অশান্ত বৃংহণ,
শুনে, বিষয়-সমেত ভীষণ ‘মার’-এর আন্দোলন;
মত্ত গজেশ ছুটে গিয়ে শেষটায়
গগন-প্রান্ত ঘুলিয়ে ফ্যালে তেষ্টায়;
পাপপুণ্যের শক্ত শিকলটি এ
ছিঁড়ে ফেলে, স্তম্ভটি উপড়িয়ে,
গগন-চূড়ায় নির্বাণে মন প্রবেশ করল গিয়ে।
মন মহারস-পানে মত্ত হয়,
তিনটি ভুবন উপেক্ষিত রয়,
পাঁচ বিষয়ের নায়কের যে শত্রু কেউ নয়!
খররবিকিরণে মন গগন-গাঙে সাঁতরায়–
ডুবলে কিছুই যায় না দেখা!–মহীধরে কাতরায়।

চর্যা-১৭ রাগ [রাগ:পটমঞ্জরী]
বীণাপাদানাম

সুজ লাউ সসি লাগেলি তান্তী।
অণহা দাণ্ডী একি কিঅত অবধূতী॥ ধ্রু॥
বাজই অলো সহি হেরুঅবীণা।
সুনতান্তিধনি বিলসই রুণা॥ ধ্রু॥
আলি কালি বেণি সারি সুণিআ।
গঅবর সমরস সান্ধি গুণিআ॥ ধ্রু॥
জবে করহা করহকলে চাপিউ।
বতিশ তান্তিধনি সঅল বিআপিউ॥ ধ্রু॥
নাচন্তি বাজিল গান্তি দেবী।
বুদ্ধ নাটক বিসমা হোই॥ ধ্রু॥

অনুবাদ:
সূর্য হ’ল লাউ আর তার হ’ল চন্দ্র,
অবধূতি চাকি হ’ল, অনাহত দণ্ড;
হেরুক-বীণাটি বেজে ওঠে, সখী ও লো,
করুণায় শূন্য-তন্ত্রী বিলসিত হ’ল–
আলি-কালি দুই সুর হ’ল তাতে বন্দি,
গজবর, সমরস বীণাটির সন্ধি।
করতলে করপার্শ্ব চাপ দিলে পরে
বত্রিশ তন্ত্রীতে সব পরিব্যাপ্ত করে–
বজ্রাচার্য নৃত্য করে, দেবী ধরে গান,
বুদ্ধনাটকের তবে হয় অবসান।

চর্যা-১৮ [রাগ: গউড়া]
কানুপাদানাম


তিনি ভুঅণ মই বাহিঅ হেলেঁ।
হাঁউ সুতেলি মহাসুহলীলেঁ॥ ধ্রু॥
কইসণি হালো ডোম্বী তোহোরি ভাভরিআলী।
অন্তে কুলিণজণ মাঝেঁ কাবালী॥ ধ্রু॥
তঁই লো ডোম্বী সঅল বিটালিউ।
কাজণ কারণ সসহর টালিউ॥ ধ্রু॥
কেহো কেহো তোহোরে বিরুআ বোলই।
বিদুজণ লোঅ তোরে কণ্ঠ ন মেলই॥ ধ্রু॥
কাহ্নে গাই তু কামচণ্ডালী।
ডোম্বী ত আগলি নাহি চ্ছিণালী॥ ধ্রু॥

অনুবাদ:
পার ক’রে দেই তিনটি ভুবন অবহেলায়
সুপ্ত থেকে মহাসুখের মহালীলায়।
ডোমনি রে, তোর ভাবকালির পাই না কোনো ঠিক,
পিছনে তোর কুলীনজন, সঙ্গে কাপালিক!
বিচলিত করলি, ডোমনি, সবকিছুকেই,
চাঁদটিকে তোর টলিয়ে দেওয়ার কারণ তো নেই!
বিরূপা কয় কুলোকে যদিও তোরে,
জ্ঞানী জনে রাখে গলায় মালা ক’রে।
কানু বলে, কামাতুরা রে চণ্ডালী,
তিনভুবনে তুলনাহীন তোর ছিনালি!

চর্যাপদ-১৯ [রাগ ভৈরবী]
কানুপাদানাম

ভবনির্ব্বাণে পড়হ মাদলা।
মণপবণবেণি করণ্ডকশালা॥ ধ্রু॥
জঅ জঅ দুন্দুহিসাদ উছলিআঁ।
কাহ্ন ডোম্বীবিবাহে চলিআ॥ ধ্রু॥
ডোম্বী বিবাহিআ অহারিউ জাম।
জউতুকে কিঅ আণুতু ধাম॥ ধ্রু॥
অহণিসি সুরঅপসঙ্গে জাঅ।
জোইণিজালে রঅণি পোহাঅ॥ ধ্রু॥
ডোম্বীএর সঙ্গে জো জোই রত্তো।
খণহ ন ছাড়অ সহজ উন্মত্তো॥ ধ্রু॥

অনুবাদ:
ভব নির্বাণ, পটহ মাদল;
মন ও পবন, কাঁসি আর ঢোল;
দুন্দুভি বাজে জয়-জয়-রবে,
কানু-ডোমনির আজ বিয়ে হবে।
ডোমনিকে বিয়ে ক’রে জাত গেল,
শ্রেষ্ঠ ধর্ম যৌতুক পেল;
কাটে নিশিদিন সুরত-রঙ্গে,
রজনি পোহায় যোগিনী-সঙ্গে–
যে-যোগী মজেছে ডোমনির পাঁকে
প্রাণ গেলে তবু ছাড়ে না সে তাকে।

চর্যা-২০ [রাগ: পটমঞ্জরী]
কুক্কুরীপাদানাম


হাঁউ নিরাসী খমণভতারি।
মোহোর বিগোআ কহণ ন জাই॥ ধ্রূ॥
ফেটলিউ গো মাএ অন্তউরি চাহি।
জা এথু চাহাম সো এথু নাহি॥ ধ্রূ॥
পহিল বিআণ মোর বাসনপূড়া।
নাড়ি বিআরন্তে সেব বাপূড়া॥ ধ্রূ॥
জাণজৌবণ মোর ভৈলেসি পূরা।
মূল নখলি বাপ সংঘারা॥ ধ্রূ॥
ভণথি কুক্কুরীপা এ ভব থিরা।
জো এথু বুঝই সো এথু বীরা॥ ধ্রূ॥


অনুবাদ:
হলাম নিরাশ, স্বামী ক্ষপণক, হায়,
আমার বেদনা ভাষায় কওয়া না যায়।
বিয়ালাম গো মা, আঁতুড়ের খোঁজ নাই,
নাই কোনোকিছু, এখানে যা-কিছু চাই।
প্রথম প্রসব আমার, বাসনাপুট,
নাড়িটা কাটতে-কাটতেই, হ’ল ঝুঁট!
পূর্ণ আমার হ’ল নবযৌবন,
ঘটল মায়ের বাপের উৎসাদন।
কুক্কুরী ভনে, এ-জগৎ চির-স্থির,
যে জানে এখানে, সে-ই শুধু হয় বীর।

চর্যা-২১ [রাগ: বরাড়ী]
ভুসুকুপাদানাম


নিসি অন্ধারী মুসঅ চারা।
অমিঅভখঅ মুসা করঅ আহারা॥ ধ্রূ॥
মার রে জোইআ মুসা পবণা।
জেণ তুটঅ অবণাগবণা॥ ধ্রূ॥
ভববিন্দারঅ মুসা খণঅ গাতী।
চঞ্চল মুসা কলিআঁ নাশক থাতী॥ ধ্রূ॥
কাল মুসা উহ ণ বাণ।
গঅণে উঠি চরঅ অমণধাণ॥ ধ্রূ॥
তাব সে মুসা উঞ্চল পাঞ্চল।
সদ্‌গুরুবোহে করহ সো নিচ্চল॥ ধ্রূ॥
জবে মুসাএর চার তুটঅ।
ভুসুকু ভণঅ তবে বান্ধন ফিটঅ॥ ধ্রূ॥


অনুবাদ:
গভীর নিশীথে এখানে ওখানে চ’রে
অমৃতভক্ষ মূষিক আহার করে–
বায়ুরূপী ঐ মূষিকেরে, যোগিবর,
আনাগোনা-রোধকল্পে, ঘায়েল কর্‌।
চপল মূষিক, মাটি খুঁড়ে থাকে গর্তে,
জেনে তার ঠাঁই, ধাও তাকে বধ করতে।
কৃষ্ণ মূষিক, আঁধারে সে অগোচর,
আনমনা ধ্যানে হ’য়ে যায় সে খেচর,
উড়াম-বা’রাম অস্থির সে-মূষিক
যতখন গুরু না-দেখান তাকে দিক্।
ভুসুকু ভনয়: বিচরণ শেষ হ’লে
সেই মূষিকের সব বন্ধন খোলে।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে এপ্রিল, ২০১১ দুপুর ২:২০
৮টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×