somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

'হাওয়াকাঠের ঘোড়া’ থেকে দশটি কবিতা

২৭ শে মে, ২০১৪ বিকাল ৫:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভূমিকা

টেলিস্কোপের চোঙে চোখ রেখে অনেকদূরের ছায়াবাতিঘরও দেখে ফেলা সম্ভব। তার অবস্থানের অতি নিকটবর্তী পাতাদের হলুদ হবার অভ্যেস কিংবা সান্ধ্যকালীন মাকড়শার ঝগড়ার সংলাপ দেখে ফেলা কিংবা শুনে ফেলা সম্ভব কি না কে জানে! দীর্ঘকাল বৃষ্টিস্নানের পর রোদ যেখানে একইসাথে অগ্নিময় পাথর আর বরফকুণ্ডের ছদ্মবেশে পাশাপাশি বসে মাটির ঘ্রাণ শুকতে শুকতে কফি খেতে পারে।
দৃশ্য সংরক্ষণের পদ্ধতি বিবিধ বলে, ভালুকের কাছে মধু তিতা প্রজাপতির কাছে অমৃত। অক্ষর তুই তো এক ছায়াবতী অন্ধকোকিল, আমাকে ঘর থেকে ঘাস পর্যন্ত ডেকে নিয়ে আর আমাকে চিনিস না। তোর প্ররোচনা থাকে মেঘের কঙ্কাল কিংবা হাওয়ার ঘ্রাণের সাথে আমার প্রণয় ঘটিয়ে দেয়া যায় কি না। যেখানে একই উদ্দেশ্য নিয়ে বহুদিন ধরে দাঁড়িয়ে আছে একই এক রঙধনুক। আমি এই দৃশ্যগল্পের অবোধ বালক।
কাগজ কলম হাতের কাছে পাইনি বলে দূরত্বের সমাধিফলকে লিখে রাখলাম এই অহেতুক অনুভূতিমালা। কে তুমি কাগজের মুদ্রায় কিনতে এসেছো আমার সবুজ অহঙ্কার...

গ্যাব্রিয়েল সুমন
৬ মাঘ, ১৪১৯
ঢাকা


পাখি ও পোস্টঅফিস

আমি একটি ব্ল্যাকবোর্ডকে সাদা চকের লোভ দেখিয়ে
ভুলে গেছি আমার ডাস্টারজীবন। সুন্দরবনে জারুল
গাছে বসন্তবৌরি এসে হাওয়ায় মেলায় গলা। কাদা,
দাগ, ময়লার মতো কতো কিছু মুছে দিতে জানতে হয়,
কতো কিছু মুছে যায় জলে— বাতাসে— আগুনে।

রোদের মতো একটি জঘন্য কাগজ হাতে আমি কেন
খুঁজে চলেছি পাখি ও নদীদের যৌথ পেন্সিলস্কেচ!
আর কবে হাওয়াকাল এসে দাঁড়াবে আমাদের
ঘুমশালায়?

বনের ভেতর হরিণ দেখতে গিয়ে

পাতার কোনো ইশারা নেই, যেহেতু পাতা নিজেই এক ইশারা— বাতাসের কানে কানে। পাখির ডাক শুনে বিভ্রান্ত হবার দিন, জলাধারে ফেলে দিতে দিতে ভাবি— আমি এখানে কেন? পাতার বুকে ছাপ এঁকে এঁকে বনের ভেতর মিশে গেছে যে চপলা— কী যেন তার ডাকনাম! তার চোখের ভেতর ছিলো এক অনুন্মোচিত জাদুঘর, নক্ষত্রের ঘুমরহস্য। পাতার শিরায় লেখা পাখিদের দিনলিপিতে লিপিবদ্ধ মর্ম-আঁচড় থেকে জেনেছি এই ঘুমহীনতার পদাবলি। শিকারীর দৃশ্যভীতি লেগে আছে পাখির পালকে— নির্জনতা হাই তুলে পেছনে ফিরে তাকায় আবার হেঁটে যায়, বাকলের অমোঘ টানে। বাংলোর বুকের ভেতর যে মলাটবদ্ধ ছায়া তার কোনো চুমুঅভিজ্ঞান নেই। আমার কোনো জনপদ নেই; আমার কোনো ইতিহাস নেই। আমার করতলে আছে হাওয়ার রোদঘরে আঁকা জাদুঘরের গুপ্তনকশা। জলাধারের নিকটবর্তী হয়ে দেখি আর কোনো পায়ের ছাপ নেই, যদিও বাঘ ছাড়া অন্যকোনো বন্যপ্রাণীর সাঁতরাবার অভিজ্ঞতা থাকে না। এই দেখছি দেখবো বলেও আমার আর জাদুঘরের কুয়াশামন্ত্রে দীক্ষা নেয়া হয় না। আর বনের ভেতর হরিণ দেখতে গিয়ে— দেখি, দাঁড়িয়ে আছি মনের ভেতর।

হাওয়ামোড়ক

আজ একটি ঘাসিনৌকা আমাকে জলাধার মধ্যবর্তী ভাসমান ঘাসজাহাজে স্ট্যান্ডবাই রেখে গেছে। নৌকার মাঝি ও আমার মধ্যে কোনো জানাজানি নেই। সে সোনারতরী পড়েছে কি না তাও জানা নেই। আজ সারাবিকেল সোনারতরী ভাবনা আমাকে সঙ্গ দিয়েছে। উপরথেকে যেসব ভুবনচিল আমার উপর নজর রাখছিলো। ভুলক্রমে তারা আমার উপর ড্রপআউট করেছে জীবনানন্দের ছায়া। জলের উপর যেসব সাদাবক উড়ে যাচ্ছিলো, তাদের ঠোঁটে লেগে ছিলো মাংসভক্ষণের হাসি। মাঝ আষাঢ়ের বিকেলবেলার সূর্যটি মেঘকে ভয় পাবার পূর্বেই সূর্যটি মেঘের বুকে চাঁদ হয়ে শুয়েছিলো। দূর থেকে কাঠবারান্দার বালিকা ভেবে আমি তাকে শিসও দিয়েছি। ইথারে সেসব গল্প ছড়িয়ে দিলে পর, আগামী পৌষে সেসব গল্প রুপকথা হিসেবে ছড়িয়ে পড়বে বাতাসের পাঠাগারে। সেসব কথা জানবে না চাঁদের মেয়ে, তার অবৈধ বাবা সূর্যদেব এমনকি ছায়াদানকারী চিলটির অতীত বর্তমান ও ভবিষ্যতের আকাশবিষয়ক ভাবনা।

শাদাঘড়ি

একটি ব্যক্তিগত বিকেল পাবো বলে পাঠ করি
বিশ্বপ্রেমিকদের জীবনচরিত। শাদাঘড়ির একনম্বর
কাঁটার জন্য আমার বড্ড দুঃখ হয়। আর নিজস্ব
বিষাদপুষ্প গুঁজে দিয়ে আসি ঘাসফড়িংয়ের চলার
পথে। একটি হলুদ বিকেল বস্তুত কতো দূরে থাকে?
একটি দ্বিচক্রযান থেকে, বেঞ্চের দ্বৈতায়ন থেকে!
সেই চৌদ্দবছর বয়স থেকে জানি চাঁদের বুড়ির কোনো
মুখস্থ ছড়ার দিনকাল নেই আর ব্যক্তিগত নদীর
পাশে হলদেসবুজ বনাঞ্চল আমাদের উপস্থিতি
মিস করে। কে তুমি সহজ গানের ভিতরে লুকিয়ে
রাখো তোমার নিজের অনুপস্থিতি? জানি এখানেই
তৈরি হবে রোদের অক্ষরে লেখা বিকেলমাত করা
যৌথপদ্য।


অরণ্যের প্রাচীন প্রবাদ

ভালোলাগা একটা বেড়াল;
সম্মতির সিংহদ্বার পেরোলেই—
সে বাঘ হয়ে যায়।

শীত পরবর্তী সচলতা

ব্যক্তিগত জয় পরাজয় নিয়ে দৌড়াতে দৌড়াতে শীত চলে গেছে। তার ব্যস্ততা মুগ্ধতা জড়তা আড়ষ্ঠতা স্বপ্নগ্রস্ততা স্বপ্নহীনতা ও স্পর্শকাতরতা স্পর্শ করেনি আমাকে। আমাকে স্পর্শ করতে পারতো ফাল্‌গুনের হঠাৎ যৌবনপ্রাপ্ত বাতাস।

তারা আমাকে ছুঁতে চেয়েছিলো। আমিই মুখ ফিরিয়ে রেখেছি। লালপিঁপড়ের মৃত্যু আমাকে স্বপ্নহীন করেছে। নতুন পাতা গজাবার ইচ্ছে সম্বলিত পাতার নির্বাণপ্রাপ্তি আমাকে আশাবাদী করেছে। আমিতো কবেই ছুঁয়ে দিয়েছি তৃণলতার মন। শীত সকালের মুগ্ধতা পরবর্তী কুয়াশার হলুদ চাদর।

ঘাসচড়ুইয়ের ডানার অন্তর্গত পালকের মতো,
হৃদয়মাদুলীতে গুঁজে রাখি তার নাম
অনাগত শীত সকালে চন্দ্রমল্লিকার ঘ্রাণ পাবো বলে।

ঘুমমুদ্রাগুলি

কবুতরের কার্নিশে ফেলে রাখা আমার বায়বীয় ঘুমমুদ্রাগুলি ক্রমশই ঘাসচড়ুইয়ের দখলে চলে যাচ্ছে। দেয়ালঘড়ির বুকের ভেতর এক বসন্তকালীন লেবুবাগান। ঘুমপাখিরা জেঁকে বসেছে সেই ঘ্রাণবতী জলের শহর। প্রাচীন লৌহনগরী আর পাহাড়ের পাদদেশে একলা পড়ে আছে ভুমিকম্প পরিমাপক যন্ত্র— যার গায়ে নগ্ন দেবীদের প্রতিলিপি; অঘোষিত নাচমুদ্রা। পেতলের দেবীদের ঋতুমতী হবার প্রসঙ্গে আমার কিছু জানার নেই। এসব রাতে তবু শাদা অক্ষরে লেখা কামুক রাত্রির ভাষা; ইরেজার দিয়ে মুছে ফেলবার পর— ব্যক্তিগত ঘুমকে কালোকাগজের টুকরোর মতো ছিঁড়ে ফেলা ভালো।

শীতকালীন পাখিঘুম রোধকল্পে

জলের ভিতরে শুয়ে থাকে জলপদ্ম। বুকের ভিতর
প্রাতকালীন ধুসরসবুজ ওমসংশয় নিয়ে সে আংশিক
শীতার্ত। এসব আর্তি আমার কানে এসে লাগে;
কোনো একটা জলপিপিকে একথা জানানো প্রয়োজন।
বাঘ্রশাবকের জমানো উষ্ণতর হাওয়ার শিহরণ
যে পৌঁছে দেবে, বিভ্রান্ত ওমের ভিতর। গমক্ষেত
থেকে দৃশ্য খুঁটে খেতে খেতে হাওয়া হলো পাখি।
হাওয়ারোগের চিকিৎসা নিতে বিকেল এসে দাঁড়িয়ে
থাকে হাসপাতালে। শীতকালে ডানকানে শুনি না,
যে-কারণে বুকের ভিতর বসাই লালদুর্গ পোস্টঅফিস।
আর হলুদ বিকেলের প্রযোজনায় ক্রমাগত শীতাচ্ছান্নতায়
স্বল্পদৈঘ্যের পাখিদের মুক্তদৈঘ্যের আকাশ থাকা সমীচীন।

অলৌকিক আম্রকানন

তোমার বারান্দাকে একইসাথে বিকেলের ভাঁজপত্র
আর একটি ছিপনৌকা বলে ভ্রম হয়। ইচ্ছে করেই
রোদবতী নদীটির কেউ কোনো নাম রাখেনি। ওখানে
সাড়ে তিনশো শঙ্খশালিক এসে সমাবেশ করে; যাদের
প্রত্যেকেরই আমার নামে নাম। এখানে তুমি এক
ঘ্রাণবতী নারী— ডাবের জলে স্নান করে এইমাত্র এসে
বসেছ বেতের মোড়ায়। আর যেসব পুরুষশালিক
দেখে ফেলেছে তোমার স্নান— গোপনে; তারা এতক্ষণে
উন্মাদ হয়ে গেছে— অনিচ্ছুক তারার আঙ্গুল ছুঁয়ে।

রিফিউজি ঘোড়া

তোর কাশবনকে বলবি শীতকালকে একটা চিঠি লিখতে, যে চিঠির ভাষা হবে কাঠকয়লার মতো। মাছরাঙার মাংস দিয়ে মদ হয় না; এই গল্প ভুলে গেছে দুপুররাতের চন্দ্রবোড়া। এখনও ফোঁসফোঁস আওয়াজকে আমার যথারীতি বাতাসপ্রসূত হাওয়াই মিঠাই মনে হয়। বিশ্বাস রাখবি, শুঁয়োপোকার পিঠে চড়েই একদিন সুয়োরানী পার হবেন— সকলপ্রকার অজানা অধ্যায়; ঘুম সংক্রান্ত মিথ আর রাত্রিকাণ্ডের দেয়াল।

আমিই সেই লালঘোড়া; তোদের আখড়া থেকে আফিম চুরি করেছিলাম।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ২:৩০
৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×