দশ তালা মূল লাইব্রেরি থেকে বায়োমেড লাইব্রেরি ঢুকলেই মনে হয় কোন মৃত শহর। একদম নির্জন। নিষ্প্রান। উহ, ভুল হলো। আরেকটু হাঁটুন, শুনতে না পারলেও দেখবেন বেড়ালের মত নি:শব্দে কোন পাঠক বইয়ের নম্বর মিলিয়ে যাচ্ছে একমনে। মাঝে মাঝে কোন টেবিলে ইয়া মোটা বই হাতে তারচেয়েও মোটা কাঁচের কোন পড়ুয়া ছাত্র ছাত্রী ঝড়ো বেগে নোট করছে। ভড়কে যেতে হয়। আরেকটু হাঁটলে হয়তো পাশে হুটোপুটির শব্দ পাবেন। ভুলেও তাকাবেন না। তাকালে নিতান্ত: ব্যস্ত প্রেমিক প্রেমিকার সামনে অপ্রস্তুত নিজেকে পেয়ে মাটিকে দ্্বিধা হওয়ার কামনা করতে মন চাইবে। সরে পড়ুন, দ্রুত! হাঁটতে থাকুন ছাদ সমান উঁচু বইয়ের তাকের মাঝ দিয়ে... একান্ত মনে প্রার্থনারত কোন হিযাবীর দেখাও পেয়ে যাবেন হয়তো।
বায়োমেড লাইব্রেরিতে সব চলে। শর্ত শুধু একটাই: একদম চুপ!
................................................................
ফিজিলজি ল্যাবের হাত ধোয়ার যন্ত্রটা খুব চমকদার। যন্ত্রের নিচে হাত নিলেই গরম পানি আসা শুরু করে। তারপরে পানি বন্ধ হয়ে সাবান। তারপরে হাত কচলানোর সময়ের বিরতি দেয়ার পরে আবারও পানি। আজ দুইবার খুব আয়েশ করে হাত ধুলাম। এক্সপেরিমেন্টের আগে ও পরে।
নিজের ব্লাড গ্রুপ টেস্ট করলাম আজ। আপাত: জটিল প্রকিয়াগুলো পিছনে খুব সহজ কিছু প্রিনসিপাল থাকে, আবিষ্কার করতে খুব আনন্দ হয়। ব্লাড গ্রুপ বি পজেটিভ। দক্ষিন এশিয়ার বেশির ভাগ মানুষের রক্তই বি পজেটিভ। খুব সাধারন হওয়ায় কোন আনন্দ নেই। তবে ছোট্ট সুঁইয়ের খোঁচায় আঙ্গুল থেকে একটু একটু করে রক্ত বের করে দিয়ে অকপট বিষ্ময় তাকিয়ে থাকায় আনন্দ আছে অনেক।
'ওকে, পী টাইম। য়ু গাইজ ক্যান পী নাউ।', যখন বলা হলো, তখন আমার গ্রুপের মেয়েরা সব খুব মনযোগে আকাশ দেখছে। আমিও তাড়াতাড়ি আকাশ দেখায় নেমে গেলাম--চোখে চোখ পড়তে দেয়া যাবে না! হেমন্তের আকাশটা কি অদ্ভূত নীল!
অবশেষে, গ্রুপের সাহসী মেয়ে এলিস পিছনের টেবিলের ছেলেটার কাছে অতি আকাঙ্খিত বর চেয়েই বসলো, 'ক্যান আই হ্যাভ য়ুর পী, প্লীজ'?
ফিজিলওজি ল্যাব থেকে বের হওয়ার সময় নিজেকে খুব গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়। বিলডিঙে ঢুকার সময়, এবং তারপরে প্রতিটা ল্যাবে ঢুকার সময় স্টুডেন্ট কার্ড স্ক্যান করে ঢুকতে হয়। দারুণ লাগে। হলিউড হলিউড।
(সকালে তিন ঘন্টা ল্যাব। এক ঘন্টা ছুটি। তারপরে আবারও ল্যাব তিন ঘন্টা। কোন অর্থ আছে! )
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে মার্চ, ২০০৭ রাত ১১:২৭