somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একজন মারওয়া আর একজন সাইকোপ‌্যাথ

১১ ই জুলাই, ২০০৯ সকাল ১০:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অনেক দিন লিখি না। ইস্যুরা আসে, ইস্যুরা যায়। মাঝে মাঝে ওয়াননোট খুলে লিখতে শুরু করি। কয়েক লাইনের বেশি লেখা আগায় না। মনে হয়, যা বলব, সবই বলা হয়ে গিয়েছে। কিন্তু ৩২ বছর বয়সে পৃথিবী থেকে বিদায় নেয়া মারওয়া আল শেরবিনির কথা পড়ে মনে হলো, এবার কাটিয়ে উঠা দরকার শীতনিদ্রা, কীবোর্ড তুলে কিছু বলতেই হয়…

মারওয়ার মৃত্যুর ঘটনা এক কথায় বিভৎস। খোদ কোর্টরুমে পুলিশ, আইনের ধারক বাহক আর চার বছরের ছোট্ট শিশুর সামনে বত্রিশ বছর বয়সী অন্ত:সত্তা মারওয়াকে আঠারো বার কুপিয়ে হত্যার দৃশ্যটা মুভ্যিতে দেখাতে হলে সেটাতে এমএ১৫+ রেটিং দিয়েও পার পাওয়া যেত কিনা সন্দেহ। অথচ, মারওয়ার জীবনটা খুব সাধারন ছিল, এত বেশি আটপৌরে যে মারওয়ার বদলে সাবিহা আর মিশরের বদলে বাংলাদেশ বসিয়ে দিলে জীবনটা অনায়েসে আমাদের দেশী কারও হতে পারত। মারওয়ার স্বামী মিশরের একটা ইউনিভার্সটিতে জেনেটিকসের লেকচারার ছিলেন। উচ্চশিক্ষার জন্য ২০০৫ সালে জার্মানী গমন, সাথে নিয়েছেন স্ত্রী মারওয়া আর এক বছরের শিশু পুত্রকে। জার্মানী বলে কথা, হিটলারের দেশ ছিল সেই কবে, এখন তো হিটলার আর নাজীদের শাস্তি দিয়ে দেশটা থেকে এন্টি-সেমিটিজম, রেসিজম সব ভূত তাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এখন জার্মানী আমেরিকা, ইংল্যান্ড আর ফ্রান্সের সাথে তাল মিলিয়ে মানব-অধিকারের কথা বলে, জাত-বর্ণ-ধর্ম-স্ট্রেইট কি গে-কাপড়ওয়ালা কি ন্যাচারিস্ট--সব কিছুর উর্ধ্বে উঠে গিয়ে শুধু সমঅধিকারের কথা বলে। এমন যেই দেশের ফিলোসফি, সেই দেশ যে কোন মুক্তিকামী, স্বাধীন মানুষের স্বপ্নের দেশ। তৃতীয় বিশ্ব থেকে আসা মারওয়া আর সাবিহাদের জন্য তো অবশ্যই।

এমনই স্বপ্নের দেশের স্বপ্নের বাড়ির কাছের পার্কটায় মারওয়া তিন বছরের ছেলেকে নিয়ে প্রায়ে বিকেলেই ঘুরতে যেতেন, দোলনায় শিশুপুত্রকে তুলে দিয়ে ধাক্কা দিতে দিতে নিজের শৈশবের দিনগুলোতে চলে যেতেন। সেরকমই একদিন হঠাৎ আগমন আরেকটা ছোট মেয়ের, সাথে তার আংকেল। ছোট্ট মেয়েটাও দোলনা চড়বে। সেই নিয়ে কথা কাটাকাটি। সেই কথা কাটাকাটিতে হঠাৎ আংকেল ক্ষেপে উঠলেন। চিৎকার দিয়ে উঠলেন, 'ইসলামিস্ট' আর 'টেররিস্ট' বলে।


ওহ, বলতে ভুলে গিয়েছি, মারওয়া স্কার্ফ পরে।

ভালো কথা, এই পর্যন্তও ঘটনাটা খুব অপরিচিত না। বাংলাদেশী অনেকেই স্কার্ফ পড়েন দেশের বাইরে গিয়ে এবং অনেককেই এমন সব গালি শুনতে হয় যে সব কিছুর অর্থও বুঝা যায় না। তবে একটা গালি কমন, 'টেররিস্ট'। টেররিস্ট উপাধি পেতে আপনাকে বোমা বানাতে হবে না, আপনি স্কার্ফ পড়ে রাস্তা দিয়ে হাঁটবেন, আপনি টেররিস্ট। বাস স্টপে দাঁড়াবেন আর দশ জনের মতই, আপনি টেররিস্ট। রাস্তার পাশে বসে খাবেন, আপনি টেররিস্ট। মারওয়ার মত নিজের তিন বছরের শিশুপুত্রকে নিয়ে পার্কের দোলনায় উঠবেন, ঠিক তখন যদি আরেকজনের ভাগ্নীর দোলনায় চড়তে ইচ্ছা করে, তাহলে আপনি অতি অবশ্যই অবশ্যই টেররিস্ট।

এ সমস্ত ক্ষেত্রে বেশির ভাগ মানুষ চোখ উল্টে চলে আসে। কারণ, একটা কথা পরিষ্কার যে এখানে যুক্তি খাটবে না। কি যুক্তি দিবেন, বলেন! আপনি তাকে চ্যালেঞ্জ করবেন কেন টেররিস্ট বললো, ঠান্ডা মাথায় জিজ্ঞাসা করবেন আপনি কবে কোথায় টেররিজম করেছেন, টেররিজমের সংজ্ঞা কি ইত্যাদি বলে? অতক্ষন শুধু গালি শুনেছেন, এবার একটা ঘুষিও খেতে পারেন। সুতরাং চোখ উল্টে চলে আসা ছাড়া বেশির ভাগ মানুষই তেমন কিছু করে না।

কিন্তু মারওয়া করতে গিয়েছিল। চুপ করে থাকাটা হয়তো নিরাপদ হতো, কিন্তু মারওয়া করতে চেয়েছিল কিছু। কারণ হয়তো, যেই দেশটা স্বপ্ন দেখিয়ে নিয়ে এসেছে, সেই দেশের আইনের লিখিত অক্ষরে তো অন্তত: এমন কিছু করা ভীষণ রকমের বেআইনী। আইনের কাছে যদি তিনি আজকে না যান, তাহলে তাঁর তিন বছরের শিশু পুত্র জানবে, তার মা টেররিস্ট। কারণ, একদিন একটা লোকের থেকে সেই গালি শুনে সুর সুর করে চলে এসেছিল মা। যেই ছোট্ট মেয়েটার জন্য দোলনা খালি করে দেয়া হলো, সে শিখবে, ওই যে ওরকম হিজাব পড়া সব মেয়েরাই টেররিস্ট।তাদের থেকে কাজ আদায় করার একটাই উপায়, গগন কাঁপিয়ে তীব্র ঘৃনাসহ টেররিস্ট বলে গালি দেয়া। এত তীব্র সত্যের মুখে কেউ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না, মাথা নিচু করে চলে যেতে বাধ্য হবেই হবে।

দুইজন ভবিষ্যত জার্মান, এবং আরও অনেককে তীব্র ভুল থেকে বাঁচাতে মারওয়া প্রতিবাদ করতে গিয়েছিল, আইনের কাছে গিয়েছিল মারওয়া।

ঠিক এখান থেকেই ঘটনাটা অপরিচিত হয়ে যায়। কোর্টে দাঁড়িয়েও 'এই দেশে থাকার কোন অধিকার তোমার নাই, নিজের দেশে চলে যাও' বলে চিৎকার করেছিল লোকটা। তারপর তো আসলোই ছুরি নিয়ে, কুপিয়ে হত্যা করলো অন্ত:সত্তা মারওয়াকে, স্বামীকে করলো শারিরীক ভাবে আহত, আর তিন বছরের শিশুপুত্রকে? সারা জীবনের জন্য মানসিক ভাবে ক্ষত বিক্ষত।

কি করে যেন আমি মৃত্যুর কথাটা কালকের আগে শুনি নি। ঘটনাটা ঘটেছিল এই বছরই, জুলাই মাসে।

কালকে প্রথম শুনতে গিয়ে দেখি, মারওয়ার মৃত্যুর জন্য পুরা জার্মানী, তারপর পুরা পশ্চিমা দেশকেই দোষারোপ করা হচ্ছে। ইসলাম আর পশ্চিমের যুদ্ধ ইত্যাদি বলা হচ্ছে। অথচ, প্রথমে শুনেই আমার মনে হয়েছে, লোকটা একটা সাইকোপ্যাথ। মানসিক ভাবে অসুস্থ লোক। না হলে এতটা অযৌক্তিক ঘৃনা থাকতে পারে কারো বুকে? এতটা রেসিস্ট হতে পারে কেউ?

তারপর, আরেকটু ভাবতে বসলাম। তখন তিনটা উপলব্ধি হলো। প্রথমত, কোথাকার কোন আমি, কি তার পড়াশোনা, এই আমিই কি সহজেই লোকটাকে পুরা জার্মানী আর পশ্চিম থেকে আলাদা করে ফেললাম। একটা লোকের অপরাধের দায়ভার পুরা দেশটার উপর চাপাতে চাইলাম না। লোকটাকে আলাদা করে মানসিক রোগীও ভেবে ফেললাম, অথচ, দেড় বিলিয়নের মুসলিমদের ছোট্ট একটা অংশের অপরাধের দায়ভার সব মুসলিমদের আর মুসলিমদের নবীর উপর চাপানো হয় কি সহজেই! যে সব বুদ্ধিমানেরা এই কাজ করছে, তারা নিজেরাও কি ওই খুনী জার্মানের রক্তের দাগ নিজ হাতে নিতে চাইবে? কি হিপোক্রেসী!

দ্বিতীয়ত, আমি আঙ্গুল তুলতে বাধ্য হলাম জার্মান এবং অন্যান্য পশ্চিমা দেশগুলোর পলিটিশিয়ান এবং মিডিয়ার দিকে। নিউজে সারাক্ষন যদি মুসলিমদের টেররিস্ট হিসেবেই দেখে, তাহলে নিজের জীবনে যে কোন মুসলিমকে কখনও দেখে নি, সে কি করে জানবে যে এই মুসলিমেরা আসল মুসলিমদের খুব ক্ষুদ্র একটা অংশ? মুসলিমদের কখনই টিভিতে ভালো আলোতে দেখানো হয় না, সেরকমটা বললে অন্যায় হয়ে যাবে। দেখানো হয়, কিন্তু মুসলিমদের যখন টিভিতে আনা হয় মুসলিমদের পক্ষ নিয়ে কথা বলতে, তখন হিজাব ছাড়া মুসলিম মেয়ে আর ক্লীন শেভড মুসলিম পুরুষদের এনে তাদের 'মডারেট' সীল মেরে দেয়া হয়। তাতে যেই সাধারন মানুষেরা টিভি দেখছে, তারা শিখে নেয়, আচ্ছা, তার মানে মাথায় হিজাবী কিংবা দাড়িওয়ালা মুসলিমেরা নিশ্চয়ই 'মডারেট' না, তারা 'ইসলামিস্ট' এবং 'টেররিস্ট'। ফ্রেঞ্চ প্রেসিডেন্ট সারকোজি কি সহজেই বুরকা পড়া মেয়েদের নিজের দেশে অবাঞ্চিত ঘোষনা করেন! দেশের মানুষেরা কেন আরেক ধাপ এগিয়ে গিয়ে হিজাবী মেয়েদেরও অবাঞ্চিত ভাববে না? ফ্রেঞ্চ স্কুলগুলোতে, এমনকি জার্মানীর কিছু স্কুলেও হিজাব পড়া বেআইনী। দেশে যখন আইন করেই এমন মানুষদের অবাঞ্চিত ঘোষণা করা হয়েছে, তখন কেন সাধারন মানুষেরা আরেক ধাপ এগিয়ে গিয়ে তাদের চিৎকার করে শুনিয়ে দিবে না যে তারা 'টেররিস্ট' আর 'ইসলামিস্ট' আর 'এই দেশে তাদের জায়গা নেই'? আর টেররিস্ট, অবাঞ্চিত কেউ যখন ভাগ্নীর জন্য দোলনা ছেড়ে দেয় না, উল্টা গালি শুনে মামলা করে, তখন কেনই বা তাকে কুপিয়ে মেরে ফেলা হবে না? "জাত-বর্ণ-ধর্ম-স্ট্রেইট কি গে-কাপড়ওয়ালা কি ন্যাচারিস্ট" সব কিছুর উর্ধ্বে উঠে যেই দেশ মানুষের সমঅধিকারের কথা বলে, সেই দেশের পলিটিশিয়ান আর মিডিয়ার থেকে আরেকটু বেশি কিছু আশা করা কি খুব বেশি কিছু?

তৃতীয়ত, আমি পশ্চিমা দেশগুলোর কি দোষ দিব, আমাদের দেশের নরমাল টিভি চ্যানেলগুলোতে কখনও হিজাবকে ভালো আলোতে দেখানো হয়? আমাদের নেত্রীরা ভন্ডামী করতে হিজাব মাথায় তুলে নেন। ঢাকার বড় বড় স্কুলগুলোতে, এমনকি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও হিজাব পরার জন্য শিক্ষিক শিক্ষিকাদের থেকে বাজে কথা শুনতে হয়… উপন্যাসগুলো পড়ে একশ' বছর পরের মানুষেরা নিশ্চয়ই ভাববে এই সময়ের হিজাব পরা আর দাড়িওয়ালা কেউ সুস্থ স্বাভাবিক ছিলো না… এসব থেকে শিখতে থাকা কোন এক সাইকোপ্যাথ কখনও ছুরি হাতে কিছু করে বসবে না, তার গ্যারান্টি কি?
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জুলাই, ২০০৯ সন্ধ্যা ৭:০৬
২২টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

প্রজাতির শেষ জীবিত প্রাণ !

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫১



বিবিসির একটা খবর চোখে এল সেদিন । উত্তরাঞ্চলীয় সাদা গন্ডার প্রজাতির শেষ পুরুষ গন্ডারটি মারা গেছে । তার নাম ছিল সুদান । মৃত্যুর সময় তার বয়স ৪৫। বিবিসির সংবাদটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর মধ্যে সে একজন ।।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯



আপনারা কতজন Umma Kulsum Popi চেনেন, আমি ঠিক জানি না। আমার পর্যবেক্ষণ মতে, বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের একজন হলেন উনি। যদি বলি দেশের সেরা পাঁচজন কনটেন্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিস অস্বীকার করে রাসূলের (সা.) আনুগত্য সম্ভব

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৩ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সূরাঃ ৪ নিসা, ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস কর তবে তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর, আর আনুগত্য কর রাসুলের, আর যারা তোমাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

=কবিতাগুলো যেনো এক একটি মধুমঞ্জুরী ফুল=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:২০



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনের মাধুরী মিশিয়ে যে কবিতা লিখি
কবিতাগুলো যেনো আমার এক একটি মঞ্জুরী লতা ফুল,
মনের ডালে ডালে রঙবাহারী রূপ নিয়ে
ঝুলে থাকে কবিতা দিবানিশি
যে কবিতার সাথে নিত্য বাস,
তাদের আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

পোষ্ট যদি ক্রমাগতভাবে ০, কিংবা ২/১'টি মন্তব্য পেতে থাকে, বুঝবেন যে, সোনাগাজী সেমি-ব্যানে আছে!

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৭



আপনার পোষ্ট যদি ক্রমাগতভাবে ০ কিংবা ১'টি মন্তব্য পেতে থাকে, তখন খোঁজ নিলে দেখবেন যে, সোনাগাজী সেমি-ব্যানে আছে!

কোন বিষয়ের উপর অনেক মানসম্পন্ন পোষ্ট লিখলেও সামুতে আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×