somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঈদ প্যাচালী

১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১০ ভোর ৬:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঈদ নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলাম। ৯/১১ তে পড়ে গেলে ঈদ না ক্যানসেল করতে হয়! আবার সেদিন নাকি কুরান পুড়ানো দিবসও! তাই নিয়ে কি হয় সে নিয়েও টেনশন।

টেনশনে জর্জরিত অবস্থায় ম্যানিয়েক মুসলিমের আর্টিকেলটা পড়লাম। কুরান পুড়াতে গিয়ে ইভেনজেলিক চার্চটার মানুষজন মহা বিপদে পড়ে গিয়েছে, কারণ ওরা অবাক হয়ে দেখল মুসলিমরা কুরআন পুড়ালে চেতেই না, বরং আরও খুশি হয়! ব্যাপার কি?? কারণ যাচাই করে দেখা গেল মুসলিমরা কুরআনের কপি শ্রদ্ধাপূর্ণ ভাবে ডিসপোজ করতে হলে কুরআন পুড়িয়ে ফেলে!!! অন্যদিকে ইসলামিক বুকস্টোরের মালিকও মহা খুশী, কুরআন পুড়ানো দিবস উপলক্ষে কুরআনের বিক্রি ৩০০% বেড়ে গিয়েছে। রিপ্রিন্টও বেড়েছে একেবারে রেকর্ড পরিমান! হতাশ হয়ে প্যাসচর সাহেব আবিষ্কার করলেন সবার ঘরে ঘরে কম্পিউটারেও কুরআন আছে। ইন্টারনেট ভর্তিও কুরআনের অসংখ্য কপি। কুরান পুড়ানো দিবসের পূর্ণতা দিতে কম্পিউটারের কুরআন পুড়াতে গিয়ে কম্পিউটারের টক্সিক গ্যাসে প্যাসচর সাহেবের সাঙ্গপাঙ্গরা সিরিয়াস অসুস্থ। ততদিনে আবার প্যাসচর সাহেব আবিষ্কার করলে পৃথিবীতে মিলিয়ন মিলিয়ন মানুষ কুরআন মুখস্তও করে রেখেছে। ততক্ষনে প্যাসচর সাহেব ক্লান্ত হয়ে ক্ষান্ত দিলেন। সফল ভাবে কুরান পুড়াতে গিয়ে মানুষ তো আর পুড়ানো যায় না!

ম্যানিয়েক মুসলিমের আর্টিকেল আর ক্লেভেনোআমেরিকার ইউটিউব ভিডিও দেখতে গিয়ে হাসির ঠেলায় টেনশন অনেকটা হালকা হয়ে গেল। ঈদের মন পুরাপুরি ভালো হয়ে গেল যখন শুনলাম চারিদিকের চাপে প্যাসচর সাহেব কুরান পুড়ানো দিবস আপাতত স্থগিত করলেন! আলহামদুলিল্লাহ বললাম অনেক বার আর ওবামা আর আমেরিকাকে ধন্যবাদ দিলাম মনে মনে!

---

ঈদের আগের গিফট দেওয়া নেওয়ার ব্যাপারটা আমার ভীষণ ভালো লাগে! এম্নি আমরা নিয়মিত দেখা হওয়া বন্ধুরা ঈদ উপলক্ষে গিফট দেয়া নেয়ার একটা পদ্ধতি আবিষ্কার করেছি। ছোট ছোট কাগজে নাম লিখে, ছোট ভাজ করে রেখে দেয়া হয়। তারপর সবাই একটা করে কাগজ নেয়। যার ভাগে যেই নাম জুটে, সে তার জন্য গিফট কিনে।

বাসায় বাবা মাকে গিফট এবার মন ভরে গিফট দিলাম। দুইজনের দুইটা প্রয়োজনীয় জিনিস সব ভাইবোনেরা মিলে। বাবা মাকে কাজে লাগার মত কিছু দিতে পারার অনুভূতিটা একেবারেই অন্যরকম!

চাকরি পাওয়ার পর প্রথম ঈদ। শ্বশুড় শ্বাশুড়ীকে খুবই সামান্য টাকা পাঠালাম, কাছে তো নেই, অল্প কিছু যদি কিনে নিতেন! এত সামান্য যে পরিমানটা কাওকে বলতেই আমার লজ্জা লাগবে! কিন্তু আমার শ্বাশুড়ীর হাতে যখন গিয়েছে… আম্মু সেই অতি সামান্য টাকা দিয়েই সবাইকে ঈদ গিফট দিলেন, সেটা চুড়ি হোক আর স্যান্ডেল হোক। দেয়ার সময় খুব করে বলেও দিলেন, 'এটা কিন্তু সন্ধ্যাবাতির দেয়া গিফট'! এত অল্প টাকাই এত হাতে গিয়েছে আম্মুর কল্যানে যে ভীষণ লজ্জায় পড়ে গেলাম! মনে মনে ঈদের সেরা উপহারগুলোর লিস্টে আম্মুর আচরণটুকু টুকে নিলাম!

জোয়ান, নওমুসলিম মেয়েটা, যে অনেকখানি পথ মাড়িয়ে এসেছে আমাদের সাথে ঈদ করতে, ওর গিফটটাও সেরকম অসাধারন ছিল। মুসলিম হওয়ার পর এটাই ওর প্রথম ঈদ। ঈদের আগের দিন সারা দিন ভরে ছোট ছোট চকলেট বানিয়েছে, একটা বড় কেইক বানিয়েছে আর অনেকগুলো সসেজ রোল। এরপর সব এনে বাসায় দিয়ে গেল! ও নাকি মুসলিম হওয়ার পর কারো বাসায় গিয়ে খালি হাতে ফিরে নি, সবাই পোটলায় করে খাবার বেঁধে দেয়। জোয়ানও তো এখন মুসলিম। মুসলিম হলো আর এরকম করবে না তা কি হয়? যুক্তি শুনে হেসে ফেললাম।

---

ঈদের আগের দিন সন্ধ্যায় সে কি বৃষ্টি! ঈদের দিন সকালে আকাশ জোড়া কুয়াশা। সকাল আটটাতেও কুয়াশা কাটে না। মন খারাপ হয়ে গিয়েছিল মাঠে ঈদের নামাজ হবে না ভেবে। কিন্তু আস্তে আস্তে ঠিক কুয়াশা কেটে গেল। বৃষ্টিও পড়লো না আর। খোলা আকাশের নিচে ঠিক ঠিক নামাজ পড়লাম। তারপর পিচকিদের সে কি উচ্ছ্বাস! ওদের জন্য জাম্পিং ক্যাসেল, ফেইস পেইন্টিং আর ললি ব্যাগ। ওদের উচ্ছ্বাস দেখতে দেখতেই অর্ধকে ঈদ হয়ে গেল আমার। প্রচুর খাওয়া দাওয়া করলাম। বাসায় দুই দিনে ১০০+ মানুষের সাথে ঈদ করলাম, আর এদিক সেদিক কত বাসায় যে গেলাম! কাউকে ঘুম থেকে তুললাম, কাউকে বাসা থেকে বের হওয়ার পথে ধরে ফেললাম, কাউকে বাসায় রেখেই বের হয়ে গেলাম! আজকেও অন্তত: জনা বিশেকের আসার কথা। ঈদের এখনও তাই অনেক বাকি! এক ফাঁক পেয়ে এসে বলে গেলাম… ঈদ মোবারক!

ছবি: ঈদের মাঠে হিলিয়াম বেলুন
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১০ ভোর ৬:৩৫
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিনেতা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৫



বলতে, আমি নাকি পাক্কা অভিনেতা ,
অভিনয়ে সেরা,খুব ভালো করবো অভিনয় করলে।
আমিও বলতাম, যেদিন হবো সেদিন তুমি দেখবে তো ?
এক গাল হেসে দিয়ে বলতে, সে সময় হলে দেখা যাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×