somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কুড়িয়ে নেয়ার সময়

৩১ শে জুলাই, ২০১১ ভোর ৪:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছোটবেলা থেকে শুনে আসছি রমজান হচ্ছে নিজেকে গড়ার সময়। সেদিন জুমার খোতবা শুনতে গিয়ে চমকে উঠলাম। ইমাম বলছেন, রমজান নিজেকে গড়ার নয়, বরং অনেক কিছু কুড়িয়ে নেয়ার সময়।

একটা কাজের জন্য যখন বহুগুণ প্রতিদান পাওয়া যায়, আবশ্যিক কাজের জন্য সত্তর গুণ প্রতিদান, ঐচ্ছিক কাজের জন্য আবশ্যিক কাজের প্রতিদান, তখন "কুড়িয়ে" নেয়ার সময়ই বটে!

রোজার প্রস্তুতি হিসেবেই শোনা শুরু করেছিলাম নোমান আলির কথাগুলো শুনতে শুনতে নিজের ভিতর "কুড়িয়ে" নেয়ার তীব্র ইচ্ছা হলো, মনে হলো কত কি মিস হয়ে যাচ্ছে... বলছিলেন নোমান আলি সূরা বাকারায় (১) আল্লাহ স্বামী স্ত্রীকে একে অপরের পরিচ্ছেদ বলেছেন। বাক্যাংশটা বহু শুনেছি, যখনই ইসলামে বিয়ের মূল্য নিয়ে পড়ি বা শুনি, এই বাক্যাংশটা থাকেই। কিন্তু কখনও কোথাও পড়ি নি যে এই বাক্যাংশটা আসলে রোজার আয়াতের একটা অংশ! বলছিলেন নোমান আলি, রোজার আয়াতেরই অংশ, কারণ রমজানে "কুড়িয়ে" নেয়াতে সাহায্য করবে স্বামী স্ত্রী, একে অপরকে, পরিচ্ছেদ হয়ে "বাঁচিয়ে" দিবে।

শুধু স্বামী স্ত্রীই না আসলে, ইদানিং খুব মনে হয়, খুব কাছের বন্ধুদের তো তাই করা উচিত... বাঙালী মায়েরা ছেলেমেয়েদের মুখে একটা দানা বেশি পুরতে পারলে কি খুশি হয়, সন্তানদের ছোটখাট শখ পূরণ না করতে পারলে কি অপরাধবোধে ভোগেন। কিন্তু এরচেয়েও বেশি যেটা দরকার, খুব বেশিই দরকার, সেই প্রয়োজনটুকু মিটাতে মায়েদের, বা প্রিয় মানুষদের সেরকম আকুলতা নেই।

অথচ ওই যে, তারাবীর নামাজ পড়া শুরু করলে প্রথম প্রথম জোশ থাকে খুব, তারপরে আট রাকাত পার হতেই সব গোলমেলে মনে হতে থাকে, সালাম ফিরাতেই জিজ্ঞাসা করতে হয়, কত রাকাত হলো? কিংবা ক্লাসে অথবা চাকরিতে গিয়ে ঘুমে ঢুলে পড়তে হয়, সারাক্ষন বড় ক্লান্ত লাগে, সবার করুনা পাওয়া নিজের অধিকার মনে হয়, অথচ, রোজা ফরজ করেই আল্লাহ বলছেন এভাবে আমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারতেও পারি (২), আর আল্লাহ আমাদের জন্য কোন কষ্ট চান না (৩)! এটা কষ্ট না? এটাই বুঝি তাকওয়া!

বুঝালেন নোমান আলি, আমাদের শরীরি অস্তিত্বকে শুধু উপবাস করালেই হয় না, শরীরের ভিতরেও যে অস্তিত্ব, যা আমাদের পশু থেকে আলাদা করে, উন্নত করে, লিম্বিক সিস্টেমের উর্ধ্বে উঠার সুযোগ দেয়, সেই অস্তিত্বেরও প্রয়োজন আছে, তাকে খাওয়াতে হয়। আর তার খাবার হচ্ছে কুরআন।

সে জন্য কুরআনের মাসে কুরআন পড়তে হবে, বুঝতে হবে। সময় নিতে হবে, ভাবতে হবে... কিন্তু রোজার দিনগুলোতে নয়টা পাঁচটা কাজ করে এসে, ইফতার করে, তারাবী পড়ে, খুব কম ঘুমিয়ে, আসলে এই জিনিসটাই হয় না, "ভাবা"।

কুরআন পড়তে গেলে মনে হয়, কিন্তু এই ধরণেরই কি যেন পড়লাম না গত সপ্তাহে? গতানুগতিকতা চলে আসা মানেই তো বিরক্তি।

নোমান আলির কথায় যখন কুরআনের তিরিশ পারার ব্যাখ্যা শোনা শুরু করলাম পিএইচডির কাজ করতে করতে, ভেবেছিলাম, সেই তো একই কথা হবে, ব্যাকগ্রাউন্ডে শুনতে থাকি, নিজের কাজও করতে পারব। কিসের কি, কিছুক্ষন পরে পূর্ণ মনযোগ দিতে বাধ্য হলাম! নোমান আলি যখন ব্যাখ্যা করেন শব্দমূল সহ, তাঁর আরবি সাহিত্যের সুগভীর জ্ঞান দিয়ে বুঝিয়ে দেন, কাছাকাছি আরও অনেক শব্দ থাকা সত্ত্বেও আল্লাহ ঠিক কেন এই শব্দটাই ব্যবহার করেছেন, কিভাবে আর দশ সূরা আগের তিন নাম্বার আয়াতের থেকে এই আয়াতটা পুরাপুরি আলাদা, তখন হঠাৎ বুঝতে পারি নতুন করে, কুরআনের পাতায় পাতায় কত গল্প। এ পর্যন্ত নোমান আলি তিরিশ পারার পুরাটুকুই আর সূরা বাকারার অর্ধেকের কিছু বেশি ব্যাখ্যা করেছেন, আসলেই উপভোগ্য, রম্য-অর্থে না, নিজের জানাকে ভীষণ ভাবে চ্যালেঞ্জ করে সেই অর্থে।

ইয়াহিয়া ইবরাহীম আমার ভীষণ প্রিয় আরেকজন ব্যক্তিত্ব। মিশরীয় পরিবারের, কানাডায় বড় হওয়া, অস্ট্রেলিয়ায় বিয়ে করে আপাতত সেখানেই থাকছেন। ভাষাগত বিশেষ মেধা থাকবে বলেই হয়তো, একটা আয়াত বলেই এত সুন্দর সব শব্দ দিয়ে মুখে মুখে সেটার অনুবাদ করেন, যে ভীষণ মুদ্ধ না হয়ে পারি না। এক একজন মানুষের আন্তরিকতা ভীষণ ছুঁয়ে যায়। কথাগুলো যে শুধু থিওরী না, নিজের জীবনে পুরাপুরি বাস্তবতা, সেটা বুঝা যায়। কানাডায় আসার আগে যখন উদ্ভ্রান্ত হয়ে থাকার জায়গা খুঁজছি তখন ইয়াহিয়া ইবরাহিমের মত ভীষণ ব্যস্ত মানুষটাও, অজানা অচেনা আমার সামান্য ইমেইলে সাড়া দিয়ে সাহায্য করার অনেক চেষ্টা করলেন।

কিছুদিন আগে যখন ইয়াহিয়া ইবরাহীমের রোজা নিয়ে বক্তব্যটা পেলাম, খুব ভালো লাগল।

আর সবশেষ গত বছরের মত এবারেও মিফরাহর কল্যাণ ছড়িয়ে দেই, মিফরার দেয়া একটা লিংক, যারা উপকার নিতে চান, তারা অনেক উপকার নিতে পারবেন এখান থেকে।

শেষ করছি ২০১০ সালে রমজানের আগে লেখা "বছরের সেরা সময়গুলো আসছে আবারও... " এর লিংক দিয়ে। কে জানে, কে কোথা থেকে কি কুড়িয়ে নিতে পারে নিজের ঝোলায়?


-------
১. সূরা বাকারা: ১৮৭
২. সূরা বাকারা: ১৮৩
৩. সূরা বাকারা: ১৮৫
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×