somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

~মাঝ পথে~

০১ লা ডিসেম্বর, ২০০৮ বিকাল ৪:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

~পথের শুরু.. ' র পর থেকে


পাশের সিটে মা এর মাঝে ঘুমিয়ে পড়েছেন। ঘুমাবেই যখন তাহলে আমাকে কেন জানালার পাশে বসতে দিলো না! জানালার পাশে না বসলে জার্নি করে মজা আছে নাকি!! X(
থাক! মা - ই তো!

ইশ! ছোট্টোবেলায় এই আম্মুকেই কত্তো ভয় পেতাম!


প্রতিদিন সকালে বাবা অফিসে আর মেজচাচা ভার্সিটি চলে যাওয়ার পর আম্মু আমার আগের দিনের ‘আমলনামা’ নিয়ে বসতো। সামনে সকালের নাস্তা আর ডিম! :-&
আর হাতে তার বিখ্যাত ‘ডালঘুটনি’!:||
এর প্রয়োগ অবশ্য করতে হত না। এর অতি সুদর্শন আকৃতি-ই ছিল আমার ভয়ের কারন। বলতে গেলে ‘কাউন্ট ড্রাকুলা’ র জন্য ‘ক্রুস’ আর আমার জন্য ‘ডালঘুটনি’ সমার্থক ছিল ।আম্মুর মতে , " 'ডালঘুটনি' হাতে নিয়ে তোকে কাঁচা ডিম দিলে পারলে তুই সেটাও কোঁৎ করে গিলে ফেলতি"।
অবশেষে একদিন সেই ‘ডালঘুটনি’ থেকে পরিত্রানের উপায় খুঁজে বের করলাম....................

তখন আমরা কলেজরোডের কবরস্থানের কাছে একটা বাসায় থাকি। তিনতলা বাসাটার দুইতলায় থাকি আমরা আর তিনতলায় বাড়িওয়ালা ।বাসার পিছন দিকে ছিল ছোটো পুকুর.........না...আসলে ডোবা বললেই ঠিক হবে।
জগতের কতিপয় ‘লক্ষী’;) বাচ্চাদের মত আমারও তখন জানালা দিয়ে যাবতীয় দরকারী জিনিস ফেলে দেয়ার অভ্যাস হয়েছিল। প্রথম দিকে শুধু নিজের শখের ‘টেডি বিয়ার’ টা সামনের বারান্দা দিয়ে ফেলে দিতাম। কাজটা অবশ্য করতাম আম্মুর অগোচরে :P। কিন্তু বাঁধ সাজলো বাড়িওয়ালা আঙ্কেলX( ! প্রতিদিন অফিস থেকে ফেরার সময় উনি বাসার সামনে থেকে ‘টেডি’ টা কুড়িয়ে এনে দেন আর একটু রাগ দেখিয়ে বলেন
- “ বুড়ির কান্ড দেখ! আবার এইটারে ফেলে দিলো! আমি কী তোর পুতুল কুড়ানোর জন্য আছি নাকি? আর কোনো কাজ নাই আমার !!”
বলে আমার টেডি আমার কোলে ফিরিয়ে দিয়ে যান। ব্যাপারটা আর আম্মুর অজানা রইল না।
কাজেই এই দিকে আর সুবিধা করতে না পেরে আমি বাড়ির পিছন দিকের আশ্রয় নিলাম... সেই ডোবা-র। আম্মু একটু অন্যদিকে গেলেই রান্নাঘরের জানালা দিয়ে পিছনের সেই ডোবায় আমার ছোট ছোট খেলনা আর বাসার টুকটাক জিনিস ফেলে দেই। কেউ আর টের পায় না জিনিসপত্র কই যায়!
এই সুযোগে একদিন আমার চক্ষুশূল ‘ডালঘুটনি’ও গায়েব করে দিলাম!! B-))

কিন্তু, কেন জানি এরপর আর কারো বুঝতে বাকি রইল না জিনিস কই যায়... আর কিভাবে যায়!!:-<
ফলস্বরুপ, মা বাসায় নতুন দুইটা ‘ডালঘুটনি’ আনলেন... একটা আসল ডাল ঘুটার জন্যে, আরেকটা আমাকে ঘুটার জন্য!! :| /:) :((

আমার চোখে তখন মা এক “নিষ্ঠুর/পাষাণ/হৃদয়হীন” নারী।কিন্তু তারপর ও কেন জানি মা-কে ছাড়া এক মূহুর্ত চলতো না আমার। সেই জন্যই মা যে স্কুলে টিচার ছিলেন সেই কিন্ডার গার্টেন স্কুলেই ক্লাস ‘নার্সারী’তে আমাকে ভর্তি করিয়ে দিলেন।

আমি আবার বছরের মাঝের দিকে ভর্তি হয়েছিলাম ।স্কুলে প্রথম দিন আর ক্লাস করিনি। ভর্তি হয়ে বাসায় চলে গেলাম। মা বিকালে মার্কেট থেকে আমার জন্য নতুন টিফিন বক্স , পেন্সিল বক্স, স্কুল ব্যাগ নিয়ে এলেন। আর আলমারি থেকে বের করে দিলেন আমার বহুদিনের কাঙ্খিত সেই ‘ওয়াটার বোটল’ যার চেহারা অনেকটা রোবটের মতো, আর মাথা খুললে পানি খাওয়ার স্ট্র বের হয়ে আসে। আমার এক চাচা সেটা দিয়েছিলেন। স্কুলে ভর্তি হলে পরে মা আমাকে সেটা ব্যবহার করতে দিবেন বলে আলমারিতে রেখে দিয়েছিলেন।

পরদিন মহানন্দে আমি নতুন নতুন জিনিস নিয়ে স্কুলে গেলাম। ক্লাস টিচার আম্মুর কলিগ আর ভাল বন্ধু। ম্যাডামের ছেলেও এক-ই ক্লাস এ। ম্যাডাম তাই ওর সাথে আমার বন্ধুত্ব করিয়ে দিলেন।
টিফিন পিরিয়ডে আমার নতুন বন্ধুটি এসে আমার সেই রোবট-মার্কা ‘ওয়াটার বোটল’ দেখে বলে,
- “আমি তোমার ফ্লাস্ক টা থেকে পানি খাবো”
- “তুমি পানি আন নাই আজকে?”
- “আনসি...কিন্তু তোমারটা থেকে দিতে অসুবিধা কি?”
- “আচ্ছা... দেই...তুমি তোমার ফ্লাস্ক এর মুখটা নিয়ে আসো...আমি পানি ঢেলে দেই”
- “না! আমি তোমার ফ্লাস্ক এর স্ট্র দিয়েই খাবো। ”

ভালো মুশকিলে পড়ে গেলাম। একে তো আমি কেউ কিছু মুখে দিলে আর সেটা খাই না।।তার উপর আবার প্রিয় ফ্লাস্ক- এর স্ট্র মুখে দিতে চায় এই ছেলে।(যেখানে নিজের ফ্লাস্ক-ও ঠিক-ই নিয়ে আসচে সে X()
তবুও আমি তাকে ভালভাবে বোঝানোর চেষ্টা করলাম,
- “কিন্তু, একজনের স্ট্র দিয়ে আরেক জনের খাওয়া তো ঠিক না...আমার কিন্তু টনসিল হইছে, পরে তোমারও টন্সিল হয়ে যাবে”
- “উহু! কিছু হবে না। আমারও টন্সিল আগে থেকেই আছে।”
এইবার আমার ধৈর্যচ্যুতি ঘটল। মুখ শক্ত করে বললাম
- “আমার স্ট্র তে কেউ মুখ দিলে আমি সেটা দিয়ে আর খাই না, আমার ফ্লাস্ক থেকে পানি খেতে হলে ঢাকনিতে ঢেলেই খেতে হবে। আর তোমার তো ফ্লাস্ক আছেই, যাও নিজের ফ্লাস্কের স্ট্র দিয়ে পানি খাও গিয়ে”

ব্যাস......সাথে সাথে বলতে লাগলো,
-“ছিঃ! তুমি এত্তো পঁচা......কেউ পানি চাইলে দাও না ।”
আমি তো অবাক! আমি আবার পানি দিব না বললাম কখন!
কিন্তু ও এর মাঝে ক্লাসের অনেককে নিয়ে দল বানিয়ে ফেললো। ওদেরকে কি বলেছিল সে-ই জানে। সবাই ভাবলো আমি বুঝি আসলেই ও-কে পানি দিবো না বলেছি। আমি আমার পক্ষে কিছু বলার আগেই সব কয়টা ক্লাস রুমের বাইরে জটলা করে দাঁড়িয়ে আমার দিকে ফিরে বলল।
- “তোমার সাথে আমরা কেউ মিশবো না, তোমার সাথে আমাদের আড়ি”
বলে সবাই তাদের একহাত মুঠ বন্ধ করে বুড়া আঙ্গুল নিজের থুতনির আছে এনে আড়ি দেয়ার বিশেষ ভঙ্গিতে একযোগে বলতে লাগলো,

- “ আড়ি আড়ি আড়ি
কাল যাবো তোর শ্বশুর বাড়ি
পরশু যাবো ঘর
হনুমানের লেজ ধইরা
টানাটানি কর”


এই বলে তারা সকলে আমাকে হনুমানের লেজ ধরে টানাটানি করার পরামর্শ দিয়ে দৌড়ে চলে গেল। আর আমি হাঁদারামের মত সেদিকে তাকিয়ে রইলাম। সমস্ত ব্যাপারটা কি ঘটল বুঝতে আমার মিনিটখানেক লেগে গেলো। ততোক্ষনে কে কাকে পায়!! :||

সেদিন আমি স্কুলের পড়ার পাশাপাশি দুইটা নতুন জিনিস শিখলাম।
১. আড়ি দেয়ার নতুন স্টাইল।
২. “আড়ি আড়ি” ছড়াটা ।
এটাই ছিল আমার জীবনে প্রথম কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বন্ধুত্বের অভিজ্ঞতা!!

ধুর!! আম্মু এখনো ঘুমাচ্ছে । এভাবে বাসে কোনো কথাবার্তা ছাড়া বসে থাকতে থাকতে তো বোর হয়ে গেলাম। /:):(

(আরো চলতে পারে...:P)
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা ডিসেম্বর, ২০০৮ সন্ধ্যা ৭:৩১
১৫টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আরো একটি সফলতা যুক্ত হোলো আধা নোবেল জয়ীর একাউন্টে‼️

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪০



সেদিন প্রথম আলো-র সম্পাদক বলেছিলেন—
“আজ শেখ হাসিনা পালিয়েছে, প্রথম আলো এখনো আছে।”

একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আজ আমি পাল্টা প্রশ্ন রাখতে চাই—
প্রথম আলোর সম্পাদক সাহেব, আপনারা কি সত্যিই আছেন?

যেদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ নয়, আমরা শান্তি চাই

লিখেছেন নতুন নকিব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১১

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ নয়, আমরা শান্তি চাই

ছবি এআই জেনারেটেড

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ প্রতিবাদের ভাষা নয় কখনোই
আমরা এসব আর দেখতে চাই না কোনভাবেই

আততায়ীর বুলেট কেড়ে নিয়েছে আমাদের হাদিকে
হাদিকে ফিরে পাব না... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

নজরুল পরিবারের প্রশ্ন: উগ্রবাদী হাদির কবর নজরুলের পাশে কেন?

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:০১



প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে কাজী নজরুল ইসলামের দেহ সমাধিস্থ করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে। শনিবার বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টে নাগাদ সেখানেই দাফন করা হল ভারতবিদ্বেষী বলে পরিচিত ইনকিলাব মঞ্চের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×