somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্প - আমি কেন সেদিন ধানমণ্ডি গিয়েছিলাম?

১৯ শে অক্টোবর, ২০১২ দুপুর ২:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার মাথায় শুধু একটা কথাই ঘুরছে, যদি সেদিন ধানমণ্ডি না যেতাম তাহলে কি এসব ঘটতো?
আমার বাসা মিরপুরে। মাঝে মাঝেই ধানমণ্ডি যেতাম বন্ধুদের সাথে লেকের পাড়ে বসে আড্ডা দিতে।

সেইদিন, ঠিক ১ বছর আগের সেইদিন কিছু ভাল লাগছিলনা বলেই একাই গেছিলাম ধানমণ্ডি । রবীন্দ্র সরোবরের কাছে যে চায়ের দোকান গুলো আছে, সেখানে দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছিলাম। চা শেষ করে ভাবলাম হাঁটতে হাঁটতে ঝিগাতলার দিকে যাই! ঠিক তখনি একটা চিৎকার শুনলাম, "ছিনতাই, ছিনতাই আমার ব্যাগ নিয়ে গেলো"!

দেখতে পেলাম একটি ছেলে হোন্ডায় করে ব্যাগ নিয়ে পালাচ্ছে। আমি কোন কিছু না বুঝেই ঐ হোন্ডার পিছনে দৌড় দিলাম। কিন্তু তাতে কোন লাভ হলনা। ছিনতাইকারী পালিয়ে গেলো। লাভের মধ্যে এটুকু হল যে, দৌড়াতে গিয়ে রিকশার সাথে বেধে আমার শার্টটা একটু ছিড়ে গেলো এবং হাতেও ব্যাথা পেলাম।

নিজের উপর রাগ লাগছিলো এভাবে অকারনেই ছুটলাম বলে। ঠিক তখনি পিছন থেকে কে যেন বলল, "আপনি কি বেশি ব্যাথা পেয়েছেন"। ঘুরে পিছনে তাকাতেই দেখি সেই মেয়েটি, যার ব্যাগ ছিনতাইকারী নিয়ে পালিয়েছে। চিৎকার শুনেই দৌড় দিয়েছিলাম বলে মেয়েটিকে তখন লক্ষ্যই করিনি। ভালভাবে তাকাতেই দেখলাম বেশ সুন্দর একটা মেয়ে অপরাধীর মতো চোখ করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। যেন আমি হাতে ব্যাথা পেয়েছি তার দোষে! কেন জানি ওকে দেখে আমার খুব ভালো লাগলো।
কি বলতে হবে ঠিক বুঝতে পারছিলামনা। আমাকে কিছু বলতেও হলনা। সেই বলল যে তার বাসা মিরপুরে এবং সে ধানমণ্ডি ১৫ নং এর দিকে যাচ্ছিল এক বান্ধবীর বাসায়। আর তাতেই ঘটলো এই দুর্ঘটনা। ঐ ব্যাগেই তার মোবাইল ফোন এবং সব টাকা ছিল। এখন আর কিছুই নাই। সে আরও বলল বান্ধবীর বাসায় গিয়ে কিছু টাকা ধার নিয়ে বাসায় ফিরবে। সে আমাকে বারবার বলছিল, "ভাইয়া আমার অনেক খারাপ লাগছে, আমার জন্যে আপনার কষ্ট হল, হাতে ব্যাথা পেলেন, আপনার শার্ট ছিড়ে গেলো"। আমি যেন কোন কথাই বলতে পারছিলামনা! সে যখন চলে যাচ্ছিল তখন কি মনে করে বলে ফেললাম "আজ বান্ধবীর সাথে দেখা করতে না গেলে হয়না ? আর আমার বাসাও তো মিরপুরে, কিছুক্ষণ এখানে বসে থেকে একসাথেই মিরপুরে যাই"! সে আমার কথায় প্রথমে কিছুটা আশ্চর্য হল এবং তারপর আমাকে অবাক করে দিয়ে বলল ঠিক আছে, আজ আপনার সাথেই বাসায় ফিরবো!

তারপর অনেকটা সময় আমরা লেকের পাড়ে বসে কাটালাম। অনেক কথা বলছিলাম দুজনে। আসলে সেই বলছিল সব আর আমি শুধু শুনছিলাম। ওর বাসা মিরপুর ১১ নং এ আর আমার বাসা ১২ তে। ফেরার সময় ওকে বাসায় পৌঁছে দিলাম। ও আমার মোবাইল নম্বর লিখে নিলো। তারপর আমিও ফিরে আসলাম আমার বাসায়।

পরদিন সন্ধায় একটা অপরিচিত নম্বর থেকে কল আসলো। কলটা রিসিভ করতেই বুঝলাম সে! ওর কাছ থেকেই শুনলাম আজ ও কাস্টমার কেয়ার থেকে হারানো সিমটা উঠিয়েছে এবং নতুন একটা ফোন কিনেছে। আর প্রথম কলটাই করেছে আমাকে। তারপরের দিনগুলো ঠিক যেন স্বপ্নের মতো! আমি মাঝে মাঝেই ভাবতাম ভাগ্যিস সেদিন অকারনেই ধানমণ্ডি গেছিলাম! আর ও সবসময় বলতো "মাত্র একটা ব্যাগ, ৪০০-৫০০ টাকা আর একটা মোবাইল এর বিনিময়ে আমি তোমাকে পেয়েছি"। আমরা দুজনেই ভাবতাম সেদিন যা হয়েছিলো খুব ভালো হয়েছিলো! তা'না হলে তো আমার দুজন দুজনকে খুজেই পেতাম না। আসলেইতো সেদিন আমি যদি অকারনেই ধানমণ্ডি না যেতাম তাহলেতো এসবের কিছুই ঘটতো না।

দিনগুলো আমরা কাটাচ্ছিলাম ঠিক যেন স্বপ্নের মতো করে। সময় পেলেই চলে যেতাম লেকের পাড়ে প্রথম সেদিন যেখানে বসেছিলাম সেখানে। পাশাপাশি বসে, হাতে হাত রেখে সময় গুলো পেরিয়ে যেতো।
স্বপ্নের মতো ভালোলাগার, ভালোবাসার সেই সময়গুলো কেটে যেতো খুব তাড়াতাড়ি! ও মাঝে মাঝেই অদ্ভুত সব পাগলামো করতো। আমারও খুব ভালো লাগতো সেই সব পাগলামো দেখতে।
প্রতিটা দিন কতো কতো কথা!
এভাবেই কখন যে পুরো একটা বছর পেরিয়ে গেল!

আজ আমাদের প্রথম দেখা হবার এক বছর পূর্ণ হবে। আর সেই কারনে আমরা ঠিক করেছিলাম প্রথম যেখানটায় আমাদের দেখা হয়েছিল, এবং তারপর লেকের পাড়ে যেখানে আমরা বসে ছিলাম আজ ঠিক সেখানেই বসবো। আমি বাসা থেকে বের হয়ে ওর জন্যে মিরপুর ১১ তে অপেক্ষা করব, এমনটাই বলেছিল সে।
আমি ঠিক সময়মতই এসে দাঁড়িয়েছি ১১ নং বাস স্ট্যান্ড এর কাছে। কিছুক্ষন পরে দেখলাম ও চলে এসেছে। ঐ তো ওকে দেখা যাচ্ছে রাস্তার ওপারে। ও আমাকে দেখতে পাবার পর আমার দিকে তাকিয়ে হাসলো। ও রাস্তা পার হয়ে এপারে আসলেই আমরা একসাথে রবীন্দ্র সরোবরের দিকে এগুবো।

আমি এখন ভাবছি, না ঠিক ভাবছিনা আমার মাথার মধ্যে শুধু একটা কথাই ঘুরছে- "আমি কেন সেদিন ধানমণ্ডি গিয়েছিলাম"। সেদিন আমি ওখানে না গেলেইতো আর এমনটা হতো না। আমি ওখানে না গেলে ওর সাথে আমার দেখাই হতোনা। আর তার এক বছর পর ওখানে যাবার জন্যে আমার কাছে আসতে গিয়ে ওকে বাসের নিচে চাপা পড়তে হতো না।


সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে অক্টোবর, ২০১২ দুপুর ২:৫৮
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×