somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

❑ চক্কেট চাচা

১৬ ই জুলাই, ২০১৫ দুপুর ১:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



-চাচী, চাচায় অহনও আহেনাই?
-নারে বাজান, তোর চাচায় তো আহে না...
রাহেলা কথাটা শেষ করতে না করতেই দরজার কাছে এসে কবির দাঁড়ায়। তাকে দেখে ছোট ৫ বছরের সুমন দৌড়ে চাচার কাছে যায়।
-চাচা, চাচা আমার চক্কেট দেও।
-কিরে বাজান? তুই সবসময় এ বেলায় আমার আগে আগে আইয়া বইয়া থাহস কেন?
-তুমি আমার লাইগা চক্কেট আনবা দেইকা আহি।
-আইজকা তো বাজান তোর লাইগা চক্কেট আনি নাই।
-কিইইই? মিসা কতা, আমার চক্কেট বাইর কর কইতাসি।
-আরে আনি নাই তো, আমারে ঘরে ঢুকতে দে তো দেহি!
-না, দিমু না ঢুকতে। চাচী, ও চাচী, চাচারে চক্কেট দিবার কউনা?
কবিরের ৬ মাষের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী রাহেলা হাসিমুখে কবিরের দিকে তাকায়। রাহেলা জানে কবির মিথ্যে বলছে। তাই সে বলে,
-বাচ্চা পোলাডারে আর জ্বালাইও না তো! এই নিয়া ৩ বার তোমারে খুইজা গেসে তুমি আইস কিনা দেখবার। দিয়া দাউনা!
কবির স্ত্রীর কথা শুনে হাসিমুখে পকেট থেকে ৫টা চকলেট বের করে সুমনের হাতে দেয় আর বলে,
-এই নে তোর চক্কেট, এইবার আমারে ঢুকতে দে বাপ।

চকলেট হাতে পেয়েই সুমন নাচতে নাচতে তার বাসায় চলে যায়। কবিরদের পাশের বাসাটাই সুমনদের। ঢাকার মিরপুরে রুপনগরে এলাকায় থাকে তারা। সুমন কবিরের চাচাতো ভাই গিয়াসের ছেলে। পাশাপাশি অনেকগুলো টিনশেড ঘর, তার একটিতেই রাহেলা আর কবিরের সুখের সংসার। ঘরে তেমন কিছু আসবাবপত্র না থাকলেও দুজনের ভালবাসার কমতি নেই। দুজনই এতিম, ভালবেসে বিয়ে করেছে তারা। কবির সি.এন.জি অটোরিকশা চালায়। রাহেলা গার্মেন্টসে কাজ করত, তবে বাচ্চা হবে শোনার পর কবির তাকে সাথে সাথে কাজ থেকে ইস্তফা নিতে বলেছে। তার কথা হল, “আমি নিজে দরকার পরলে রাইতদিন সি.এন.জি চালামু, তবু তোমার কাম করন লাগত না।” রাহেলার যাতে কষ্ট না হয় সেজন্য কাজের বুয়া পর্যন্ত রাখতে বাধ্য করেছে কবির। মাঝে মাঝে রাহেলা একা একা ভাবে, এই লোকটা তার জীবনে না আসলে সে ভালবাসা কি সেটাই বুঝত না।

সুমন যাওয়ার পর কবির তার শার্টের পকেট থেকে লাল চুড়ি বের করে। কবিরের হাতে চুড়িগুলো দেখে খুশিতে রাহেলা চোখ বড় বড় করে ফেলে। কবির ভাল করেই জানে তার স্ত্রীর চুড়ি খুব পছন্দ, বিশেষ করে লাল চুড়ি। কবির নিজ হাতে স্ত্রীর হাতে চুড়িগুলো পড়িয়ে দেয়।

কবির আজ এখনও বাসায় ফিরে নি। সাধারণত রাহেলা গর্ভবতী হওয়ার পর থেকেই কবির সন্ধ্যা ৭ টার মাঝেই বাসায় ফিরে আসে। কিন্তু আজ রাত ১ টা বেজে যাওয়ার পরও কবির ফিরছে না। এদিকে রাহেলা অনেকবার কবিরকে ফোন দিয়েছে, কোন খোজ পায় না, তার ফোনটাও বন্ধ বলছে। কবিরের খোজ করার জন্য রাহেলা সুমনের বাবা গিয়াসকে কবিরের সি.এন.জি গ্যারেজেও পাঠিয়েছে, সেখানেও ফেরে নি। রাহেলা মনে নানা রকম দুঃশ্চিন্তার উদয় হয়, “গেল কোথায় লোকটা? এমন তো কখনই করেনা, আজ এমন কি হল?”

পরদিন সকালে খুব ভোরে গিয়াস ফোন পেয়েই বাসা থেকে বের হয়ে যায়। ২ ঘন্টা পর গিয়াস কবিরের লাশটা এম্বুলেন্সে করে বাসায় ফেরে। গত সন্ধ্যায় কবিরের সি.এন.জির সাথে বাসের ধাক্কা লাগে, কবির ঘটনাস্থলেই মারা যায়। রাহেলা বাসার উঠোনে রাখা কবিরের বিকৃত লাশটার দিকে একবার তাকিয়েই অজ্ঞান হয়ে পড়ে যায়, তার হাতের চুড়িগুলো নিস্তব্দ উঠোনে কাঁচ ভাঙ্গার আওয়াজ তুলে ভেঙ্গে যায়।

সুমন প্রতিদিনের মত তার চক্কেট চাচুর জন্য বিকেলে বাসার মেইন গেটটার দিকে তাকিয়ে বসে আছে। তার মা এসে বাসায় যাওয়ার জন্য ডাকতেই সুমন বলে উঠে, “আগে চক্কেট চাচা আহুক, তারপর আমু।” সুমনের কথা শুনে সুমনের মায়ের চোখের কোনা ভিজে আসে। তিনি সুমনকে বলেন, “তোর চক্কেট চাচা আর কোনদিন আইত না বাপ।” সুমন তার মায়ের কথা বিশ্বাস করতে চায় ন। সে বলে, “মিসা কতা, চাচা একটু পরেই আমার লাইগা চক্কেট নিয়া আইব। তুমি যাওত আম্মা, আমি চাচা আইলেই বাসায় আমু।” সুমন তার না ফেরার দেশে চলে যাওয়া চক্কেট চাচার জন্য বারান্দায় বসে অপেক্ষা করতে থাকে।

লেখকঃ Mustafa Anwar (স্বপ্নবাজ শাওন)
লেখকের ফেইসবুক আইডিঃ http://www.facebook.com/nabeel.sjc
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জুলাই, ২০১৫ দুপুর ১:০৫
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৩:০৬

অবশেষে মিল্টন সমাদ্দারকে গ্রেফতার করেছে ডিবি। এবং প্রেস ব্রিফিংয়ে ডিবি জানিয়েছে সে ছোটবেলা থেকেই বদমাইশ ছিল। নিজের বাপকে পিটিয়েছে, এবং যে ওষুধের দোকানে কাজ করতো, সেখানেই ওষুধ চুরি করে ধরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×