ইদানিং ফেইসবুকে ইসলাম এর পক্ষে ও বিপক্ষে নানা রকম পোষ্ট ও ছবি প্রচার করা হচ্ছে। আমরাও কোন বিচার বিশ্লেষণ না করেই এগুলোতে লাইক ও শেয়ার করে দিচ্ছি। এ ধরনের পোষ্ট ও ছবির প্রাইভেসি পাবলিক মুড এ থাকায় তা খুব সহজেই দ্রুত আমাদের মাধ্যমেই আমাদের কমিউনিটিতে ছড়িয়ে যাচ্ছে । একই সাথে সেই পেইজটিও আমাদের নিজেদের অজান্তেই একটি প্রচার মাধ্যম হিসেবে আত্বপ্রকাশ করছে। আমরা একবারও ভাবছি না এ সকল প্রচারের পিছনের উদ্দেশ্য কি?
ইসলাম হচ্ছে বিশ্বাস। এক সৃষ্টিকর্তার উপর বিশ্বাসের মাধ্যমে এই ধর্মের স্থাপন করা হয়েছে। আর যিনি এই বিশ্বাসের উপর অটল, তাকে কখনই সেখান থেকে বিচ্যুত করা যায় না। সুতারং এই শক্তিকে কাজে লাগিয়ে কতিপয় স্বার্থান্বেসী মহল সমাজে ক্ষমতা হাসিলের লক্ষে অপপ্রচার চালাচ্ছে। আর আমরা এতটাই হতভাগা যে, আমরা ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী হতে পেরেছি কিন্তু তার সাথে সাথে অন্ধও হয়ে গিয়েছি। মানে আমরা এখন অন্ধ বিশ্বাসী। আর একজন অন্ধকে আপনি যদি লাইটপোষ্ট এর খাম্বা অনুভব করিয়ে বলেন এটি একটি বট গাছ তবে সে তাই বিশ্বাস করবে।
যে বা যারা কোন কিছু হাসিলের জন্য মহা পরিকল্পনা করে তাদেরকে বলা হয় মাষ্টার মাইন্ড। আর এরা সমাজ ও মানবজাতির জন্য এক বিভিষিকা। এরা আপনার বিশ্বাস নিয়েই কৌশলে খেলবে। কৌশলগুলো তুলে ধরা যাকঃ
কৌশল ১ঃ এরা প্রথমে আপনাকে আপনার বিশ্বাসের বিষয়গুলো নিয়ে ভালো ভালো ছবি দেখাবে। যেমন- পবিত্র কাবা শরীফ, রওজা শরীফ, সেজদাহরত কোন উম্মাহ, মহান সৃষ্টিকর্তার কোন নির্দেষনা, কুরআন মজিদ এর ছবি ইত্যাদি। আপনি এগুলো দেখবেন এবং স্বাভাবিক ভাবেই লাইক দিবেন।
কৌশল ২ঃ কৌশল ১ কে যেন কেউ এড়িয়ে না যায় সেক্ষেত্রে আমাদের বিশ্বাসকে ব্লাকমেইল করা হয়। যেমনঃ কৌশল ১ এর একটি ছবির সাথে বেমানান অন্য একটি ছবি লাগিয়ে বলা হয় আপনি যদি ভালোটির সাথে একমত হন তবে লাইক দিন। ধরুন কোরআন তেলওয়াতরত এক নারীর ছবির সাথে পর্দাহীন এক নারীর ছবি দেয়া হল। এখানে দুটি সাইকোলজী টেষ্ট হয়; প্রথমটি ছেলেরা নারীর ছবি দেখে আকৃষ্ট হয় ও অতপর লেখাটি পড়ার পর ভালোর প্রতি সমর্থনে লাইক এবং শেয়ার দেয়।
কৌশল ৩ঃ এখানে বিভিন্ন হাদিস লিখে ছবি হিসেবে পোষ্ট করা হয় এবং বলা হয় এটি আরও ১০০ জনের কাছে পৌছে দিলে আপনার এত এত নেকি হাসিল হবে, কিংবা আপনি শিগরই কোন সু-সংবাদ পাবেন। আগেই বলেছি আমরা ধর্মান্ধ ও ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে উদাসীনভাবে সীমিত জ্ঞান অর্জন করার কারনে আমরা এগুলোর সত্যতা যাচাই করতে পারি না এবং খুব সহজেই তাদের স্বার্থানুযায়ী কাজ করি।
কৌশল ৪ঃ এ প্রক্রিয়ায় ক্ষোভ জাগনিয়া ছবি পোষ্ট করা হয়। যার বেশিরভাগই ফটোশপ এডিট কিংবা ইচ্ছাকৃতভাবে সৃষ্টি করা হয়। যেমনঃ কোন ব্যাক্তির পায়ের নিচে কোরআন রেখে নতুবা কোন অন্যধর্মালম্বীদের দ্বারা কোরআন পুড়িয়ে অন্যথায় কোন মুসলিম উম্মাহকে নির্যাতিত অবস্থায় দেখিয়ে। এখানে অনেকে দ্বিমত পোষন করবেন যে সত্যিকারেও এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। হ্যা সত্যি তাই। ঘটছে। আর সেটা ঘটানোও হচ্ছে কৌশল ১, কৌশল ২ কিংবা কৌশল ৩ এর সাহায্য নিয়ে। একটু চোখকান খোলা রেখে সাম্প্রতিক দাঙ্গার বিষয়বস্তুগুলো জানুন তাহলেই এর সত্যতা খুজে পাবেন।
কৌশল ৫ঃ এই চরম প্রক্রিয়াটি হচ্ছে স্বার্থ হাসিলের সর্বোচ্চ অবস্থা। আপনি যদি প্রথম ৪ টি কৌশলের ফাদে পরেন তা হলে অবশ্যই আপনি তাদের এই কৌশলটি বিশ্বাস করবেন। এখানেই তারা তাদের প্রতিপক্ষের ছবি সমেত তাদেরকে নাস্তিক আখ্যা দিবে এবং তাদের কার্যকলাপ বর্ণনা করবে, ইসলাম ধর্মের অনুসারীদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করবে অন্য দেশসমূহের প্রতি প্রতিহিংসার জন্ম দিবে, কোন ব্রান্ডের প্রতি বিরূপ মনোভব সৃষ্টি করাবে ইত্যাদি। কিংবা অন্য ধর্মের কিছু বিষয় আপনার সামনে এমন ভাবে তুলে ধরবে যেন সকল হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সবাই মুসলিমদের শত্রু। এ কৌশলটি যুগযুগ ধরে রাজনৈতিক ও বানিজ্যিক ফায়দা হাসিলের উদ্দ্যেশ্যে করা হয়েছে। এই যে দ্বন্ধের বীজ তা আমাদের পূর্বপুরুষদের মাঝে বিস্তার করা হয়েছিল এবং তা জিইয়ে রেখে উপনিবেশিক শাষন বহাল করা হয়েছিল। পরবর্তিতে পূর্ব-পাকিস্তান, পশ্চিম-পাকিস্তান ও ভারত একই ভাবে তাদের শাষন বহাল রাখে। বর্তমানে বাংলাদেশে যখন শিক্ষা ও সচেতনতা নতুন প্রজন্মের কাছে জ্ঞানের আলো নিয়ে এসেছে তখন তাদের বিভ্রান্ত করার জন্য নতুনভাবে এই বীজ বপন করা হচ্ছে। অনেকটা অসচেতন ভাবেই এই বীজ বপনের অংশীদার আমরাই হচ্ছি।
শুধু ইসলামের বিরুদ্ধে নয় অন্য সব ধর্মের ক্ষেত্রেও এই অসৎ চক্র একইভাবে কৌশল অবলম্বন করছে নিজেদের রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক সফলতা লাভের জন্য। আমাদের সমাজের একাত্বতা যত ভাঙ্গা সম্ভব ততই আমরা দূর্বল হয়ে পড়ব এবং আমাদেরকে শোষন করা ততই সহজ হয়ে যাবে। তাই যথাসম্ভব আমাদের উচিত চোখ কান খোলা রেখে কি লাইক করছি আর কি শেয়ার করছি তা যেন একটু বিবেচনা করে দেখি। কারন আজকাল ফেইসবুক প্রত্যান্ত গ্রামঞ্ছলে ছড়িয়ে পড়ছে এবং তা সকল বয়সের, শ্রেণী পেশার মানুষের কাছে। যেখানে আমাদের জ্ঞানের মাধ্যমে মানবতা ও সফলতা বিকাশের কথা, সেখানে আজকে সাম্প্রদায়িকতা, ধর্মের ভুল ব্যখ্যা, সচেতনতার মাধ্যমগুলোকে ভুলভাবে মানুষের সামনে তুলে ধরা ও আমাদের শোষিত হবার নতুন পরিকল্পনার অংশ করা হচ্ছে। আমাদের যাতে এর অংশীদার না করা যায় সেদিকে দয়া করে সচেতন হই। এটা মানুষ হিসেবে আমাদের দায়িত্ব, যদি আমরা নিজেদের সত্যিকার অর্থে আশরাফুল মাখলুখাত ভেবে থাকি।