
কাল ফেব্রুয়ারী মাস শুরু, বইমেলা শুরু। বরাবরই বইমেলায় ঘোরার জন্য আমি পাগল। অনেক আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করি বছরের শুরু থেকেই, যে কখন বইমেলা শুরু হবে, কখন আমি অনেক অনেক বই কিনব !! এবারও অপেক্ষা করেছি, অনেক আগে থেকে। কিন্তু এবারের অপেক্ষাটা একটু ভিন্ন। কারণ এবারের বইমেলায় অনেক অনেক বড় লেখকদের বই এর মাঝে একটা সাধারণ ছোট গল্পের বই এ আমারও একটা লেখা ছাপা হবে। এবার আমার কাঁচা হাতে লেখা কিছু আবোল-তাবোল শব্দ কিছু মানুষ বইমেলা থেকে কিনে পড়বে! অদ্ভুত এক অনুভূতি এনে দিচ্ছে এই চিন্তাটা!
লেখালেখি কাজটার সাথে আমার কখনোই কোন যোগাযোগ ছিল না। কয়েক মাস আগে এক বন্ধুর কথায় ব্লগে লেখা শুরু করি। আর তখন লেখালেখির একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল মনের কথাগুলো শব্দমালায় প্রকাশ করে নিজের ভেতরের জমাট বাঁধা অনুভূতিগুলোকে কিছুটা হালকা করার চেষ্টা করা। এভাবেই লিখতে লিখতে ওই বন্ধুরই উৎসাহে বইমেলায় বের হতে যাওয়া ছোটগল্পের একটা বই এর জন্য কিছু লেখার চেষ্টা করি। লেখা হয়ও। কিন্তু সেটা আর ছোটগল্প থাকে না তখন। অনেকটা স্মৃতিকথন হয়ে যায়, প্রিয় কোন মানুষের উদ্দেশ্যে লেখা একটা ঠিকানাবিহীন চিঠির মত। লেখাটা শেষ হবার পর তাই আর পাঠানোর সাহস পাচ্ছিলাম না। কারণ ওরকম একটা বইয়ের জন্য নিশ্চয়ই অনেক ভাল ভাল লেখক লেখা পাঠাবেন। তাঁদের মাঝে আমার লেখা বাছাই হবার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। নিশ্চিত এটা বাদ পরে যাবে। এভাবে ভাবতে থাকলেও, কিভাবে কিভাবে যেন শেষ পর্যন্ত পাঠানো হয়ে গেল লেখাটা, যার সম্পূর্ণ কৃতিত্ব আমার খুব প্রিয় দুজন মানুষের। কিন্তু পাঠানোর কিছুদিন পর ভুলেও গেলাম লেখাটার কথা। কারণ?? ওই যে, "ওরকম একটা বইয়ের জন্য নিশ্চয়ই অনেক ভাল ভাল লেখক লেখা পাঠাবেন। তাঁদের মাঝে আমার লেখা বাছাই হবার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। নিশ্চিত এটা বাদ পরে যাবে।" কিছুদিন কেটে গেল এভাবে। হঠাৎ একদিন একটা ফোন এলো আমার কাছে। সেই ভাইয়ার ফোন ছিল সেটা যার উদ্যোগে বইটা বের করার পরিকল্পনা হয়েছিল। ভাইয়া যখন আমাকে বললেন যে আমার লেখা ভাল হয়েছে, আর তাঁরা সেটা select করেছেন বই এ ছাপানোর জন্য, আমিতো পুরোই অবাক। কেমন যেন একটা অনুভূতি হচ্ছিল। মনে হচ্ছিল, "এসব কি সত্যি?? নাকি আমি ভুল শুনছি??" আমার আত্মবিশ্বাস বরাবরই অনেক কম। তাই নিজের এই হঠাৎ প্রাপ্তিতে রীতিমত ধাক্কা খেয়েছিলাম বলা যায় !!
আজকে sure হলাম যে অবশেষে বের হচ্ছে আমার লেখা এবার বইমেলায়। অনেক আনন্দের একটা ঘটনা। কিন্তু আমার দূর্ভাগ্য যে আনন্দটা ওভাবে অনুভব করতে পারছি না আমি। আনন্দেরতো তখনই পুর্ণতা মেলে, যখন তা সবার সাথে ভাগ করে নেয়া যায়। কিন্তু ওই যে বললাম, আমার লেখাটা মূলতঃ আমার এলোমেলো মনের কিছু অগোছালো অনুভূতির প্রকাশ। যা আমার বাবা-মা কে অনেক কষ্ট দেবে। জীবনে সবসময়ই সব সাফল্য সবার আগে আব্বু-আম্মুর সাথে ভাগাভাগি করেছি। আজ প্রথম নিজের কোন সাফল্যকে তাঁদের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে রাখছি, লুকিয়ে রাখছি। নাহলে যে তাঁরাই কষ্ট পাবেন নিজের মেয়ের মনের ভেতর জমানো কষ্টের রূপটা দেখলে। আগে এমন হবে জানলে এরকম কোন লেখা পাঠাতামই না, অন্য কিছু লিখতাম, নয়তো কিছুই লিখতাম না। কিন্তু তখনতো ভেবেছিলাম আমার লেখা কখনোই কেউ ছাপাবেনা। তাই চিন্তাভাবনা করে লিখিনি কিছু। যা মাথায় এসেছিল, তাই শুধু টাইপ করে গিয়েছিলাম। ঠিক যেমনটা ব্লগে লেখার সময় করি। এখন তাই কষ্ট হচ্ছে খুব।
এতদিনে একটা কথা খুব ভালভাবে বুঝে গেছি যে জীবন অনেক বিচিত্র। ক্ষণে ক্ষণে সে তার রঙ বদলায়। এটা ভেবেই তাই শান্তনা পাচ্ছি এখন যে হয়তো একদিন আসবে যখন আর এসব বাধা থাকবেনা আমার সামনে। হয়তো একটা সময় আসবে যখন আব্বু-আম্মু আমার লেখাটা পড়বে, খুশিতে আমাকে জড়িয়ে ধরবে। অবাক হয়ে ভাববে, "আমার পিচ্চি মেয়েটা আবার লেখালেখি করে কবে থেকে?? কখনোতো ২লাইন চিঠিও লিখতে দেখিনি ওকে !!"
অনেক আজব অনুভূতি হচ্ছে আমার এখন। মিশ্র একটা অনুভূতি। উত্তেজনা, আনন্দ, কষ্টের মিশেলে একদম অন্যরকম একটা অনুভূতি। অপেক্ষা করছি কালকের জন্য। কখন নিজে প্রথম একটা বই কিনে আব্বু-আম্মুর জন্য ড্রয়ারে লুকিয়ে রেখে দিব, সেই সময়ের অপেক্ষায়, যেদিন আর কোন বাধা থাকবেনা।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জুন, ২০১১ রাত ১:০৩

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



