হিন্দুেদর সতীদাহ প্রথা:
সতীদাহ প্রথা ছিল হিন্দু ধর্মান্ধতার এক নিষ্ঠুর পৈশাচিক প্রথা। ধর্মের দোহাই দিয়ে মৃত স্বামীর জ্বলন্ত চিতার আগুনে স্ত্রীকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হতো। ব্রিটিশ শাসন প্রবর্তনের পর ওয়ারেন হেস্টিংস কয়েকজন ব্রাহ্মণের সাহায্যে হিন্দু আইন সংকলন করেছিলেন তাতে সতীদাহ প্রথার মাহাত্ম্য বর্ণনা করে বলা হয়েছে, "পতির চিতায় পড়ে মরলে সতী সাধ্বী মানুষের গায়ে যত লোম, ততো বছর অর্থাৎ সাড়ে তিন কোটি বছর পতি সহ সুখে স্বর্গে বাস করবে। তার পতির পিতৃমাতৃ উভয় কূলের তিন পুরুষ পাপ মুক্ত হবে। সহমরণের মত পত্নীর আর কোন মহৎ কর্তব্য নেই। এ জন্মে এটি অবহেলা করলে পর জন্মে তার পশু জন্ম হবে।" ১৮২২ সালে ২০ মার্চ সংখ্যা সামাচার দর্পণে প্রকাশিত পরিসংখ্যান অনুযায়ী ভারতবর্ষে সতীদাহের ঘটনা ১৮১৫ সালে ৩৮০, ১৮১৬ সালে ৪৪২, ১৮১৭ সালে ৬৯৬টি, এসব সতীদের বেশিভাগেরি বয়স ছিল মাত্র ২০ বছর এবং তার কমও অনেকের ছিল। ১৮১৫ থেকে ১৮২৮ সালের মধ্যে কেবল মাত্র অবিভক্ত বাংলায় ৮,১৩৪টি সতীদাহের ঘটনা ঘটে। উল্লেখযোগ্য অমানবিক ঘটনা ঘটে ১৮১৮-১৮২০ সালের মধ্য যারা সতী হয়েছিল। এদের মধ্য তিনজনের বয়স ছিল মাত্র ৮ বছর। বাকি ৪৩ জনের বয়স ছিল নয় বছর থেকে ষোল বছরের মধ্যে। রাজা রামমোহন রায়ের নেতৃত্বে সতীদাহ প্রথার বিলোপ সাধনের জন্য আন্দোলন শুরু হয় এবং ১৮২৯ সালের ৪ ডিসেম্বর লর্ড ব্যান্টিঙ্ক সতীদাহ প্রথা উচ্ছেদ আইন প্রণয়ন করেন এবং এর বিরুদ্ধে দন্ডাদেশ জারি করেন। এর বিরুদ্ধে প্রাচীন পন্থি গোঁড়া হিন্দু সমাজ প্রতিবাদ করেন। হেস্টিংস তাদের প্রত্যাখ্যান করেন। তারা পরবর্তীতে বিলেতের প্রিভি কাউন্সিলে আপিল করেন। রাজা রামমোহন রায় বিভিন্ন যুক্তিতর্কের সাহায্যে সতীদাহ প্রথা উচ্ছেদের পক্ষে যুক্তি প্রদর্শন করেন। এর ফলে চরমপন্থি হিন্দুদের আপিল বরখাস্ত হয় এবং চিরদিনের জন্য সতীদাহ প্রথা বন্ধ হয়।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


