somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পার্থিব চরিত্র (ছোট গল্প )

২৮ শে এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৩:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



অনিক হাসপাতালের বারান্দায় এমাথা থেকে ওমাথা পায়চারি করছে। কিছুতেই মনটা শান্ত করা যাচ্ছেনা। তার ছেলের ক্যন্সার। খুব অল্প বয়সে ছেলেটা শরীরে ক্যন্সার বাধায় বসে আছে। এ দিকে তার স্ত্রী গত দুদিন মুখে কিছু দেয়নি, ছেলের পাসে বসে সারা দিন কাঁদতেছে । একঘন্টা পর পর যত আত্মীয় –স্বজন দল বেধে দেখে যাচ্ছে।
আনিকের স্ত্রী বারান্দায় এসে অনিককে দেখে কাঁদতে কাঁদতে বলল “আমি কিছু জানিনা তুমি আমার ছেলেকে সুস্থ করে নিয়ে আসো যে ভাবে পারো” আনিকের কানদিয়ে কোন শব্দ ঢুকছেনা আর মাথায় অন্য চিন্তা ঘুরছে। সে তার পুরো জীবনে কোন দিন বুঝতেও পারেনি, হঠাৎ গত মাসে সে বুঝতে পারল সে একজন লেখকের চরিত্র মাত্র। তার পুরো জগত একজন কলম দিয়ে লেখেছে। যেদিন বইটা লেখা শেষ হয়েছে সেদিন সে জানতে পেরেছে সে একটা উপন্যাসের প্রধান চরিত্র।
বেপারটা সে তার স্ত্রীকে বলেছে কিন্তু তার স্ত্রী কান দেয়নি, সব শুনে বলল ছেলের অসুস্থতার কারনে বেশি চিন্তা করে ফেলছো, মাথায় যত সব আজগুবি চিন্তা গুর পাক খাচ্ছে, এবার ঘুমায় পড়ো। অনিক চোখ বন্ধ করে শুয়ে পড়লো, কিন্তু চোখ বন্ধ করলে সে পুরো বইটা দেখতে পায়। সে এখন আছে ১২৩ নম্বর পৃষ্ঠার ৬ নম্বর লাইনে। তার ছেলের মারা যাবে ৩০৮ নম্বর পৃষ্ঠায়।
ডাক্তার যতোই চিকিৎসা করুক লেখক লেখে ফেলেছে বাচ্চাটা মারা যাবে এখন বাঁচার একটা রাস্তা লেখক যদি তার লেখা কিছুটা পরিবর্তন করেন তবেই। অনিক কিছুতেই বুঝতে পারছে না এই লেখকের দেখা পাওয়া যাবে কোথায়? আর কি ভাবে?
অনিক হাসপাতালের বারান্দায় চেয়ারে মাথা নিচু করে ভাবতেছে। লেখকের দেখা মিলবে কি ভাবে। আচ্ছা উপন্যাসটা লেখা হইছে কার ভিউ থেকে? চোখ বন্ধ করে পুরো বইটা দেখা শুরু করলো কিন্তু একি এক একটা অধ্যায় এক একজনের ভিউ থেকে। লেখক নিজেও গল্পে এসেছেন তবে খুব অল্প সময়ে। গল্পের শুরুতে আর গল্পের শেষে।
অনিক একটা সিগারেট ধরালো। নিকোটিন অনেক সময় চিন্তায় সাহায্য করে। কিন্তু এখন মাথায় কোন চিন্তা ভালো ভাবে কাজ করতেছে না। আচ্ছা সে যা ভাবতেছে সব ঠিকতো? নাকি সে ধীরে ধীরে পাগল হয়ে যাচ্ছে!! এমন হতে পারে সে বাস্তবেই আছে, লেখক, উপন্যাস, চরিত্র এসব তার কল্পনা কিন্তু সে চোখ বন্ধ করলে যে বইটা দেখে সেই বই এর লাইন আর তার জীবনের প্রতিটা কাজ হুবুহু মিলে যায় কি ভাবে?
এভাবে কিছু দিন কেটে গেলো। ছেলের অবস্থা যতো সময় যাচ্ছে ততো খারাপ হচ্ছে। ডাক্তারেরা পরিস্থিতি সামাল দিতে পারছে না। অনিক চোখ বন্ধ করলো বইয়ে যা লেখা আছে তেমনই হচ্ছে। অনিক বইয়ের সামনের দু পৃষ্ঠা পড়ে ফেলল। মানে ভবিষ্যৎ কি হতে চলেছে আগেই বুঝে গেছে। আচ্ছা বইয়ে যা লেখা আছে সে যদি সেইটা না করে তাহলে কেমন হবে? লেখক কি বুঝতে পারবেন তার গল্পে পরিবর্তন হয়েছে! এমনও হতে পারে বইয়ের বাহিরে এখন যদি কিছু করা হয়, ঠিক সেই মুহূর্তে হয়ত লেখক তার গল্পের সংশোধন করতেছেন। ছেলেকে বিদেশে নিয়ে গেলে কেমন হয়! বইয়ে কোথাও লেখা নেই সে তার ছেলেকে বিদেশে নিয়ে গেছে চিকিৎসার জন্য।
অনিক আর দেরি করেনি। খুব তাড়া তাড়ি বিদেশে নিয়ে গেছিলো ছেলেকে। এখন তার ছেলে প্রায় সুস্থ। অনিক এখনো চোখ বন্ধ করলে সেই বইটা দেখতে পায়। বইয়ের মাঝের কিছু পাতা খালি, কোন লেখা নেই। তবে কি লেখক তাকে সুযোগ দিয়েছে তার জীবনের কিছু সময় তার মতো করে সাজানোর! আবার এই সব চিন্তা উদ্ভটও হতে পারে, সে বাস্তবেই আছে...।






সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৩:৫৫
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×