somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আসাদের জন্য ভালোবাসা (প্রথম পর্ব)

২২ শে মে, ২০১১ রাত ১২:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




আসাদ! আসাদ! আসাদ! তিন অক্ষরের ছোট্ট একটা নাম হয়ত অন্য সবার কাছে। কিন্তু আমার কাছে আসাদ একটা কবিতা,ভালোবাসার কবিতা। আসাদকে আমি অনেক পছন্দ করি। শুধু পছন্দ বললে ভুল হবে,আমার সমস্ত সত্তাটুকু জুড়ে আসাদ। অথচ আমি আসাদের জন্য যে তীব্র ভালোবাসার আবেগ ধারণ করি,তার ছিটেফোঁটাও মনে হয় আমার জন্য নেই আসাদের।

আসাদ নামক এই উস্কোখুশকো,এলোমেলো চুলের পাগল ছেলেটার সাথে আমার পরিচয় পর্বটা খুব অদ্ভুত ভাবে হয়েছিল। কিভাবে হয়েছিল সেটা বলি।

তখন আমি ইন্টার পরীক্ষা দিয়ে কিছু দিনের জন্য পড়ালেখা থেকে মুক্তি পেয়ে বাসায় বসে আছি। নারায়নগঞ্জের ছোট্ট যে বাড়িটাতে থাকি আমরা—তার আশে-পাশের অধিকাংশ বাড়ির বাসিন্দারা শিক্ষা কাকে বলে জানেনা,প্রায়-ই সেখানে অদ্ভুত সব কুৎসিত ঝগড়ার শব্দে কানে তালা লেগে যাওয়ার মত অবস্থা হয়। বিয়ের পুতুল সেজে বাচ্চা মেয়েগুলোকে পিঁড়িতে বসতে হয় জীবনের আসল সংজ্ঞা জানার আগেই। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগে আমি ওই পরিবেশে গেলাম কিভাবে? আমাদেরকে ওই পরিবেশটাতে থাকতে হয় বাবার চাকরির সুবাদে। আমার বাবা নারায়নগঞ্জের একটা গার্মেন্টেসে স্বল্প বেতনের হাড়ভাঙ্গা চাকরি করেন। সারাদিন পরিশ্রম করে ঘরে ফিরে আমার মায়ের সাথে ঝগড়া করেন। সেই ঝগড়া দেখার মত হয়। মাঝে মাঝে চুলাচুলিও হয়। আমি এইসব দেখে অভ্যস্ত। তাই নির্লিপ্ত ভাবে বসে থাকি। মা প্রত্যেকদিন বলেন বাবাকে ছেড়ে চলে যাবেন। আমি সেই দিনের অপেক্ষা করি।

কথা বলতে বলতে অন্য প্রসঙ্গে চলে যাচ্ছি মনে হয়। আমার এটা বড় সমস্যা। আমি অনেক কথা বলি। আসাদ ও বিরক্ত হয় এখন। আগে সে আমার কথা মুগ্ধ পাঠ করত। এখন করেনা। আচ্ছা! কথা তো পাঠ করা যায়না। ভুল বললাম। সে একসময় ছিল মুগ্ধ শ্রোতা। পরে আর মুগ্ধ শ্রোতা থাকেনি সে। ভ্রু কুঞ্চিত শ্রোতা হয়ে গেছিল। আবার ও অন্য প্রসঙ্গে চলে গেছি। আমি আসলে আসাদের সাথে আমার প্রথম দেখা হওয়ার কথা বলতে চাচ্ছি। বলা শুরু করি--আমি এইচএসসি দিয়ে বাসায় বসে থাকতে থাকতে তখন বিরক্ত হয়ে গেছি। ভর্তি পরীক্ষার জন্য কোচিং করা দরকার। বাবা টাকা দিলে ঢাকা ভার্সিটির ভর্তি কোচিং-এ ভর্তি হব। কিন্তু বাবা টাকা দিতে গড়িমসি করছে। টাকা দেওয়ার চেয়ে আমার জন্য বড়লোক জামাই খুজতেই বাবার আগ্রহ বেশি। যাই হোক, আমাকে বাসায় বসে অলস সময় কাটানোর বিরক্তি থেকে উদ্ধার করতে আমাদের পাড়াতো বড় ভাই তুষার এলাকার এক কোচিং এ সেভেনের কিছু ছেলেমেয়েকে পড়ানোর জন্য আমাকে বললেন। এখানে চুপি চুপি বলে রাখি তুষার ভাই আমাকে পছন্দ করেন—আকার ঈঙ্গিতে বহুবার সেই কথা বুঝাতে চেয়েছেন। পছন্দের কথা শুধু যে আমাকে বোঝাতে চেয়েছেন তাই না—আমার বাবাকেও বোঝাতে চেয়েছেন। কিন্তু আমার বাবা তুষার ভাইকে দুই চউক্ষে দেখতে পারেন না। তুষার ভাইকে বাবা গালি দেন “গাধার বাচ্চা” বলে। তুষার ভাইকে গাধার বাচ্চা বলায় আমার প্রবল আপত্তি। তুষার ভাই একটু গাধা প্রকৃতির ঠিক আছে। থার্ড ডিভিসনে পলিটিক্যাল সায়েন্স পাশ করে এখন বেকার ঘুরে বেড়ান। কিন্তু তাই বলে তো তুষার ভাইয়ের আব্বা গাধা না। তাছাড়া তুষার ভাই ভাল ছেলে। আমার তুষার ভাইকে ভালোই লাগে। কিন্তু আমার বাবার তুষার ভাইকে ভালো লাগেনা। কেন ভালো লাগেনা সেইটা আমি জানি। ভালোমতই জানি। তুষার ভাই গরীব ফ্যামিলির ছেলে। আমার বাপের খুব শখ মেয়ের হাইফাই ফ্যামিলিতে বিয়ে দেওয়া। আমার বাবা নিজেকে মধ্যবিত্ত বলে দাবী করতে পছন্দ করেন। এটাকেই বুঝি বলে গরীবের ঘোড়ারোগ। যার ঢাল নেই তলোয়ার নেই,তার নিধিরাম সর্দার সাজার শখ!

আমার মনে হয় আমার প্রতি আগ্রহটা আরো ভালোভাবে বুঝাতেই গায়ে পড়ে তুষার ভাই আমাকে কোচিং-এ পার্টটাইম চাকরি দিলেন। চাকরি দেওয়ার সময় খুব ভাব নিয়ে বলেছেন,"নীতু,টাকা-পয়সা নিয়ে কোন ঝামেলা করবানা। যা দিব তাই নিবা।" আমি উনাকে তখন কঠিন গলায় বলেছি,"না তুষার ভাই! আমার যা প্রাপ্য তাই দিতে হবে আপনাকে।" গাধা তুষার ভাই আমার কথা শুনে ভ্যাবাচেকা খেয়েছেন ভালোই। আমি মেয়েটা বেশ বদ আছি। হাহাহা। আসলে তো আমি কোন টাকাই নেবনা। টাইম পাসের জন্য বাচ্চাদের পড়ানো। তুষার ভাই সেটা বোঝেননি। তুষার ভাইয়ের সেই কোচিং সেন্টারের আবার গালভরা নাম। “অধ্যায়ন কোচিং সেন্টার।"

যাই হোক,অধ্যায়ন কোচিং সেন্টারে ছাত্র নং অধ্যয়ং তপঃ করানোর জন্য আমি এক বিশ্রী গরমের বিকালে (কবি সাহিত্যিক হয়তো লিখতেন সুন্দর আলোছায়া মাখা মধুমাসের বিকালে। কিন্তু আমি যেহেতু কবি-সাহিত্যিক না,তাই এত ঢং করে বলতে পারলাম না। বিশ্রী গরম আমার কাছে বিশ্রী গরম-ই) বাড়ি থেকে বের হলাম। কোচিং সেন্টার বাসা থেকে হাঁটা রাস্তা। কোচিং এ গিয়ে দেখি দরজার সামনে একটা গুঁফো লোক হা করে ঘুমাচ্ছে। হা করা মুখ দিয়ে লালা বের হয়ে গড়িয়ে গড়িয়ে পড়ছে। ভেতরে চার-পাঁচ জন ছেলেমেয়ে মাদুর পেতে বসে আছে একটা রুমে। ছেলে-মেয়েগুলোর কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম—

--তোমরা কোন ক্লাসে পড়?

বুদ্ধিজীবি মুখ করে একটা ছেলে বলল,

--আমরা ক্লাস টেন। তুমি কি নতুন ভর্তি হয়েছ এখানে?

আমি মিষ্টি করে হাসলাম। ছাত্র পড়া না পারলে স্যাররা যেরকম মিষ্টি কিন্তু তিরষ্কারের হাসি হাসেন সেই রকম হাসি। মুখে হাসি নিয়েই বললাম,

--হ্যাঁ,এখানে ভর্তি হয়েছি,তবে পড়তে নয়,পড়াতে। ক্লাস সেভেন কে পড়াব। তোমার নাম কি ছেলে?

বুদ্ধিজীবি এবার একটু টাসকি খেল। তার আশে-পাশের বাকি ছেলেমেয়েরা গোল গোল চোখ করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। বুদ্ধিজীবি টাস্কিত চেহারা নিয়েই বলল--

--আপু আমি খুব-ই সরি আপনাকে দেখে আমাদের সমবয়সী মনে হল। আমার নাম আরিফ। সর্দার পাড়ায় থাকি। তুষার ভাইয়ের কোচিং দেখেই এখানে পড়তে আসি।

আমার হাসি কোনভাবে চেপে রাখলাম। এই ছেলে ভয় পেয়ে পুরা গুষ্টির ইতিহাস বলা শুরু করবে এখন। আমার মনে হয় বলা দরকার আমি তোমাদের চেয়ে খুব একটা বেশি বড় না। কিন্তু আমি সেটা না বলে গুরুগম্ভীর ভাব নিয়ে মাদুরে বসে গেলাম। ছেলেমেয়েগুলো একটু দূরে সরে গিয়ে আমাকে আরাম করে বসার সুযোগ দিল। মাদুরে বসে বসে ঝিমানো আরম্ভ করেছি এমন সময় বাংলা সিনেমার নায়কের মত ভঙ্গি করে আসাদ ভেজানো দরজা খুলে রুমটাতে ঢুকল। হাহাহা। বাংলা সিনেমার নায়ক কথাটা মজা করে বললাম। আসাদ বাংলা সিনেমার নায়ক না। সে আমার নায়ক। শুধু আমার।

আসলে আসাদের আগমন বাংলা সিনেমার মত হয়নি। আমার মনে আছে আসাদ বাংলা সিনেমার নায়কের মত ঢিসুম করে না,বরং খুব ধীরে শান্ত ভাবে ভেজানো দরজাটাতে একটা ধাক্কা দিয়েছিল। দরজা ফাঁক হওয়ার পর সেই ফাঁকা জায়গা দিয়ে আসাদ উকিঝুঁকি দেওয়া শুরু করল। তার উকি দেওয়া দেখে আমার খুব হাসি আসল কেন জানি। আমি তীক্ষ্ণ গলায় বললাম,"কাম ইন"! আসাদ মনে হয় বেশ ভয় পেয়ে বাইরেই দাঁড়িয়ে থেকে গেল নারী কন্ঠে "কাম ইন" শুনে। আহারে কি ভদ্র ছেলেটা! কিছুক্ষণ পর তুষার ভাই আসলেন,তাঁর পিছনে পিছনে আসল আসাদ। আমাকে রুমের মধ্যে ছেলে-মেয়েগুলোর সাথে দেখে তুষার ভাইয়ের মুখ একশ ওয়াটের বাল্বের মত জ্বলে ঊঠল। উনি বিগলিত হাসি দিলেন।

--নীতু,কখন এলে? অনেকক্ষণ ধরে বসে আছ?
--জ্বী তুষার ভাই। অনেকক্ষণ ধরেই বসে আছি। আপনি সাড়ে তিনটায় আসতে বলেছেন। এখন সোয়া চার বাজে। শুধু আমি না,এই বাচ্চা ছেলেমেয়েগুলোও বসে আছে। আমার আগে থেকেই বসে আছে। টাইম মেইনটেন করা একটা গুণ। আপনার সেই গুণ নাই।

(এক নিঃশ্বাসে অনেক কথা বলে ফেলে আমি থামলাম)

কথা শেষ করে দেখি আসাদ ( আমি তখনো তার নাম জানিনা) কেমন করে যেন আমার দিকে তাকিয়ে আছে। সেই দৃষ্টিকে সাহিত্যের ভাষায় ঠিক কি বলে আমি জানিনা। তবে সেখানে আমার জন্য প্রেমের আহবান (তুষার ভাইয়ের দৃষ্টির এটা বড় বৈশিষ্ট্য) বা আগ্রহের চিহ্ন ছিলনা। সব মেয়েদের মনে হয় একটা জন্মগত প্রতিভা থাকে কোন দৃষ্টি কেমন সেটা দেখেই বলে দেওয়ার। আসাদের তাকানোর মধ্য কি যে ছিল ঠিক জানিনা। তবে হুট করে সেই এলোচুলের মায়া মায়া ছেলেটাকে আমার ভাল লেগে গেল। ছেলেটাকে ভালো লাগল বলার চেয়ে বলা ভালো আমি ছেলেটার সেই 'কেমন করে তাকানোর’ প্রেমে পড়ে গেলাম। তবে সেই প্রেমে পড়ার ব্যাপারটা বুঝতে না দিয়ে আমি তুষার ভাই-এর দিকে তাকিয়ে দেখি তিনি নতুন বউ-এর মত লজ্জা লজ্জা মুখ করে আমার দিকে তাকাচ্ছেন। আমাকে কিছু বলতে চান মনে হয়।

--তুষার ভাই আমাকে কিছু বলবেন?
--তোমার সময় নষ্ট করে বসিয়ে রাখার জন্য সরি নীতু।
--সরি হওয়ার কিছু নাই তুষার ভাই। আমার এখন অফুরন্ত অবসর। বাসায় রান্নাবান্না শিখে আর সেলাই করে দিন কাটাই।
--মেয়েদের রান্নাবান্না শিখে রাখা ভাল।
--আর ছেলেদের কি করা ভাল? মেয়েদের রান্না করা খাবার পায়ের উপর পা তুলে বসে বসে খাওয়া?
--না না তা হবে কেন?
--আচ্ছা বাদ দেন। পুরুষরা এক আজিব জীব। এক মুহুর্ত নারী ছাড়া চলতে পারবেনা কিন্তু নিজেদের মধ্যে আড্ডা দেওয়ার সময় নারীর যাবতীয় দোষ মাইক্রোস্কোপ দিয়া খুঁজে বাইর করবে। তা আপনার কোচিং-এর তো দেখি বেহাল দশা। ছাত্র-ছাত্রী তো দেখি হাতে গোনা। সেভেন এর কোন ষ্টুডেন্ট-ই নাই। ক্লাসের মধ্যে চেয়ার টেবিল নাই। কেমন দারোয়ান রাখসেন দেখেন হা করে ঘুমাইতাছে।


তুষার ভাই-এর ফর্সা গাল লাল হয়ে উঠছে লজ্জায়। আমি হাসতে লাগলাম।

--তুষার ভাই,আপনি মেয়ে হলে ভাল হত। আপনি কি জানেন আপনার আচরণ মাঝে মাঝে মেয়েদের মত লাগে?
--কি যে বল নীতু!

অন্য কোন ছেলে হলে এই কথায় ভয়াবহ রেগে যেত। তুষার ভাই একটু গাধা দেখেই মনে হয় উনার অপমানবোধ বেশ কম। এই টাইপ ছেলেদেরকে মেয়েরা নাকে দড়ি দিয়ে ঘুরায়। তুষার ভাইয়ের সাথে বিয়ে হলে আমিও মনে হয় তাঁকে নাকে দড়ি দিয়ে ঘুরাব। যদিও আমি এত তাড়াতাড়ি কাউকে বিয়ে করবনা। দিল্লি বহুৎ দূর হে!

সেদিন সেই বিশ্রী বিকালে তুষার ভাই ক্লাস টেনের ছেলে-মেয়েগুলাকে না পড়িয়েই ছুটি দিয়ে দিলেন। তার আগে আসাদ কে দেখিয়ে বললেন—“এই ছেলেটা তোমাদের সব সাবজেক্টের ক্লাস নিবে এখন থেকে। যদিও তোমাদের থেকে বেশি বড় না বয়সে। তারপর ও তোমরা শ্রদ্ধা করবে। ভাইয়া বলবে তাঁকে,ঠিকাছে? আজকে এমনিতেই অনেক দেরি হয়ে গেছে। তোমাদের বাড়ি ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে যাবে। তোমাদের আজকে ছুটি,বাড়ি চলে যাও।"

আমি ও ছেলে-মেয়েগুলোর সাথে আমার বাড়ি যাওয়ার জন্য পা বাড়িয়েছি এমন সময় তুষার ভাই ডাকলেন-

--নীতু শোন।
--জ্বী বলেন।
--তোমাকে আসাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেই। ও এবার তোমার মতই ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষা দিল। ওরা আমাদের পাড়ায় নতুন এসেছে। আগে ঢাকায় থাকত।
--ও। ঢাকা থেকে নারায়নগঞ্জ। ডিমোশন হইছে দেখি।
--নীতু,সব সময় বাঁকা ভাবে কথা বলা ঠিক না।


এই প্রথম তুষার ভাইকে আমি বিরক্ত হতে দেখলাম। দেখে অবাক হলাম। নতুন একটা অপরিচিত ছেলের জন্য আমার সাথে তুষার ভাই ভ্রু কুঁচকে কথা বলবেন এটা আমি মানতে পারলাম না। আসাদের উপর কেন জানি রাগ হতে লাগল। তবে আমি অনেক রাগ ঊঠলেও রাগ চেপে রাখতে পারি। তাই শান্ত গলায় তুষার ভাইকে বললাম-

--আচ্ছা ভুল হইছে তুষার ভাই। আর কাউকে বাঁকা কথা বলবনা। কিন্তু আপনি কি ইন্টারের ছেলে-মেয়ে দিয়ে আপনার কোচিং চালাবেন? তাহলে বাঁশ খাওয়ার চান্স আছে। এই জন্য-ই বাবা আপনাকে গাধা বলে। হিহিহিহি।
--তোমার বাবা বিদ্বান মানুষ। আমাকে গাধা বলতেই পারেন। নীতু তুমি কি এখন বাড়ি যাবে? চল একসাথে যাই। আমিও এখন বাড়ির দিকে যাব।
--আমি বাড়িতেই যাব। একা যেতে পারব। তবে আপনি আপনার আসাদ মিয়ার সাথে যান। ওকে বাড়ি পৌছায় দেন। বেচারা নতুন আসছে এখানে। হারায় যেতে পারে। আর শোনেন কোচিং সেন্টারের নাম বদলান। অধ্যায়ন বলে কোন বাংলা শব্দ নাই। অধ্যয়ণ আছে।

এটুকু বলে আমি ধুমধাম করে কোচিং থেকে বের হয়ে রাস্তায় হাঁটা শুরু করলাম। হাঁটতে হাঁটতে মনে হল,আমি যে আসাদ মিয়াকে টিটকারি মেরে এত কথা বললাম,কিন্তু সে তো একবারের জন্য-ও মুখ-ই খুললোনা। আজব ছেলে তো! আমার কেন জানি তার সেই “কেমন করে তাকানো” দৃষ্টি চোখের সামনে ভাসতে লাগল। আসাদ মিয়ার প্রতি একটা আউলা-ঝাউলা টাইপ মায়া (এইটা কি জিনিস জানি না। মনে হল তাই বললাম) বুকে ধারণ করে আমি বাড়ি ফিরলাম সেদিন।


পরেরদিন খুব ভোরে হাঁটতে বের হয়েছি—অধ্যায়ন ক্রস করার সময় দেখি একটা ছেলে কি যেন করছে সেখানে। কিছুটা কৌতুহলী হয়ে দেখি অধ্যায়ন কোচিং সেন্টার লেখা সাইনবোর্ডটা বদলিয়ে ছেলেটা সেখানে "অধ্যয়ণ কোচিং সেন্টার" বসাচ্ছে। ছেলেটা আর কেউ-ই না,আসাদ। বুঝতে পারলাম তুষার ভাইয়ের নির্দেশ অনুযায়ী তার চেলা এই ভোর বেলা উঠে বানান বদলের কাজ করা শুরু করেছে। তুষার ভাই এত চেলা কিভাবে জুটায় কে জানে?

--আসাদ না? কি কর এখানে?

আসাদ এত ভোরে আমাকে দেখে মনে হয় একটু বিব্রত হল। কিন্তু খুব সুন্দর করে বলল,

--সাইনবোর্ড চেঞ্জ করছি। তুষার ভাই বলেছেন। আপনি ভাল আছেন?
--ওমা! আমাকে আপনি আপনি করছ কেন? আমিও তোমার মত এবার ইন্টার দিয়েছি। তুমি বললেই পার। আমাদেরকে তো কয়েকদিন এক-ই জায়গায় পড়াতে হবে।


আসাদকে একটু বাজিয়ে দেখতে চেয়েছিলাম আসলে। দেখতে চেয়েছিলাম মেয়ে দেখলেই ছোঁক ছোঁক করা ছেলে কিনা। কিন্তু আমাকেই প্রচন্ড রকম অবাক করে দিয়ে বেশ শান্ত কিন্তু কেমন একটা অধিকার নিয়ে আসাদ বলল-

--তাহলে তোকে তুই করে বলি? আমি আমার সব বন্ধুদেরকে তুই করে বলি। তুমি বলতে পারিনা।
--তুই বলবি? (আমি আকাশ থেকে পড়লাম যেন!)
--হ্যাঁ। তুই ও তো তুই বলে ফেললি। তুই-ই ভাল। সুন্দর।

এটুকু বলে আসাদ হাসল। এত মায়া সেই হাসিতে! কোন পাপ নেই সেখানে। আমার পুরো শরীর ঝিমঝিম করে উঠল। আমার হঠাৎ করে মনে হল সারাজীবন আমি এই নিষ্পাপ হাসি দেখেই কাটিয়ে দিতে পারব।

(চলবে)

দ্বিতীয় পর্ব

তৃতীয় পর্ব

শেষ পর্ব
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জুন, ২০১১ সন্ধ্যা ৬:৪১
৫৯টি মন্তব্য ৫৯টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

সম্পর্ক

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪২


আমারা সম্পর্কে বাঁচি সম্পর্কে জড়িয়ে জীবন কে সুখ বা দুঃখে বিলীন করি । সম্পর্ক আছে বলে জীবনে এত গল্প সৃষ্টি হয় । কিন্তু
কিছু সম্পর্কে আপনি থাকতে চাইলেও থাকতে পারবেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×