somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাড়িয়ে দাও তোমার হাত,আমি আবার তোমার পাশে হাঁটতে চাই

১৯ শে জুন, ২০১১ রাত ৮:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :





১৯/০৬/২০১১
(রবিবার)



তোর কথা আজকে অনেক বেশি মনে পড়ল। অন্যদিনের চেয়ে বেশি। তাই ঝটপট বসে গেলাম ডায়রিটা নিয়ে। অদ্ভুত হলেও সত্য,কিছুই লিখতে পারিনি,গত দুই ঘন্টা ধরে শুধুই কলম হাতে নিয়ে বসে আছি। অনেক কথা লিখে ফেলব ভাবছি,অনেক লাইন পর পর সাজাচ্ছি,কিন্তু সেগুলো কালো কালিতে রূপ পাচ্ছেনা। বরং আমাদের সেই পুরোনো স্মৃতি গুলো ভাবতেই ভালো লাগছে। একটার পর একটা ছবি ভেসে উঠছে,তোর-আমার—আমাদের বন্ধুত্বের সেই দিনগুলো।

আজকে খুব সুন্দর বৃষ্টি হয়েছে জানিস? ঝির ঝির বৃষ্টি। সকাল বেলা যখন বৃষ্টিটা শুরু হল,তখন আমি ক্লাসে। গভীর মনোযোগে ক্লাস লেকচার তুলছিলাম—ইট পাথরের বেড়া দেওয়া দরজা বদ্ধ ক্লাস রূমে বৃষ্টির শব্দ একদম-ই কানে আসেনি। লেকচার শেষ হ্‌ওয়ার পর ক্লাস থেকে বের হয়েই দেখলাম বৃষ্টি পড়ছে,সুন্দর বৃষ্টি। আমাদের দেশের মত সুন্দর বৃষ্টি আর কোথাও হয় বল? কোত্থাও হয়না। আমার ইচ্ছা করছিল হাত বাড়িয়ে বৃষ্টিটাকে একটু ছুঁয়ে দিতে। কিন্তু সেটা আর করা হলনা—আবার ক্লাস শুরু হয়ে গেল তক্ষুনি। সব ক্লাস শেষ করে আড়াইটার দিকে যখন কলেজ থেকে বের হব—দেখলাম তখন ও বৃষ্টি হচ্ছে অবিরত। হালকা বৃষ্টি,টুপ টাপ বৃষ্টি না—ঝির ঝির বৃষ্টি। সাথে বাতাস। বাতাসের জন্য-ই কিনা জানিনা—বৃষ্টির ফোঁটাগুলো বাঁকা হয়ে পড়ছে। দেখতে ভাল লাগে।

কলেজ গেইটে দাঁড়িয়ে দেখলাম রাস্তার মানুষগুলো এই অল্প বৃষ্টিতেই ছাতা মাথায় হাঁটাহাঁটি করছে,কেউ কেউ আবার পলিথিন মোড়ানো রিকশায় বাবু হয়ে বসা। জানিস,রিকশাওয়ালাগুলো বৃষ্টিতে ভিজে টুপটুপে হয়ে রিকশা চালাচ্ছে আর রিকশায় বসে থাকা অনেক কপোত-কপোতীকে বৃষ্টিসিক্ত না হয়ে বৃষ্টির রোমান্টিকতা দেখার সুযোগ করে দিচ্ছে। অবশ্য গরীব মানুষের বৃষ্টিতে ভিজলেই কি? খাওয়ার টাকা জোগাড় করতে হলে তো বৃষ্টিতে ভিজেই রিকশা চালাতে হবে। ঠান্ডা-জ্বর ঝারি তো গরীবদের হয়না—ওসব রোগ বড়লোকদের,না রে? আমি,তুই বড়লোক দেখেই আমাদের তো আর খাওয়ার-পরার চিন্তা নাই। তাই আমি বৃষ্টির দিনে বসে বসে তোকে চিঠি লিখি—নষ্টালজিয়ার আক্রান্ত হই,বৃষ্টিবিলাসের নাম করে চা’য়ের কাপে চুমুক দিই,পায়ের উপর পা তুলে বাদলা দিনে হূমায়নের প্রেমের গল্পের বই পড়ি—“বাদল দিনের প্রথম কদম ফুল।‘ কিংবা কোন কাজ-কাম না থাকলে নেটে গিয়ে ব্লগ পড়ি,সেখানে ক্যাচাল পোষ্ট থাকলে মহা আনন্দিত হয়ে বত্রিশ পাটি দাঁত বের করে যুক্তি তর্ক বিহীন ‘ঝগড়া’ করি। পালটা আক্রমন করে ব্লগে পোষ্ট দিতে আরো মজা,সবচেয়ে বেশি মজা গালিগালাজ করতে। কারণ কারো কিচ্ছু হয়না হাজার গালিগালাজ করলেও। মানুষের নীতিবোধ হারায় গেছে বুঝলি? জানি বুঝিস নাই। কারণ তুই তো আবার ব্লগ পড়তি না,গল্পের বই পড়তি না—বৃষ্টির দিনে তুই চলে যেতি মাঠে,ক্রিকেট কিংবা ফুটবল খেলতে। আমার সবচে’ অপছন্দের কাজগুলো তুই ইচ্ছা করে মনে হয় বেশি বেশি করতি। আজব মানুষ!

অনেক বকর বকর করে ফেলছি। তুই জানিস,বেশি কথা বলা আমার স্বভাব,বাজে স্বভাব। তোর কথা কেন মনে পড়ল সেইটা বলি। কলেজ থেকে বাসে করে ফিরতে হবে। টিকিট কাটার জন্য অনেক দূর হাঁটতে হয়। আজ কেন জানি একা একা হাঁটতে ইচ্ছা করছিল না। অনুকে বললাম,চল আমার সাথে,একটু এগিয়ে দিবি। সে প্রায় মুখ কুঁচকে বলল,নারে আমি রিকশা করে বাড়ি ফিরব,বৃষ্টিতে ভিজলে ঠান্ডা লেগে যাবে। আমার হাসি পেয়ে গেল কেন জানি। শেষমেশ কাউকে কিছু না বলেই নিজেই হাঁটা দিলাম শাহবাগের রাস্তা দিয়ে। হাঁটতে ভাল-ই লাগছিল। ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টির ছাঁচ গায়ে এসে লাগছে। বহুদিনের ভ্যাপসা গরম বৃষ্টিতে কেটে যাচ্ছে আজকে। বৃষ্টিতে মন ভাল হয়ে যাবে-যাচ্ছে এমন সময় যাদুঘরের কাছে এসে এক-ই ছাতার নীচে গল্প করতে করতে হেঁটে যাওয়া এক জোড়া মানুষ দেখে হঠাৎ তোর কথা মনে পড়ে গেল। ইস,আজ যদি তুই আমার পাশে থাকতি? আমরা একসাথে হাঁটতাম! সেই দিনগুলোর কথা মনে পড়ে গেল! তোর মনে আছে,আমাদের প্রিয় বইমেলার কথা,আমাদের বসন্ত উৎসবের কথা? মনে আছে রে তোর?!


জানি মনে নাই। খুব দ্রুত সবকিছু ভুলে যাওয়ার চমৎকার একটা ক্ষমতা আছে তোর। এটা নিয়ে একসময় খুব বিরক্ত হতাম। এখন তোর সবকিছু আমার বিরক্তির উর্ধে। তুই যেখানে ইচ্ছা যা,যেভাবে ইচ্ছা চল—আমার কিচ্ছু যায় আসে না। একসময় তোর সবকিছুর উপর আমার একটা অলিখিত অধিকার ছিল,আজ আর নেই।

তুই ছিলি পৃথিবীর শুদ্ধতম মানব। আমি মুগ্ধ হতাম তোকে দেখে। তুই-ই একমাত্র মানুষ,যাকে আমি নানাভাবে অসম্ভব বিরক্ত করতাম সারাক্ষণ,সেই তুই শত বিরক্তিতেও একটু ও রাগ করতি না। হাজার রাগানোর চেষ্টা করেছি তোকে,পারিনি। আমি নিজেই রেগে যেতাম তখন! তুই সবসময় বলতি--অন্তরকে পবিত্র কর,মনে সামান্য হিংসা রাখিস না,দেখবি পৃথিবীটা কি চমৎকার! আমি তোর কথা আজ ও মনে রেখেছি। অন্তরকে পবিত্র রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছি। কই,আমার কাছে পৃথিবী তো চমৎকার লাগেনা! কেন সুন্দর লাগেনা জানিস? কারণ এই দেশের ফুটপাতে ক্ষুধার্ত শিশুটির আর্তনাদ কবরের মাঝে শুয়ে থাকা তোর কানে না পৌছালেও আমার কানে ঠিক-ই পৌছায়! তুই তো মরে গিয়ে বেঁচে গেছিস,আমি কি করে মরে যাব বল? তুই নাহয় ছন্নছাড়া ছিলি,কিন্তু নিজের বাবা-মাকে এক সাগর কষ্টে ভাসিয়ে আমি ও তোর মত চলে যেতে পারিনা। এতটা স্বার্থপর যে এখনো হইনি। তোর কাছে,হ্যাঁ,তোর কাছে-ই তো শিখেছিলাম—পৃথিবীর সব মানুষ সমান,সবাই মানুষ—মনুষ্যত্ব খুব সুন্দর জিনিস! আজ কোথায় বিবেক,কোথায় মনুষত্ব্য? এসিডে ঝলসে যাওয়া নিষ্পাপ মুখগুলো কি মানুষের মনুষত্ব্যের প্রমাণ নাকি ভালোবাসার?

জানি তুই ওদের মত না,জানি তুই অমানুষ ছিলি না। তাই এই পবিত্র বৃষ্টি দিনে সব কলুষতা সরিয়ে দিয়ে তোকেই আমি বারবার কাছে চাই। কিন্তু বিধাতাও যে বড় নিষ্ঠুর। যে মানুষগুলো খুব খুব ভাল,তাদেরকে বিধাতা নিয়ে যান নিজের কাছে,নিজের কাছে রাখতে চান বলেই হয়ত! কিন্তু আমিও যে তোর সেই ব্যক্তিত্ব আর অহংবোধের আড়ালের নিষ্পাপ হাসিটাকে আজও মনের জলছায়াতে ধরে রেখেছি রে! ঐটূকুতেই আমার অনেক বেশি আনন্দ!

এই যে পৃথিবীর শুদ্ধতম মানব,তুই কি দেখতে পাচ্ছিস আমি আমার হাত এখনো তোর জন্য বাড়িয়ে রেখেছি। তুই আবার সেই আগের মত আমার পাশে এসে দাঁড়া। আমার হাতটা ধর। তোর স্পর্শে আমিও শুদ্ধ হই। তুই কি বুঝিস না,আমি ও যে আজ শুদ্ধ হতে চাই! পৃথিবীর সব অন্যায়,ঘৃণা,অত্যাচারকে ঠেলে ফেলে আমি যে পবিত্র হতে চাই! আমিও তোর মত হতে চাই রে।

আমি ও শুদ্ধ হতে চাই! শুদ্ধ হতে চাই! পৃথিবীর শুদ্ধতম মানুষ হতে চাই...

------------------------------------------------------------------------------------------

জলে ভেজা অসম্পূর্ণ চিঠিটা একটা পেন্সিল বক্স দিয়ে চাপা দেওয়া। কোন এক মেয়ে তার জীবনের কোন এক আবেগিক মুহূর্তে মৃত পুরোনো বন্ধুকে চিঠিটা লিখতে লিখতে হঠাৎ থেমে গেছে। হয়ত হুট করে আসা আবেগ হুট করে কমে আসায় সে এখন পড়ালেখার কঠিন চাপে বিদ্ধ হয়ে “অ্যাঁ,উ,উউ” করে বিশাল ভারি ভারি পড়া মুখস্থে ব্যস্ত। কেউ জানবেনা—এই মেয়েটি অল্প কিছু মুহুর্ত আগে পৃথিবীর “শুদ্ধতম মানুষ” হতে চেয়েছিল!

এই মেয়েটির মত আমাদের ও মাঝে মাঝে বড় সাধ হয়,সব কলুষতা থেকে দূরে সরে গিয়ে শুদ্ধ হই। আমরা কেন জানি পারিনা। কিছুতেই পারিনা!
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জুন, ২০১১ রাত ৯:৫৮
৬২টি মন্তব্য ৬৪টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৪০



'অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ'।
হাহাকার ভরা কথাটা আমার নয়, একজন পথচারীর। পথচারীর দুই হাত ভরতি বাজার। কিন্ত সে ফুটপাত দিয়ে হাটতে পারছে না। মানুষের... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×