অনাকাঙ্খিত বৃষ্টিতে বৃষ্টিবিলাসের কোন ইচ্ছা জাগে না। বরং কোন কোন সময় একটু ভয়ই পেয়ে যাই।
শীতকালের বৃষ্টি এসেছে আজ আকাশ কালো করে। ক্লাসে পৌছতে পৌছতেই মোটামুটি ভিজে গিয়েছি। একটু একটু যে কাপছি না তা না। বাতাসটা একটু বেশীই ঠান্ডা। প্রফেসরের ক্লাস আছে আজকে।
পোলার রিজিয়নের পরিবর্তন আমার ডেইলি লাইফে কি ধরনের পরিবর্তন আনতে পারবে সেটা কোন মতেই বুঝতে পারছি না।
একঘেয়ে ক্লান্ত গলায় প্রফেসর পড়িয়ে যাচ্ছে, গ্লোবাল ওয়ার্মিং! এবং তারসাথে সম্পর্কে ফাটল ধরার এক ধরনের সংযোগ দেখানোর চেষ্টা করে চলেছেন প্রাণপনে।
সম্পর্কে ফাটল?
সম্পর্কে ফাটল ধরার সাথে গ্লোবাল ওয়রমিং এর কি যোগাযোগ থাকতে পারে সেটা কোন ভাবেই বুঝতে পারছি না।
হঠাত করেই আমার দিকে ইশারা করে জানতে চাইলেন, ঠিক কোন সময় থেকে বয়ফের বিশাল চাইয়ে ফাটল ধরে?
আমি হতাশ এবং পরাজিত চোখে তাকিয়ে থাকলাম। প্রফেসর নির্লিপ্ত, আমার উত্তর দিতেই হবে।
বোকা পোলার বিয়ারদের ছান্দ্যিক বিচরণের কথা বললাম। ভয়ংকর পেঙ্গুইনদের নির্বোধ কার্যক্রম সম্পর্কেও জানাতে ভুল করলাম না।
হোমো সেপিয়েন্সের কথা মাথায় আসলেও তা চেপে গেলাম কোন এক অজানা কারণে।
এইবার প্রফেসরের চোখে অগ্নিদৃষ্টি খেলে যাওয়ার কথা থাকলেও সেখানে দেখা গেল তুচ্ছ তাচ্ছিল্যের আভা।
ঠিক একই রকম দৃষ্টিতে মেয়েটের দিকে তাকিয়েছিলাম আমি।
-শাট দ্যা ফাক আপ প্রস্টি। আমি যা বলি তাই হবে।
পরাজিত পাথর চোখে মেনে নেওয়া ছাড়া তার গত্যন্তর ছিল না। এবরশনের পর থেকে একটা বিরাট পরিবর্তন দেখতে লাগলাম। মিসক্যারেজ শব্দটা একবারের জন্যও আমার আশে পাশে ঘেষতে দিলাম না। বিভিন্নভাবে তার মন ভালো রাখার চেষ্টা করতে থাকলাম। কোন চেষ্টাই আপাত চোখে সফল মনে হচ্ছে না।
তার দাবী ছিল একটাই। তার মাতৃত্বসনদের বৈধতা পাওয়া। না পেয়ে একটুও ক্ষুব্ধ হয়নি সে। যা যা করতে বলেছিলাম একান্ত বাধ্যমেয়ের মতই করেছে। আর আমার হিপোক্রেসি বারবারই মুগ্ধ করেছে নিজেকেই।
সারাক্ষণ মন খারাপ করে বসে থাকতে দেখলে বাজে দেখায়। তাই প্রায়ই চেষ্টা করি মন ভালো হবার মত কোন কাজ করতে। মশারিই নিয়ে একটা জোকস মনে পড়ছে এখন। বলব নাকি? শুনো,
একলোকের মশারিতে একটা জায়গায় ফুটো যেখান দিয়ে মশা ঢুকতে পারে, ত সে করল কি আরেকটা ছিদ্র করে দিল ওইদিক দিয়ে মশারা বের হয়ে যাবে ভেবে।
এটুকু বলে আমি নিজেই বোকার মত বসে থাকি। তার কোন ভাবান্তর হল না।
-একটা এইটিন প্লাস কি শুনাব?
সাথে সাথেই সে আমার দিকে তাকাল,
নির্লিপ্ত, আবেগহীন, ক্লান্ত নষ্ট পাথর চোখের উপর স্বচ্ছ প্লাস্টিকের আস্তরণ। এই চোখে কোন ঘৃণা নেই, নেই কারো জন্য বিন্দুমাত্র ভালোবাসা। ভালোবাসা পাওয়ার কোন তৃষ্ণাও নেই। কারো দিকে করুণার দৃষ্টি নিক্ষেপ করার মত বোধও কখনো জাগে নি। হয়তো কখনো জেগেছে কিন্তু আজ আর তার কোন চিহ্ন অবশিষ্ট নেই।
আমি ভয় পেয়ে যাই ঐ চোখের দিকে তাকানোর সাহস আমার নেই। আমি তাকাই না। আহত চোখ, বন্ধ করে ঘুমিয়ে পড়তে চাই এখন।
এক বন্ধুর সাথে দেখা করা উচিত, এমন কোন সমস্যা এখন পর্যন্ত পাইনি যার সমাধান তার কাছে নেই। তাকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে সব বললাম। তার চোখে হাসির আভা স্পষ্টতই দৃশ্যমান। আমি আশ্বস্ত হই।
সে ন্যায় বিচারের আশ্বাস দেয়।
তার হাতে একটা ছোট্ট রুমাল। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে আছে অপলকে। যেন কোন একটা ঠিক ঠিক সময়ের জন্য অপেক্ষা। আমি নিজের ঘড়ির দিকে তাকাই।
সেকি সেকেন্ডের কাটাটা কোথায়? ঘণ্টার কাটাটা ঘুরে চলছে প্রায় সেকেন্ডেরটার মতই। আমি অধৈর্য হয়ে যাই। সে তখনও তাকিয়ে আছে টার ঘড়িটা দিকে, একমনে। কোনদিকে না তাকিয়ে।
হঠাৎ রুমালটা পড়ে গেল হাত থেকে। পরিচিত দৃশ্য। সম্ভবত অপরাধীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হল।
চকিতে পিছনে তাকিয়ে দেখি, জয়ের ভি সাইন দেখিয়ে হেঁটে যাচ্ছে অপরাধীর দল।
আমিতো এমনটা চাই নি। আশাহত চোখে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গকারী বন্ধুর দিকে তাকাই। আমার চোখে আগুন। ক্রোধে ফেটে পরি, নিরুপায় আমি।
পরের দৃশ্যগুলো দ্রুতই বদলে যায়। পাথর চোখের রমণী আমার পাশে দাঁড়ায়। তার হাজার বছরের পুরানো পরিচিত চোখে দেখি সম্পূর্ণ অপরিচিত ছায়া।
আমি টের পাই আজ আর আমরা একা নই। আরও অনেকেই আজ আমাদের কাতারে এসে দাঁড়িয়েছে।
তাদের কারও চোখেই আজকে নির্লিপ্ততা নেই, হতাশার চিহ্ন নেই। তার বদলে সেখানে আছে ঘৃণা। অগ্নিঘৃণা!
কোটি চোখের অগ্নিঘৃণায় আজ ভষ্মীভূত করব সকল অপরাধীদের!
----------------------------------------------------------------------------------
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ২:৪৯