ষ্টুডেন্ট লাইফে সকালে প্রাইভেট,কলেজ,বিকেলে টিউশন নিয়ে সারাদিন বাহিরে ব্যস্ত থাকতাম।মাঝে একটু সময় ও সুযোগ পেলেই ফ্রেন্ডদের সাথে বেরিয়ে যেতাম ঘুরতে অথবা শপিং করতে।এমনকি ছুটির দিনেও…… সেদিন ছোট বোনকে নিস্তার দিতামনা,ওকে নিয়ে বেরিয়ে পড়তাম ছুটাছুটি করতে।মা বাসায় সারাদিন একা একা কাটাত।ঘরের কাজের ফাঁকে ফাঁকে মা এই জানালা থেকে ওই জানালা,বারান্দা পায়চারি করত,উঁকি মারত,ফিরছি এটা দেখার প্রত্যাশায়।মা খুব চাইত তাঁকে একটু সময় দিই,কিন্তু দেয়া হতনা।যেখানেই যাই বাবার কড়া নির্দেশ ছিল সন্ধ্যার পূর্বেই বাসায় ফিরতে হবে।সন্ধ্যায় ফিরে ওই রাতেই মায়ের কাজের ফাঁকে ফাঁকে যা একটু কথা হত।এখন ভাবি-কিভাবে এত ছুটাছুটি করতাম।জব শেষে বাসায় ফিরেই এখন এতই ক্লান্ত থাকি আর বেরুতে কোনভাবেই মনে চাইনা।আমার বুঝি তখন দুটি ডানা ছিল কেউ এখন কেটে রেখে দিয়েছে সাথে পায়েও শিকলও বেঁধে দিয়েছে।আর আমার মা-বোন সে খুশিতে লুটুপুটু খাচ্ছে।
তখন মায়ের একাকিত্বটা স্পর্শ করত না,এখন খুব অনুভব করি।খুব ইচ্ছা করে অনেকদিন ধরে মায়ের কাছে গিয়ে থাকি,মাকে অনেকক্ষন সময় দিই।অথবা মাকে আমার কাছে এনে অনেকদিন রেখে দিই।কিন্তু ইচ্ছা ইচ্ছাই রয়ে যায়।মায়ের কাছে গিয়ে অনেকদিন থাকা হয়না আর মা’ও তার পূর্ণ সংসার ছেড়ে আমার কাছে এসে বেশীদিন থাকতে পারেনা।সেদিন এসেছিল আমার কাছে,কয়েকদিন না থাকতেই আবার চিটাগাং ফিরে গেছে।আমাকে ইক্ষু কেটে খাওয়াতে গিয়ে যাওয়ার আগেরদিন ডান হাতের নখ মাংসহ অনেককটা কেটে গেছে।কী না সুখে ছিলাম এই কয়টা দিন।মা রেঁধেছে,বেড়েছে।তাঁর ছোটবেলা,স্কুল-কলেজ আর নানার গল্প শুনিয়েছে।আমি অতিথির মত থেকেছি,খেয়েছি,ঘুমিয়েছি(ঘুরতে পারিনি)।এখন আমার অতিথির দিন শেষ।
মায়ের জন্য কষ্টই হয়।সারাজীবন সংসারের কাজ করেছে,আমাদের পড়াশুনা শেষ করিয়েছে।এখন পর্যন্ত আমার ছোট ভাই-বোনের পড়াশুনা আর সংসারের কাজ নিয়ে একইভাবে খেটে যাচ্ছে।মেয়ের বাসায় এসে কোথায় একটু রিলাক্সে থাকবে,ঘুরবে,গল্প করবে তা না।সারাদিন রান্না-বান্না আর এটা-ওটা নিয়ে নিজেকে ব্যস্ত রেখেছে।
সব মায়েরাই বুঝি সন্তানদের জন্য এমন করে,আর সব মেয়েদের নিজের সংসার হওয়ার পর মায়ের জন্য এমনই অনুভূতি হয়,কষ্ট হয়।যে অনুভূতিগুলো মায়ের সাথে কোনদিন শেয়ার করা হয়না।মাকে বলা হয়না যে-মা, তোমাকে আমি অনেক মিস করছি……তোমার কাছে গিয়ে আমার অনেকদিন থাকতে ইচ্ছা হচ্ছে…… অন……নেকদিন………।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:৪৭