somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমি, মাহাদীব এবং আমাদের বিচ্ছিন্ন ঘোরাঘুরি : ময়মনসিংহ

০৮ ই আগস্ট, ২০০৯ সকাল ১০:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


১.
সময় পেলেই আমরা ঘুরতে বের হয়ে যাই। সে সূত্রে ব্যাগ গুছিয়ে মাহাদীবের বাসা থেকে বের হলাম আমরা। রাত এগারোটায় ফার্মগেটের কাছে আসতেই আমার সাথের বাবুটার আবদার। একটা মোজো কিনে দাও। কাঁধে ব্যাগ। রিকশায় মিরপুর, রাতে আমার বাসায়; সকালে লোকাল ট্রেন ধরে যাবো ময়মনসিংহ।
না, মোজো ছাড়া উনি আর সামনে এগুবেন না। আমারও কোন ইচ্ছা নেই ওকে ওই ওষুধ ওষুধ গন্ধ পানীয়টা কিনে দেবার। আমি রাস্তা পার হয়ে চলে এলাম। মাহাদীব তখনো ওপারে। রাস্তার এপার আর ওপার থেকে মোবাইল ফোনে আমাদের দরকষাকষি চলতে লাগলো। দরকষাকষির একপর্যায়ে দেখি ওপারে ও নেই। ফোন দিলাম। দেখি রাগ করে ও পান্হপথ সিগন্যাল-এ গিয়ে বসে আছে।

২. "নরছুইন তো মরছু্ইন"
অনেকদিন ট্রেনে চড়া হয় না। লোকল ট্রেনে চড়ার প্রস্তাবটা আমার ছিলো ।
প্রায় প্রতিটা স্টেশনে থামা, ধাক্কা-ধাক্কি, মুড়ি-চানাচুর ওয়ালাদের সাথে গপ্পো, সিট নিয়ে যাত্রীদের ঝগড়া, মাঝ পথে টিটি'র টিকেট চাওয়া, পুরোনে স্টেশনে নেমে চা খাওয়া।
ময়মনসিংহ যাচ্ছি এ কথা শুনে বাঘের গুহায় চাকরি করা আমার বন্ধু ইমরান ফেসবুকের ওয়াল-এ লিখলো, ময়মনসিংহ যাচ্ছো ভালো কথা কিন্তু গফরগাঁও দিয়ে যাওয়ার সময় সাবধান কারণ- "নরছুইন তো মরছু্ইন" পার্টির খপ্পরে পড়তে পারো ওখানে। আমরা গফরগাঁও-ই যাচ্ছিলাম। আমাদের বন্ধু ছড়াকার ফয়েজ রেজার বাড়ি।

দুইশ টাকা জমা হলেই টানবো শিকল আমি ...
এই দুনিয়ায় শখের চাইতে নাইকো কিছু দামী...

[ছড়াটি আমার সহযাত্রীর শৈশবে লেখা]

দুপুর নাগাদ আমরা গিয়ে পৌঁছালাম গফরগাঁও। রোদে গরমে নেয়ে ফয়েজ রেজার বাড়ি গিয়ে পেলাম এক গ্লাস ঠান্ডা লেবুর সরবত। বাড়ির পাশে কলের শীতল পানি ডক ডক করে গিলে ফেললাম অনেকখানি, সে পানিতে শরীরটা ভিজিয়ে দিতে পারলে বুঝি আরো ভালো হতো। আপু এনে দিলেন গাছে পাকা আতা। আমি হাদী আর রেজার ভাগনে রায়হান সেগুলো কাড়াকাড়ি করে খেলাম। [মাহাদীব'র এইসব অপরিপক্ক শিশুসুলভ আচরণের জন্য আরো কত যে এমন লজ্জায় পড়তে হয়েছে আমাকে !]


গফরগাঁও খেয়াঘাটে আমাদের চা পান


নদীর পাড়ে চায়ের দোকান


গফরগাঁও খেয়াঘাট

৩. রহিমা খালার বাড়ি
রহিমা খালার বাড়ি নান্দাইলে। সেই বই-এ পড়া নিঝুম গ্রাম। ভর দুপুরেও ডাক শুনছিলাম ঝি ঝি পোকার। একেবারে নিখাদ আতিথিয়তা যাকে বলে তা পেলাম। যেমন আতিথিয়তা চিরাচরিত ছিলো দূরের গ্রামের সরল সহজ মানুষদের মধ্যে। খালু গেলেন পুকুরে মাছ মারতে। আমরা গাছের ছায়ায় বসে গল্প জুড়ালাম।
দুপুরে মাছের ঝোল, ঝাল মুরগির মাংশ, ভর্তা আর ডাল দিয়ে পেটপুরে খেলাম। মাহাদীব অবশ্য প্লেটটা ও চেটেপুটে খেয়েছে।
বিপত্তিটা হলো যখন মা মুরগিটা তার বাচ্চা কাচ্চাদের নিয়ে হাদীর বাড়তে থাকা বপুটার ওপর হাটাহাটি শুরু করলো। মুরগির বাচ্চা আর হাদীর চেচামেচিতে আমাদের ঘুম ভাঙ্গলো। ঝিঝি পোকার ডাক শুনতে শুনতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম আমরা।


নান্দাইলের পথে




গত বছর এইখানটায় কী যে উত্তাল ছিলো।


রহিমা খালার বাড়ি থেকে বের হতে এদের দেখা


৪. বাংলাদেশের সবচে সুন্দর ক্যাম্পাস: বাকৃবি
দাওয়াতটা আসলে ফয়েজকে দিয়েছিলেন মৎস অনুষদের বিভাগীয় প্রধান; তাঁর ক্যাম্পাসে একদিন ঘুরে যাওয়ার। গফরগাঁও থেকে আবার ট্রেন চড়ি আমরা। রাত আটটায় ময়মনসিংহ রেলওয়ে স্টেশন। রাতের বাকৃবি ক্যাম্পাস দেখে আমরা স্রেফ অভিভুত। আমাদের জন্যে অপেক্ষা করছিলেন বাকৃবি প্রথম আলো প্রতিনিধি শরিফ বাবু, তার সাথে আমার দেশ প্রতিনিধি তাওহিদ। এত অথিতিপরায়ন মানুষ খুব কমই দেখেছি। সমস্তটা সময় ময়মনসিংহে আমাদের সঙ্গ দিয়েছেন। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ না করলেই নয় ।
রাতে টিএসসিতে আমাদের নৈশভোজ [!] পরিনত হলো একদল আড্ডাবাজ, ছাত্রনেতা, আর কজন সাংবাদিকের প্রানবন্ত আড্ডায়। ক্লান্তি উবে গেল নিমিষে। রাতে থাকার ব্যবস্থা হলো ফিশারিজ বিভাগের রেস্ট হাউজে।


স্থাপত্য শৈলীর চমৎকার এক উদাহারন এই ক্যাম্পাস


ক্যাম্পাস


ক্যাম্পাস


লেকের পানিতে লাম্পপোস্টের ছায়া। শুনশান রাত। যতদুর কান পাতি কোথাও কোনশব্দ নেই। মাত্র গোসলটা সেরে আমরা বসছিলাম বারান্দায়। চমৎকার শীতল বাতাস। মুখে গান আর সিগারেট। নিঃশব্দ রাত পেয়ে বসে যেন স্মৃতিকাতরতায়, এক পলকে দেখে নিলাম পেছনে ফেলে আসা সমস্ত জীবনটাকে


রেস্ট হাউজের বারান্দা থেকে


সকালে ঘুম ভেঙ্গে উঠলেই জানালা দিয়ে দেখি.....


রেস্ট হাউজের নিচে। আরাম ঘুম


রায়হান, ফয়েজ রেজার ভাগনে, যার জীবনের লক্ষ একজন রাজনীতিবিদ হওয়া, মায়ের বারন সত্বেও আমাদের সাথে দুদিন সঙ্গী হয়েছিলো


৫. রাজা শ্রী সূর্যকান্ত রাজবাড়ী

রেস্ট হাউজ থেকে বের হয়ে...


রাজা শ্রী সূর্যকান্ত আর নেই, আজ আর নেই সেই রক্তচক্ষুও। সেই অবসরে যেন বিশ্রাম নিচ্ছে পাখিটি


গত বছর এখানে খুন হন একজন তরুণী। তারপর থেকে এ রাজবাড়িতে প্রবেশ নিষিদ্ধ, সাংবাদিক পরিচয়ে শেষমেষ ঢোকা গেল


অবাধ্য প্রজাদের নাকি হত্যার পর কেটে এইখানে ফেলে দেয়া হতো, যা সুরঙ্গের ভেতর হয়ে নদীতে গিয়ে পড়তো





বাড়িটি নাকি ছিলো শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত, এ বাড়ীর মেঝে আর নালা নাকি ধোয়া হতো দুধ দিয়ে



কেউ নেই


৬. নদের পাড়ে বোটানিকেল পার্ক
৬.১

৬.২

৬.২

৬.৩

৬.৪

৬.৫

৬.৬

প্রেম
৬.৭

"এ যদি আমার দেশ নয় তবে কার দেশ বলো" ফেসবুকে এই ছবিটা দেখে মন্তব্যটা করেছিলেন শুদ্ধ ভাই, মনটা ভরে গেসলো
[শুদ্ধ সত্ত্ব রফিক, কবি রফিক আজাদ তনয়, বর্তমানে অষ্ট্রেলিয়া প্রবাসী, জাবি ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ
৬.৮

খুলনার ছেলে তাওহিদ খুব ভালো নৌকা বাইতে পারে। মাহাদীবও মোটামুটি। আর আমি যখন বাইতে গেলাম, মাহাদীবের মন্তব্য, নৌকা সামনেও এগোয় না পিছনেও না, কেবল চক্ররাকারে ঘুরতে থাকে।
৬.৯

চুপচাপ ঘুমিয়ে ছিলো পেচাটি, ঘুমটা ভাঙ্গিয়ে দিলো মাহাদীব
৬.১০

পা দুটি আমার সহযাত্রীর, এবং রেজিস্টার্ড
৬.১১

সাহেববাজার পার্কে চায়ের প্রস্তুতি

ছবি: লেখক, মাহদীব
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই আগস্ট, ২০০৯ সকাল ১০:৪১
২১টি মন্তব্য ১৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=আকাশে তাকিয়ে ডাকি আল্লাহকে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০১


জীবনে দুঃখ... আসলে নেমে
শান্তি গেলে থেমে;
আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে হই উর্ধ্বমুখী,
আল্লাহকে বলি সব খুলে, কমে যায় কষ্টের ঝুঁকি।

আমি আল্লাহকে বলি আকাশে চেয়ে,
জীবন নাজেহাল প্রভু দুনিয়ায় কিঞ্চিত কষ্ট পেয়ে;
দূর করে দাও সব... ...বাকিটুকু পড়ুন

"ছাত্র-জনতার বেপ্লবের" ১৮ মাস পরে, আপনার ভাবনাচিন্তা ঠিক আগের মতোই আছে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৭



২০২৪ সালের পহেলা জুলাই "ছাত্র-জনতার বেপ্লব শুরু হয়, "৩৬শে জুলাই" উহা বাংলাদেশে "নতুন বাংলাদেশ" আনে; তখন আপনি ইহাকে ব্যাখ্যা করেছেন, ইহার উপর পোষ্ট লিখেছেন, কমেন্ট করেছেন; আপনার... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাঙ্গাইল শাড়িঃ অবশেষে মিললো ইউনস্কর স্বীকৃতি

লিখেছেন কিরকুট, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৭



চারিদিকে যে পরিমান দুঃসংবাদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এর মধ্যে নতুন এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হলো বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের তাতের শাড়ি এর জন্য, ইউনেস্কো এই প্রাচীন হ্যান্ডলুম বুননের শিল্পকে Intangible Cultural... ...বাকিটুকু পড়ুন

×