somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

শের শায়রী
অমরত্বের লোভ কখনো আমাকে পায়না। মানব জীবনের নশ্বরতা নিয়েই আমার সুখ। লিখি নিজের জানার আনন্দে, তাতে কেউ যদি পড়ে সেটা অনেক বড় পাওয়া। কৃতজ্ঞতা জানানো ছাড়া আর কিছুই নেই।

শের শায়রী

০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ২:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আমার শততম পোষ্টে এসে পিছনে ফিরে যখন দেখতে গেলাম অসাধারন ভাল লাগায় মনটা ভরে গেল। কিছু নতুন মানুষের সাথে পরিচয় হল যদিও ভার্চুয়ালি। যাদের আন্তরিকতায় আমার এই পর্যন্ত আসা।

কেন আমি শের শায়রী

শের শায়রী হল উর্দূ কবিদের ছোট ছোট কবিতা যা দিয়ে অল্প কথায় অনেক বিশাল মনের ভাব প্রকাশ করে। কেন অল্প কথায় বিশাল মনের ভাব প্রকাশ করতে হবে? মনে রাখবেন যখন শায়রীর জন্ম কাল, তখন মুসলিম কবিদের হাত ধরেই শায়রী জন্ম গ্রহন করে। শায়রীর জন্মদাতাদের অন্যতম হল ওমর খৈয়াম। “রুবায়াত” তার অন্যতম শ্রেষ্ট গ্রন্থ যা মূলত অনেক শায়রীর মিলিত সংকলন। তখন কিন্তু কবিতা রচনা, গান বাজনা, তসবির আঁকাকে না জায়েয মনে করা হত, তবু কেতাবে, পট্টিতে বিখ্যাত দার্শনিক, বিজ্ঞানী, বূজুর্গদের আনাগোনা ছিল। যখনই মোল্লাতন্ত্রীদের দ্বারা আঘাত প্রাপ্ত হতেন অতীব দ্রুততার সাথে তাদের সৃষ্টিকে লুকিয়ে ফেলতেন, এ কারনেই শায়রীর সৃষ্টি। মনে প্রানে আমি ঘৃনা করি পাকিস্তানী হানাদারদের কিন্তু অন্তর দিয়ে ভালবাসি এই সব শায়রীগুলোকে, অনুভব করতে পারি কি নিদারুন ভালবাসা লুকিয়ে আছে এর প্রতিটি পঙতির মধ্য।

ছোট থেকেই বই পড়ার প্রতি আমার উত্তরাধিকার সূত্রে মোহ ছিল। এখনও যে ব্যাপারটা নিয়ে গর্ব করি তা হল আমার হাজার দুয়েক বই আর হাজার খানেক পুরানো ম্যাগাজিনের লাইব্রেরী। কে নেই আমার লাইব্রেরীতে?



ভাল করে খেয়াল করলাম বাংলায় শায়রীর ভক্ত খুব কম এমন কি বাংলা সাহিত্যেও প্রায় অপ্রচলিত। বাংলা সাহিত্যিকদের মধ্যে একমাত্র সমজদার হল বুদ্বদেব গুহ। যারাই বুদ্বদেব গুহ পড়েছেন তারাই জানেন, কি মমতায় শায়রী তিনি তার লেখনীতে ব্যাবহার করছেন।

গজল অনেকেই পছন্দ করেন। কিন্তু অনেকেই হয়ত জানেন না গজল কিন্তু মূলত শায়রী ধারা থেকে এসেছে।

নিচে আমার কিছু সংগৃহীত শায়রী অনুবাদ সহ দিলাম এ ক্ষেত্রে আমার কৃতজ্ঞতা শচীন ভৌমিকের শের শায়রী প্রতি। ভাল লাগলে জানাবেন আরো দেব। এর বেশির ভাগই আমি যখন সামুতে ব্লগিং শুরু করি একটা আধটা করে দিতাম। এখানে সব এক সাথে দিলাম। ভাল লাগলে আরো দেব।



শের শায়রী (এক)

চমনমে ইখতালাতে রঙো বু সে বাত বনতি হ্যায়
হাম ই হাম হ্যায় তো কেয়া হাম হ্যায়
তুমহি তুম হো তো কেয়া তুম হো

--সারসার সালানী

বাগানে যে ফুল ফোটে রঙ আর সুরভীর মিলনেই তার সার্থকথা। তেমনি আমাদের দুজনের মিলনেই আমাদের চরম মূল্যায়ন, আমাদের জীবনের পূর্নতা। একা আমি তো অসম্পূর্ন একা তুমিও নেহায়ত মূল্যহীনা

শের শায়রী (দুই)

ও ঔর হোঙ্গে যো পীতে হ্যায় বেখুদিকে লিয়ে
মুজেসে চাহিয়ে থোরিসে জ়িন্দেগীকে লিয়ে

জিগর মুরদাবাদী

ওরা আলাদা জাতের লোক যারা সুরা পান করে জীবন কে ভূলে যাবার জন্য, আমার তো সুরার প্রয়োজন হয় জীবনকে ফিরে পাবার জন্য

শের শায়রী (তিন)

ময়নে যো তুমকো চাহা, কায়া ইসমে খতা হ্যয়
এ তুম হো, আ আয়না, ইনসাফ জরা করনা
--- জলীল মানিকপুরী

আমি যে তোমাকে চাইছি এটা অপরাধ কি? এই তুমি এইবার তোমার সামনে এই আয়না রাখছি, দেখে বিচার কোর, হে প্রিয়া তুমি এত সুন্দরি কার সাধ্য তোমাকে না ভালবাসে থাকতে পারে, নিজেকে আয়নায় দ্যাখ বুজতে পারবে এত সুন্দরি কে সবাই চাইতে পারে এতে কারো কোন অন্ন্যায় নাই।



শের শায়রী (চার)

বদল যায়ে আগর মালী
চমন হোতা নেহী খালি
বাহারে ফিরভি আতি হ্যায়
বাহারে ফিরভি আয়েঙ্গে
---দাগ

মালি বদলে গেলে বাগান খালি হয়ে যায়না, শুন্য হয়ে যায় না বাগানের ফলস্মভার। কেন না বসন্ত আবারও আসবে তার ফুল সাজি নিয়ে, মালী আনেক বদলাবে কিন্ত বসন্তের আগমন তাতে কোন দিন রুদ্ব হবে না


শের শায়রী (পাচঁ)

ও কৌন হ্যায় জিনহে তওবা কি মিল গই ফুরসত
হামে গুনাহ ভি করনে কি জিন্দেগী কম হ্যায়

--- আনন্দনারায়ন মুল্লা

ওরা কারা যাদের পাপ করার পর প্রায়শ্চিত্ত করার জন্যও সময় জুটে যাছে? আমার তো জীবন এত স্বল্প লাগছে যে, এক আধ-টুকরো যে পাপ করবো, তার ও সময় জুটছে না!



শের শায়রী (ছয়)

জিসনে দিল খোয়া ঊসী কো কুছ মিলা,
ফায়দা দেখো উসী লুকসান মে
---সারসার সালানী

যে হৃদয় হারিয়েছে সেই কিছু পেয়েছে। এটাই পৃথিবীর একমাত্র লোকসান যাতে আসলে লাভই ভাগ্যে জুটে যায়।

শের শায়রী (সাত)

নিকল কে জাউ কহা তেরী আঞ্জুমন সে সিবা
চমন কী বু হুঁ বসুঁ ফির কাহাঁ চমন কে সিবা
---মোমিন

তোমার পৃথিবী, তোমার হৃদয় ছেড়ে কোথায় যাব বল? আমি হচ্ছি ফুলের সুগন্দ। ফুল ছেড়ে কোথায় আর যেতে পারি আমি। তুমি আমার ফুল আর প্রেম আমার হল সেই ফুলের সুরভী। ফুল ছেড়ে সেই সুরভী কি চলে যেতে পারে?



শের শায়রী (আট)

মৌৎ কিৎনিহি সংদিল হ্যায় মগর
জিন্দেগী সে তো মেহেরবাঁ হোগী
--- শাহীর লুধীয়ানবী

মৃত্যু যতই নিষ্ঠুর হোক না কেন জীবনের চাইতে অনেক বেশী হৃদয়বান হবে

শের শায়রী (নয়)

কেয়া বুরী শয় হ্যায় মুহব্বত কি ইলাহী, তওবা
জুর্ম না কর ওহ খতাবার বনে বৈঠৈ হ্যায়।

--- জহীর

ভালোবাসা কি অভিশপ্ত বস্তু হে ঈশ্বর তুমি সৃস্টি করেছো। অন্যায় না করেও সর্বদা অপরাধী সেজে বসে থাকতে হয়। সত্যি ভাবলে আশ্চর্য হতে হয়।


শের শায়রী (দশ)

না কোই গাম থা তেরে আষিকি ছে পেহেলে
না থা দুষমনি কিসি সে তেরে দোস্তি সে পেহেলে
নাম না জানা

তোমার প্রেমের আগে কোন বেদনা ছিলো না
তোমার বন্ধুত্বের আগে কোন শত্রু ছিলো না



শের শায়রী (এগার)

এ তো নহি কি তুমসা জহামে হাসিন নহি
ইশ দিলকা কেয়া করু কি বহলতা কহি নেহি।
--- দাগ


এমন তো কথা নেই যে পৃথিবীতে তোমার চাইতে সুন্দরী আর কোথাও নেই। কিন্তু কি করব আমার এ হৃদয় অন্য কারো কাছে যাবে না। শুধু তোমার জন্যে এ হৃদয় পাগল হয়ে উঠেছে। বোঝালেও এ অবুঝ হৃদয় কিছুতেই বুঝবেনা।


শের শায়রী (বার)

গই থি কহকে লায়েগী জুলফে ইয়ার কি বু
ফিরি তো বাদেসবা কা দিমাগ ভি না মিলা
--- জলাল

যাবার সময় হাওয়া বলে গিয়েছিল যে তোমার চুলের মদির গন্ধ সঙ্গে নিয়ে ফিরে আসবে। কিন্তু ফেরার সময় হাওয়ার সে কি গর্ব ভরা ভাব, সেকি মেজাজ হাওয়ার, আমার দিকে ফিরেও তাকাল না।



শের শায়রী (তের)

খোদাসে হুস্নুনে একদিন এ সওয়াল কিয়া
জাহাঁমে তু মুজে কিউ না লাজওয়াল কিয়া
মিলা জবাব তসবীরখানা হ্যায় দুনিয়া
সবে দরাজে আদম কা ফসানা হ্যায় দুনিয়া
হুই হ্যায় রঙ তগায়ুরসে যব নমুদ উসকি
ওহি হাসিন হ্যায় জাঁহামে হ্যায়, হকিকৎ জিসকি।
কহি করিব থা এ গুফতুগ কমরনে শুনি
ফলগপে আম হুই আখতারে সহরনে শুনি
সহরনে তারোঁসে শুনাই তারোঁনে শবনমকো
ফলগকি বাৎ বাতাদি জমিকে মহরমকো
ভর আয়ে ফুলকে আঁসু পয়ামে শবনমকে,
কলিকা নান্নাসা দিল খুল হো গিয়া গমসে
--- কলীম

ঈশ্বরকে একদিন প্রশ্ন করল রূপ – হে ঈশ্বর, ধরাতে আমাকে তুমি অমর করোনি কেন? ঈশ্বর উত্তর দিলেন, - এ পৃথিবী হল পরিবর্তনশিল চলচিত্রের প্রেক্ষাগৃহ, অন্তহীন রাত্রির চলমান কাহীনি হচ্ছে পৃথিবী। স্বল্পস্থায়ী জীবনই হল রূপের আয়ু, এ সত্যই রুপকে এত আকর্ষনীয় করেছে, করেছে মুল্যবান। অনিত্যতাই সত্য, আর সত্যই সুন্দর। অমরত্ব কাউকে আমি দেইনি। জন্ম মানেই মৃত্যু। আদির পর অন্ত। যৌবনের পর জরা। ঈশ্বর ও রূপের কথোপকথন শুনে ফেলল চাদঁ। সে কাছেই ছিল। চাঁদ এসে সারা আকাশকে শুনিয়ে দিল সে কথা। সারা আকাশে রটে গেল রূপ ও জীবনের স্বল্পয়ুর কঠিন সত্য। ঊষার প্রথম তারা সে খবরটা শিশিরের কানে কানে বলে ছিল। শিশির সে খবর নিয়ে এল পৃথিবীর বুকে। শিশিরের কাছে সে দুঃসংবাদ শুনে ফুলের চোখ জলে ভরে গেল। কাছেই ছিল কলি। এ খবর শুনতেই দুঃখে হৃদয় ফেটে তার লাল হয়ে গেল। মানে ফুল হয়ে ফুটে উঠল সেই বিদীর্ন হৃদয় কলি।



শের শায়রী (চৌদ্দ)

কভি ব্যয়ঠে বৈঠয়ে দিলকি হালত এয়সি হোতি হ্যায়
তড়গকর চ্যয়নে মিলতা হ্যায়, খুশি রোনসে হোতি হ্যায়
--- সারসার সালানী

কখনও কখনও মনের অবস্থা এমনও হয় যে কৃচ্ছতায়ই শান্তিলাভ হয়, অঝোর অশ্রুপাতেই শান্ত হয় চিত্ত।


শের শায়রী (পনের)

আপকে বিসরী তো হাম খোয়াবোঁমে মিলে
যিসতারা শুখি হুই ফুল কিতাবোঁমে মিলে
--- ফৈজ

বিচ্ছেদের পর আমাদের দু’জনের মিলন কোথায় হবে? কোথায় তোমায় পাব? জানি পাব সুধু স্মৃতিস্বপ্নের আকাশে। যেমন পুজোর পবিত্র শুকনো ফুল অনেকদিন পরে মানুষ হঠাৎ খুঁজে পায় বইয়ের পাতার ভাঁজে। তোমার পবিত্র সুখস্মৃতির ফুল তেমনি হঠাৎ খুজে পাব আমার স্বপ্নায়নের পাতার ভাঁজে। কালগ্রাসে বিবর্ন শুষ্ক। কিন্ত পবিত্র, সংরক্ষিত।



শের শায়রী (ষোল)

তেরা মিলনা, তেরা নেহি মিলনা
ঔর জিন্নাত হ্যায় কেয়া, জাহান্নাম কেয়া
--- গালিব

স্বর্গ আর নরক কি আমি জানতাম না। হে প্রেয়সী তোমার সাথে আমার মিলনই হল স্বর্গ আর তোমার সাথে বিরহই হল নরক। এখন আমি জেনেছি স্বর্গ আর নরক এর সংজ্ঞা কি

শের শায়রী (সতের)

মেরে তসবিকে দানে হ্যায় এ সারে হাসিন চেহরে,
নিগাহ ফিরতে যাতি হ্যায়, এবাদত হোতি যাতি হ্যায়
--- সারসার সালানী

এই যে এত সুন্দরীদের মুখ এরা হল আমার পুজোর মালার এক একটি পুতি। একটার পর একটা মুখ দেখি আর আমার দৃস্টির আঙ্গুলি দিয়ে নীরবে পুজো সেরে চলি।



শের শায়রী (আঠার)

আচ্ছা হ্যায় দিল কে পাস রহে পাসবানে-অকল
লেকিন কভি কভি ইসে তনহা ভী ছোড়িয়ে
--- ইকবাল

হৃদয়ের কাছে বুদ্বির বাস ভাল কথা। কিন্তু মাঝে মঝে হৃদয়ের ওপর থেকে বুদ্বির শাসন তুলে দিতে হয়, হৃদয়কে স্বাধীন করে দিতে হয়, মুক্ত করে দিতে হয়। স্বাধীন মুক্ত হৃদয়ের ধম’কে সব সময় বুদ্বি দিয়ে বিচার করতে নেই

শের শায়রী (ঊনিশ)

আপকে বিসরী তো হাম খোয়াবোঁমে মিলে
যিসতারা শুখি হুই ফুল কিতাবোঁমে মিলে
--- ফৈজ

বিচ্ছেদের পর আমাদের দু’জনের মিলন কোথায় হবে? কোথায় তোমায় পাব? জানি পাবো শুধু স্মৃতিস্বপ্নের আকাশে। যেমন পুজোর পবিত্র শুকনো ফুল অনেকদিন পরে মানুষ হঠাৎ খুঁজে পায় বইয়ের পাতার ভাঁজে। তোমার পবিত্র সুখস্মৃতির ফুল তেমনি হঠাৎ খুজে পাব আমার স্বপ্নায়নের পাতার ভাঁজে। কালগ্রাসে বিবন’, শুষ্ক। কিন্ত পবিত্র, সংরক্ষিত।

শের শায়রী (বিশ)

দুশমনি জমকর করো, এ গুঞ্জাইশ রহে
যব কভি হাম দোস্ত হো যায়েঁ তো শরমিন্দা না হো।
--- জগ্ননাথ আজাদ

শত্রুতা করার সময় হে বন্দ্বু, একটু ভেবেচিন্তে কর। দেখো এত নিষ্ঠুর ভয়ংকর শত্রুতা কর না যে পরে যদি বন্দ্বু হয়ে যাই তখন লজ্জিত হতে হয়। তোমার শত্রুতার মধ্যে একটু ছেদ রেখ, সুযোগ রেখ বন্দ্বু। যতির পর পুরানো বন্দ্বুত্ব ফিরে পেলে লজ্জা নেই, কিন্তু শত্রুতার চরমে যদি আজ বন্দ্বুত্ব ছিন্ন করে ফেল, পুর্নমিলনের সময় লজ্জায় মুখ তোলা যাবে কি করে। সুতারাং হে বন্দ্বু, শত্রুতা করবার সময় সম্পর্কে ছেদ রেখ, ছিন্ন করে ফেল না ।



শের শায়রী (একুশ)

বড় শওকশে শুন রাহা যা জমানা
হামই শো গয়ে দাস্তাঁ কহতে কহতে
---নাকব লাখনবী

সময় বড় মনযোগ দিয়ে আমার জীবন কাহিনী শুনে যাচ্ছিল। আমিই কাহিনী বলতে বলতে ঘুমিয়ে পড়েছি। জীবন তো তাই, অসমাপ্ত কাহিনী। সময় চলছে চলবে। আর অসমাপ্ত কাহিনী নিয়ে এক একটি জীবন ঘুমিয়ে পড়ছে, শেষ হয়ে যাচ্ছে। সময় শুনছে এরকম কতো অসমাপ্ত কাহিনী, শুনবে আরো কত।

শের শায়রী (বাইশ)

ইস এতিয়াত কি ক্যা বরখ দাও দেতা হুঁ
কে তিনতা তিনতা বাচাঁ মেরে আশিয়াঁকা সিবা
--- সারসার সালানী

হে ঈশ্বর, তোমার নিপুন সতর্কতার জন্য বাহবা দিতে হয়। তুমি এমন বিদ্যুৎবহ্নি বজ্রবান নিক্ষেপ করেছো আমার ঘর লক্ষ্য করে যে শুধু আমাই ঘরটা জ্বলে খাক হয়ে গেল, বাকি কুটোকাঠির এতটুকু ও ক্ষতি হলনা।



শের শায়রী (তেইশ)

ময়নে পুছা চাদসে ফলগ ইয়া হো জমি
মেরে ইয়ারসা হাসিন
চাঁদ হ্যায় কাহি?
চাদনে কহা চাঁদনী কি কসম, নেহি, নেহি, নেহি।

খুবসুরৎ তুনে যো পাই
লু্ট গই খুদাকি সব খুদাই
মীর কি গজল কহুঁ ইয়া তুমে
কহু ম্যায় খৈয়াম কি রুবাই
ম্যায়নে পুছা শায়েরোঁসে এইসি দিলকসি
শের হ্যায় কাঁহি ?

শায়েরোঁনে কহা শায়েরেকি কসম নেহি নেহি নেহি।

চাল হ্যায় কি মৌজ কি রওয়ানি
আঁখ হ্যায় কি ময়কাদোঁকি রানী
হোঁট হ্যায় কি পাখড়ি গুলাবকি
জুলফ হ্যায় কি রাত কি কাহানি
ম্যায়নে পুছা বাগসে কি এইকি দিলখুশি
ফুল হ্যায় কি কাঁহি

বাগ কি কহা হর কলি কি কসম নেহি নেহি নেহি।
---আনন্দ বক্সী

আমি চাঁদ কে প্রশ্ন করলাম, বলো তো আকাশে বা পৃথিবীতে আমার প্রিয়ার মত চাঁদ আছে কি? চাঁদ জবাব দিল চাঁদনির দিব্যি খেয়ে বলতে পারি নেই নেই নেই। রূপ তুমি যে পেয়েছো মনে হচ্ছে ঈশ্বরের সব রুপ লাবন্যের জোলা চুরি হয়ে গেছে। মীর এর রচিত গজল বলব কি তোমায়? নাকি বলব ওমর খৈয়াম এর কোন রুবাই? কবিদের আমি প্রশ্ন করলাম আমার প্রিয়ার মত কবিতা আছে কোথাও? কবিদের জবাব এল- যেন ঢেউ এর ঊচ্ছলতা, তোমার চোখ যেন সুরাবিপনীর রানীর মদির নেত্র, তোমার ঠোট যেন গোলাপের পাপড়ি আর তোমার চুল দেখে যেন মনে হয় এ যেন চুল নয়, এ যেন শত শত রহস্যঘন রাত্রির কাহিনী। বাগান কে প্রশ্ন করলাম, আমার প্রিয়ার মত হৃদয় মনোহরক ফুল আছে কি কোথাও? বাগান বলল প্রতিটি কলির দিব্যি খেয়ে বলতে পারি, নেই নেই নেই।।

শের শায়রী (চব্বিশ)

আদম কা জিসম যব কি আনাসর সে মিল বনা
কুছ আগ বাচ রহী থী সো আশিককা দিল বনা
--- সৌদা

মানুষের শরীর ঈশ্বর তৈরী করেছেন পঞ্চভূত দিয়ে। কিন্ত খানিক্টা আগুন তখনও বেচেঁ গিয়েছিল। সে আগুন টা কোথায় গেল? সেই আগুন দিয়েই তৈরী হয়েছে প্রেমিকের হৃদয়। সেজন্যি প্রেমিকের হৃদয়ে সব সময় ধিকি ধিকি আগুন জ্বলে।

শের শায়রী (পচিশ)

ইৎনা বদনসীব হ্যায় জফর দফন কা লিয়ে
দো গজ জমীন ভি না মিলি কুয়েঁইয়ারমে
--- বাহাদূর শাহ জাফর

আমার থেকে ভাগ্যহীনা আর কেঊ হবে না। মরবার পরে আপন দেশের মাত্র ২ গজ জমিও পেলাম না আমার কবরের জন্যে



শের শায়রী (ছাব্বিশ)

ঊমরেদরাজ মাংকে লায়ে থে চারদিন
দো আরজুমে কট গয়ে দো ইন্তেজারমে
--- বাহাদূর শাহ জাফর

ঈশ্বরের কাছে চার দিন ভিক্ষা নিয়ে এসেছিলাম, তার দুদিন কেটে গেল আকাখায় আর দুদিন কেটে গে ল অপেক্ষায়। জীবন তো তাই দু দিনের স্বপ্ন বুনবার জন্য আর দুদিন স্বপ্ন ভঙ্গের

সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জুন, ২০২০ রাত ১১:৩৭
৬৬টি মন্তব্য ৬৩টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×