কিছুটা হতভম্ভ কিছুটা ব্যাথিত হয়েই এই পোষ্টটা আমি দিলাম। তবে পোষ্ট টি দেবার আগে আবারো স্বীকার করে নেই ধর্ম নিয়ে আমার জ্ঞান অতি সীমাবদ্ধ। আর প্রতিটা ধর্মকেই আমি শ্রদ্ধা করি, কারন আমার ধর্ম আমাকে অন্য ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতেই শেখায়। একই সাথে কেউ যদি সংশয়বাদী বা অবিশ্বাসী হয় তাতেও আমার কোন সমস্যা নেই।
কিন্তু সমস্যা তখনি দেখি যখন কিছু মাদ্রাসার হুজুর নামধারী “পাপিষ্ঠ” মাদ্রাসার এতিম বাচ্চাদের ওপর বলাৎকারের কারনে কিছু অবিশ্বাসী শিশুকামের সাথে ইসলাম এবং ইসলামের মহানবী (সঃ) এর নাম জড়িয়ে কিছু জাল তাফসীরের সূত্র ধরে সমগ্র ইসলাম ধর্মকে কলুষিত করার অপচেষ্টা করছে। আজকেই কমেন্টের সুত্র ধরে কোন এক বিজ্ঞ ব্লগাররের ব্লগে গিয়ে এই ব্যাপার গুলা দেখলাম। ব্যাপারটা এমন না যে, আজকেই এটা দেখলাম, কিন্তু যখনি কোন মাদ্রাসার হুজুর কর্তৃক (মাদ্রাসায় ও কিছু কুকুরের বাচ্চা আছে যারা এতিম বাচ্চাদের শিক্ষার নামে বলাৎকার করে যাদের হুজুর বলতে আমি মোটেই রাজি না।) বলাৎকার হবার পর পুরা ইসলামের ওপর দোষ ফালায় কেউ কেউ এক ধাপ এগিয়ে মহানবীকেও খারাপ কথা বলতে ছাড়ে না নাউজুবিল্লাহ।
সুরা আরাফের ৮০ এবং ৮১ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা সুস্পষ্ট ঘোষনা দিয়েছেনঃ
এবং আমি লূতকে প্রেরণ করেছি। যখন সে স্বীয় সম্প্রদায়কে বললঃ তোমরা কি এমন অশ্লীল কাজ করছ, যা তোমাদের পূর্বে সারা বিশ্বের কেউ করেনি ? [ সুরা আরাফ ৭:৮০ ]
তোমরা তো কামবশতঃ পুরুষদের কাছে গমন কর নারীদেরকে ছেড়ে। বরং তোমরা সীমা অতিক্রম করেছ। [ সুরা আরাফ ৭:৮১ ]
এর ব্যাখ্যায় যাবার আগে অল্প কিছু কথা বলতে হয়, জর্দানের বাহরে মাইয়িত বা বাহরে লুতে তীরবর্তী অঞ্চলে “সুদুম” বা “সডাম” বা আমুরাহ জনবসতি গড়ে উঠেছিল। এ এলাকায় বসবাসকারীদের বিশ্বাস ছিল এখন যেখানে তরাঙ্গায়িত সমুদ্র তা কোন এক কালে ছিল জনবসতি। এই জনবসতিই ছিল “সুদুম”।যখন লুত কওমের ওপর আল্লাহর অভিশাপ নেমে আসে তখন এক ভয়ংকর ভুমিকম্পের কারনে সমুদ্রের ৪০০ মিটার নীচে নেমে যায় এজন্যই এই সমুদ্রটির নাম “বাহরে মাইয়াত” বা “বাহরে লুতা” নামে যা কিনা আপনি “ডেড সী” নামে চেনেন।
হযরত ইব্রাহিম (আঃ) এর ভাইয়ের নাম ছিল হারুন (আঃ)। লুত ছিল উক্ত হারুন (আঃ) এর ছেলে মানে লুত ছিল ইব্রাহিম (অঃ) ভাইয়ের ছেলে। লুত যখন ইব্রাহিম (আঃ) কাছে কানানে আসেন সেখানেই তার ওপর ওহী নাযিল হয় এবং তিনি ইব্রাহিম (আঃ) এর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে সদুম নামক স্থানে চলে আসেন সেখানকার বিপদগামী সম্প্রদায়কে পথে আনার জন্য। লুত (আঃ) যখন সুদমবাসীকে তাদের পাপাচার সন্মন্ধ্যে সতর্ক করে দিচ্ছিল তখন তারা উল্টো বলতে থাকল
তাঁর সম্প্রদায় এ ছাড়া কোন উত্তর দিল না যে, বের করে দাও এদেরকে শহর থেকে। এরা খুব সাধু থাকতে চায়। [ সুরা আরাফ ৭:৮২ ]
এখান থেকেই বোজা যায় সুদম কওম কতখানি অধঃপাতিত হয়েছিল, তাদের অধঃপতনের আরো কিছু কাহিনী আমি পড়ছি পড়ে স্তম্ভিত হয়ে গেছি যে তারা কত সীমাহীন অধঃপতিত হয়েছিল। তারা হযরত লুত কে নিয়ে উপহাস করতে থাকে।
আল্লাহপাক তখন সুরা আনকাবুতের ২৯ নাম্বার আয়াতে বলেনঃ
তোমরা কি পুংমৈথুনে লিপ্ত আছ, রাহাজানি করছ এবং নিজেদের মজলিসে গর্হিত কর্ম করছ? জওয়াবে তাঁর সম্প্রদায় কেবল একথা বলল, আমাদের উপর আল্লাহর আযাব আন যদি তুমি সত্যবাদী হও। [ সুরা আনকাবুত ২৯:২৯ ]
এদিকে তখন অন্য এক ঘটনা ঘটছিলো এক দিন হযরত ইব্রাহিম (আঃ) যখন এক জঙ্গলে পরিভ্রমন করছিলেন তখন সেখানে তিন জন অত্যন্ত সুশ্রী অতিথি দেখতে পেলেন তিনি তাদের দাওয়াত দিয়ে তার বাসায় নিয়ে গেলেন এবং ভালো আহারের ব্যাবস্থা করলেন, কিন্তু দেখলেন যে ওই তিনজন খাবার খাচ্ছে না, তখনকার প্রচলিত রীতি অনুযায়ী হযরত ইব্রাহীম কিছুটা চিন্তিত কিছুটা ভীত হলেন ভাবলেন এরা তার দেয়া খাবার অস্বীকার করছে তার মানে এরা শত্রু। তখন ওই তিন জন তাকে আশ্বস্ত করল যে না তারা তার শত্রু বরং তারা তার রবের কাছ থেকে প্রেরিত এবং সদুম ধ্বংস করার জন্য আযাবের ফেরশতা।
যখন আমার প্রেরিত ফেরেশতাগণ সুসংবাদ নিয়ে ইব্রাহীমের কাছে আগমন করল, তখন তারা বলল, আমরা এই জনপদের অধিবাসীদেরকে ধ্বংস করব। নিশ্চয় এর অধিবাসীরা জালেম। [ সুরা আনকাবুত ২৯:৩১ ]
তখন ইব্রাহিম (আঃ) তাদের বললেন, তা কি করে হয়? ওখানে তো মিল্লাতের হানিফের একজন লুত (আঃ) আছে।
সে বলল, এই জনপদে তো লূতও রয়েছে। তারা বলল, সেখানে কে আছে, তা আমরা ভাল জানি। আমরা অবশ্যই তাকে ও তাঁর পরিবারবর্গকে রক্ষা করব তাঁর স্ত্রী ব্যতীত; সে ধ্বংসপ্রাপ্তদের অন্তর্ভূক্ত থাকবে। [ সুরা আনকাবুত ২৯:৩২ ]
যাই হোক আমি আর আপনাদের বিরক্ত করে পোষ্ট বাড়াব না আরো বিভিন্ন ঘটনার মাধ্যমে লুত (আঃ) সদুম সম্প্রদায় ধ্বংস হয়ে যায়।
“আপনার প্রাণের কসম, তারা আপন নেশায় প্রমত্ত ছিল। অতঃপর সুর্যোদয়ের সময় তাদেরকে প্রচন্ড একটি শব্দ এসে পাকড়াও করল। অতঃপর আমি জনপদটিকে উল্টে দিলাম এবং তাদের উপর কঙ্করের প্রস্থর বর্ষণ করলাম। নিশ্চয় এতে চিন্তাশীলদের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে। জনপদটি সোজা পথে অবস্থিত রয়েছে। নিশ্চয় এতে ঈমানদারদের জন্যে নিদর্শণ আছে।" [ সুরা হিজর ১৫:৭২-৭৭ ]
তেরশ বছর আগে আরবের কোন এক অশিক্ষিত ( অতি জ্ঞানী অবিশ্বাসীদের দেয়া উপাধি) নবীর কাছে পাঠানো ওহীর মাধ্যমে সদুম নগরী বর্তমানে আবিস্কার হয়েছে “ডেড সী”র দক্ষিন পূবে মক্কা থেকে সিরিয়ায় যাওয়ার পথের পাশে।
আসি মুল ব্যাপারে, আরবের কিছু মানুষের সমকামিতা বা আমাদের কিছু মাদ্রাসার হুজুর নামধারী পাপিষ্ঠের কারনে কিছু অতিজ্ঞানী অবিশ্বাসী কিছু জাল হাদীস অথবা মিথ্যা তাফসীরের উদ্ধৃতি দিয়ে সমকামিতার সাথে ইসলামের সম্পর্ক সৃষ্টির প্রয়াস পায় এবং কেউ কেউ এক পা এগিয়ে আমার প্রানের নবী হযরত মোহাম্মদ (সঃ) কে নিয়েও কটুক্তি করে তাদের জন্য বলে দিতে চাই, আমার কাছে কোরানের ওপর কোন কিতাব নেই, সুতারাং কোন হাদীস বা তাফসীর দেখিয়ে কোন অবস্থাতেই এই ঘৃনিত পন্থাকে ইসলামে জায়েজ করার করার উপায় নেই। এবং যে নবী মুহাম্মদ (সাঃ) এই ওহী নিয়ে আসে আল্লাহর কাছ থেকে তাকে নিয়ে দয়া করে এই সব নোংরা কথা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানাই।
ধর্ম বিষয়ে আমার জ্ঞান অতি সীমিত, আমি হয়ত আজকে তোমাদের সাথে কুট তর্কে পারব না। কিন্তু তিনি নিশ্চয়ই সর্বজ্ঞ। আমার অতি অল্প জ্ঞানে আমি যেটুকু পারলাম লিখলাম। আমি বাইবেল তোরাহর কোন বানী টানি নাই কারন পোষ্ট বড় হয়ে যাবে বিধায়। তবে সে সব জায়গায় ও এনিয়ে কিছু কিছু লেখা আছে।
ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করে যারা ধর্মের অপ ব্যাখ্যা দিয়ে মানুষ হত্যা করে তারা যেমন পরিত্যাজ্য তেমনি পরিত্যাজ্য যারা শতকোটি মানুষের অনুসরনীয় মহান মানুষটিকে নিয়ে নোংরামি করে।
দেখুনঃ Sodom and Gomorrah
Have Sodom and Gomorrah been Found?
Archeologists: Sodom and Gomorrah literally destroyed by fire and brimstone falling from the sky
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে জানুয়ারি, ২০২০ রাত ২:৪৭