রোমানিয়ার কথা বললেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে কাউন্ট ড্রাকুলার মুখ। ব্রাম ষ্টোকারের অনবদ্য সৃষ্টি। যা এখনো সমানতালে মানুষকে শিহরিত আনন্দ দিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু আজকে কাউন্ট ড্রাকুলা না, আজকে জানাব রোমানিয়ার আর এক রহস্যময় জঙ্গল হোইয়া বাইচুর কথা
ভুতুড়ে এই জঙ্গলটির অবস্থান রোমানিয়ার ক্লুজ-নাপোকা শহরের কাছে। রাজধানী বুখারেস্টের পরে ক্লুজ রোমানিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর। গাছ গুলোর গঠনও যেন কেমন? দেখুন না বেকে বেকে উঠছে। রোমানিয়ার ট্র্যান্সেলভেনিয়ার ক্লাজ নাপোকা শহরে প্রায় ২৫০ হেক্টর জায়গা জুড়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে এই জঙ্গল।
রহস্যে মোড়া এই পৃথিবী। চারপাশে এমন অনেক ঘটনা ঘটে চলেছে যার সামনে যাবতীয় বৈজ্ঞানিক যুক্তি, চিন্তাধারা খারিজ হয়ে যায়। রহস্য মাখা এমনই এক অরণ্য ‘হোইয়া বাইচু’ ।বিভিন্ন রকম অতিপ্রাকৃতিক কার্যকলাপ, অপ্রত্যাশিত ঘটনার ফলে যা ইতিমধ্যেই পৃথিবীর সবথেকে ভুতুড়ে জঙ্গলের তকমা পেয়েছে। সব মিলিয়ে রোমানিয়ার বারমুডা ট্রায়াংগল নামে পরিচিতি পাওয়া এই হোইয়া-বাসিউ জঙ্গলের রহস্য দিন দিন আরো ঘনীভূতই হয়েছে, রহস্যভেদ আর হয়নি।
সে অনেক দিন আগের কথা। এক রাখাল ছেলের প্রায় দুই শ ভেড়া ছিল। ভেড়ার সেই বিশাল পাল চড়াতে একদিন গেল একটা জঙ্গলে। সেই যে ছেলেটা গেল, আর ফিরে এলো না। পরে সেই ছেলের নাম থেকে জঙ্গলটির নাম দেওয়া হলো হোইয়া-বাইচু বন। এই হোইয়া- বাইচু বনে হারিয়ে যাওয়ার ঘটনা ওই একটাই নয়। এর পরও নাকি সে জঙ্গলে প্রচুর মানুষ হারিয়ে গেছে।
১৯৬০ সালে সর্বপ্রথম এই অরণ্যটি বিশ্ববাসীর নজরে আসে। জীববিজ্ঞানী আলেকজান্দ্রু সিফ্ট আকাশে ডিম্বাকৃতি কিছু উড়ে যেতে দেখেন। সেই বস্তুটির ছবিও তোলেন আলেকজান্দ্রু।
১৯৬৮ সালে এমিল বার্নিয়া নামে সেনাবাহিনীর এক টেকনিশিয়ানও ইউএফও-র মতো এক ‘সসার’ জঙ্গলের উপর দিয়ে উড়ে যেতে দেখেন বলে দাবি করেন।
এই ঘটনায় হতবাক হয়ে এমিল আশপাশের গ্রামের মানুষদের কাছে জানতে চাইলে তাঁরাও জানায় মাঝে মাঝেই তীব্র গোলাকার আলোর বলয় ঊর্ধ্বাকাশে যেতে দেখেছেন।
এর ভেতরে ঢুকলেই নাকি নানা ধরনের শারীরিক সমস্যা হতে থাকে। গায়ে র্যাশ ওঠে, মাথা ঘোরে, বমি বমি লাগে, মাথা ব্যথা করে, শরীর জ্বালাপোড়া করে। সব মিলিয়ে নাকি ভীষণ রকমের আতঙ্ক হতে থাকে। তাই এই জঙ্গলকে আগে বলা হতো রোমানিয়ার এভিল ফরেস্ট। অনেকে আবার সাহিত্য ফলিয়ে বলত ট্রানসিলভেনিয়ার জঙ্গল।
সব মিলিয়ে রোমানিয়ার বারমুডা ট্রায়াংগল নামে পরিচিতি পাওয়া এই হোইয়া-বাইচু জঙ্গলের রহস্য দিন দিন আরো ঘনীভূতই হয়েছে, রহস্যভেদ আর হয়নি। অনেক বিজ্ঞানী অবশ্য এক ধরনের ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। তাঁরা বলছেন, সেখানে বেশ কিছু শক্তিশালী চৌম্বকক্ষেত্র রয়েছে। সেগুলোর জন্যই এমন অদ্ভুতুড়ে কাণ্ডকারখানা হয়।
এই জঙ্গলে এমন একটি জায়গা রয়েছে যেখানে কোনদিনও কোনও গাছ অথবা লতা গুল্ম জন্মাতে দেখা যায়নি। বিজ্ঞানীরা এখানকার মাটি নিয়েও পরীক্ষা করে দেখেছেন। তবে মাটিতেও এমন কোনও অস্বাভাবিকতা চোখে পড়েনি যা গাছ জন্মানোর পরিপন্থী।
স্থানীয় বাসিন্দারা ওই বিশেষ জায়গাটিকে ভূতুড়ে ঘটনার কেন্দ্রবিন্দু বলে থাকেন। তাদের ধারণা, কোনো অশরীরী কিছু বা অতৃপ্ত আত্মার বাস রয়েছে ওই জায়গায়।
লোকমুখে প্রচলিত রয়েছে, অনেক বছর আগে কিছু চাষীকে নাকি অন্যায় ভাবে এই জঙ্গলে হত্যা করা হয়েছিল।তাদের অতৃপ্ত আত্মাই এই বনের আনাচে কানাচে ঘুরে বেড়াচ্ছে।বনের গাছের ফাঁকে ফাঁকে তাই কান পাতলেই শোনা যায় নারী কান্নার আর্তনাদ, হাসির আওয়াজ।
যারাই জঙ্গলে ঘুরতে যায় তাদের নাকি অনুভুতি হয় কে যেন তাদের কে গাছ পালার ফাক দিয়ে দেখছে।
নিকোলাস কেইজ যখন তার গোষ্ট রাইডারঃ স্পিরিট অভ ভেনজেনস ছবিটি করেন তখন তার শ্যুটিং করেন রোমানিয়া এই হোইয়া বাইচু জঙ্গলের কাছে তখন সেও এই জঙ্গল এক পাক ঘুরে আসে।
যাবেন নাকি এক পাক ভুত দেখতে রোমানিয়ার হোইয়া বাইচু জঙ্গলে? ট্রাভেল এ্যন্ড লেইজার, বিবিসির মত ম্যাগাজিন ওয়ার্ল্ড মোষ্ট হন্টেড জঙ্গল এর তকমা লাগিয়ে দিয়েছে হোইয়া বাইচুর গায়ে। এক দম ফেলনা কিন্তু ভুতের সাথে সাক্ষাতের জন্য।।
ইউ টিউব ভিডিও দেখতে পারেন
কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জালে বিভিন্ন ফিচার অল্প দুয়েকটার লিঙ্ক যোগ করা হল লেখার মাঝে।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ১:৪১